বৃষ্টি – ৪

যাচ্ছিল খুব ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে
রিকশায় পাশাপাশি
অফিস পরবর্তী বিকেলে।
একটু ছোঁয়াছুঁয়ি হয়ে গেলে
অস্বস্তি হয়না এমন নয়
তবু ভাবখানা এই —
স্পর্শে তো পুলক পেতে নেই!
ভদ্র আধুনিক শিক্ষিত রুচিশীল যেহেতু।
কামনাবাসনা সমস্ত অতএব
বিনিদ্র রয়ে যাক
একান্তে খামের ভেতরে,
কী কাজ খামোখা
অস্বস্তি ফিল করে!

তত্ত্বকথার তবু বিরাম থাকেনা কোনদিন,
প্রতিদিন সাহিত্য সিনেমা ফিলসফি
নতুন প্রকাশিত বই, লিটল ম্যাগাজিন,
মঞ্চনাটক, আলোকচিত্র কি চিত্রকলা প্রদর্শনী
আসে ঘুরে ফিরে, আর আসে
অফিসের প্রাত্যহিক পলিটিক্স।
ভেতরের ঢেউগুলো এদিকে অবিরাম
অবিরাম ভাঙে আর
দু’জনার পাড়দুটো ক্রমশঃ
ক্ষয়ে
যেতে
চায়…..
ঠোঁটে বুঝদার হাসি
ঝুলিয়ে
অবিশ্যি দুজনে’ শুনে যায়
অর্থহীন এসব আলাপ
আর নির্ঘাত ভাবে
এতে কার কি’বা লাভ;
এরচে’ কোন অর্থবান কথা,
মিনিমাম চাহনির বারতা
যদি পেড়ে ফেলা যায়।
(থাকগে, কি ক্ষতি,
কিছু না বলে’ যদি
চামেচামে রিকশা চড়া যায়!
)

তো এইসব কথার সময়ে
এমন মত্ত থাকা হয় যে
আকাশে পেটভারী মেঘ জমে এলেও
চারপাশ অফিস-শেষের
সোনালী-সুরাপ্রতিম রোদেই
বুঁদ
হয়ে থাকে বরাবর।
বিষ্টির দু’একটা ফোঁটা
চটপট মুখে ঠোঁটে বাড়ি খেলে
ঘাম বলে মনে হয় —
আরো দু একটি চকিতে
একটু পিন মেরে সচকিত করে দিলে
অফিসের আর সব কলিগদের মতো —
দুজনে টানটান হোয়ে
“একটু ভিজলে কি এমন হতো”
এই চেহারা করে
একে অন্যের পানে চাইতে
জোর সাপোর্ট মিলে যায়
জোড়া চাহনিতে…

বিষ্টির দেবতা অবিশ্যি
মর্ত্যের এসব মানব-মানবীদের
আরেকটু বাজিয়ে নিতে চেয়ে
উপুড়হস্ত হয়ে গেলে
সমস্ত ঢাকাশহর জুড়ে
নূহের প্লাবন ঢুকে পড়ে….
এবং এই দু’জন কলিগ…..
হঠাৎই মনে পড়ে যায়ঃ ঠিক,
ঘরবাড়ি বলে কিছু আছে তো
অন্তত থাকা উচিত বলে মনে হয়
রিকশাই শেষ সত্য নয়! —

“এই পর্দা আছে?”
“হুডটা তুলে দাও না!”

বিষ্টি আর বাতাস যেন
কিছুতেই এদের দেবেনা পৌঁছুতে
অথবা নেবেই সেখানে
কোন না কোন একদিন
যেখানে হতোই যেতে।
হুড তুলে দেয়ায়
ঘন হয়ে যায়
ভেতরের চিত্র,
উভয়ের অন্তর্গত রসায়ন,
হতে পারে ফিজিক্সও,
কী এমন বিচিত্র!
দুরন্ত বাতাসে উড্ডীন
রিকশাঅলার নীল পলিথিন
চারহাতে সামাল দিতে গেলে
সিনেমার পোস্টার ছেড়ে
নায়িকা রাস্তার মাঝখানে এসে
থলথলে উরু নাচায়,
বিজলী চমকাবার পর
দূরে কোথাও বাজ পড়ে গেলে
পদার্থবিদ্যার আরো কিছু সূত্র
টুপটাপ জলে পড়ে যায়…..

আসুন,
চুপচাপ আমরাও দেখি
তুমুল এই বিষ্টির ভেতর
আমাদের অতি পুরাতন শহর
এই দুটি মানব-মানবীকে
এবং অবশ্যই ওই রিকশাটিকে
আজ ঠিক কোন পথে নিয়ে যায়।

৩,৮০৭ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “বৃষ্টি – ৪”

  1. রকিব (০১-০৭)
    এবং এই দু’জন কলিগ…..
    হঠাৎই মনে পড়ে যায়ঃ ঠিক,
    ঘরবাড়ি বলে কিছু আছে তো

    কেমন যেন টিটো ভাইয়ের গন্ধ পাই 😛 😛 ।

    নুপূর ভাই জিন্দাবাদ, চুমু ভাই জিন্দাবাদ। :party: :party:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আইরিন জামান সুরভী (১৯৯৭-২০০৩)

    ভাইয়া আপনি তো খুব সুন্দর লেখেন! :clap:

    আমার মেডিকেল পড়ার চাপে বেশি একটা আসা হয়ে ওঠেনা, আর কবিতার ব্যাপারটিতে অনেকে আবার আগ্রহ-ও পায়না। কিন্তু আমার মূলতঃ কবিতা লেখার দিকেই ঝোঁক।

    তবে আপনার লেখার কেমন একটা বিশেষত্ব আছে... খুবই দারুণ!! :boss:

    জবাব দিন
  3. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    ভাইজান, যাস্ট এই থিমের একটা গান বানাইতেসি আমি আর আমার কলেজের এক বড় ভাই মিল্ল্যা; কথা উনার, সুর যৌথ আর কম্পোজিশন আমার। লিরিকটা আপনারে শুনাইতে ইচ্ছাইতেসেঃ

    সেদিন মেঘ ছিল,
    আকাশ থমথমে।
    বৃষ্টি এলো মুষলধারে
    রিকশায় দু'জন, হাতে হাত;
    কথা কিছুক্ষণ, কিছুক্ষণ চুপচাপ।

    অপলক নির্বাক দু'জন!

    অনেক মানুষ, অনেক কথা
    পাখিরা সব নিড়ের খোঁজে
    গোধুলীর শেষ নিয়ন আলোয়
    আঁধারের রং বদল -- তখনও...

    অপলক নির্বাক দু'জন!

    না বলা কথাগুলো না হয় জমাই থাকুক
    ফের কোনদিন ঝম-ঝম বৃষ্টি নামুক
    আবার একই পথের বাঁকে... অপলক নির্বাক দু'জন!

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বৃষ্টিঃ দি আদার সাইড অফ দ্যা কয়েন... :grr:

    বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর রাস্তায় ওঠে বান
    বাসায় ফেরার বাহন পেতেই ওষ্টাগত প্রাণ।
    এই হচ্ছে বর্ষাকালে ঢাকার নিত্য ছবি
    দিন বদলের দিনেও জানি একই রবে সবই...

    ***ওরে, কি দিলাম রে... B-)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. আলম (৯৭--০৩)
    বিষ্টির দেবতা অবিশ্যি
    মর্ত্যের এসব মানব-মানবীদের
    আরেকটু বাজিয়ে নিতে চেয়ে
    উপুড়হস্ত হয়ে গেলে
    সমস্ত ঢাকাশহর জুড়ে
    নূহের প্লাবন ঢুকে পড়ে….

    অপূর্ব অনুভূতি। হৃদয় জুড়িয়ে গেল। থ্যাংকু ভাইয়া।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।