একটি সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি এবং…

কাল তারিফের জন্মদিন, একটা স্পেশাল দিন। আর কারো জন্য না হলেও তারিফের জন্য অবশ্যই। তাই এই উপলক্ষ্যে প্রীতি তারিফকে একটা সারপ্রাইজ দেবে বলে ঠিক করেছে। গার্লফ্রেণ্ড হিসেবে এটা তার দায়িত্ব বলেই ধরে নিয়েছে সে।

তারিফ তার কলেজের বন্ধুদের খুব মিস করে। প্রীতির পরিকল্পনা হলো, তারিফের সেই বন্ধুগুলোকে একসাথে ডেকে নিয়ে একটা সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি দেবে। পরিকল্পনামত তারিফের কলেজের বন্ধু নুর-এর সাথে যোগাযোগ করলো প্রীতি।

-হ্যালো, নুর বলছো?

-হ্যা, কে? প্রীতি?

-হুম, কি খবর? কেমন আছো?

-এইতো, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তোমার খবর কি?

-ভালো, শোনো, কাল তোমার বন্ধু তারিফের তো বার্থডে, কি করা যায় বলতো?

-(মুহুর্তেই ক্যালেণ্ডার দেখে নিয়ে) ও! তাইতো! উমম, এক কাজ করো, ওকে উইশই করো না! হা হা

-উইশ করবো না মানে?! পাগল নাকি?!

-তাহলে তুমিই বলো কি করতে চাও…

-আমার তো ইচ্ছা, তোমরা কলেজের বন্ধুরা আর আমি মিলে একটা সারপ্রাইজ ট্রিট দেই।

-দারুণ আইডিয়া! কিন্তু ও তো হয়তো আগে থেকেই তোমার সাথে প্রোগ্রাম সাজিয়ে বসে আছে!

-আররে না, আমি বলে দিয়েছি কাল আমার খালার বাসায় যাওয়াই লাগবে, কাল বের হতে পারবো না। প্রথমে একটু মন খারাপ করলো, তারপরে ঠিক হয়ে গেছে। এখন চলো প্ল্যান-প্রোগ্রাম করি…

দুজনে মিলে প্লেস ঠিক করলো, ঠিক করলো কোথা থেকে কেক কিনবে, কোথা থেকে ক্যাণ্ডেলস্‌ কিনবে ইত্যাদি। আর নুর ওর সব বন্ধুদের ম্যানেজ করতে লেগে গেল। ঠিক হলো, পরদিন সন্ধ্যা ৬টায় তারা পুর্বনির্ধারিত রেস্টুরেন্টে মিট করবে। আর ওদের দুই বন্ধু, নিশাত আর মুকিত অনেকদিন পর দেশে ফেরায় একটা গেট-টুগেদার করবার কথাই ছিল। এই সুযোগে সেটাও হয়ে যাবে। তারিফকেও জানিয়ে দেওয়া হলো রেস্টুরেন্টের নাম, তবে জানানো হলো না কি হবে, শুধু একটা গেট-টুগেদার নিশাত আর মুকিতের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে।

 


 

 

পরদিন, অর্থাৎ যেদিন তারিফের বার্থডে, প্রীতি নুরের সাথে মিট করবে বিকাল ৪টায়। নুর ছেলেটাকে প্রীতির খুব একটা ভালো না লাগলেও ও আবার তারিফের খুব ক্লোজ ফ্রেণ্ড, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও নুরই ভরসা। প্রীতি গাড়ি থেকে নেমেই দেখে নুরের সাথে ওদের বন্ধু অশোক, সজীব আর নিশাতও আছে। ওরা সবাই মিলেই কেক আর অন্যান্য জিনিসপত্র কিনলো। এরপর তারা রওনা হলো রেস্টুরেন্টের দিকে।

সন্ধ্যা ৬টা বাজতে এখনো কিছু বাকি, অশোক আর সজীবের তর সইছে না, তুই পিছ পেস্ট্রির অর্ডার দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। প্রীতি, নুর আর নিশাত কেক আর ক্যাণ্ডেলস নিয়ে পার্টি আয়োজনে ব্যস্ত।

হঠাৎ নুরের ফোনে তারিফের কল,

-দোস্ত, একটা প্রবলেম হইছে…

-কি? কি প্রবলেম?

-রাস্তায় ট্রাফিক আমার বাইক আটকাইছে, টাকা চায়…

-কেন? কাগজ-পত্র ছিল না? কতবার বলি লাইসেন্সটা করে নে!

-তোর উপদেশবাণী থামাবি?! কাগজ ছিল, কিন্তু তাও টাকা চায়, ঘুষ খাওয়ার ধান্দা আর কি!

-ও! কত চায়?

-পাঁচ?

-পাঁচশ টাকা? তোর কাছে নাই? পাঁচশ টাকাও পকেটে নিয়ে ঘুরিস না?!

-আরে ধুর ব্যাটা! পাঁচ হাজার। আমার কাছে অত নাই। এক হাজার মত হবে।

-আচ্ছা, দাঁড়া, দেখি কি করা যায়।

-দোস্ত, তুই আয় একটু, বনানীর এদিকে, বাকি কেউ থাকলে ওদেরও নিয়ে আয়।

-ওকে।

 

কি ঝামেলা, যার জন্য এত আয়োজন, সে-ই নাকি ট্রাফিকের গেঁড়াকলে! নুর বাকিদের জানাতেই সবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সবাই উঠে পড়লো, রওনা দেবে বনানী। পেছন থেকে অশোক আর সজীবকে ডাক দিলো ওয়েটার, “স্যার, বিলটা দিয়ে যান।” তাড়াহুড়াতে বিলটাও দিতে মনে নেই ওদের। সবাই মিলে রওনা দিলো বনানী। যারা এসে পৌছায়নি তাদেরকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হলো প্ল্যান চেঞ্জ, ডেস্টিনেশন বনানী। যে-ই শোনে সে-ই ক্ষেপে যায়, বলে, “কী দরকার ছিল চেঞ্জ করার!”। নুর, নিশাত ওদেরকে যতটুকু সম্ভব বুঝিয়ে বলে শান্ত করে। বাকিরাও বনানী রওনা দেয়। সবুজ আর মাকসুদ একইসাথে মিরপুর থেকে আসছিলো, এতদুর এসেও আবার প্রায় উলটা পথে যাত্রা করতে সবুজের একটুও ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু কি-ই আর করা! বন্ধু বলে কথা!

