নরকবাস-৩

ইব্‌লিশের সাগ্‌রেদ।

রমজান মাস আসতে না আসতেই চারিদিকে কেমন একটা পুতপবিত্র ভাব চলে আসল। মসজিদে মুসল্লীদের ভীড় বেড়ে গেল রাতারাতি। দিনে-রাতে পাড়ার ঘরবাড়ি-মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে সুর করে কোরান তেলাওয়াত শোনা যেতে লাগল। বিশেষ করে যখন রমজানের আগের শেষ জুম্মার বয়ানে সুর করে ইমাম সাহেব বললেন, “পিরিয় মুছল্লী ভায়েরা, এই রুমজান মাস, অইথ্যান্ত ফজিলতের মাস। আমরা কেউই কতি পারি নে, কোনো নিচ্চয়তা নেই, আইজগে এই মজলিশি হাজির সবাই এর পরের রুমজানে বাইচে থাক্‌বানে কিনা। অতএব, গাফিলতি না কইরে সুমায় থাকতিই এই রমজান মাসটারে কামে লাগাতি হবি। বেশী বেশী কইরে আল্লারে ডাক্‌তি হবি।” এই কথা শোনার পর থেকে সত্যি সত্যিই মৃত্যুভয় কেমন চারপাশ থেকে আমাকে ঘিরে ধরল। আমরা সচরাচর বৃদ্ধ হবার আগে মৃত্যু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি না, তবু এই সময়টাতে চেনা-পরিচিতের মধ্যে যারা খুব অল্প বয়সে মারা গেছে তাদের চেহারা বারবার মনে পড়তে লাগল, আর মনে হতে লাগল আজরাইল ফেরেশ্‌তা বুঝি কাফনের কাপড় হাতে নিয়ে আমার আশে পাশেই কোথাও ঘোরাফেরা করতেছে। গৌহাটি জেলার বেশীরভাগ মানুষই অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ফলে স্বভাবতই ধর্মের মূল বিষয়বস্তুর চাইতে এর ডালপালার প্রতি তারা বেশী যত্নবান। তাই গৌহাটি-মোহম্মদপুরের আকাশ-বাতাস হঠাৎ করেই আতর-লোবান ও আগরবাতির গন্ধে ভারী হয়ে উঠল যা সেই পবিত্র ও ভীতিকর পরিবেশের গাম্ভীর্য আরেকটু বাড়িয়ে দিল। আর এই অপার্থিব গাম্ভীর্য বেশ ভালোরকম প্রভাবিত করল আমাকেও। আমার রিডিং টেবিলে হুমায়ুন আহ্‌মেদ ও সুনীলের গাদা গাদা দুনিয়াবী কেচ্ছা কাহিনীর জায়গা সারিতে সারিতে দখল করতে থাকে ‘কবরের আজাব কি ও কেন?’, ‘মোক্‌সুদুল মোমেনীন’, ‘বেহেশ্‌তী জেওর’ ইত্যাদি আখেরাতের অমূল্য পাথেয়। সুবে সাদেকের পরে মোহম্মদপুরের দিকে দিকে হালকা কুয়াশায় ছড়িয়ে পড়া পবিত্র কোরানের কোরাসে আমার কাঁপা কাঁপা অনভ্যস্ত কন্ঠটিও নিয়মিত যুক্ত হতে লাগল। এরই মধ্যে একদিন বাদ আছর মোহম্মদপুর জামে মসজিদের ইমামের দৈনিক বয়ানের একটি অংশ আমার খুব মনে ধরল; তিনি বললেন, “এই পবিত্র রুমজান মাসে মহান পরোয়ারদিগার ইব্‌লিশ শইতানরে শিকল দিয়ে বাইন্দে রাখেন। আমাগের পিয়ারা নবী(সাঃ) এই ব্যাফারে কয়ছেন, ‘যহন রুমজান মাস শুরু অয়, তহন বিহেশ্‌তের দরজাগুলোন খুইলে দিয়া অয়, দোজকের দরজাগুলোন বন্দ কইরে দিয়া অয় আর সব শইতানগের শিকল দিয়ে আইটকে রাহা অয়’ বলেন ছুবানাল্লা।” আমি এই চমৎকার হাদিসটি শুনে বেশ জোরে-সোরেই সুব্‌হানাল্লাহ্‌ বলি। শয়তানদেরকে পুরো রমজান মাসটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার সংবাদে আমি আনন্দিত না হয়ে পারলাম না, যদিও আমার এই আনন্দের পেছনে কিছুটা ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত ছিল। কারন এই ইব্‌লিশ এবং তার চ্যালা-চামুন্ডাদের উপরে আমি অসম্ভব বিরক্ত। আমি অনেক বারই খেয়াল করেছি যে, ঠিক নামাজের সময়টাতেই আমার যত অদ্ভুত এবং আপত্তিকর জায়গাগুলোতে চুলকানি আরম্ভ হয়, গেলো কলেজ রিউনিয়নে যেই চুট্‌কিটা হাজার মাথা কুটেও মনে করতে পারলাম না সেইটা ঠিক রুকুতে গিয়েই মনে পড়ে যায় আর হাসি চাপতে গিয়ে আমি সমানে নিজের জিহ্বায় কামড় মারি, তারপর যেই মেয়েটার নাম অব্দি আমার গত ছয় মাসে একবারের জন্যও মনে আসেনি, সিজদা থেকে উঠেই তার মোবাইল নম্বর পর্যন্ত নির্ভুলভাবে মনে পড়ে যায়। এভাবে আমি যতই ভালো থাকতে চাই, শয়তান ততই আমার পিছে লাগে। তাছাড়া এই যে এত সন্ত্রাস-খুন-রাহাজানি, এসব তো শয়তানেরই কারসাজি ও কুমন্ত্রণাতে হয়ে থাকে। সুতরাং শয়তান যদি ঠিকমত কাজ-কর্ম না করতে পারে, তাহলে আমিও আগামী এক মাস বেশ নিশ্চিন্তেই রেস্ট, থুক্কু, ইবাদত বন্দেগী করতে পারব। অবশ্য আমার একটু সন্দেহ হয় যে, শয়তান আদৌ কখনো এই গৌহাটি জেলা ভিজিট করে কিনা। কারন এইখানের কিছু মানুষরূপী শয়তানের যে পারফরমেন্স, তাতে আসল শয়তানের অনেক আগেই লজ্জা পেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, শয়তান নির্বাচনের জন্য যদি কোন ইলেক্‌শনের সিস্টেম থাকত তাহলে স্বয়ং ইব্‌লিশ পর্যন্ত আমাদের গৌহাটি জেলায় একটাও সীট পেত না।

