বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। ::salute::
আজ ১৬ ডিসেম্বর । মহান বিজয় দিবস । ::salute::
৩০ লক্ষ (রূপক অর্থে) শহীদ এর আত্মত্যাগ এর বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা ।(আজিজুল ভাই এর অনুমতি ছাড়াই উনার কিছু কথা কোট করছি :“ত্রিশ লক্ষ” শব্দ টা আমরা গাণিতিক ধ্রুব হিসাবে না ধরে,রূপক হিসাবে নিতে পারি। এখানে একটা মতবাদ প্রচারিত আছে যে,জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু বিদেশী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে “তিন লক্ষের স্থলে ভুলে তিন মিলিয়ন” নাকি বলে ফেলেন। প্রাচীন ইংল্যান্ডের রাজাকে সম্মান দিতে যেয়ে “All Correct” শব্দটি যেমন পৃথিবী ব্যাপি “OK” হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধায় ‘ত্রিশ লক্ষ’ শব্দটি ও রূপকার্থে প্রতিষ্ঠিত বলে শুনেছি। )
গতকাল রেজা শাওন ভাই এর অভিবাদন বাংলাদেশ লেখাটি পড়লাম ।কোন এক বিদেশী ভদ্রলোক এর প্রশ্নের জবাবে উনার উত্তর আমার হৃদয় ছুঁয়েছে ।
উনার উত্তর ছিল এই রকম :ওই সবুজটুকু থাকলেই হবে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ওইটুকু সবুজই যথেষ্ট।
উনার এই লেখা পড়ে এতটুকু বুঝলাম যে দেশ কে ভালবাসার জন্য প্রয়োজন দেশকে ভালবাসার মতো একটা হৃদয় ।পৃথিবীর যেই প্রান্তেই আমরা থাকি না কেন দেশকে ভালবাসার মতো হৃদয় থাকলেই দেশকে ভালবাসা যায় ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর(আমার মতামত) আর সৃতিচারণ করার জন্যই আমার এই লেখা ।
বিজয় এর এই মাসে কিছু মতামত আর প্রশ্ন শুনলাম :পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছে ।তারা তাদের দেশের প্রতি স্বদেশপ্রেম
দেখিয়েছে ।তারা তাদের দেশের কাছে হিরো ।বাংলাদেশি সৈন্যরা তাদের দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছে ।তারা তাদের দেশের প্রতি স্বদেশ প্রেম দেখিয়েছে ।কোন দেশি চায় না তাদের দেশ ভাগ হোক ।পাকিস্তান ও চায় নি তাদের দেশ ভাগ হোক ।এখন চট্টগ্রাম যদি স্বাধীন হতে চায় বাংলাদেশ কি চাইবে তাদের দেশ ভাগ হতে দিতে ?এই সব জিনিসগুলো আসলে মনে রাখার কি দরকার ? বর্তমান সময়ে কিভাবে দেশের উন্নতি করা যায় সেইটা চিন্তা করা উচিৎ ।
আমার কিছু মতামত :আমাদের দেশের সাথে যদি এখন অন্য কোন দেশের যুদ্ধ লাগে তাইলে কি আমরা ওই দেশের মা-বোনদের ধর্ষণ করবো, দুধের শিশু বাচ্চাকে মারবো ,লুটতরাজ করবো? এতে করে কি আমাদের দেশ প্রেম প্রকাশ পাবে ?
