মকবুল বুড়োর গ্রামে

খুব ভোরে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। ফযরের আযান কানে এলো। নামাযটা পড়ে ভাবলাম যাই গ্রামটা একটু ঘুরেই আসি,কাল রাতেই বেড়াতে এসেছি এইগ্রামে। বাইরে এখনো অন্ধকার কাটেনি,আবছা আলোতে চারপাশ কেমন যেন রহস্যময় লাগছে। হাঁটতে হাঁটতেই বড় দীঘিটার পাশে চলে এলাম।
কি সুন্দর শাপলা ফুটে আছে দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। হঠাত একটা শব্দ কানে এলো,কারা যেন কথা বলছে,অন্ধকারে ভয় পেয়ে গাছের আড়ালে দাঁড়ালাম। তাকিয়ে দেখি দুজন নারীপুরুষ হাত ধরাধরি করে হাটছে,আর হাসাহাসি করছে,মেয়েটার হাত ভরতি শাপলা। ওমা এইটাতো আমাদের মন্তু ভাই ,টুনি ভাবী। কাছে আসতেই চিনে গেলাম ওদের। ওদের কিছু কথাও কানে আসলো আমার…”এত রাইতে তুমি আমার সাথে আইসো শুনলে মকবুল ভাই রাগ করবো না?? হুহ…ওই বুইররা রে আমি পাত্তা দেই নাকি…………ঐ বুইড়রার নাক আমি ফাটায় দিমুনা ….”
ভয় পেলাম আমি,সব কথা শুনারে আর রুচি হলো না…মন্তুর উপর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। টুনিটা না হয় বাচ্চা মেয়ে ভুল করতেই পারে তুইতো আর বাচচা না।আম্বিয়ারে বিয়ের কথা বলে রাখছো আর এইখানে টুনির সাথে প্রেম করা হচ্ছে।নাহ মানতে পারলাম না। যাই আম্বিয়া আপারে খবরটা দিতে হয়। কিন্তু প্রব্লেম। আম্বিয়া আপাদের বাড়িটা যে চিনি না। আচ্ছা হাঁটতে থাকি পেয়ে যাবো। তাই আর দেরি না করে পা বাড়ালাম।
ততক্ষনে চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। দুর থেকে একজন কে আসতে দেখলাম,ভালই হলো উনাকে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আম্বিয়া আপুদের বাসাটা চিনা যাবে। ওই লোকের হাতে আবার গাছের ডাল একটা। উরে বাবা এই যে দেখি আবুল ভাই।ও আচ্ছা এই জন্যে তাহলে হাতে লাঠি!! আহহারে সালেহা ভাবীর উপর দিয়ে যে কি ঝড়টা বয়ে গেছে ভাবতেই মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। তারপরও ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ..”ভাই জান আম্বিয়া আপাদের…”আমার কথা টা শেষ হতে দিলো না আবুইল্ল্যা।”আম্বিয়া ,আম্বিয়া ..কি হইছে আম্বিয়ার .ও কোথায়..”?? আম্বিয়ার কথা শুনে চকচক করে উঠলো আবুল্ল্যার চোখ। শালা…দুই বউরে মাইররা তোমার শখ মিটে নাই..আস্তে করে কেটে পড়লাম।।
কি যে হচ্ছে আজকে ,ভোর থেকেই মেজাজটা শুধু বিগড়ে যাচ্ছে। তাও দেখি আম্বিয়া আপুদের বাসাটা খুজে পাই কিনা। হঠাত দেখি বোরকা পড়া খোঁড়া এক মহিলা পাশ দিয়ে চলে গেলো,কি একটা অজানা আশংকা ভর করলো আমার উপর। আমি হাঁটতে লাগলাম। একটা বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো। ওই শব্দ অনুসরন করে বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখি আম্বিয়া আপু কাঁদতেছে,সামনে এক বুড়োর লাশ।আমাকে দেখে আম্বিয়া আপু বলে উঠলো” ভাইয়া আপনি যান গা আমগো এইখানে ওলা বিবি আইসে….”
আমি যা আশংকা করসিলাম তাই তো হইছে,ঐ বোরকা আলি তাহলে ওলা বিবি ছিলো..মিস করে ফেললাম ,ঊনারে ধরে যদি নদীটা পার করে দিতাম তাহলে এ যাত্রায় গ্রাম টা বেঁচে যেতো। থাক এতো চিন্তা করার টাইম নাই।চাচা আপন জান বাঁচা। তাড়াতাড়ি গ্রাম থেকে কেটে পড়লাম ।। আহারে আম্বিয়া আপুটারে আর কথা টা বলা হলো না।আপুটার জন্যে কেন জানি খুব মায়া হচ্ছে। এমন পরোপকারী হয় নাকি আজকের দিনে।।

যাক তাড়াতাড়ি বাসে উঠলাম,আজিমপুরের বাস। বুয়েট যাইতে হবে,পরীক্ষা আছে। বাসওয়ালা আমাকে নামায় দিলো এক্কেবারে কবরস্থানের সামনে।
চারপাশে কেউ নাই। একটা শব্দ কানে এলো,এগিয়ে দেখি ভাঙ্গা একটা কবর থেকে আসছে শব্দটা..”আমি মরি নাই মরবো না…..আমি কবরে যাবো না….”। ঘটনাতো আমার কাছে পুরাই ক্লিয়ার,আশেপাশেই কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই মুদ্দা ফকিরও আছে,আমাকে দেখেই তেড়ে আসবে। ক্যাডেট ড্রেস পড়া আমাকে দেখে না আবার পাকিস্তানী পুলিশ মনে করে আক্রমন করে বসে!!! না বাবা এইখানে আর থাকা যাবে না,ওলা বিবি থেকে বেঁচে এসে এখন মুদ্দা ফকিরের কাছে জানটা দেওয়া ঠিক হবেনা।আমি ফুটি……………..

তপু ভাইয়ের লেখাটা পড়ে এতোক্ষন জেগে জেগে জোর করেই স্বপ্ন দেখছিলাম। আবার জোর করেই স্বপ্নটা ভাঙ্গালাম।

১,৪১২ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “মকবুল বুড়োর গ্রামে”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    /*তপু ভাইয়ের লেখাটা পড়ে এতোক্ষন জেগে জেগে জোর করেই স্বপ্ন দেখছিলাম।আবার জোর করেই স্বপ্নটা ভাঙ্গালাম।*/
    এইটা নিশ্চয়ই আমার সেই ফয়েটে দুপুরের কথা লিখছস। প্রেস্টিজে লাগছে তাইনা ওইটা না বুঝার কারণে । হাহাহা

    জবাব দিন
    • না মানে ইয়ে...এই আর কি...

      তোমার ফয়েটের লেখাটা পড়ে এইটা লিখসিলাম অনেক আগেই,তখন তো সিসিবি ছিলো না তাই সচলে পোস্ট করছিলাম (সচলে আমার ফার্স্ট পোস্ট)।পরে ওইখানে সবাই যেই রিএকশ্যন পেয়েছিলাম তাই এইটা আর এইখানে পোস্ট করার সাহস পাচ্ছিলাম না এতদিন।

      জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    থিমটা চরম কোন ডাউট নাই। তবে একটা জায়গা চোখে লাগে। গ্রাম থেকে বাসে উঠলাম বুয়েটে আসতে আর কবরস্থানের সামনে এসে ক্যাডেট এর ড্রেস পড়ে ফেললাম এইটা জানি ক্যামন ক্যামন হয়ে গেসে।

    ওভারঅল ভাল্লাগছে... 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।