এইসব আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে আমি যখন মসজিদ থেকে হাঁটাপথে বাসার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি, তখন খেয়াল করলাম আমার বাসা কাম অফিসের সামনের ব্যালকনিতে বেঞ্চে বসে কয়েকজন লোক নিজেদের মধ্যে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে কি নিয়ে যেন ফিস্‌ফাস্‌ করতেছে। আমি কাছে যেতেই সবাই একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক লোকটা নিজেকে ইছাপুর স্কুলের হেডমাষ্টার কালাচান দাস পরিচয় দিয়ে জানালো, তাদের একটা অভিযোগ আছে। আমি যারপরনাই বিরক্ত হলাম। অভিযোগ! এই রমজান মাসেও অভিযোগ? আমি কোথায় আরো প্ল্যান করতেছি যে শয়তানের এই দুর্দশার সংবাদটাকে আজ ইফতারের পরে একটু সেলিব্রেট করব তা না এর মধ্যেও অভিযোগ নিয়ে হাজির! আমার রোজা রাখা শুকনো মুখটাকে যথাসম্ভব করুন করে ওদেরকে ইফ্‌তারের পরে আসতে বললাম। কারন এদের কাছে থেকে কি না কি শুনে হঠাৎ আবার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে কি বলতে কি বলে ফেলি, শেষমেশ আমার রোজাটাই না আবার হালকা হয়ে যায়। তাছাড়া রোজা-পেটে এইসব চোর ছ্যাঁচোড়ের কাহিনী শোনাও ঠিক না, এখন হল একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন ইবাদত বন্দেগীর সময়।

