ওরা এগারো জন: কারা এরা?

প্রথম পর্ব।।

সারা রাত কেটে গেল গোছগাছ করতে। পিঠটা ব্যাথা করছিল। না পেরে ভোরের দিকে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম গ্রাস করে নিল। বাসা থেকে বেরুতে কিছুটা দেরিই হয়ে গেল। ছুটতে ছুটতে বিমানবন্দরে পৌঁছুলাম। সম্ভবত দলের মধ্যে আমিই সবার শেষে!

কিন্তু না। আরো বিষ্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে দলের অন্যদের সঙ্গে মিশতেই ফিসফিসানি শুনতে পেলাম। এখনো একজন মিসিং! কিছুক্ষণ আগে তাকে ফোন করে ঘুম থেকে তোলা হয়েছে। সময়মতো পৌঁছুতে পারবে কিনা এ নিয়ে আমাদের দলনেতা রাহনুমা বেশ চিন্তিত। আর এই ‘মিসিং মানুষ’টি আগামীতে আমাদের জন্য আরো কতো ‘বিষ্ময়’ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তা জানতে হলে আপনাকে এই ভ্রমণের সঙ্গী হতে হবে।

বোর্ডিং এলাকায় সবাই অপেক্ষা করছি উড়াল দেওয়ার অপেক্ষায়। এমন সময় এলেন ‘মিসিং’ পারসন, আমাদের অন্যতম কণিষ্ঠ উদ্যোক্তা মাশরেকা। সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। না শেষ পর্যন্ত দলটা ঠিকঠাক আছে, এগারো জন। সময়মতো বিমান উড়াল দিল। আপাতত গন্তব্য দুবাই। ওখানে ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে আমরা দীর্ঘপথটি পাড়ি দেবো।

বা থেকে সামনের সারিতে: ম্যাশ, রাহনুমা, জলি, সামিনা ও স্বর্ণা। পেছনের সারিতে: সোহাগ, মিনহাজ, আবীর, শায়ের, নওশাদ এবং আমি

এরই মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। বোর্ডিং পাস নিতে নিতে লাইনে দাঁড়ানো নওশাদ বললো, ‘একটা অপরাধ করে ফেলেছি লাবলু ভাই। আমি উপল। সুমি আপার ছোট ভাই।’ বলে কি ছেলে! সুমি মানে সুমনা শারমীন, আমার ভীষণ স্নেহের মানুষ। প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি। ভোরের কাগজ থেকে প্রথম আলো পর্যন্ত। তাহলে বিমানবন্দরে যে সাখাওয়াত স্যারকে (সাখাওয়াত আলী খান, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) দেখলাম, তা নওশাদের জন্যই। কাঁচের ওপার থেকে স্যার কি বলছিলেন আমাকে তা এতোক্ষনে বোঝা গেল।

আমাদের দলনেতা রাহনুমার কথা আগেই বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর রাহনুমা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের লেকচারার। ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ‘সেন্টার ফর এন্ট্রেপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আর্থিক অনুদানে “বাংলাদেশি-ইউএস এন্ট্রেপ্রেনিওরস এক্সচেঞ্জ” কর্মসূচির বাংলাদেশ অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত।

দলে আছে আশরাফ আবীর। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবসা ওর। দুবাই থেকে আটলান্টা পুরো পথটা ও আমার ‘আইল’ আসনটা দখল করে ভালোই যন্ত্রণা দিয়েছে। সেকথা হবে পরে।

আছে মাহমুদুল হাসান সোহাগ। আমাদের দলের আরেক কণিষ্ঠ সদস্য। বিবাহের সুযোগ্য পাত্র। অনলাইন থেকে শুরু করে নানা ব্যবসা তার। ও যখন ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করে আমরা ধরে নিই, আধ ঘণ্টার কমে ওর লেকচার থামবে না। স্বপ্ন দেখে, একটা স্কুল বানাবে বাচ্চাদের জন্য।

মাশরেকা বা ম্যাশ আর সোহাগের মধ্যে কে যে সবচেয়ে ছোট এখনো জানি না। নারীদের বয়স জানতে চাওয়া তো ভদ্রতা নয়! পরবর্তীতে জানা যায় ম্যাশ হচ্ছে ‘হাফ ক্যাডেট’। মানে ওর ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’টি ক্যাডেট! পাটের পণ্যের ব্যবসা করছে ওরা। ভবিষ্যতে ওর সঙ্গে আমার একটা “সম্পর্ক” হবে।

