১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ছিল বাংলার ক্ষমতার ইতিহাসের এক জঘন্য কালো অধ্যায়। পলাশীর আম বাগানে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব স্রাজউদ্দৌলা’র করুণ পরাজয় নিয়তি অবধারিত। ব্যক্তিজীবনে উচ্ছৃঙ্খল, স্বধীণচেতা, কিছুটা অপরিণামদর্শী ও একগুয়ে স্বভাবের হলেও উচ্চাভিলাসি এ দেশপ্রেমিক তরুণ ইংরেজ আগ্রাসনের কড়াল গ্রাস থেকে বাংলাকে মুক্ত করে স্বাধীনভাবেই শাসন করতে চেয়েছিলেন এই বঙ্গদেশকে। কিন্তু ইতিহাসের রক্তের দায় শোধ করতে গিয়েই বড় অসময়ে নিজের জীবন বিপন্ন করতে হয়েছে এই নবাবকে।
এই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নবাবের পতনের সাথে সাথেই বাংলার স্বাধীণতাও হরণ হয়ে যায় । একটা স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের অভাবে শেষ পর্যন্ত একশত নব্বই বছরের জন্য দাসত্বের বেড়ী পায়ে পড়তে হয় বঙ্গসন্তানদেরকে। এজন্যই এই তরুণ নবাবের ইতিহাস আমাদের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ।
পুত্রসন্তানহীন আলীবর্দি খানের মৃত্যুর পর তাঁর মনোনীত ব্যক্তি হিসেবেই স্নেহধন্য স্রাজউদ্দৌলা বাংলা-বিহার এবং উড়িষ্যার তখতে বসেন। মসনদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী খালাতো ভাই বিদ্রোহী শওকত জং কে শায়েস্তা করা এবং খালা ঘষেটি বেগমের মতিঝিলের বাড়ি থেকে চুরি করা রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার করে রাজকোষ সমৃদ্ধ করতে বেশ সময় কেটে যায় এই নবাবের। এরপর ব্যাংকার জগতশেঠ এর দুর্নীতি প্রতিরোধে উদ্যোগ নেন তিনি। এরপর সম্পদের হিসাব চেয়ে ধনী জগতশেঠ’কে স্বপরিবারে দরবারে তলব করলে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন এই ব্যাংকার। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে আঁতাত করে গোপনে নিজের পরিবারকে কলকাতা পাঠিয়ে দেন তিনি। ইংরেজ বাহিনীকে চিঠি দিয়ে জগতশেঠের পরিবারকে দরবারে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দেন এই তরুণ নবাব। আদেশ অমান্য করে কোম্পানী। এতে চটে যান নবাব। টুংটাং করে তাল ভাংতে শুরু করে ঘরে এবং বাইরে।
তরুণ নবাব বুঝতে পারেন, স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে হলে রাজদন্ড আরো শক্তিশালী বুনিয়াদের উপর স্থাপন করতে হবে। নবাবের প্রতি নৈতিকভাবে ক্ষয়ে যাওয়া প্রধান সেনাপতি অভিজাত মীরজাফর আলী খান’দের উপর আস্থা রাখতে না পেরে এজন্য তিনি সাধারণ ঘরের দূর্ধর্ষ যোদ্ধা এবং সৈনিকদের মধ্যে জনপ্রিয় ব্যক্তি মোহনলালকে তুলে আনেন সরাসরি নেতৃত্বে। প্রভাব ক্ষুণ্ন হয় মীর জাফরের। পুঁচকে নবাবের উপর খবরদারি করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন সেনাপতি। নিজের সৈন্য ছাউনিতেও এই দেশ প্রেমিক তরুণের শত্রু আরো বেড়ে গেল। শাসনদন্ড শক্ত করে মুঠোতে ধরার আগেই বড় বড় রথী-মহারথীরা তাঁকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল।
প্রসাদ ষঢ়যন্ত্র উপেক্ষা করেই ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সৈন্য চালনা করেন এই তরুণ নবাব। মুষ্ঠিমেয় দেশ প্রেমিক সৈন্য নিয়ৈও সফলও হন তিনি। এবার চূড়ান্তভাবে ভড়কে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সবগুলো বঞ্চিতের হাত এবার একহাতে পড়ল।
