চাপাতি খেয়েছেন কখনো?
আঁতকে উঠবেন না। এটা আঘাত করার অস্ত্র নয়। নিতান্তই সহজপাচ্য একটা খাদ্যপণ্য। এটা গমের আটা দিয়ে তৈরি।
আটার রুটি বললে আমাদের চোখে সহজেই ভাসে একটি খাদ্যের চেহারা। রুমালি রুটি, গরম গরম পেলে মনে হয় মাক্ষন্! কিন্তু গমের আটা দিয়ে তৈরি চাপাতি কি জিনিস?
১৯৭৪ সালের ১৪ আগস্ট লাল্টু-পল্টু ধরণের ৫৬টি বালক (শিশু বললে কি খারাপ শোনায়? কতোইবা বয়স তাদের, ১২-১৩ বছর) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে হাজির হয়েছিল। এর আগে তাদের লিখিত, মৌখিক আর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।
তো সেই শিশুগুলো বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিচিত সব বন্ধু-স্বজনকে ছেড়ে আশ্রয় নিল এক সেমি কারাগারে। প্রথম কয়েকদিন চলল তাদের ক্যাডেট হয়ে ওঠার নানা প্রশিক্ষণ। এরই মধ্যে একদিন সিনিয়র ভাইরা জানালেন আজ রাতের খাবারে থাকছে চাপাতি। তো কি সেই চাপাতি? এ নিয়ে ভীষণ কৌতুহল আনাড়ি বালকদের।
রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং হলের বাইরে লাইনে দাঁড়ালাম। রবীন্দ্র হাউসের ক্লাস সেভেনের সারির শুরু থেকে তিন নম্বরে আমার জায়গা হলো। সারিতে দাঁড়ানোর নিয়মটা হলো উচ্চতায় কম যারা তারা সামনে এভাবে ক্রমে দীর্ঘরা পেছনে। আমাদের ব্যাচে রবীন্দ্র হাউসে শুরুতে আমি ছিলাম উচ্চতায় তিন নম্বর খাটো। মজার বিষয় হলো, যখন দ্বাদশ শ্রেণীতে আমরা সবচেয়ে সিনিয়র তখন আমার অবস্থান ছিল সারির পেছনের তিন নম্বরে, অর্থ্যাৎ উচ্চতায় তিন নম্বর লম্বা!!
ডাইনিং হলে ঢুকে তো আমি রীতিমতো হতবাক! এটার নাম চাপাতি? এর জন্য এতো অপেক্ষা? হা,,! স্রেফ আটার রুটি! আকারে খালি কিছুটা বড়। বুঝলাম চাপাতি দেখে আমার বন্ধুরাও ভীষণ হতাশ। সম্ভবত যারা প্রতিরক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে তারা চাপাতি সম্পর্কে জানতো। বাকিরা সব আনাড়ি!
খেতে গিয়ে বুঝলাম, বাসায় আমরা যে নরম লুচলুচে আটার রুটি খাই এটা তা নয়। বাসার রুটি বানাতে আটা সেদ্ধ পানিতে গোলানো হয়। আর এখানে তিনশ ছাত্রের জন্য সেদ্ধ পানিতে আটা গোলানো অসম্ভব একটা বিষয়। সেই শক্ত রুটি বা চাপাতি ছিড়ে খাওয়াটা কঠিন বলেই মনে হয়েছিল। চাপাতির সঙ্গে প্রথম দেখায় আমার যে অভক্তি জন্ম নিয়েছিল তা কলেজের শেষ দিনটি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
তবে চাপাতির সঙ্গে থাকতো গরু বা খাসির মাংসের কারি। সিনিয়ররা মাংসটা বেশি খেতেন বলে জুনিয়র অবস্থায় ওটা আমাদের কপালে ভালো জুটতো না। তবে সিনিয়র হয়ে সে অপ্রাপ্তির দুঃখটা আর থাকেনি।
আর সিনিয়র অর্থ্যাৎ একাদশ শ্রেণীতে উঠার পর চাপাতির ওপর শোধ নেওয়ার যে দারুণ পথ আমরা বের করেছিলাম সে গল্পটা এবার বলি।
রাতের খাবারে যেদিন চাপাতি থাকতো এই বস্তুটির শত্রু আমরা কয়েকজন ফৌজদারহাট স্কুলের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকে বাংলাবাজারে চলে যেতাম হোটেলে ভাত খেতে। অবশ্য একাজ করতে গিয়ে ধরা পড়িনি কখনো।
আরেকটা কাজ প্রায়ই করতাম আমরা। চাপাতির সঙ্গে ডেজার্ট হিসাবে প্রায়ই দেয়া হতো জর্দা। সিনিয়র হিসাবে ডাইনিং হলে একটা সুবিধা পাওয়া যায়। টেবিলের জর্দাগুলো জড়ো করে গরু বা খাসির মাংস দিয়ে রীতিমতো “পোলাও ভক্ষণ” আপনারা কল্পনাও করতে পারেন না! আমরা সেটাই অনায়াসে তৃপ্তি নিয়ে খেতাম!! এই অসাধারণ মেনুর কথা মনে হলে এখনো গোপনে ঢেকুর তুলি।