 


 

 

এদিকে প্রীতির হচ্ছে মেজাজ খারাপ, তারিফের দুর্ভাগ্যের উপর, আর রাস্তার জ্যামের ওপর। ওদিক থেকে নুরকে বারবার ফোন দিচ্ছে তারিফ। প্রীতিকে কেন ফোন দিচ্ছে না তা ও জানে, অযথা প্রীতিকে টেনশন দিতে চাইছে না তারিফ। তারিফের জন্য চিন্তা হচ্ছে ওর, তারপরও ফোন দিতে পারছে না। ভালোই ভালোই ঝামেলা চুকে গেলে তো ভালো, না হলে এখন ফোন দিলে আবার জবাবদিহি করা লাগবে কেন ওকে মিথ্যা বলেছে প্রীতি।

নুরের দিকে তাকায় প্রীতি, প্যাকেট-করা কেকটা হাতে বসে আছে নুর। সেই কেনার পর থেকেই কেক নুরের হাতেই…

 


 

 

নুর, নিশাত মিলেই পাঁচ হাজার টাকা ম্যানেজ করে ফেলেছে, নুরের এটিএম বুথ থেকে তোলা লাগবে, নিশাতের ওয়ালেটেই আছে বাকিটা। ওরা যখন কাছাকাছি পৌছে গেছে, তারিফকে ফোন দিলো নুর। তারিফ ওদেরকে বনানীর একটা ফুড কর্ণারে ওয়েট করতে বললো, আর বললো বাকিদেরকেও ওখানে থাকতে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না ওরা, তারিফ কেন সরাসরি ওর বাইক ধরা-খাওয়া যায়গায় না যেতে বলে অন্যখানে যেতে বললো! ওকি ভয় পাচ্ছে যে পোলাপাইন মিলে হয়তো ট্রাফিকের সাথে ঝামেলা পাকাবে। যাক গে, ওরা ফুড কর্ণারে বসলো, কিছুক্ষণের মাঝেই একে একে মুকিত, সবুজ, শফিক, মাকসুদও চলে আসলো। কিন্তু তারিফের দেখা নেই, ফোনও ধরছে না।

বুক দুরু দুরু করছে প্রীতির, কেন জানে না। ত্রাফিক পুলিশ তো অত ভয়ঙ্কর না! তারপরও যদি থানা-পুলিশ হয়। তারিফের তো আবার উচিত কথা বলতে বাধে না, কখন কী বলে দেয়। হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। বনানীর এই এলাকায় সচরাচর তো ইলেক্ট্রিসিটি যায় না, গেলেও জেনারেটর তো চালু হয়ে যাবার কথা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। টেবিলে কিছু একটা রাখার মৃদু আওয়াজ হলো। ইলেক্ট্রিসিটি আসতেই সবার চোখ গেল টেবিলে, আলাদা নতুন একটা কেক সামনে নিয়ে ভেটকি মেরে হাসি দিয়ে তারিফ দাঁড়িয়ে আছে। তারিফ বললো, “বয়েজ, উইশ মি ‘হ্যাপি বার্থডে’!”।

ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই নীরব, প্রীতির দিকে চোখ যেতেই তারিফ বলে উঠলো, “আরে! তুমি! এইটা তোমার খালার বাসা?”। প্রীতি রাগ-অভিমান-চমক-সুখ আর নানাবিধ আনুভূতিতে নির্বাক হয়ে আছে। শফিক বললো, “এসবের মানে কি?”। তারিফের নির্বিকার উত্তর, “আরে ব্যাটা, আমার বার্থডে, আমি ট্রিট দেবো আর তোমরা মজা করে খাবা? তাই একটু খাটালাম তোদের। হিহিহি! আর কারেন্টের ব্যাপারটা? রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে একটু রিকুয়েস্ট করতেই রাজি হয়ে গেল!” সবাই মিলে তারিফকে উত্তম-মাধ্যম দিতে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রীতি তখনও হতবাক হয়ে দাড়িয়েই আছে। আর নুরের হাতে ওদের কেনা কেকটা…

বন্ধুদের কিল-ঘুষির মাঝে চোখাচোখি হয় প্রীতি-তারিফের। প্রীতির গালে টোল-পড়া হাসি দেখে তারিফ মনে মনে পরিতৃপ্ত হয় এই ভেবে যে, সে ভুল মেয়েকে পছন্দ করেনি। প্রীতির এই সারপ্রাইজ উপস্থিতিতে তারিফ যারপরনাই আনন্দিত। ওদিকে তারিফের চোখে বন্ধুদের সাথে পাওয়ার আনন্দ আর ও-র উপস্থিতিতে বিস্ময় দেখে প্রীতির মনটা এক নির্মল আনন্দে ভরে যায়।

 

বি.দ্র. সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে মিথ্যা একটি গল্প। কারো সাথে মিলে যাবার কথা না, তবুও মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতালমাত্র। তবে, ঘটনাটা সত্যি হলে মন্দ হত না!

 

১০ টি মন্তব্য : “একটি সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি এবং…”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।