সন্ধ্যার পরে চায়ের কাপ হাতে কালাচান মাষ্টারের অভিযোগ শোনা শুরু করলাম। শুনতে শুনতে আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠলাম। তবে কালাচান মাষ্টার যেই ঘটনা নিয়ে এত উত্তেজিত সেইটা আমার কাছে তেমন কোন ঘটনাই না, আমার উত্তেজনার বিষয়বস্তু ‘যে’ এই ঘটনাটা ঘটাচ্ছে সেই ব্যক্তিবিশেষ। কালাচানের কাছে জানলাম, এই এলাকার অন্যতম টেরর, জোড়া খুন ও একাধিক ডাকাতি মামলার পলাতক আসামী মোমেন মেম্বার নাকি এই পয়লা রমজানেই এলাকাতে ঢুকছে। সে আশ্রয় নিছে ইছাপুরের হিন্দুপাড়াতে। ইছাপুর মূলত হিন্দুদেরই গ্রাম, কিন্তু তারা এখানে থাকে অনেকটা চিড়িয়াখানায় বন্দী পশুর মত। প্রায় সম্বলহীন কালাচান মাষ্টারের অবস্থাই ওদের মধ্যে কিছুটা ভালো। কালাচানের গা-জ্বলুনির কারন হল মোমেন হারামজাদা হিন্দুবাড়িতে আশ্রয় নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সে ওই বাড়ির পারুবালা নামক বউটির সাথে নিয়মিত এক বিছানায় ঘুমাচ্ছেও। এ কি সহজে মেনে নেয়া যায়? সমাজ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। সমস্যা হলো, কে কার সাথে ঘুমোলো (বিশেষ করে যদি তা আপোষে বা বিনা বাধায় হয়ে থাকে) সে ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু ঘটনার নায়ক যখন মোমেন, তখন আমাকে একটু নড়ে-চড়ে বসতেই হয়। কারন নামে মোমিন হলেও, তার মত ‘কোমিন’ (যশোর এলাকার একটা গ্রাম্য গালি, বিধর্মী বা খারাপ চরিত্রের লোক বোঝাতে ব্যবহার করা হয়) এই এলাকায় আর একটাও নেই। এই বেলা মোমেনের বিষয়ে একটু বিস্তারিত আপনাদের বলে রাখি। কোন একসময় সে মেম্বার হয়েছিল, তাই নামের সাথে বংশ পরিচয়ের মত মেম্বার পদবীটা জুড়ে গেছে। পেশায় মূলত সে ডাকাত। নামসর্বস্ব পূর্ববাংলা কম্যুনিস্ট পার্টির (সর্বসাধারণে যা নকশাল বা সর্বহারাদল নামে পরিচিত) একটা ছোট গ্রুপের সে লীডার। তার নিজের নামেই বাহিনীর নাম, মোমেন বাহিনী। ছোটবড় মিলে তার মোট গোটা পঞ্চাশেক অপকীর্তির মধ্যে সবচাইতে যেটা উল্লেখযোগ্য তা হলো জোড়া মার্ডার কেস। ২০০১ সালের জুন মাসে গোপীপাড়া গ্রামের জগাই ঠাকুরের বাড়িতে সে তার দলবল নিয়ে হামলা করে। সহজ-সরল ও ভীতু জগাই ঠাকুর শুরুতেই বাড়িতে তার গচ্ছিত সব টাকাপয়সা ও সোনাদানা মোমেনের সামনে হাজির করে। কিন্তু এতে তার মন ভরেনি। পশুটা হাত বাড়ায় জগাইয়ের পনের বছর বয়েসী একমাত্র মেয়ে ও ছোটভাই নিমাই ঠাকুরের যুবতী বৌটার দিকে। হাতে পায়ে ধরে বহু কান্নাকাটি ও অনুনয়ে কোনই ফল হল না। এক পর্যায়ে স্ত্রী ও ভাইঝি’কে লাঞ্ছিত হতে দেখে নিমাই আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। হাতের কাছে একটা লাঠি পেয়ে সেটা দিয়েই আঘাত করে মোমেনের মাথা বরাবর। মোমেন দ্রুত সরে গেলে আঘাত গিয়ে লাগে তার সাথের আরেকজনের গায়ে। এইবার ফলাফল হল অকল্পনীয়। জগাই এবং নিমাইকে বেঁধে রেখে তাদের চোখের সামনেই মেয়েদুটোকে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেয়েদুটোর উপর অত্যাচার শেষে তারা প্রথমে নিমাইয়ের চোখদুটো তুলে নেয়, তারপর ধারালো রামদা দিয়ে তার কাঁধ বরাবর দুটো হাত কেটে ফেলে, সবশেষে যাবার সময় দুই ভাইকেই উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করে রেখে যায়। এই ঘটনায় মোমেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি ও ধর্ষণসহ মোট পাঁচটি ধারায় মামলা হলেও এদেশের অলিখিত নিয়মমাফিক পলাতক আসামীদেরকে আর কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া গেল না। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কোন এক অজ্ঞাত কারনে মোমেনের যত আক্রোশ ছিল হিন্দুদের উপরে। কোন মুসলমানের বাড়িতে সে কোনদিন ডাকাতি করেছে বলে শোনা যায়নি। কিন্তু মুসলমান হিসেবে নামাজ কালাম পড়া তো দূরে থাক, হোঁচট খেয়েও সে কখনো পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে পড়েছে কিনা সন্দেহ। অথচ এই এলাকার এত এত ধর্মান্ধ ও গোঁড়া মুসলমানদেরও হিন্দুদের সাথে কত চমৎকার ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক। তাহলে মোমেনের সমস্যাটা কোথায়? আহা! কত বিচিত্রই না হতে পারে মানুষের মন!