সামিনা আমাদের দলের আরেক সদস্য। ওর বরটি আবার অস্ত্র ব্যবসায়ী। না ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামরিক বাহিনীতে এসব পণ্য সরবরাহ ওদের পারিবারিক ব্যবসা। আর সামিনার ব্যবসা রিসাইকেলড প্লাস্টিক থেকে নানা পণ্য তৈরি করা।

দলে আছে স্বর্ণা ওরফে স্বর্ণলতা। সৌন্দর্য্য ব্যবসা আছে ওর সিলেটে। শুধু তাই নয়, সিলেটের নারী ব্যবসায়ীদের সংগঠনের প্রধানও সে। ঢাকায় ব্যবসা সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনা আছে। আমাদের দলের সোহাগের সঙ্গে ওরও একটা বিশেষ সম্পর্ক খুঁজে পাবো আমরা ভবিষ্যতে।

জলি বা জান্নাত আমাদের দলে একমাত্র স্থাপত্যবিদ। ওর স্বামীও একই পেশার। ওদের আছে ইন্টেরিয়রের ব্যবসা।

মিনহাজের কথা আগের পর্বে বলেছিলাম। ফৌজদারহাটের এই বাদরটি আমার হাতের নাগালে এলেই আক্রমণের লক্ষ্য হতো। আর ওর লক্ষ্য আগামী ১০ নাকি ২০ বছরে দেশে এক হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করা।

শায়েরের ব্যবসা সফটওয়্যার নিয়ে। পাবনার ক্যাডেট। মিনহাজের সামান্য সিনিয়র। বড় একটা কাজ করছে ও। খান একাডেমির ভিডিও লেসনগুলোকে বাংলায় রূপান্তর করছে দেশের সন্তানদের জন্য।

দলের বাকি ব্যক্তিটি আমি। মিডিয়ায় কাজ করি। দলের সর্বজ্যেষ্ঠ্য সদস্য। বাকিদের মতো উদ্যোক্তা নই। রেডিও’র সাংবাদিকতা, বিনোদনের পাশাপাশি ব্যবসা- সবটাই দেখতে হয়। ব্যবসার কাজটা করতে হয় বলে দলে ঠাই পেয়েছি।

এগারো জনের দলের সঙ্গে পরিচয় তো হলো। এরাই পরবর্তী ৫ সপ্তাহ একসঙ্গে থাকবে, খাবে, ক্লাস করবে। খুনসুটি, মজা, খেলাধুলা, কেনাকাটা, আনন্দ কোনোকিছুই বাদ যাবে না। অল্প সময়ের জন্য হলেও এদের মধ্যে তৈরি হবে দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্ধন। যেমনটা ক্যাডেটদের মধ্যে হয়। দলের সদস্যদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকলেও মনেপ্রাণে সবাই তরুণ। বাংলাদেশের এই উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা সম্পর্কে জানতে-বুঝতে যাচ্ছে, নতুন কিছু শিখতে চাইছে।

২১ টি মন্তব্য : “ওরা এগারো জন: কারা এরা?”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    লাবলু ভাই দেখি সবার মাঝে কনিষ্ঠতম তরুণ! তা ভালো। শায়ের ভাইয়ের কথা মনে আছে - তিতুমীর হাউস, নবম ব্যাচ। ফ্রেঞ্চকাট ছাড়া একই রকম আছেন।

    ওকালাহোমার ঝড় পেয়েছিলেন?

    আরেকটু বড় করে পর্বগুলো দিয়েন। কি দেখলেন, আশপাশের চাচামিয়া কি বললো, কি খেলেন, কোন ইমিগ্রেশন আপনাকে দেখে খ্যাক করে উঠলো এসব যেন বাদ না পড়ে। বড় করতে গিয়ে পর্বখেলাপী হয়েন না আবার 🙂


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  2. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    লাবলু,

    ৫ X ৭ X ২৪ = ৮৪০ ঘন্টার কাহিনী লিখতে শুরু করেছো। যদিও পড়তে খুব ভাল লাগছে, কিন্তু এই স্পীডে কাহিনী এগোলে কত দিন লাগবে - হিসাব করেছো? প্রতি পর্বে বাক্য সংখ্যা আরও বাড়ানো যায় না?