সন্দেহ নেই, নবাবের পতনের জন্য একসাথে অনেকগুলো সমসাময়িক ঘটনাকে দায়ী না করে কোন উপায় নেই আমাদের। ক্ষয়ে যাওয়া মুঘল শাসনের শেষের দিকে ঠিক তেমনি সার্বভৌমত্ব রক্ষা সহ আরো নানাবিধ কারণে পূর্বসুরীদের বাতলে দেয়া পথে চলতে পারেন নি এই আলীবর্দি খানের আদরের নাতি। (যে কি না কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব নিয়েই নানার বিরুদ্ধেও একবার বিদ্রোহ করে পাটনা আক্রমণ করেছিলেন শেষ তারুণ্যে । বর্গি তাড়ানো স্থগিত রেখে পাটনা যেয়ে বিপর্যস্ত নাতিকে রক্ষা করেন সেসময় নবাব আলীবর্দী। কারণ ইংরেজরাই যে তখন স্বাধীনভাবে চলতে শুরু করেছিল।) কারণ, মুঘল সম্রাজ্যের নড়বড়ে অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তখন ক্রমেই স্বেচ্ছাচার হয়ে উঠছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর ইংরেজ বণিকদের স্বাধীণতা সংকুচিত করা সেসময় অবধারিত হয়ে পড়েছিল স্বাধীন নবাবের জন্য।
সাহস আর অদম্য মানসিকতার জোড়ে ফরাসি সিনফ্রে বাহিনীর সহায়তা নিয়ে জুন মাসের শেষ গ্যাড়াকলেও হয়তো পার পেয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু নিয়তি ! প্রথমেই বলেছি নিয়তির কথা ! যুদ্ধ শুরু হবার পরে মীর জাফরের অধীন বিশাল সৈন্য বাহিনীকে অকার্যকর দেখেও প্রথমে ভড়কে যান নি তিনি। কিন্তু গোলার আঘাতে আরেক বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মদনের হঠ্যাৎ মৃত্যু বিচলিত করে তোলে তাঁকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে শিক্ষা দেয়ার জন্য যে জেদ নিয়ে এতো কিছুর পরেও দাপটের সাথেই দরাজ কন্ঠে আওয়াজ তুলেছেন এই নবাব, সেখানে ছন্দপতন ঘটে! দেশের স্বার্থে মীর জাফর আলী খাঁনের সহায়তা চান তিনি যুদ্ধের ময়দানে ! এই প্রথমবারের মতো জগত শেঠ-মীর জাফর আলীর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাগে পান সিরাজ’কে। গোলন্দাজ বাহিনীকে তল্পি-তল্পা গোটাতে পরামর্শ দেয় জাফর। ইংরেজদের সাথে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসে সে। নিরুপায় নবাব বাধ্য হন জাফরের পরামর্শ শুনতে। কিন্তু গোলন্দাজ বাহিনী’কে সরানোর পর ইংরেজরা আর দেরী করেনি। রাতের আঘাতে পালিয়ে যেতে থাকে স্রাজের কীংকর্তব্যবিমূঢ় সৈন্যরা। এটাকে নিয়তির পরিহাস ছাড়া আর কী বলা চলে! বাংলার স্বাধীণতা অস্ত গেল স্বদেশী বেঈমান আর নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে!
এবার আসুন নিয়তির ব্যাপারে !
আলীবর্দি খান ভালো শাসক ছিলেন । কিন্তু তিনি ইংরেজদেকে ব্যবসা করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যেটা ছিল নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর কৌশলের ধারাবাহিকতা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের স্নেহধন্য সবাব মুর্শিদকুলী খান এই কাজটা করেছিলেন রাজস্ব বৃদ্ধি করে সমৃদ্ধভাবে শাসনকাজ চালানোর জন্য। তিনি এক্ষেত্রে সফলও অবশ্য।
কিন্তু বণিকদের বাড়াবাড়ি আর বিপরীতে সিরাজের তীব্র জাতীয়তাবোধের কারণে সেই ইংরেজদের সাথেই চূড়ান্ত দ্বন্ব্দ লেগে গেল তরুণ নবাবের। তবে ক্ষিপ্রতা এবং অদম্যতার কারণে এ ক্ষেত্রে জিতেই যেতেন নবাব। কিন্তু তিনি হেরে গেলেন নিয়তির কাছে ! ইতিহাস হয়তো রক্তের দায় রক্ত দিয়েই শোধ করে!