১৪ ডিসেম্বর হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস । একথা শুনেছি যে ওই দিনে ৯৯১ জন শিক্ষক,১৩ জন সাংবাদিক,৪৯ জন ডাক্তার , ৪২ জন আইনজীবী , ১৬ জন ইঞ্জিনিয়ারসহ লেখক , পেইনটারদের পাশবিকভাবে হত্যা করা হয় ।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান যদি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর বৈষম্য সৃষ্টি না করত তাইলে আর এতো কিছু হতো না ।মাতৃভাষা থেকে শুরু করে যেকোনো ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাঙ্গালিদের অনেক সংগ্রাম করে তাঁদের অধিকার আদায় করতে হয়েছে ।রক্তপাত সর্বপ্রথম পাকিস্তানিরা ঘটাইছে ।বাঙ্গালিরা নয় । ২৫ মার্চের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানিরা ঘটাইছে ।বাঙ্গালিরা নয় ।বাঙ্গালিদের দেয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছিল বলেই এই মুক্তিযুদ্ধ ।সামরিক দিক দিয়েও পশ্চিম পাকিস্তানিদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো ।যে ১০ % বাঙালি সামরিক অফিসার থাকতো তাদেরকেও ঠিকমতো সম্মান দেয়া হতো না । প্রোমোশন হতো না। বাঙ্গালি মা-বোনদের ধর্ষণ করা, দুধের শিশু বাচ্চাকে মারা কি পাকিস্তানি সৈন্যদের পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে দেশ প্রেম এর পরিচয় হতে পারে না ।বরং এটাকে হিংস্রতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ।
উল্লেখিত প্রশ্নে পাকিস্তানি সৈন্য আর বাঙ্গালি সৈন্য বলতে মূলত সামরিক সৈন্য বোঝানো হয়েছে (আমার কাছে যা মনে হয়েছে )।
কিন্তু আসলে বাঙ্গালি সৈন্য বলতে শুধু সামরিক সৈন্য বললে ভুল হবে ।বাঙ্গালি আমজনতার ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।নিজের প্রাণের দাবিতে , পরিচয়ের দাবিতে,সাধিকারের দাবিতে বাঙ্গালি আম জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ।মহিলা ,পুরুষ ,বালক, বৃদ্ধ ইত্যাদি সবার ছিল অংশগ্রহণ । সামরিক বাহিনীর অবদানও অনস্বীকার্য ।সাধারণ জনতাকে রণ প্রশিক্ষণ , অস্ত্রপ্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যাপারে বাঙ্গালি সামরিক বাহিনীর অবদান ভুলার নয়। সেই সাথে ভুলার নয় ১১ টি সেক্টর কমান্দারদের অবদান , জর্জ হ্যারিসন এর সেই কনসার্ট ,জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী ,মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ নাম না জানা আরও অনেকের অবদান ।
আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালবাসি ।
আমার সোনার বাংলা গানটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এ গানের রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দেবঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এ গানটির প্রথম দশ লাইন সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল প্রথম চার লাইন বাদন করা হয়।চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার বিখ্যাত জীবন থেকে নেওয়া কাহিনীচিত্রে এই গানের চলচ্চিত্রায়ন করেন।
(তথ্য সূত্র – উইকিপিডিয়া ) ।
আমার মনে হয় যেকোনো ক্যাডেট তার ক্যাডেট লাইফ এ সবচেয়ে বেশি জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে । মনে পড়ে কলেজ এর সেই সোনালি দিন গুলো । হাউস মাস্টার এসেম্বলি অথবা প্রিন্সিপালস মর্নিং এসেম্বলি শেষে সবাই একসাথে দাড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম । ৭-৮ এ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় অনেক হাসাহাসি করতাম ।(অতীত এর সব সৃতি সুখকর হয় না) কোন এক স্যার বলেছিলেন যে, ” তোমরা এখনো জাতীয় সঙ্গীত এর মর্যাদা ঠিক মতো বুঝতে পারো নি ……দেশে (স্যার এক দেশের নাম বলেছিলেন ,এখন মনে পড়ছে না) জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় সবাই কেঁদে ফেলে।”স্যার আরও অনেক কথা বলেছিলেন । স্যার এর ওই কথা মনে এক অদ্ভুত অনুভুতির সৃষ্টি করেছিল । এর পর থেকে আর কোন দিন হাসাহাসি করিনি ।বরং একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে ভাল লাগত । এখন কলেজ থেকে বের হবার পর আর সবার সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না ।কলেজকে মিস করার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম ।