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      ভয় পাবেন না সাইফ ভাই। এভারেস্টে উঠার কোনো মহাপরিকল্পনা আমার নাই। আর সেটা সম্ভবও না। এক বসায় যেটুকু লিখে শেষ করতে পারছি তাই পোস্ট দিচ্ছি। বড় করতে গেলে আবার আটকে যাওয়ার আশংকায় থাকি!!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ভাবতেছি আমাদের :just: জামাই এসে ওর নামের কপিরাইট নিয়ে কি করে... :dreamy:

    নেক্সট ইশটপ তাইলে দুবাই...
    সাথে আছি... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    কোন কোন স্টেট ঘুরলেন সানা ভাই?
    আম্রিকা আসার আগে একটা জানান দিলে অন্তত ফোনে একটু আড্ডা দেয়া যেতো। 🙁
    এ পর্বে শুরু থেকে লেগে পড়েছি, ব্যস্ততার জন্য কিছু বলা হয়ে ওঠেনি।
    আরেকটু বড় করে লেখা যায়না? বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে তো।

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      নূপুর: প্রথম পর্বে বলেছি কেন জানান দিতে পারিনি। এ কারণে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি বা কথা বলতে পারিনি। তবে কাল তোমার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো।

      ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৪ সপ্তাহই কেটেছে ওকলাহোমায়। এক সপ্তাহ ছিলাম ওয়াশিংটন ডিসিতে। এর মধ্যেও অস্টিন (টেক্সাস), ক্যারি (নর্থ ক্যারোলাইনা), বাল্টিমোর (ম্যারিল্যান্ড), ভার্জিনিয়া, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি......... চেষ্টা করেছি যতোটা দৌঁড়ানো যায়!! ভালোই উপভোগ করেছি এবারের ট্যুর।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  5. সামিয়া (৯৯-০৫)
    মাহমুদুল হাসান সোহাগ। আমাদের দলের আরেক কণিষ্ঠ সদস্য। বিবাহের সুযোগ্য পাত্র।

    একটু বেশি করে লিখলে আমরা অবিবাহিতরা আরকি একটু উপকৃত হতাম।

    আর ইয়ে লাবলু ভাই, কলেজের নামটা বেশ ভাল 😀

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      স্যাম: সোহাগের বিয়ে নিয়ে রীতিমতো আন্দোলন চলছে!! লাইনও বেশ বড়!! তুমি বরং যেই ল্যাজটা ধরে আছো, ওটা নিয়েই থাকো। এইরকম 'লয়াল' লেজ এই যুগে পাওয়া কঠিন (সার্টিফিকেট দিলাম)। :thumbup:

      আর কলেজের নামের দিকে নজর গেল..... "গেলর্ড কলেজ অব জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন"!! "গেলর্ড" পরিবার ওকলাহোমার বেশ ধনী পরিবার। ওরা জার্নালিজম স্কুলে ২০ মিলিয়ন (দুই কোটি) ডলার দিয়েছে। জার্নালিজম স্কুলের ভবনটাও এদের অর্থে তৈরি। 'ফিলানথ্রপি' ওই দেশে ভীষণ গ্রহণযোগ্য ও আগ্রহের বিষয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এইরকম ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রচুর আর্থিক অনুদান পায়। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনিরা নানাভাবে সহায়তা করে। ওখানে প্রতিটা বেঞ্চ, লন, বিভাগ, লাইব্রেরি- সবই দানের টাকায় হচ্ছে। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম স্কুলটা ওদেশে বেশ বিখ্যাত। শীর্ষ কয়েকটা স্কুলের অন্যতম। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ওরা প্রচুর কাজ করছে।

      জিহাদ: সাহসী স্যামকে অভিনন্দন জানানোয় ধন্যবাদ!! তবে তোমরা যদি টয়লেট নিয়মিত পরিস্কার না করো তাহলে এইরকম দীর্ঘ অসুস্থতা চলতেই থাকবে। ঢাকা ফিরো। তারপর আমি দাঁড়িয়ে থেকেই তোমাদের দিয়ে বাসা পরিস্কার করাবো!! :grr:


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।