আনুশেহ’র ভারচ্যুয়াল ‘রাই’

সকালে নাস্তা খেতে খেতে দৈনিক পত্রিকাগুলোয় নজর দিচ্ছিলাম। এমন সময় লুবনা আপার ফোন। লুবনা আপা অর্থাৎ লুবনা মরিয়ম। এবিসি রেডিও’তে “অপরাজিতা” নামে নারীর গল্প-কথার একটা আয়োজনের সঞ্চালক আমি। সেই আয়োজনে এসেছিলেন তিনি। তখন থেকে পরিচয়। স্নেহ করেন। মাঝে-মধ্যে ফোন করেন।

পরিচিতদের ফোন পেলে একটু ভয়ে ভয়ে ধরি আজকাল। তাদের ফোনগুলো অবশ্য আসে ভালোবাসার দাবি থেকেই। এবিসি রেডিও’তে কোনো ভুলভাল হলে, কিছু খারাপ লাগলে বা ভালো লাগলে তারা ফোন করেন। কিন্তু তাই বলে নিজের ছেলেও এ কারণে ফোন করবে? গতকাল ফোন করে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে উদয়ের অভিযোগ, ‘বাবা, তোমাদের আজকের ইংরেজি খবর কে পড়লো? একে তো উচ্চারণ ভুল, তার উপর সারাক্ষণ তোতলামি করলো?’ আমি আমতা আমতা করতে করতে বলি, ঠিক আছে দেখছি বাবা। কোনোরকমে ফোন কাটি। ছেলেও আজকাল এবিসি রেডিও নজরদারি শুরু করেছে!

না, লুবনা আপার ফোনটা কোনো অনুযোগ-অভিযোগ নিয়ে ছিল না। বললেন, “লাবলু আমার মেয়েটা কিছু ভালো কাজ করেছে। রেডিও বা অডিও প্রোডাকশন কোম্পানি তো পয়সা দেয় না; তাই এবার সে অ্যালবাম করেনি, সব ইন্টারনেটে তুলে দিয়েছে। এবিসি রেডিওতে গানগুলো বাজাও না।” আমি বললাম. ‘লুবনা আপা অবশ্যই বাজাবো।’ উনি আরো বললেন, “তোমাদের অফিস থেকে কাউকে পাঠিয়ে দিও। আমি গানগুলো কপি করে দিয়ে দেবো।”

অফিসে এসে আর্কাইভ বিভাগকে বললাম লুবনা আপার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। আর একজন প্রযোজক মিলুকে বললাম, দেখো তো ভাই আনুশেহ কোথায় দিয়েছে গানগুলো। ওখান থেকে কপি করা যায় কিনা। খুঁজে খুঁজে মিলু বের করলো এবং জানালো, ভাই এগুলো কপি করা বা নামানো যায় না। লিকে গিয়ে শুনতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, এবিসি’র ফেসবুকের পাতায় মিলু সেটার লিংকও দিয়ে দিয়েছে।

লিংক খুলে শুনতে বসলাম আর লিখতে বসলাম সিসিবিতে। চা’ওয়ালা রকিব অনেক অনেক দিন আগে দুই দুইবার বার্তা পাঠিয়ে তাগাদা দিয়েছে, ভাই সিসিবিতে কিছু লিখেন। আমি লিখবো লিখবো বলে ওকে আশ্বাস দিয়ে পড়েছি বিপদে। আমার এখন কুকুরের কামড়ে মাথায় ঘা হওয়ার দশা! লেখার সময় কোথায়, কি লিখবো? অফিসে থাকি বা বাসায় ল্যাপটপ বা মোবাইলে সিসিবি প্রিয় তালিকায়। সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত; বেলা-অবেলায় সিসিবিতে ঢু মারি। প্রায় সবার লেখা পড়ি। কিন্তু না মন্তব্য করা হয়, না লেখা।

আনুশেহ’র গানগুলো শুনতে শুনতে মনে হলো প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গানগুলোই তো হতে পারে লেখার বিষয়। প্রিয় সব মানুষের সঙ্গে প্রিয় গান ভাগাভাগি করা। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে গানগুলো শুনেছে, হয়তো না।

“রাই” নিয়ে ভিন্ন ভাবনা ছিল আনুশেহ’র। গতবছরই ঢাকা এবং কলকাতা থেকে একযোগে এটি প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল। গতবছর ২৭শে মার্চ ‘মানবজমিন’কে তিনি জানিয়েছিলেন, “চেষ্টা করছি সবক’টি গানের কথায় ‘বিনোদিনী’ কিংবা ‘রাই’য়ের ভাবনাটাকে স্থান দেয়ার। এর বাইরে দীর্ঘ পথচলায় নিজে যা বুঝেছি, দেখেছি এবং ভাবছি, সেগুলোই গানের কথার মধ্য দিয়ে বলতে চেয়েছি।” আনুশেহ’র এ অ্যালবামের কাজে সহায়তা দিয়েছেন কলকাতার তার বন্ধুরা। গানের যন্ত্রানুষঙ্গে অংশ নিয়েছেন তন্ময় বোস, স্যাম মিলস, পান্ডু হোয়াইটস, দেবজ্যোতি মিশ্র, ব্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান এবং তালতন্ত্রসহ আরও অনেকে।

কিন্তু আনুশেহ’র আশা পূরণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বেরিয়েছে ভারচ্যুয়াল অ্যালবাম। ধন্যবাদ লুবনা আপা, আপনাকে কৃতজ্ঞতা এই অ্যালবামটির সন্ধান দেওয়ার জন্য। বিচ্ছিন্নভাবে এই অ্যালবামের কয়েকটি গান শুনেছি। এবার সিসিবির সবাই মিলে শুনবো একসঙ্গে দারুণ ১১টি গান! অভিনন্দন আনুশেহ।

রাই: আনুশেহ আনাদিল

৩২ টি মন্তব্য : “আনুশেহ’র ভারচ্যুয়াল ‘রাই’”

  1. রকিব (০১-০৭)

    গতকাল শুনলাম অ্যালবামটা। আনুশেহ'এর এই উদ্যোগটা ভালো লেগেছে- ভার্চুয়ালি গানগুলো উন্মুক্ত করে দেবার জন্য।

    প্রিন্সু স্যারকে ধন্যবাদ। 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    কফি খাইতেসিলাম। মেইন পেইজে ব্লগ লেখকের নাম দেখে বিষম খাইলাম। গলায় আটকায় যা তা অবস্থা। একটু শান্ত হয়ে পড়তে বসলাম।

    আনুশেহ সদা সর্বদা আমার প্রিয় গায়িকার তালিকায়। ছোটকালে কলেজের বাথরুমে আনুশেহর গান গাইতেছি। বার হয়ে শুনি জেপি ডেকে পাঠাইসে। তারপর যা হবার তাই...

    হিন্দী ফিল্ম ফেয়ার নামে একটা অনুষ্ঠান হয়, সেখানে গতকাল শাহরুখ খান একটা নাচ দিয়েছে। সেটা দেখে আমার মনে হলো, শাহরুখ খান যদি স্টেজে উঠে কুতকুত খেলে তাও সবাই জোরে জোরে হাততালি দেবে। আমার ধারণা আনুশেহ আমার জন্য সেরকম। সে যদি আমার সামনে জোরে জোরে খানিক্ষণ চেঁচিয়ে যান সেটাই আমি মুগ্ধ হয়ে শুনব।

    আনুশেহ মানুষটাকে সামনাসামনি দেখতে আমার বড় ইচ্ছা। সামনাসামনি দেখা মানে চেহারা দেখা না, উনি কিভাবে কাজ করে তা দেখার ইচ্ছা। কারণ উনার ফ্যাশন হাউজ যাত্রার আমি বিশাল ফ্যান। যাত্রায় গেলে আমি বুঝতে পারি শপিং কিভাবে মানুষের সখ হয়। যাই দেখি তাই কিনতে ইচ্ছে হয় আমার। কিন্তু দাম দেখে কিনতে পারি না 🙁 । এই এক জায়গায় এসে আনুশেহ আমাকে দাগা দেন। 🙁

    গানগুলা শুনতেছি। এখন বোধহয় ফুল ছড়ানোর পালা অসাধারণ। এটা আগেই শুনেছিলাম তাই বলতে পারছি। অন্যগুলো ভালমত শুনে তারপর আবার লিখবো।

    বিশাল কমেন্ট করে ফেললাম লাবলু ভাই। এখন একটা আইসক্রীম দেন।

    জবাব দিন
    • সামিয়া (৯৯-০৫)

      শাহরুখ খানের সাথে তুলনাটা দেয়া উচিৎ হয় নাই। কোথায় আনুশেহ আর কোথায় শারুখ খান, কিয়ের সাথে কিয়ের তুলনা দিলাম, নিজেরে লাত্থাইতে ইচ্ছা করতেসে... 🙁

      জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

        বিশাল মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আম্মাজান। আনুশেহ'র বিরাট পাঙ্খা আমিও। ওর কণ্ঠে ভিন্ন রকম জোর আছে। লোক ধাচের গান ওর কণ্ঠে ভীষণ মানায়। একই কথা সুমির (লালন ব্যান্ড) ক্ষেত্রে।

        আইসক্রিম তো এসে খেতে হবে। খালি মন্তব্যে 'খাপো খাপো' (!!) করলে হবে না।


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
        • আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

          সানাউল্লাহ ভাই, আমার মনে হয় আনুশেহ-এর চেয়ে সুমি'র ফোক ফ্লেভার টা আরো বেশি ভাল (যদিও ব্যান্ড টা মিউজিকের গ্রুভে ঢুকলে গলা টা অনেক রকিং শোনায়)। আনুশেহ'র গলায় ফোক টোন যে নেই তা বলছিনা, তবে তার গলাতে রক ধাঁচটাই বরং একটু বেশি; মিউজিক কম্পোজিশনের মাধ্যমে কালার করা রক না, একদম RAW রক B-) । ওদিকে সুমি গলা নমনীয় করেও পারফর্ম করতে পারে -- একটা সফট টিউন বের হয়, ছেড়ে দেবার সময় সুন্দর করে মডিউলেশনও হয়।

          জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লাবলু ভাই এর পোস্ট !!! :awesome: :awesome:

    আনুশেহকে প্রথম শুনি কোলকাতার এক টিভি চ্যানেলে, ওদের প্রথম এলবাম তখনো বের হয়নি, পুরো অন্যরকম একটা গলা। তখন থেকেই ওর গানের বিরাট ভক্ত। অনেকদিন হরেই মনে হচ্ছিল সে যথেষ্ঠ পরিমানে গান গায় না। 'রাই' এর খোঁজ দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ লাবলু ভাই।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ওয়ে ওয়ে লাবলু ভাই লেখা দিছে আনন্দে :frontroll: মঞ্চায় :thumbup:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।