ভার্সিটির হল লাইফ এর একটি ঘটনা বলি ।এই তো কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ এর মাটিতে হয়ে গেলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট ।উদ্বোধনি খেলা ছিল বাংলাদেশ এর ।টিভি রুম এর ভিতরে পত্রিকার টেবিল আর টেবিল টেনিস টেবিল ছিল । ওই দিন টিভি রুমে সব ছাত্ররা ভর্তি হয়ে গিয়েছিল যে একচুল নড়ার জায়গা ছিল না।জায়গা সংকট এর কারণে সবাই টেবিল টেনিস বোর্ড এর উপর বসেও খেলা দেখছিল ।খেলা শুরুর পূর্বে যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হল তখন সবাই আপনা আপনি দাড়িয়ে গেলো ।যারা টেবিল টেনিস টেবিল এর উপরে বসে ছিল তারা ওই টেবিল টেনিস বোর্ড এর উপরেই দাড়িয়ে গেলো । কষ্ট করে হলেও জাতীয় সঙ্গীত এর শেষ পর্যন্ত সবাই দাড়িয়ে ছিল ।খুব ভাল লেগেছিল ।মনে মনে ভেবেছিলাম এদেশের তরুণ সমাজ আর নতুন প্রজন্মের জন্য দরকার একটি দিকনির্দেশনা যা পেলে তারা এই দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবে ।
এখনো কলেজে পালনকৃতো ১৬ ডিসেম্বর এর সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে ।সবাই ফলিন করে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়াত ।বিগল এর ধ্বনির সাথে সাথে প্রিন্সিপাল স্যার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন ।বিগল এর ধ্বনি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ক্যাডেটরা জাতীয় পতাকাকে ::salute:: দিয়ে দাড়িয়ে থাকতো । তারপর অডিটোরিয়াম এ স্বাধীনতার গান এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে স্যারদের বক্তব্য চলত ।দুপুরে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে খোলা মাঠে দেয়া হতো বুফে লান্স ।একটা গান অথবা কবিতা বার বার শুনলে হয়ত ভাল লাগে না ।কিন্তু আমার স্বাধীনতার গান এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে স্যারদের বক্তব্য ভাল লাগত ।আজ বিজয় দিবস এর এই দিনে কলেজ এর সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে ।
এদেশের তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানানো আমার আপনার নৈতিক দায়িত্ব ।আজকের শিশু আগামী দিন এর ভবিষ্যৎ ।
স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে রক্ষা করা কঠিন ।তাই দেশের সার্বভৌমত্ব ,উন্নতির জন্য আমাদের একসাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে কাজ করতে হবে ।মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে ।
এদেশকে স্বাধীন করার জন্য যারা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তাদের সবাইকে লাল ::salute:: এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।সেই সাথে ৭১ এর সকল মুক্তিযোদ্ধাকে দেই আমার লাল ::salute:: পরিশেষে ফেসবুক এর এক বন্ধুর বিজয় দিবস উপলক্ষে তার দেয়া একটি স্ট্যাটাস কোট করছি :
B=Blood (রক্তে)
A=Achieve (অর্জিত)
N=Noteworthy (স্মরণীয়)
G=Golden (সোনালী)
L=Land (ভূমি)
A=Admirable (প্রশংসিত)
D=Democratic (গণতান্ত্রিক)
E=Evergreen (চিরসবুজ)
S=Sacred (পবিত্র)
H=Habitation (বাসভূমি)
বাংলা অর্থগুলোকে একসাথে করলে হয় –
রক্তে অর্জিত স্মরণীয়
সোনালী ভূমি প্রশংসিত গণতান্ত্রিক
চিরসবুজ পবিত্র বাসভূমি !!
সবাইকে বিজয় দিবসের সুভেচ্ছা । 🙂
তোমার কথাগুলোর কোন রেফারেন্স আছে কী? নাকী কেবল শোনা কথা ? এটা পড়ে দেখতে পারো ঃ
http://www.mukto-mona.com/project/muktanwesa/1st_issue/3million_Yunchikta.htm
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ধন্যবাদ রকিব ভাই । আমি তো আগেই বলেছি এই কথা আজিজুল ভাই (১৯৭২-১৯৭৮) এর কাছ থেকে জানা । আসলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা মূলত গুরুজনদের কাছ থেকে শোনা ও বিভিন্ন রেফারেন্স বই দেখার উপর
নির্ভরশীল । ভালই হল আমার এই লেখার ফলে আপনার ওই লিঙ্কটা পড়তে পারলাম ।তা না হলে অনেক কিছু অজানা থাকতো ।