হায়দ্রাবাদের হতদরিদ্র মুর্শীদকূলী খাঁ নিজ গুণে রাজ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন সম্রাটের দপ্তরে হিসাবের কাজে পারদর্শীতার জন্য তাকে পুরস্কার স্বরূপ বাংলায় পাঠানো হয় সুবাদারি দিয়ে। আমিনী পদ্ধতিতে শিকল দিয়ে জমি মাপা সহ অনেক সংস্কার কেরন তিনি। কর আদায়ের সুবিধার্তেই তিনি হয়তো এসব করেছেন। তবে সুশাসনের জন্য শায়েস্তা খাঁর পর তাকেই বলা হয় যোগ্যতম শাসক। শেষ পর্যন্ত বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হিসেবেই অভিষিক্ত হন তিনি। কী ভাগ্য, তাই না। মুর্শীদ কুলী খাঁই স্থায়ীভাবে দরবারে আশ্রয় দেন ভাসমান আমত্য আলীবর্দী এবং তার ভাইকে।
এই খাঁ সাহেবের কোন ছেলে ছিলেন না। মেয়ে ছিলেন একজন। জিনাত উন নিসা। তার জামাই এর নাম সুজাউদ্দৌলা। সুজা ছিলেন মোগল সম্রাজেরই একজন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা। মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে জামাতাকে বিহারের দায়িত্ব নবাব দেন মুর্শীদ কুলী। আর নবাবীর জন্য মনোনীত করেন একমাত্র দৌহিত্র জিনাত-সুজার সন্তান তরুণ সরফরাজ খান কে।
কিন্তু মুর্শীদ কুলীর মৃত্যুর পর রাজ আমত্যদের সাথে যোগসাজসে নবাবী নেন সুজা। পিতা নেতৃত্ব নেয়ায় পুত্র সরফরাজ তাঁর আনুগত্য মেনে নেন। সরফরাজকে বিহারের দায়িত্বে পাঠাতে চাইলে মায়ের বাঁধার মুখে সরফরাজ বাংলাতেই থেকে যান। একমাত্র সন্তানকে চোখের আড়াল করতে চাননি জিনাত। পরে বাধ্য হয়েই আমত্যদের মধ্যে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব বিচক্ষণ আলীবর্দীকে বিহারের দায়িত্ব দেন আয়েশী নবাব সুজা। আলীবর্দীর ভাই আহমদ এবং ব্যাংকার জগত শেঠকে রেখে দেন দরবারের পরামর্শক হিসেবে।
ব্যাস আলীবর্দীর উস্থান শুরু। প্রশাসক হিসেবে ভালো হলেও তেজদীপ্ত যোদ্ধা ছিলেন না সুজা। তার মৃত্যুর পর মসনদে বসেন একমাত্র বৈধ উত্তরসূরী সরফরাজ খাঁ। কিন্তু এই তরুণের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি উচ্ছাভিলাষী সেনাপতি আলীবর্দী। আর প্রসাদে থেকে তরুণ নবাবের উপর খবরদারি করতে থাকেন আলীবর্দীর বর্ষিয়ান ভাই হাজী আহমদ। কিন্তু নবাব সরফরাজ ষঢ়যন্ত্রর গন্ধ বুঝতে পেরে আহমদকে ধরে ফেলেন। অন্যদিকে আহমদকে অপমানের অজুহাত তুলে নবাবকে আক্রমনের জন্য বের হয় তাদেরই বিশ্বস্ত সেনাপতি আলীবর্দী।
দক্ষ এবং যোগ্য মুর্শীদকুলী খাঁর উত্তরসুরীর উপর আঘাত হানতে কোন সৈনই আগ্রহ দেখায় না। যার ফলে চতুরতার আশ্রয় নেন আলীবর্দী। রাতের আঁধারে যুদ্ধসাজে অভিযানে বের হন তিনি। মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কোরআনের উপর হাত রেখে মতান্তরে ইটের উপর সোনালী কাপড় পেঁচিয়ে তাকে কোরআন বলে সেটার উপর হাত রেথে সৈন্যদেরকে শপথ করান যে- জয়ী হয়ৈ যুদ্ধ হয়ে সবাই একসাথে যুদ্ধ থেকে ফিরবেন আথবা মৃত্যুকে বরণ করে নিবেন। সুলতানি আমলের ধর্মান্ধতা বিব্রত করে সৈন্যদেরকে।
এদিকে সরফরাজ খাঁ তা জানতে পেরে প্রস্তুত হন। কিন্তু পরে তাকে বার্তা পাঠানো হয় সন্ধির। যুদ্ধ সাজ ত্যাগ করে আলীবর্দীকে বরণ করে নেয়ার জন্য ফটক সাজান সরফরাজ। কিন্তু হায় আলীবর্দী প্রকান্ড আক্রমণ সাঁনিয়ে তছনছ করে দেন তিনপুরুষের নবাবীর ধারা। পরাজয় বুঝতে পেরেও সাহসের সাথে হাতীর পিঠে চড়ে তীর নিক্ষেপ করতে করতে আলিবর্দীর দিকে এগুতে থাকেন তিনি। এসময় গোলার আঘাতে জীবন হারান সাহসী মুর্শীদকুলী খাঁর আদরের দৌহিত্র নবাব সরফরাজ। এই সরফরাজ খার সময়েই শায়েস্তা খানের বন্ধ করে দিয়ে যাওয়া ঢাকা গেট আবার উম্মুক্ত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ বলে গিয়েছিলেন টাকায় আটমন চাল যদি আবার কেউ খাওয়াতে পারে তবেই যেন এই গেট খোলা হয়। মুর্শীদকুলী এবং সুজাউদ্দিনের সুশাসনের ধারাবাহিকতায় সরফরাজ খাঁ ঠিকই শায়েস্তা খানের মতোই চালের দাম কমিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু রাতের বীরোচিত মৃত্যুতে তিনি বিদায় নিলেন আলীবর্দীর ক্রোধে।
ব্যাস। শুরু হল আলীবর্দী যুগ। শাসক হিসেবে আলীবর্দীও বেশ সফল। বাংলার ইতিহাসে মুর্শীদকুলীর পর তিনিও একজন সফল এবং দক্ষ নায়ক । এই মুর্শিদকুলী খাঁ এর অনুরোধেই জগত শেঠ কে রাজকীয় ধনাগারের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়। আর মুর্শীদকুলী খানের দৌহিত্র সরফরাজ খাঁনের জামাই মুরাদের অধীনে (এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয় মুরাদ আলীর)কোষাধাক্ষ্য হিসেবে দায়ত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধানেই বেড়ে ওঠেন রাজবল্লভ। আলীবর্দীর ভাই হাজী আহমদ তাকে উড়িষ্যার ডেপুটি নবাবও বানিয়েছিলেন পরে। হাজী আহমেদের বড় পুত্র এবং সিরাজের খালা ঘষেটি বেগমের সাথে যার সম্পর্ক ছিল অতি ঘনিষ্ঠ। যারা শওকত জং কে পুতুল নবাব বানাতে চেয়েছিল।
শেষের দিকে আলীবর্দীর বিশ্বস্ত সেনাপতি মোস্তফা খান-ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল নবাবি দখলের জন্য। কিন্তু বিচক্ষণ এবং চতুর আলীবর্দী কৌশলে নজর রাখেন তাঁ উপর। এই উদ্ধত সেনাপতি বিহার আক্রমন করলে আলীবর্দীর জামাতা এবং ভাতিজা জয়েনউদ্দিন (সিরাজউদ্দৌলার বাবা) তাকে মোকাবেলা করে শেষ করে দেন ।
মনিবের উত্তরসুরীর রক্তে হাত রঞ্জিত করে মসনদে বসা আলীবর্দীর উত্তরসুরী কী তবে নানার দায় শোধ করল! নাকি ইতিহাসের দায় শোধ হল তরুণ নবাবের হৃদয়বিদায়ক প্রস্থানে!
