কলেজ ক্যাম্পাসে আমার একটা প্রিয় জায়গা ছিল ডাইনিং হলের পেছনের পাহাড় চূড়া। কতো রাত ওখানে বসে সাগরের গান শুনেছি! বন্ধু মামুন অথবা শাহীনকে নিয়ে ওই চূড়ায় বসে হতো কিশোর বয়সের কতো গল্প! কখনো কখনো গলা ছেড়ে গান, তাও চলতো। ওখানে বসে শাহীন গান তুলতো উঁচু গলায়, বব মার্লি কিম্বা জোয়ান বায়েজের সঙ্গে প্রথম পরিচয় আমার এই ক্যাম্পাসেই।
অমাবশ্যা অথবা পূর্ণিমা যে কোনো রাতেই ছোট্ট এই পাহাড় চূড়াটা ছিল দারুণ। কলেজ ওয়ার্কশপের পাশ দিয়ে ডাইনিং হলের পেছনে ছিল একটা সরু পথ। ওটা ধরে রাতের আধারে শিক্ষক আর কলেজ কর্মচারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই পাহাড়ে চড়তাম আমরা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে রাতের খাবার শেষে গল্প করতে করতে পথ চলতাম। জ্যোত্স্না রাতে পাহাড় চূড়া থেকে ক্যাম্পাসটাকে অদ্ভূত সুন্দর লাগতো। মনে হতো মিস্টি আলোর চাদর প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে আদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
আমাকে আরো টানতো দূরের সাগরটা। ঢেউ ভাঙার শব্দ আছড়ে পড়তো কানে। চাঁদের আলোয় রূপোর মতো চকচকে আদিগন্ত জল। সাগর আর ক্যাম্পাসের মাঝখান দিয়ে মাঝে-মধ্যে শব্দ করে ছুটে যাওয়া রেলগাড়ি আমাদের নৈঃশব্দে কর্কশ আলোড়ন তুলতো।
শাহীন আমাদের বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ঘোষিত নাস্তিক। অষ্টম-নবম শ্রেণীতে পড়ার সময়ও আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতো কলেজ অ্যাসেম্বলিতে কোরান তিলওয়াত আর মসজিদে মাগরিবের আজান দেওয়া নিয়ে। কলেজের ইসলাম ধর্ম শিক্ষক হাবিবুল্লাহ স্যারের প্রিয় যে কজন ছাত্র ছিল শাহীন আর আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু সম্ভবত এসএসসি পরীক্ষার পর কলেজে ফিরে শাহীন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করে।
১৭ বছরের কিশোর শাহীন অল্প সময়েই ক্যাম্পাসে রীতিমতো বিষ্ময়ের ঝড় তুলেছিল। শিক্ষকরা-সিনিয়ররা নিজেরা দায়িত্ব নিয়েছেন তাকে ধর্মের মাহাত্ম্য বোঝানোর, ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনার। বন্ধুমহলেও তাকে নিয়ে হতো নানা কথা। বেশি ধর্মপ্রাণরা চিন্তিত হলেও আমার মতো যাদের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা সংশয় জন্ম নিচ্ছিল তারা শাহীনের সঙ্গে কথা বলতাম। প্রিয় পাহাড়ের চূড়ায় বসে আমরা ধর্ম, দর্শন নিয়ে কথা বলি। ধর্ম নিয়ে আমার মধ্যে সামান্য সংশয়টাকে আরো জাগিয়ে দেয় ও।
আর পড়াশুনা, সাহিত্য, ব্যক্তিজীবন, পরিবার- এসব নিয়ে মামুনের সঙ্গে গল্প চলতো প্রিয় জায়গাটায় বসে। আমার মধ্যে যে আপাত অন্তর্মুখী একটা মানুষ আজো বাস করে তার অভ্যূদয় সম্ভবত ওই পাহাড়েই। আমি একাকিত্ব উপভোগ করি আজো। পাহাড় চূড়াটা আমাকে বোধ দেয়, চেতনায় আগুন জ্বালায়, ভালোবাসা শেখায়, নির্জনতায় মগ্ন হওয়ার সাহস জোগায়।
সুন্দর লেখা। আরো লেখা আশা করছি। and how abt ur name and a little intro about urself!!
আমার মধ্যে যে আপাত অন্তর্মুখী একটা মানুষ আজো বাস করে তার অভ্যূদয় সম্ভবত ওই পাহাড়েই।....... শিল্পগুণে উন্নীত একটা লেখা।
আপনাদের ডাইনিং হল, ওয়ার্কশপ, সুইমিং পুল, গেস্ট হাউস সবি মনে পড়ে। আর মনে পড়ে, সুবর্ণ ট্রেনে যাতায়াতের সময় BMA, FCC gate এসব দেখতে কী হৈচৈ শুরু করে দিতাম!
ভাল লাগল...
সুন্দর
ভাল্লাগছে লেখাটা।
আপনাদের সময়ের ক্যাডেট কলেজের কথা আরো জানতে চাই...
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ সবাইকে। ব্লগটি সম্পর্কে জিহাদ আমাকে জানিয়েছে। এখানে এসে দু'একবার পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করে বিফল হয়েছি। তবে শেষ পযর্ন্ত জিহাদই সাহায্য করলো। কিন্তু টাইপ করতে রীতিমতো সমস্যায় আছি। এতো ছোট দেখাচ্ছে যে নিজেই লেখা উদ্ধার করতে পারছি না। জিহাদের সাহায্য নিয়ে আশা করি এসব সমস্যা একসময় উতরাবো।
ভাইয়া, আপনি যদি মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আমার পক্ষে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়া সহজ হবে। আর যদি না হয় তবে আমি মেইলে আপনাকে ডিটেইলস জানাবো।
আমার মেসেঞ্জার আই ডিঃ
xihad76@ ইয়াহু.কম
xihad76@হটমেইল.কম
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
তুমি করেই বলি। আমাকে মেইল করতে পারো
sanaullah62@yahoo.com -এ। ধন্যবাদ।
অথবা এখানে লিখতে পারো। আমি ফলো করবো।
ওকে। আপনি কোন ওয়েব ব্রাউজার ইউজ করছেন?
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ব্রাদার আমাকে এসব প্রশ্ন বেশি করোনা ধরা পড়ে যাবো। কম্পিউটার আমার কাছে টাইপরাইটার ছাড়া আর কিছু না। হয়তো তোমাদের ব্লগ ব্যবহার করতে করতে শিখে যাবো।
একটা নতুন পোস্ট তৈরি হয়েছে। এখানে সেভ করা আছে। পোস্ট করে দিতে পারো। সামহোয়ারে এখনো পোস্ট করিনি।
খুব সুন্দর পোস্ট।
ভাইয়া, ৪০০০ তম কমেন্টটা বোধ হয় এই পোস্টে এলো!!
ধন্যবাদ সামিয়া।
পোস্টটা পড়তে অনেক দেরী করে ফেললাম। খুব ভাল লেগেছে। এ ধরণের লেখা আমার বেশী ভাল লাগে। এ ধরণের বলতে এমন ধরণের বুঝাচ্ছি যেগুলোতে, জীবনের কোন কিছু থেকে কোন কিছু পাওয়ার কথা থাকে।
জীবনের কিছু কি ফেলা যায়?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"