এই মোমেনকেই এখন কোন হিন্দু তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে শুনে আমি খুবই আশ্চর্য হলাম। আমার মনে ক্ষীণ সন্দেহ দেখা দিল, হয়তো মোমেনকে ধরিয়ে দেবার জন্য এলাকার হিন্দুরাই একটা ফাঁদ তৈরী করেছে। তা হোক, সেরকম কিছু হলে আমি বরং খুশিই হবো। তারপরেও আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা ঘটনা কি বলেন তো মাষ্টার? মোমেন কি করে একটা হিন্দুর বাড়িতে আশ্রয় পায়?”
“জাইগা কি আর ওরে হাউশ কইরে দিছে ছার? জাইগা না দিলি পারে মোমেন কি ওগেরে বাচাই রাইখবেনে নাহি?” মাষ্টারের সোজাসাপ্টা উত্তর। কথা সত্যি, সামান্য জায়গা দেওয়া নিয়েও দুই একটা খুন করা মোমেনের জন্য ডাল-ভাত। কিন্তু বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে যখন মোমেনের বড় বড় বাবারা পর্যন্ত পালিয়ে কূল পাচ্ছেনা তখন লুকানোর জায়গা নিয়ে গ্যাঞ্জাম করে নিজের অস্তিত্ব জাহির করার মত বোকামি মোমেন করবে কিনা সেটাও একটা বিবেচনার বিষয়। তবে ভিতরের ঘটনা যাই হোক, মোমেনের মত একটা ডেঞ্জারাস ক্রিমিনাল ধরা পড়বে সেটাই বড় কথা। সুতরাং ঐদিন গভীর রাতেই তাদের সাথে বের হওয়ার কথা বলে আমি তাদেরকে বিদায় করে দিলাম। কালাচান মাষ্টার ফিরে যাবার সময় শেষ মুহুর্তে কি মনে করে আমি প্রশ্নটা করেই ফেললাম, “আচ্ছা, পারুবালার স্বামী আছে নাকি সে বিধবা?”
“এইহেনেই তো খেলা ছার। পারুবালার ভাতার বাড়িতিই থাহে। তার নাম ধীরেন দাস। কিন্তুক তার কি কিছু কওয়ার উপায় আছে নাহি? তারে পুঙ্গায় এক্কান লাত্তি মাইরে পাশের খোপে ঢুহোয়ে তালা মাইরে থোয়।”
আমি দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করলাম। এই এলাকার নকশাল বা সর্বহারা নামধারী ডাকাতরা প্রায়ই গভীর রাতে হিন্দু পাড়াগুলোতে হাজির হয়। তারপর আগে থেকে টার্গেট করে রাখা ঘরগুলোতে ঢুকে স্বামীটাকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে বৌকে নিয়ে রাতভর ফুর্তি করে। বিনিময়ে তাদের জীবন, হালের গরু আর নড়বড়ে ছনের ঘরটা আগুনে পোড়া থেকে বেঁচে যায়। স্বামী বেচারা হয়তো সারারাত রান্নাঘর বা গোয়ালঘরের চিপায় গিয়ে ঘুমায়। তারপর সকালে তেনারা চলে গেলে আবার ফেরত আসে। শুরু হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এতই স্বাভাবিক, যেন গতরাতে কিছুই ঘটেনি। বছরের পর বছর ধরে নাকি এতেই তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। খোদাতায়ালা তার কি এক আজব দেশই না আমাকে দেখালেন! এটা কি আফ্রিকার গহীন অরন্যের কোন গ্রাম? নাকি আমি টাইম মেশিনে করে হাজার বছর অতীতে ফিরে গেছি? একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস আমার বুক থেকে বেরিয়ে আসে; রাহ্‌মানুর রাহীম, তুমি এই রমজান মাসটা অন্তত এদেরকে…….।