:clap: সাবাস। রিভিউ ভালো লেগেছে।
ভালো লিখেছ আলীম। আরো মনযোগ দিয়ে পড়ে পরবর্তিতে বিশদ মন্তব্য করব।
khub soto kore, golper moto korei tule dhorte cheyeci. thx bro...
-আলীম হায়দার.1312.
happy to know... thanks.... bro.
-আলীম হায়দার.1312.
১৭৫৭
🙂 thx vai.
-আলীম হায়দার.1312.
একজন ফার্সিভাষী অবাঙ্গালির জন্য যত দরদ দেখা যাচ্ছে, তাতে আমি লজ্জ্বা ছাড়া আর কিছু পাচ্ছি না। আরব, তুরস্ক, আফগান, বৃটিশ প্রত্যেকের মতোই সিরাজ উদ্দৌলা একজন বিদেশী, বিভাষী ছাড়া আর কিছুই নয়। তার জন্য একজন দেশপ্রেমিক বাঙালির সামান্যতম ভালোবাসা থাকা উচিত নয়।
bangla to sashito hoyese tader hat ei. oi somoykar sasok der vitor r k odhik jotno korese banglar !
-আলীম হায়দার.1312.
আলীম, বাংলিশে কমেন্ট দেখলে খুবই বিরক্ত লাগে, আর এত বড় পোস্টটা যখন বাংলায় লিখতে পারলে, দু লাইন কমেন্টও আশা করি বাংলায় লিখতে পারবে। অনুগ্রহ করে বাংলিশে কমেন্ট করা বন্ধ করো।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
- এইটা কি হলো? ১৭৫৬/৫৭ সালে পৃথিবীর কোথাও জাতীয়তাবাদ ছিলনা, বাংলায় ত' নয়ই। সিরাজুদৌলাকে বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতা/শাসক/নবাব হিসেবে বিবেচনা করার ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিকের নয় , বরং "সাহিত্যিকের আবিষ্কৃত" ইতিহাস। কাজেই ......
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জাতীয়তাবাদ যে ছিল না যে এটা কে বলেছে! হয়তো শব্দটা ছিল না। নাহলে স্থানীয়রা কেন বহিরাগত শক্তিকে বাঁধা দিত ! পৃথিবীতে যেদিন থেকে সম্রাজ্যবাদ শুরু হয়েছে তার আগে থেকেই জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়েছে। সম্রাজ্যবাদের মূলেও জাতীয়তাবাদ এবং সম্রাজ্যবাদ প্রতিহত করার মূলে আরো তীব্র জাতীয়তাবাদ। যেদিন থেকে যুদ্ধ ছিল, যেদিন থেকে কোন জাতি সংস্কারের মাধ্যমে একের পর এক সভ্যতার ক্রম উন্নতির দিকে উঠছিল সেটাও ঐ জাতীয়তাবাদের কারণে। কোন জাতির ক্রম বিকাশের মূলেও জাতীয়তাবাদ। আর বাংলা মানে তো আজকের এই 55 হাজার বর্গ মাইল না শুধু, বাংলার পরিধি তৎকালীন হিসেবে আরো ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু সিরাজ কেন ! মুর্শীদকূলী থেকে মীর কাশিম পযর্ন্ত সবার ভিতরেই কখনো না কখনো জাতীয়তাবোধ জেগে উঠেছে। শায়েস্তাখান শাসক ছিলেন । স্থানীয় ছিলেন না। কিন্তু তিনি তো সর্বাধিক সুশাসক ছিলেন। তাঁকে কি প্রশংসা করা যাবে না !! আজব তো !! জাতীয়তাবোধের ধারণা জার্মানী আরো তীব্র করেছে এবং প্রকাশ্য করেছে , কিন্তু তার মানে এই নয় যে- তার আগে জাতীয়তাবাদ ছিলই না। সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলায় , অনেক কিছুর নাম বদলায় , ফর্ম বদলায় ।
-আলীম হায়দার.1312.
