ততদিনে আমাদের সুদিন চলে আসছে। কোন জায়গায় চান্স না পাওয়ার সামাজিক,মানসিক গ্লানি কাটিয়ে ততদিনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ছাত্র হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছি। “ক্যাডেট কলেজে পড়লেই কি সবাই ভাল জায়গায় চান্স পায়” বলা নিন্দুকের মুখে তখন “জানতাম এই ছেলেই একদিন…” বানী শোভা পায়।
শীতের কোন কোন কোন সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে চলে আসে নাসিম। আমরা সারাদিন সারা টাঙ্গাইল চষে বেড়াই। শহর পেড়িয়ে,নদী পাড় হয়ে চলে যাই কোন এক চরের গ্রামে। গ্রামের আতিথেয়তায় এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে বিকাল পেড়িয়ে বাসায় ফিরি। রাতের বেলা সিলেটের বাস ধরি। নাইটকোচের দরজায় দাঁড়িয়ে কালো চাদর জড়িয়ে গোল্ড লিফের বংশ উদ্ধার করি। এরপর সিলেটের বর্তমান সিগারেট বিক্রেতা তাসনীম সহ আড্ডাবাজি শেষে ঢাকায় নাসিমের নিকুঞ্জের বস্তিতে ফিরে আসা। বস্তির টিভিতে ক্যাটরিনা’র “গালে লাগ যা” দেখি আর শূন্য পকেটে চিন্তা করি দুপুরে না হয় কিছু নাই খাইলাম রাতের খাবারটা কার উপর চালানো যায়।
বস্তির জীবনের ইতি করে নাসিম আমাদের জন্য বাসা ঠিক করে চাঁনখারপুলে।ঢাকার বুকে এমন বাসা আর দ্বিতীয়টি নাকি পাওয়া যাবে না। অনেকটা ডুপ্লেক্সটাইপ,বাট ডুপ্লেক্স না, সান বাঁধানো ঘাঁটের মত বাট ঘাট নাই,সামনে অনেক বড় উঠান যেখানে ফুটবল খেলা না গেলেও অনেক কিছু খেলা যাবে নাসিমের বর্ণনামতে। বাসা দেখাতে এসে রেজোয়ানের নতুন হওয়া হওয়া প্রেমটা চুড় চুড় করে ভেঙ্গে গিয়েছিল চাঁনখারপুলের কোন এক বাকরখানী দোকানের সামনেই। আর আমাদের স্বপ্ন চুন খসে পড়া দেয়ালের চারপাশে অসহায় ভঙ্গীতে আটকে থাকে।
ঐদিন স্বপ্ন ভঙ্গ হলেও বাসাটা প্রিয় হতে সময় নেয় নি।নাসিমের কথামত বিশাল বড় উঠান না হলেও যেই উঠানটি ছিল সেখানে দাঁড়ালে “একটি তুলসী গাছের অত্নকাহিনী” গল্পএর চরিত্রের মত লাগত নিজেকে। রাত্রে খিচুড়ির লোভ দেখিয়ে জগন্নাথ হল থেকে ডেকে নিয়ে আসতাম খাদ্যপ্রেমিক রাজন কে। আসার পথে বকশীবাজার থেকে আমাদের খাদ্য নিয়ে আসত রাজন। খিচুড়ী মাংস তো দূর কি বাত ভর্তা আর ডাল দিয়ে ডিনার করাও ছিল অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার । কলেজের জুনিয়র আর আমাদের ব্যাচমেটদের নিয়ে বাসাটা তখন পূর্ণাঙ্গ রঙমহল। পুরানো জমিদার বাড়ি স্টাইলের বাসাটা ঢাকার মধ্যে আসলেই অন্যরকম ছিল। সন্ধ্যার দিকে হেটে হেটে বকশী বাজার যেতাম আমি আর নাসিম। সেখান থেকে রিকশাওয়ালা মামার কাছ থেকে সিগারেট কিনে সেই রিকশা নিয়ে সিগারেট টানতে টানতে টি,এস,সি। মাঝে মাঝে আরো কয়েকজনকে সাথে পাইতাম আর না হলে আমরা দুই জনেই বসে বসে প্ল্যান করতাম, ব্যাচের কে সবার আগে মারা যাবে? তার নামে আমরা একটা ট্রাস্ট খুলব এবং মেধাবী গরীব ছেলে মেয়েদের বৃত্তি দিব।
