১ম পর্ব
মাগরিবের নামাজের আযান হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগেই । হতদন্ত হয়ে অজু করে মসজিদে ঢুকেই দেখি মুসুল্লীরা ততক্ষণে রুকুতে চলে গেছেন । আমি যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শরীক হলাম জামাআতে । সিজদায় গিয়ে হঠাৎ মনে হল “মোবাইলটা কি সুইচ অফ করেছি?”
আমি ঘামতে শুরু করলাম কারণ রিংটোন দেয়া ছিল হাই ভলিয়ম “তেরে নাম”
আমার তো নামাজ থেকে মন উঠে গেল । আল্লাহকে ডাকছিলাম যেন এখন আমাকে কেউ ফোন না করে । ভাগ্যিস কোন প্রেমিকা ছিল না (এখনো নেই) কারণ এদের তো কোন টাইম টেবিল নেই, সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে মিস কল দেয়(কলেজে বন্ধুদেরকে দেখে কথাটা বললাম)
মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে, এখন যদি রিংটোন বেজে উঠে তাহলে কি রকম একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যাব । এইরকম দ্বিধাদ্বন্দের মাঝেই কোনভাবে নামাজ শেষ করলাম । মসজিদের বাইরে এসে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মাথাটা আবারো খারাপ হয়ে গেল । দেখলাম মোবাইল বন্ধই ছিল । তাড়াহুড়ো করে করে নামাজে দাঁড়িয়েছিলাম বলে ভুলে গিয়েছিলাম আসলে সেট বন্ধ করেছিলাম কিনা ।
তারপর বাসায় এসে “মস্ক” নামে একটা আলাদা প্রোফাইল তৈরী করলাম এবং সেখানে সব ধরনের সাউন্ড অফ করে দিলাম । এরপর থেকে নামাজে দাঁড়ানোর আগে সবসময় “মস্ক” প্রোফাইল সিলেক্ট করে তারপর সেট বন্ধ করি কারণ পকেটে থাকা অবস্থায় যদি কোনভাবে মোবাইল চালু হয়ে যায় তবুও যেন রিংটোন না বাজে ।
“সাবধানের তো মার নেই আর ন্যাড়া নাকি বেলতলায় একবারই যায়”
২য় পর্ব
অন্য হাউসে গিয়ে বারবার বন্ধুদের কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে নিয়ে বাসায় কথা বলা আর মোটেই ভাল লাগছিল না । চিঠির যুগ শেষ হয়ে প্রত্যেক হাউসে মোবাইল দেওয়া হয়েছে । হাউস অফিসে সপ্তাহে একদিন ছাড়া কথা বলা যায় না আর হাউস মাস্টারের উপস্থিতিতে প্রাণখুলে কথা বলাও মুশকিল ।
নিজের কাছে একটা সেট থাকলে আরেকটু স্মার্ট হওয়া যেত, এই চিন্তাধারা মাথায় রেখে ক্লাস টুয়েলভ এর ২য় প্যারেন্টস ডেতে মোবাইলটা নিজের কাছে রেখে দিলাম ।
আমার জানা ছিল না “মোবাইল অর্জনের চেয়ে, মোবাইল রক্ষা করা কঠিন”
হাউসে সেট নিয়ে আসার সময় স্টাফের কাছে ধরা খেতে গিয়ে বেঁচে গেলাম । প্যারেন্টস ডে শেষে আমার বেশ খুশি এবং একই সাথে নার্ভাস লাগছিল । জুমআর নামাজে যাওয়ার সময় মোবাইল হাউসে রেখে যাওয়া মোটেই নিরাপদ মনে হল না কারণ যে কোন সময় হাউস চেক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । প্যান্টের চোরাই পকেটে সেট বন্ধ করে রেখে মসজিদে যাওয়ার সময় নিজেকে জটিল স্মার্ট মনে হচ্ছিলো । হারুন স্যারের খুৎবা শুনছিলাম বসে বসে ।