- এটা আমি জানি না। ইতিহাসে আমার সামান্য জানাশোনার মধ্যে এইটা আমি পাইনি। তোমার রেফারেন্সটা/গুলো দিও, তাহলে আমার ইতিহাসজ্ঞান ঝালিয়ে নেওয়া যাবে। অর্থ্যাৎ, জাতীয়তাবাদ যে ছিল, সেটা কে বলেছে? কিসের ভিত্তিতে বলেছে/বলছে?
কোথা হতে এই ধারণায় আসলে, তারও রেফারেন্স দিও; কারণ এটাও আমার জানাশোনা সাথে মিলছে না।
ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে ঐতিহাসিক সত্যতা থাকতেই হবে। নিজের চিন্তাভাবনা দিয়ে সেটার ব্যাখ্যা প্রভাবিত হতে পারে, কিন্তু সেখানে ঐতিহাসিক সত্যতাই মূল ভিত্তি। আমি তোমার যে দুইটা দাবীকে কোট করলাম, সেগুলোর ঐতিহাসিক ভিত্তি কি?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সাবরিনা আপা, আপনার লজ্জ্বা আমাকে আরো লজ্জ্বিত করল! জাতিকে মনে হয় আরো বেশী ! আপনারা যে সোনার বাংলার কথা বলেন সেটা যদি কখনো থেকেই থাকে তাহলে সেটা ঐ ভীনদেশীদের জন্যই। তাদেরই ( শায়েস্তা খাঁ, মুর্শীদকূলী খা, সরফরাজ খা ) অনেকের সুশাসনে বাংলা ভূ-স্বগর্ হয়ৈ উঠেছিল। তো তাদের কথা স্বীকার করতে এতো দ্বিধা কেন! আর তারা যে শুধু শাসন করে চলে গেছে তা তো না। তারা তো বাইরের শক্তির কাছ থেকে বাংলাকে রক্ষার জন্য রক্তও ক্ষয় করিয়েছে। ভীনদেশী শাসকদের অনেকে বাংলায় এসে অথবা কয়েকপুরুষ থেকে বাংলায় বসতি গড়ে বাংলাকে যত ভালোবেসেছে আজও বাঙ্গালি তেমন ভালোবাসতে পারেনা দেশটাকে ! শুধু শুধূ বড় বড় কথা বলতে ওস্তাদ !! আর লজ্জ্বা পেতে ওস্তাদ !!!
-আলীম হায়দার.1312.
আহসান ভাই 🙂
-আলীম হায়দার.1312.
এতো বানান ভুল ক্যানো?
x-(
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
স্রাজউদ্দৌলা’র
স্বধীণচেতা,
উচ্চাভিলাসি
কড়াল
স্বাধীণতাও
প্রসাদ
ষঢ়যন্ত্র
নিয়ৈও
স্বেচ্ছাচার
জোড়ে
স্রাজের
কীংকর্তব্যবিমূঢ়
সবাব
কেরন
সুবিধার্তেই
আমত্য
সম্রাজেরই
পদস্ত
উস্থান
উচ্ছাভিলাষী
প্রসাদে
ষঢ়যন্ত্রর
সৈনই
হয়ৈ
সাঁনিয়ে
তাঁ
??????
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
১৯০ বছরের শাসন কে যারা কুশাসন হিসাবে দেখেন আমি তাদের দলে নই। আর সঙ্গত কারণেই নই।
ইতিবাচক দিকগুলো এত বেশি যে নেতিবাচক দিকগুলো আমার মনে সেরকম প্রভাব ফেলে না।
সিরাজ, মুঘলেরা যেমন আমার দেশের নয় তেমনি ইংরেজরাও নয়। তাই এই নিয়ে অযথা মন খারাপ করার কারণও নেই।
তবে যারা মুসলিম শাসনের ইতি হিসাবে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দেখেন তাদের কথা আলাদা।
আর জাতীয়তাবাদ নিয়ে মাহমুদের করা প্রশ্নটি বেশ জুতসই।
তবে বানান ভুল বাদ দিলে বেশ ঝরঝরে লেখা।
লেখককে :teacup: যা কিনা ইংরেজরা এনেছে এদেশে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