আমার দেওয়া সময় মতই কালাচান তার সাথের লোকজনসহ রাত দেড়টার দিকে চলে আসল। তাদের আরো দুইজন দাসপাড়াতে বসে ধীরেনের ঘরের উপর নজর রাখছিল। তারা মোবাইলে জানালো, মুরগী তার খোপের ভেতরেই আছে। আমি ইছাপুরের ছোটগাঙ্গের পাশে গাড়ি রেখে হাঁটাপথ ধরলাম। উদ্দেশ্য গোপনীয়তা রক্ষা করা, তাছাড়া রাস্তাও এর পরে তেমন সুবিধার না। মাইলটাক হাঁটার পরে পৌঁছলাম ইছাপুর গ্রামের দাসপাড়ায়। নজরদারিতে বসে থাকা লোকদের কাছ থেকে নিশ্চিত হলাম মোমেন ঘরেই আছে। এরপর আমার লোকদের নিয়ে খুব সন্তর্পনে ধীরেনের ঘরটাকে ঘিরে ফেললাম। আমি পা টিপে টিপে গিয়ে তরজার বেড়ার ফাঁকে চোখ রাখলাম। চৌকির নীচে কমিয়ে রাখা কেরোসিন কুপির মিট্‌মিটে আলোয় কেমন ছাঁয়া ছাঁয়া লাগছিল ঘরের ভেতরটা। চোখ সয়ে আসার পর ধীরে ধীরে দৃশ্যগুলো স্পষ্ট হলো। ওই তো, ঐটাই বোধহয় মোমেন। চৌকিতে এলোমেলো তেলসিটে পড়া চাদরের নীচে সে ভয়ানক ব্যস্ত। আর পারুবালার চেহারাও দেখা যাচ্ছে কিছুটা; আশ্চর্য, তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে সে ধীরেন নামে অন্য কারো স্ত্রী! “When rape is imminent, better to enjoy” এই থিওরীতে চলে গেছে বোধহয়। অথবা কে জানে, হয়তো তার সতীত্বরক্ষায় অক্ষম আর দুর্বল স্বামীর সোহাগের চাইতে আজ শক্তি ও ক্ষমতাশালী এই ডাকাতের অত্যাচারই তার বেশী ভালো লাগে। হয়তোবা আরো বেশী কিছু, হয়তোবা জন্মলগ্ন থেকে একেই নিয়তি ও নিয়ম বলে জেনে এসেছে পারুবালার মত এখানকার অভিশপ্ত মেয়েরা। আচ্ছা, কার অভিশাপ এদের উপরে? সমাজের? নাকি সভ্যতার? প্রাচীন কোন দেবতার? নিয়তির? নাকি একেবারে খোদ ঈশ্বরের?

মোমেনের কৃষ্ণলীলা বেশীক্ষণ আমার সহ্য হলো না; চিরিক দিয়ে মাথায় রক্ত উঠে গেল। লাফিয়ে ঘরের বারান্দায় উঠে এক লাথিতে হুড়কো লাগানো দরজাটা কপাটশুদ্ধ ভেঙ্গে ফেললাম। ভীষণ চম্‌কে উঠে বিস্ফোরিত চোখে এক মুহুর্তের জন্য আমার দিকে তাকালো মোমেন, তারপরই ধূমকেতুর মত ছিটকে পড়ল বিছানা থেকে। আর কোনরকমে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে চৌকির একপাশে গুটিসুটি মেরে সরে গেল পারুবালা। বেশ মিষ্টি আর শ্যামলা গোলগাল একটা মুখ তার; যেখানে যৌবনের উদ্দামতার সাথে দারিদ্র এখনো পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠেনি। ধীরেনের ঘরটা দেখলাম নিতান্তই ছোট। তার ভেতরে আবার দরমার পার্টিশান দিয়ে ছোট্ট একটা খোপের মত তৈরী করা হয়েছে। এককোনায় দরমা কেটে সেখানে ছোট দরজার মত করা, কিন্তু কোন কপাট বা পাল্লা নেই তাতে। সম্ভবত ভাঁড়ার ঘর বানানো হয়েছে ওটাকে, কয়েকটা পুরোনো চটের বস্তা দেখা যাচ্ছে দরজার ফাঁক দিয়ে। আমি মোমেনকে নিয়ে ঘরের বারান্দায় চলে এলাম। এরই মধ্যে উঠোনের অপরপাশে রান্নাঘর থেকে বন্দী ধীরেনকে উদ্ধার করে নিয়ে এল আমার লোকজন। সমানে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। খুব মায়া লাগলো আমার। আহারে! শুধু এই কান্নার অধিকারটিই হয়তো এদের অবশিষ্ট আছে। খানিক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মোমেন তার পলাতক কিছু সাঙ্গপাঙ্গ’র ঠিকানা জানালেও তার অস্ত্রটির কথা কিছুতেই স্বীকার করছিল না। তবে আরো খানিক্ষণ খোঁজ করার পরে ওটিরও সন্ধান পাওয়া গেল। দরমার বেড়া দেয়া ঐ খোপটির ভেতরে আরেকটা চৌকি পাতা। তার নীচে পুরাতন একটা লোহার ট্রাঙ্কের ভেতরে অনেক কসরত করে ন্যাকড়া দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা ছিল মোমেনের রিভলবারটা। রিভলবার লুকানোর কায়দা দেখেই বোঝা যায় আরো কিছুদিন থাকার নিয়ত নিয়েই এখানে উঠেছিল সে। ওখানেই চৌকির উপরে শুয়ে ছিল বছর চারেক বয়েসী ফুটফুটে সুন্দর একটা ছেলে। নাম নুটু দাস। জানা গেলো, ছেলেটি পারুবালার। তবে পারুবালা বা ধীরেন কারো সাথেই ছেলেটার চেহারায় কোন মিল নেই।
অস্ত্রটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এইটা কে রাখছে নুটু?”
“কাহা (কাকা) রাহিছে।”
“কে তোমার কাহা?”
“ওইঘরে মা’র ধারে রয়ছে, ওইতি কাহা।” নুটুর ঘুম জড়ানো কন্ঠের ভাবলেশহীন উত্তর। ঘটনার আকস্মিকতার কোনো প্রভাব নুটুর উপর পড়েছে বলে মনে হল না। হয়তো নুটু তার চার বছরের জীবনেই আমার চাইতে অনেক বেশী আকস্মিক ঘটনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে। ছোটবেলায় আমার বড়চাচাকে দেখতাম, পকেটভর্তি লজেন্স নিয়ে আমাদের বাসায় আসতেন। বয়সে অনেক ছোট আমার বাবা-মা দুজনেই তার পা ছুঁয়ে সালাম করতেন। আজ অনেক বছর পরে, আমার পরবর্তী প্রজন্মের নুটু দাস দেখে, তার জনৈক ‘কাহা’ পকেটে রিভলবার নিয়ে বাড়িতে আসে। শুধু তাই না, তার বাবা’কে রান্নাঘরে আটকে রেখে রাতের পর রাত তার মার সাথে শুয়ে থাকে। নুটু দেখে, গভীর রাতে এমন একদল ভয়ঙ্কর মানুষ তাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে যাদেরকে দেখে তার শক্তিশালী মোমেন ‘কাহা’ও থরথর করে কাঁপে। কিন্তু নুটু অবাক হয়না। কারন জন্মলগ্ন থেকে এ-ই তার পরিচিত জীবন ও পৃথিবী। তাই আমি বছরের পর বছর ধরে সমাজের ময়লা আবর্জনা ঘেঁটে আজ তিরিশ বছর বয়সে অবাক না হওয়ার যে দুর্লভ ক্ষমতার সামান্য কিছু অর্জন করেছি, নুটু তার চার বছর বয়সেই তা কেমন চমৎকার রপ্ত করে ফেলেছে। আমি ভাবি, ঠিক কতটুকু উন্নতি হয়েছে আমাদের সভ্যতার? কি লাভ হয়েছে স্টীফেন হকিংয়ের ‘সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ লিখে? যেখানে কোথাও কোথাও সময় এখনো সেই গুহামানবদের গুহাতেই বন্দী হয়ে আছে! কি লাভ আমাদের এত নারীস্বাধীনতা ও সাম্যবাদের গান গেয়ে, যেখানে একটা হিন্দু মেয়ে দিনের পর দিন বিনা পয়সার রক্ষিতা-জীবনকে হাসিমুখে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে? ঢাকা-দীল্লি-লন্ডন-প্যারিস-নিউইয়র্ক; এইসব সভ্য পৃথিবী গৌহাটি থেকে ঠিক কত ‘আলোকবর্ষ’ দূরে?

পরেরদিন খুব সকালে মোমেনকে চালান দিয়ে আমি মোহম্মদপুর জামে মসজিদের ইমাম সাহেবকে আমার অফিসে ডেকে পাঠাই। ইমামের চোখেমুখে ভয়মাখা কৌতুহল। কারন এই অফিসে আজ অব্দি তাকে কখনো ডাকা হয়নি। আমি সংক্ষেপে তাকে গতরাতের কাহিনী শোনালাম। গতকাল বাদ আছর তার কাছে শোনা হাদিসটিও তাকে মনে করিয়ে দিলাম। এরপর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, “ইব্‌লিশকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখার পরেও এই অবস্থা হলো কেন ইমাম সাহেব?” এতবড় কৌতুক মনে হয় সে জীবনেও শোনে নাই। পান খাওয়া লাল দাঁতের কান অব্দি একটা লাল হাসি ঝুলিয়ে গদগদ স্বরে বলল, “খুব এক্কান মজার কতা কয়ছেন ছার। ইব্‌লিস্‌রি বাইন্দে রাখ্‌লি কি হবি? আমাগের মদ্যিই ইব্‌লিসির ম্যালা বড় বড় সাইগ্‌রেদ রয়ছে না? ইরাই বা কম কিসি? খ্যাক্‌, খিক্‌, খেঁ, খেঁ, খেঁ, খেঁ………।”

২,৭৩৭ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “নরকবাস-৩”

  1. ভাইয়া,
    সব মিলিয়েই খুব ভালো লাগলো। উপস্থাপন, শেষ প্রবাহ, আর ভিতরের সত্য ঘটনাগুলো তো বটেই।
    যতবার পড়ছিলাম, নিজেকে বোঝাতে চাইছিলাম, এইটা সত্য না। এইটা শুধুই কল্পকাহিনী। আমি তেইশ বছরেও নুটু যতটুকু সহ্য করতে পারে, পারিনা...... ইচ্ছে করেনা।
    ৫ তারার কম দেয়াটা অন্যায় 😀 আগামীতে আরও লেখা চাই

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    খোদ শয়তানও হয়তো মানুষরূপী শয়তানগুলোকে দেখে ঘৃণায় সরে যাবে।
    ভাইয়া, আপনার পোষ্টগুলো নেশা ধরিয়ে দিয়েছে। বন্ধ করবেন না প্লীজ। :boss: :boss:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    শেষ না করলে ভাল হবে......

    চলুক... :tuski: :tuski:

    মোমেনের পরিনতি কি হল তারপর...???? বিচার কি হয়েছে নাকি আরো কিছু শক্তিধর মানুষের ছায়ায় পুনর্জীবন পেয়েছে...???

    জবাব দিন
  4. লেখাটা পড়ে মাথাটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল-কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছিলাম না।অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি নিয়ে আগেই বলেছি-নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা সভ্য জগতে বসবাস করি এই কথাটা ভুলে যেতে ইচ্ছে করল ঘটনাটি পড়ে।

    সাজিদ ভাইডি,দেশে আসলি আপনারে লয়ে কোক খাতি যাবানে-ইরাম সোন্দর কইরে ক্যামনে লেখেন বুজতি পারিনা!

    জবাব দিন
    • সাজিদ (১৯৯৩-৯৯)

      মাস্ফ্যু, একটা সত্যি কথা বলছি। আবার তেল মনে করিস না। আমি তোর কমেন্টের জন্য ওয়েট করছিলাম। তোর পরীক্ষা কেমন হল? তোর নামের পাশে প্রোফাইল ছবি কই রে? আরেকটা কথা, কোক কি খাওয়ার পরে না আগে খাবি? নাকি দুইবারই খাবি?


      অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক,
      জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
      কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।

      জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    @ নীলপদ্ম ভাই,

    আপনের আর আপনের লেখা আমি কি পরিমাণ পছন্দ করি এইটা নিয়া বেশি কিছু কইলে ব্লগের দুষ্টলুক আমার একটা বিশেষ কলেজরে নিয়া করা জুকগুলা আমার দিকেই ফিরায় দিতে পারে তাই আর কিছু না কইয়া নরকবাস-৪ এর অপেক্ষায় রইলাম।

    পরীক্ষা ভালই হইছে।

    ভাইডি,কোক দুই বারই খাবানে,কোকের সাথে চিতই পিঠা আর চইঝাল দিয়া রান্না করা গরুর মাংস,সেই সাথে সুন্দরবনের নোনা ইলিশ...ধুর তাড়াতাড়ি বিয়া করেন যাতে ভাবী আমার জন্য এইগুলা রান্না করে :shy: :shy:

    জবাব দিন
  6. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    সাজিদ,
    যেদিন লেখাটা দিয়েছিলে সেদিন-ই পড়া হয়ে গিয়েছিলো আমার।
    খুব মন খারাপ হলো। কান্না পেয়েছিলো বলতে একটু সংকোচ হচ্ছে।
    তোমার লেখার প্রশংসা আর করবোনা ঠিক করেছি,
    পাছে বেশী গুণগান করলে লেখার মান কমে যায়... 😛

    মনে আছে আন্দালিবকে বলছিলাম নির্মম গদ্য লিখতে,
    সেটা তোমার হাত দিয়ে বেরুচ্ছে।
    তবে যে জীবন তুমি দেখেছো/দেখছো
    তাকে লিখে পাঠকের পাতে ফেলাটা আসলে তো
    secondary কাজ, তোমার আসল যে দায়িত্ব
    সেটা তুমি এত নিষ্ঠার সংগে করে যাচ্ছো যে
    আমার খুব অহংকার হচ্ছে জানো।
    মনে হচ্ছে যেন আমিও রয়েছি তোমার সংগে সেসব জায়গায়।
    অনেক শুভকামনা রইলো।
    সাবধানে থেকো।

    জবাব দিন
    • সাজিদ (১৯৯৩-৯৯)

      "পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক, গদ্যের কড়া হাতুড়ীকে আজ হানো।
      প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা, কবিতা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি।
      ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,পূর্ণিমা চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি।"

      নুপূর ভাই, আমার অতিপ্রিয় কবি সুকান্তের অবিনশ্বর এই লাইনগুলো যতবার আবৃত্তি করেছি, প্রতিবার মনে হয়েছে, সুকান্ত নিজে এতবড় একজন কবি হয়ে কিভাবে কবিতা বাদ দিয়ে এভাবে গদ্য লেখার উপদেশ দিল? সাথে সাথে গদ্য লিখতে পারি না বলে নিজেকে খুব অসহায় মনে হত। আবার আমার মত সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবনের নিষ্ঠুর সত্যগুলো কবিতার ভাষায় বলাও সম্ভব না। কারন সবাই তো আর সুকান্ত বা রবিন্দ্রনাথ হতে পারে না। তাই শেষমেশ অনেক সাহসে ভর করে আমার প্রথম গদ্যধর্মী লেখা (প্রকৃত অর্থে কতটুকু 'গদ্য' হয়েছে আমি জানিনা) 'নরকবাস' শুরু করলাম। আপনাদের সবার উৎসাহে সিরিজটা চালিয়ে নেবারও চেষ্টা করছি। আমার আবেগের খুব বড় বহিঃপ্রকাশ হল 'হঠাৎ চোখ ভিজে আসা'। আপনার মন্তব্য পড়ে আজ আমার আবার তাই হল। জ্ঞান ও হৃদয়ের ঐশ্বর্যে আপনি অনেক ঐশ্বর্যবান ও আলোকিত মানুষ। তবে ছোটভাই হিসেবে আপনার কাছে আমি বেশী কিছু আবদার করব না। শুধু একবার আমার মাথায় কিছুক্ষণ হাত রেখে আশীর্বাদ করবেন।


      অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক,
      জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
      কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।

      জবাব দিন
  7. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    লেখাটা পড়ে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে । বাংলাদেশে এই অবস্থা ! আমরা আছি কোথায়? সাজিদ ভাই লেখা সম্পর্কে কিছু বলার নাই । আগেই বলেছি আমার প্রিয় একজন লেখক হয়ে উঠেছেন আপনি । শালার সমাজে এত ময়লা পরিষ্কার হবে কিভাবে?

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।