আমাদের ইমিডিয়েট বড় ভাইয়েরা মসজিদে শোরগোল করায় বসার অর্ডার রিভার্স করে দিলেন প্রিন্সিপাল । ক্লাস টুয়েলভ বসতো সবার সামনে । মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনছি হঠাৎ কোথায় থেকে যেন মৃদু একটা আওয়াজ কানে আসলো । আমি প্রথমে মনে করেছিলাম পেছনে স্যারদের সেটে রিংটোন বাজছে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম শব্দটা খুব কাছ থেকেই আসছিল । খেয়াল করলাম আমার পকেট থেকেই শব্দ আসছে, তবে শব্দটা খুবই ক্ষীণ । খুব সাবধানে ডানে বামে তাকিয়ে সেটটা বের করে দেখলাম মোবাইল বন্ধ কিন্তু তবুও সাউন্ড হচ্ছে । উল্লেখ্য আমার সেটে এলার্ম দেওয়া ছিল এবং সেট বন্ধ থাকলেও আমার সেটে এলার্ম বাজে । ব্যাটারী খুলে ফেললাম সাথে সাথে । নামাজ শুরু হওয়ার পর যদি এলার্মটা বাজত তাহলেই খবর ছিল কারণ তখন তো সব চুপচাপ থাকে । যাই হোক নামাজ শেষ করে লাঞ্চের পর হাউসে গিয়ে এলার্ম বন্ধ করলাম । এখন পারতপক্ষে মোবাইলে নিয়ে মসজিদে ঢুকি না ।
কথায় আছে না “ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়”
প্রথম হইলাম মনে হয়।
সন্ধার পর এইমাত্র ব্লগে এসে তুহিনের খবরটা পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। পরে কমেন্ট করমু।
দোয়া করিস, তুহিন যেন খুব শীঘ্রই আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। শালার ঢাকার রাস্তাগুলার যে কী হইলো !!!
মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমরা সবাই দোয়া করি তুহিনের জন্য।
অনুভূতিটা লেখার মাধ্যমে প্রকাশিত হোক পাঠকের কাছে। ইমোর মাধ্যমে নয় ...
পোলাডা ডরাইছে। লেখা থেইকা সব ইমো সরাইয়া দিছে। :))
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
লেখাটা পড়ে এখন অনেক ভালো লাগছে। থ্যাংকু তাহমিনুল। ইমো দেওয়াটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মতামত ছিল। তোমার নিজের যেইটা ভালো লাগে সেইটাই কইরো।
আসলেই আমি ইমো বেশি দিয়া ফালাইছিলাম যেইটা আমি দেওয়ার সময়ই বুঝতে পারছিলাম কিন্তু ততক্ষণে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছিলাম না, তাই ভাবলাম দেখি কিরকম রেসপন্স পাওয়া যায় ।
পরে কামরুল ভাইয়ের আদেশে সব ইমো সরাইয়া দিছি, বড় ভাইরে সম্মান করলাম আর কি :boss:
আমি আর জীবনে কোন পোস্টে ইমো দিবো না :frontroll: :frontroll: :frontroll: :goragori:
খুব ভালো লেগেছে তোর লেখাটা।
:just: :salute:
মোবাইলের এই কেস হইছিল আমাদের এক ক্লাসে। সেট অফ করলেও অ্যালার্ম বাইজা উঠায় বেচারাকে বহুত নাজেহাল হইতে হইছে।
ইদানিঙ আমাদের ক্লাস গুলাতে এক মজার খেলা শুরু হইছে। একজন আরেক জনের মোবাইল নিয়ে লাউড স্পীকারে গান ছেড়ে ফেরত দিয়ে দেয়.. 😀 :grr: :grr: :grr: :grr:
তখন প্রিন্সিপাল রেজা স্যার ছিল। ::salute::
নামাজ বাদ দিয়া মোবাইল বন্ধ করে আবার নামাজ শুরু কর্তে পারতি। হাদিস আছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