হা… হা… হা…
ধন্যবাদ জিহাদ। ভালো থেকো।
ভাইয়া , আপনার যদি এডিটর এ লিখতে খুব বেশি সমস্যা হয় তাহলে প্রথমে নোট প্যাড এ লিখে তারপর এডিটর এ পেস্ট করে লেখা পাবলিশ করতে পারেন।
নোট প্যাড এ কিভাবে বাংলা লিখতে হবে সে ব্যাপারে "রেডবুক" সেকশনে বিস্তারিত বলা আছে। দয়া করে দেখে নেবেন। ধন্যবাদ।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
খাইছে! ভালোই সাহস দেখাইতেন দেখি। 🙂
জর্দা দিয়া খাওয়া হয় নাই, দেখি চান্স পাইলে খাবো। 🙂
কোনো বিয়ের নিমন্ত্রনে চেস্টা করে দেখতে পারেন।
১৯৭৪ সালে আমার জন্ম! 🙁 যাই হউক চাপাতি'র কথা মনে করায় দেয়ার জন্য ৯৯৯ ভাইকে ধন্যবাদ। ইলাস্টিকের মত টানতেই থাকতাম আর ঐটা লম্বা হইতেই থাকতো, ছিঁড়তে চাইতোনা।
ধন্যবাদ তোমাকে। মজার সব স্মৃতি।
কেঁচি নিয়ে গেলেই হত; কেটে টুক্রো টুক্রো করে ফেলা যেত।
চাপাতি একটা প্যাথিটিক জিনিস ছিল। তবে আমরা বেশীদিন সেইটা পাই নাই।
মির্জাপুরে চা পাতি ছিল , মানে চা বানানোর জন্যে ব্যবহার করা হয় যেটা সেইটা আর কি।
কিন্তু চাপাতি বলে কোন কিছু আমরা পাইনাই।
এই জন্যে দুঃখ পাবো নাকি সুখী হবো ঠিক বুঝতেসিনা 😕
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এই ভয়াবহ জিনিসটার সঙ্গে পরিচয় হয়নি বলে সুখী ভাবতে পারো।
এই ভয়াবহ জিনিসটা ছিল না।কিন্তু আমাদের তার চেয়েও খারাপ একটা ছিল...।।তার নাম পরটা।
শনিবার রাতের বেলা দিত।
এইটা খেয়ে ৩য় প্রেপে সবাই ঝিমাত।
এই কারনে তার নাম হইসিল মাদক.........
হুম চাপাতি......খাওন লাগব।
আমি ক্লাশ ইলাভেনে থাকতে এই চাপাতি খাওয়ার জন্যে পকেটে করে কাঁচি নিয়া গেসিলাম ডাইনিং হলে। টেবিলের সবাই হাস্তে হাস্তে শেষ। আমি মনের সুখে কাঁচি দিয়া চাপাতি কেটে খাইসি। ভাগ্যিস মেস OIC এর কাছে ধরা খাই নাই।
সৃজনশীল ক্যাডেট।
আমি ক্লাশ ইলাভেনে থাকতে এই চাপাতি খাওয়ার জন্যে পকেটে করে কাঁচি নিয়া গেসিলাম ডাইনিং হলে। =))
ভাইয়া আপনার প্রোফাইলটা দয়া করে আপডেট করে দিবেন।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
করতেই হবো? চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বাংলায় লিখতে বলার জায়গায় তো বাংলা আসে না।
হ্যা, করে দিলে সবার বোঝার জন্য সুবিধা হয়।
বাংলা আসেনা বলতে ঠিক কি বুঝাচ্ছেন? বাংলা লেখা যাচ্ছেনা নাকি বাংলা লেখার পর আপডেট করলে বাংলা আসছেনা।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
সমস্যা হলে আপনি প্রোফাইল ফিল্ডগুলোর তথ্য কমেন্টে জানান।
আমি আপডেট করে দিচ্ছি।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
প্রোফাইলে তথ্য আপডেট করেছি। তুমি দেখতে পারো। ইংরেজি আসছে।
আবারো ধন্যবাদ জিহাদ।
ওকে । বাংলা করে দিয়েছি।
সম্ভব হলে একটা ছবিও আপলোড করে দিতে পারেন। প্রোফাইল পেজের একেবারে শেষ অপশন হিসেবে ব্যবহারকারি তথ্য সেকশনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ছবি আপলোড অপশনটি।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
দেবো আশা করি শিগগিরই।
আমাদেরও চাপাতি দিতো।
ওইগুলি দিয়া আমরা ডাইনিং হলে ফ্রিসবি খেলতাম।
=))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমাদের ঝিনাইদহে চাপাতি অতটা খারাপ হতোনা বোধ হয়। কারণ আমরা পাল্লা দিয়ে চাপাতি খেতাম। বিশেষ করে কাস্টার্ড দিয়ে। একবার আমাদের কোন এক বন্ধু ১৫ টা খেয়েছিল, আমার সর্বোচ্চ ৯ টা, যতদূর মনে পড়ে।
আমাদের সময় রেকডর্ধারী ছিলেন ১৮তম ব্যাচের নোমান ভাই। সংখ্যাটা এখন মনে নাই। তবে এ ব্যাপারে কলেজে তার নামডাক ছিল।
নোমান ভাই এর কথা মনে করায়ে দিলেন । উনি একটা জিনিয়াস :salute:
আমার রেকর্ড চাপাতিতে ১৮টা অথবা ১৯টা। সঠিক মনে নাই।
শনিবার, চাপাতির দিন। আমি কখনোই খেতে পারতামনা। তবে অনেকে মজা করে খেতো।
খুব মজা পেলাম।
ভাই,এই চাপাতির বহুবিধ ব্যবহার ছিল।প্রায় সময়ই চাপাতিকে গোল করে মার্বেল এর মত বানিয়ে চামচ এর মাথা দিয়ে গুলতি বানিয়ে একজন আর একজন কে মারতাম,হাতের নিশানা ভুল করে একদিন রিকোশেট করে ডিউটি মাস্টার এর মাথায় গিয়ে লাগে.........।।বুঝতে পারে নাই কোন্ দিক থেকে ফায়ার আসছে,তাই কিছু বলে নাই...........................।
চাপাতির গুণ নিয়ে একটা পোস্ট দিতে পারো। ক্যাডেট কলেজে এই একটা খাবারই সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ছিল।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
চাপাতি ছিল এক বিভীষীকার নাম।
আমাদের কলেজে সোমবার রাতে দিত।সোমবার আসলেই আমাদের মুখ শুকিয়ে যেত।ওই দিন আমরা রাতের জন্য খাবার কিনে মজুদ করে রাখতাম...
আমরা লিডিং পাবার পর আমাদের অন্যতম প্রধান সাফল্য ছিল চাপাতি বাতিল করা, অবশ্য এর জন্য অনেক দিন চাপাতি দিয়ে ফ্রিজবি,বোম বাস্টিং...খেলতে হয়েছিল!!!
আইজকা বুয়া আসেনাই। তাই রান্নাও হয় নাই। এমুন খিদা লাগসে, তাই চাপাতির পোস্টটা আবার পইড়া খিদা কমানোর চেষ্টা করতেসি। কিন্তু উল্টা হইসে।
খিদা বাইরা গেছে। 😛 😛
যাই বাইরে থেইকা পরটা-মাংস খাইয়া আসি। 😉 😉
আমরা বাইচা গেছিলাম চাপাতির হাত থাইকা। কিন্তু আমাদের সময়ে আরেকটা জঘন্য জিনিস দিত যা আমরা কেউই খেতে পারতাম না। তাহলো শুক্রবার রাতে খাসী'র (নাকি ভেড়া তা আল্লাহ ই জানে)মাংস আর আটার রুটি। ডিনার শেষে প্রতিটি টেবিলেই দেখা যেত রুটি স্তুপ হয়ে আছে। তবে পরে অবশ্য ডিনার থেকে শিফট করে সেই রুটি শুক্রবার ব্রেকফাস্টে নিয়ে আসা হয়েছিল। সাথে থাকত সবজি আর ডিম ভাজি। তখন তা খেতে খুবই ভালো লাগত।
সানাউল্লাহ ভাই, আপনার লেখাটা খুবই ভালো লাগছে।
কিন্তু বস আমরা বাচি নাই। অনেকেই কেচি নিয়া যাইত কাটার জন্য
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
বড় ই দুঃখিত হইলাম শুইনা...। কে চালু করছিল রে বাপ????
সম্ভবত মেজর ম্যাক্স(মেজর মাকসুদ,এডজ্যুটেন্ট)
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
আমাদের রুটি দিতো বুধবারে, সাথে গরুর মাংস। খেতে খুব একটা খারাপ ছিলোনা, সাথে সুইট ডিশ হিসাবে ফিরনি থাকতো তাই সব মিলায়ে খারাপ হইতো না। তবে আতংক ছিলো 'ঘোড়ার ডাল'। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি-তে রুমি তার মেলাঘরের ক্যাম্পের যে ডালের বর্ণনা দেয় একদম সেইরকম। ঘোড়ার ডাল আর ডিমভাজার কারী ওফফ ...।চিন্তা করলেই ক্ষুধা মইরা যায়!