এভাবে চলতে চলতেই একদিন বিদেশের স্কলারশীপ হয়ে গেল আমার।সব ছেড়েছুড়ে চলে আসলাম। তখনকার কথাগুলো হয়ে যেতে থাকল “পুরানো সেই দিনের কথা”। কলেজের দিনগুলোর বাইরেও এই দিনগুলো কোনভাবেই ভুলে যাবার মত না। দেখতে দেখতে সেই দিনগুলোও এখন বেশ আগের হয়ে গেছে। আবার ছলনাময়ী “স্মৃতি” হয়ে যাচ্ছে। দিনগুলো চলে যাচ্ছে, শুধু কথাগুলো থেকে যাচ্ছে।
গল্প বড় হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আমাদের গল্প কোন গল্পের বিষয় না, এগুলা নিয়ে মহাকাব্য লিখার মত। শেষ হবে না। নাসিম ছেলেটার ডাক নাম জেনি। মোবাইলে “jeny calling” দেখলে একটা সুখ হত। বুক খালি করা অনুভূতি। পরক্ষণেই বাস্তবে প্রত্যাবর্তন। কারো মোবাইল হাতে নিয়েই নাসিমের প্রথম কাজ ছিল ইনবক্স চেক করা। সেই ছেলেটাই এখন তার মোবাইলে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখে। অনেক গুরুত্বপূর্ন মেসেজ নাকি থাকে সেখানে। আজ ছেলেটার জন্মদিন। আজকেও মনে হয় কিছু গুরুত্বপূর্ন মেসেজে তার ইনবক্স ভরে যাবে। সেই গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দাতাদের নাম না হয় আরেকদিন জানা যাবে। আপাতত তাকে জোড়া গলায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই…
কিন্তু শেষ রক্ষা তার হয়নি। তার মেসেজ ইনবক্স নিয়ে আমি রাডার বলছি শিরোনামে কিছু লিখমু নাকি ভাবছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা বার্থডে বয় জেনি অথবা নাসিমকে। 😀 😀 😀
Prisoner of Own Mind
ইনবক্সের কথা ঝাতি ঝানতে চায় 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
বসে বসে এই প্ল্যান করতেন ভাই????
নাসিম ভাইকে জন্মদিনের অনেক অনেক
শুভেচ্ছা।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
হ এইসব প্ল্যান করতাম 🙁
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
B-) B-) B-)
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
একটু ফাকিবাজি লেখা মনে হইলো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব ভাই, কথা ঠিক আছে 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
দিবস,
তোমার বাংলা নোটখাতা জুনিয়রদের দিয়া আসছিলা তো! 😀
জেনির জন্মদিবসে শুভেচ্ছা।
দাদা, বাংলা ঐভাবে নোট করি নাই আর করলেও সেগুলা জুনিয়রদের দেয়ার মত ছিল না 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
আমার দেখা একজন ট্রু ব্লগার- দিবস কান্তি, নো ফাঁকিবাজি। লেখা বরাবরের মতোই চমৎকার
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
হ, আমি ট্রুলি বোলোগ দিয়া ইন্টারনেট চালাই :grr: :grr: :grr:
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
চমৎকার !
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে
ধন্যবাদ আপু 🙂 :teacup:
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
দিবস লিখাটা ভালো হয়েছে... চাঙ্খার পুল এর বাসায় কিন্তু পানসী ছিল যেটাতে করে অনেক বিকেল পার করে দিতাম... :)) :)) :)) :)) :)) :)) :)) :))
আর পাইপ টানতাম। 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি