আজ একুশে ফেব্রুয়ারী তে শহীদ মিনারের প্রভাত ফেরীটা খুব মিস করছিলাম। পর পর দুইটা একুশে ফেব্রুয়ারীতে প্রভাত ফেরীতে না শরিক হতে পারার কষ্টটা কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। আমি হয়ত ভাষার ব্যাপারে গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক কিছু জানিনা। কিন্তু বেশ কিছু দেশ ও ভাষাভাষীকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্যটা আমাকে শুধু বাংলা না সব ভাষার ব্যাপারে মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যত বেশি ভাষাভাষী দেখেছি তত বেশি ভাষার ভিন্নতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। আমার ভাষার ব্যাপারে মুগ্ধতার পেছনে কিন্তু জ্ঞানগম্ভীর কোন কারন নেই , সাধারন কিছু অভজারভেশনই আমার চোখ খুলে দিয়েছে।
একবার চায়নিজ ভাষার কিছু সাইন বোর্ড দেখে আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম ” আচ্ছা আম্মা তোমার কি এই চায়নিজ সাইনবোর্ড দেখে কিছু মনে হয়নি ? জানতে ইচ্ছে করেনি কি লেখা এখানে ? কি হয়ে এই দোকানে ?” আম্মা বললেন , ” কই নাতো কিছুই মনে হয়নি, খালি মনে হয়েছে চাইনিজ ভাষায় কিছু লেখা” । তখনই আমার মাথায় যে চিন্তা আসল তা হলো ” ভাষাটা এত অদ্ভুত যে শুধু যে জানে তার কাছেই এর মূল্য আছে,আবেদন আছে, উপলদ্ধি আছে। আমার পাশেই হয়ত আরেকজন খুব সুন্দর করে কোন গল্প করছে বা মজার কথা বলছে, হাসাহাসি করছে কিন্তু তার কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করবে না যদি আমি ভাষাটাই না জানি । আর এই চিন্তাটাই আমাকে ভাষার সৌন্দর্য উপলদ্ধি করতে শিখিয়েছে ।
সিংগাপুরে এমআরটি(পাতাল রেল) স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। একই ঘোষনা কয়েক ভাষায় বলছে পর্যায়ক্রমে। ইংলিশ, ম্যান্ডারিন, সাউথ ইন্ডিয়ান কোন ভাষায়। হঠাৎ করে মনে হলো ভাষা শুনেই কিছুটা আন্দাজ করা যায় এর ভৌগলিক উৎপত্তিস্থল, শ্রেনী ইত্যাদি।যেমন সাউথ ইন্ডিয়ান ভাষাতে ‘ড’ এর ব্যবহার অনেক বেশি ( সান্ডুরু, মান্ডুরু টাইপ শব্দ বেশি), রাশিয়ান বা মধ্য এশিয়ান ভাষা গুলোতে ‘ভ’, এর ব্যবহার লক্ষনীয় ( আসিমভ, চেখভ টাইপ শব্দ বেশি), চাইনিজ বা সমজাতীয় ভাষায় সন্দেহাতীত ভাবে ‘ং” এর ব্যবহার বেশি, জার্মান , সুইস-জার্মান বা সমজাতীয় ভাষায় ‘খ’ জাতীয় শব্দ বেশি। কিন্তু যখনই আমি এই ব্যাপার টা সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীর কাছে জানতে চেয়েছি তারা নাকি এইব্যাপারটা বুঝতেই পারে না। যেমন রাশিয়ার বন্ধুকে যখন ‘ভ’ এর অধিক ব্যবহার , বা সুইস বন্ধুকে ‘হ আর খ এর মাঝামাঝি গলার ভিতর থেকে খ্যাক ‘ জাতীয় শব্দের অধিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলাম তখন তারা খুবই অবাক হলো । তাদের ভাষাটা যে আমাদের কানে এমন শোনায় তা তারা বিশ্বাসই করতে চায় না । তখনই বুঝলাম আমার ভাষাটা তাদের কানে কেমন শোনায় এটা আমরা কোনদিনই জানতে পারব না। আমার সুইস কলিগকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম আমার ভাষাটা তোমাদের কাছে কেমন শোনায় , সে হেসে জানালো আমাদের ভাষায় ‘ব’ , ‘ছ’ , ‘য়’ নাকি বেশি । শুনে আমি বুঝলাম এটা কোনদিনই আমার বা কোন বাংলা ভাষাভাষীর কাছে বোধগম্য হবে না।আর এখানেই ভাষার সৌন্দর্য।
একবার এক বিতর্কে আমার এক সিনিয়র ভাই বলে বসলেন বাংলা ভাষায় বর্ণ বেশি বলে সব ধরনের উচ্চারন নাকি করা সম্ভব হয়, তাই বাংলা ভাষা নাকি অনেক বেশি উচ্চারন পারদর্শী। উদাহরন হিসাবে সে বলল যে আরবী ভাষা নাকি সব উচ্চারন করতে পারেনা । কিন্তু বাংলা আরবীর সব উচ্চারন করতে পারে । তখনই আমি তাদের মতের বিরোধিতা করে বল্লাম যে আসলে এটা তুলনার কোন বিষয়ই না কারন উচ্চারনের ডোমেইনটাই পুরো আলাদা। যেমন আমাদের ‘ক’ একটা কিন্তু আরবীতে ‘ক’ এরই বিভিন্ন রুপ আছে যা ‘ক’ ও ‘ক্ব’ এর মাঝামাঝি । তেমনি ‘ত’ ও ‘ত্ব’ এর মাঝামাঝি উচ্চারন বাংলায় অনুপস্থিত। তেমনি ভাবে জার্মান ভাষার ‘গলার ভিতর থেকে উচ্চারিত ‘হ’ ‘খ’ এর মাঝামাঝি উচ্চারন বাংলাতে অসম্ভব। তাই আমার দৃষ্টিতে ভাষার তুলনাটা অনেক ক্ষেত্রে আসলে অসম্ভব ব্যাপারই মনে হয়। জানিনা ভাষাপন্ডিতরা কি বলবেন ।
আমার এক কলিগকে ‘কোপা সামছু’ ডায়লগটা শিখালাম। মানে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘chop shamsu ‘ অনুবাদটা নিজের কাছেই খুব হাস্যকর ও অপ্রতুল মনে হলো। আর এর সারমর্ম বা শানে নুযুল কিছুতেই তাকে ‘কোপা সামছু’ ডায়লগের মাহাত্মটাই বোঝানো গেল না। সেও ভুলভাল ভাবে ‘কোপা সামছু’ উদৃত করে আমাদের অনেক হাসির জোগান দিয়ে যাচ্ছে ।আর ভাষার সৌন্দর্যটা এখানেই যে কোন ভাষা শুধু নিজের ভাষাতেই সবচেয়ে সুন্দর। অনুবাদে নয়।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষনীয় ভাষার ব্যাপারে, তাহলো যে যেটা উচ্চারন করতে পারে না, সে সেটা শুনতেও পারেনা। আমার ড্রাইভারকে আমি ‘শুভ সকাল’ টা শিখালাম। সেও খুব আগ্রহ সহকারে প্রতিদিন সকালে আমাকে ‘চুবো চকাল’ বলে স্মভাষন করে চলেছে। ‘স’, ‘শ’, ‘ষ’ এর এমন কি ‘চ’ এর ও কোন তফাৎই তার কাছে নেই ,এমনকি আমার এসব বর্নের ভিন্ন উচ্চারনও নাকি তার কাছে একই রকমই লাগে। তাই আমাকে বাধ্য হয়েই প্রতিদিন ‘চুবো চকাল’ শুনতে হচ্ছে হাসিমুখে। নিজের ভা্ষার জন্য এইটুকু অত্যাচারতো সহ্য করাই যায় ।
ভাষার সৌন্দর্যের কথা বলতে বলতেই তো পোষ্ট বিশাল হয়ে গেল। শহীদ মিনারের সৌন্দর্যের ব্যাপারটা না হয় পরের পোষ্টেই বলি ।
আমাদের এক স্টাফ ছিল। সব কথার শেষে ভ লাগাত। অনেকটা রাশিয়ানদের মত। সেখান থেকে মাঝখানে কোন এক সময়ে সব কথার শেষে ভ লাগানোর একটা ট্রেন্ড চালু হয়ে গেসিল আমাদের মধ্যে। 😀
শহীদ মিনারের কথা এখনো পাড়েন নাই। ভালোই হইসে। আরেকটা পর্ব পাওয়া যাবে এই চান্সে।
আপনার অভিজ্ঞতাগুলো শুনে ভালো লাগলো।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভাইয়া আমার মনে হয় ব্যাপারটা সেরকম নয়....... যেই ভাষাতেই যেই শব্দ থাকুক না কেন সেটাকে বাংলাতে প্রকাশ করা সম্ভব......কলেজে আমার ফর্ম মাস্টার লতিফা ম্যাডাম কথাটা বলেছিলেন...আর উনি যেহেতু বাংলা'র সুতরাং কথাটা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী.........
আরবী ভাষা উচ্চারনের দিক থেকে অনেক বেশী সংবেদনশীল ( কাফ আর ক্বাফ এর উচ্চারন যেমন )..... কিন্তু সাধারন, ঁ ব্যবহার করে অথবা বিচিত্র কিছু বানানরীতি দিয়ে সেটাকেও আমরা বাংলায় প্রকাশ করতে পারছি... ত আর ত্ব এর যেই উচ্চারনটা আপনি বললেন সেইটাও প্রকাশ করতে পারার কথা
আমার পয়েন্ট হল, আমাদের ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা অন্য যেকোন ভাষার থেকে বেশী..... আমি বাংলা শব্দের গঠনের উপর একবার কাজ করেছিলাম.......... সেখান থেকে বলতে পারি আমাদের ভাষার প্রকাশক্ষমতা অনেএএএএএএএএএএএএএএএএএক...........
we are the best
আসলে আমি লিখে ধ্বনিগুলো ঠিক বোঝাতে পারিনি। কিন্তু তুমি যেভাবেই প্রকাশ করো না কেন তা আরবি বা জার্মান বা ফ্রেনঞ্চ ভাষার দুরহ এবং বিশেষ কিছু উচ্চারনের কাছাকাছি যাবে না। লতিফা ম্যাডাম বাংলার জন্য অত্যন্ত দক্ষ একজন শিক্ষিকা সন্দেহ নেই। কিন্তু আসলে জিনিসটা শুধু বাংলার না তুলনামূলক ষ্টাডির ব্যাপার। আর আমি একাডেমিক এর চেয়েও বেশি অভিজ্ঞতার কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত যে সাধারন আরবী মাখরাজগুলোও ( মাখরাজই তো বলে নাকি ?) ঠিক আরবী রীতিতে প্রকাশ করা যায়না। তুমি বাংলা উচ্চারনের একটা কোরআন শরীফ দেখলেও সীমাবদ্ধতা বেশি টের পাবে। আমরা হয়ত আরবীটা বাংলায় লিখে তৃপ্তিটা পাব কিন্তু তা এক আরবীর কাছে "চুবো চকাল' টাইপ ই শোনাবে। আসলে প্রকাশ ক্ষমতাটা বেশি না কম ব্যাপার না, ব্যাপারটা হলো কোন উচ্চারন ডোমেইনের সাথে কম্পেয়ার করছ এটাই বড়।
এমনকি আরবী ভাষার সুরেলা ব্যাপারটাও ( কোন অক্ষরের উপর এক আলিফ, দুই আলিফ টান, গুন্নাহ জাতীয় ব্যাপারগুলোও) বাংলার মধ্যে নাই। এমনকি বাংলা অক্ষরের দুইটা 'ব' এর মধ্যে একটার উচ্চারন 'ওয়া', 'ব', 'ভ' এর মাঝামাঝি। কিন্তু খুব পরিষ্কারভাবে তা ব্যবহার করা যায়না উচ্চারনের সীমাবদ্ধতার জন্য।
এখন নিশ্চয় সীমাবদ্ধতাটা কিছুটা টের পাচ্ছো।
চায়নিজদের একটা গুণ আমার খুব ভালো লাগে। ওরা কখনো নিজেদের মধ্যে চায়নিজ ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলে না, যেমন আমরা বাঙ্গালিরা প্রায়শই ইংরেজি ব্যবহার করি...
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আসলে ভাষার খাপখাওয়ানোটাও ভাষার সক্ষতার একটা অংশ, যেটা চীনাভাষার একটা বড় দূর্বলতাও বলতে পারো। চীনা ভাষার একটা বিশেষত্ব হলো প্রায় সব কিছুরই একটা চায়নিজ নাম আছে। চায়নিজ ভাষায় বাংলাদেশ এর নাম 'মুনজালা' ঠিক যেমন আমরা ইজিপ্টকে মিশর বলি।
মানি না। বাংলাদেশের নাম বাংলাদেশ, মুনজালা না 😡
ভালো লাগলো। নতুন আরেকটা বিষয় আসলো আলোচনায়। :hatsoff:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভা্ষার স্বাতন্ত্র্যতা সত্যিই মুগ্ধকর একটা ব্যাপার। এটার ব্যাপারে প্রানবন্ত আলোচনা থেকে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে।
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি আর বাংলায় কথা বলতে পারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
আমার মাঝে মাঝে ইংলিশ মিডিয়াম ছেলেমেয়েদের জন্য করুণা হয়... এরা বাংলা ঠিকমত বলতে পারেনা। 🙁
করুনাই হয় ওদের জন্য !
মান্নান, সুন্দর ও ব্যাতিক্রমধর্মী একটা লেখা দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আমি টার্কিশ ভাষাটা টার্কিশদের মতই অনর্গল বলতাম একসময়। আর সেটা কিন্তু আমাদের ভাষার উচ্চারণগত সমৃদ্ধির কারণেই। যেটা বলতে চাইছি, আমাদের ভাষায় হয়তো সব উচ্চারন ঠিকমত করা যায় না, তবে অধিকাংশই করা যায়। এ ব্যাপারটাতে আমরা ১০০% স্বয়ংসম্পুর্ন না হলেও আমরা অনেক ভাষা থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছি, এই যা।
ইউসুফ ভাই ( নাকি মামা 😮 ), কোন সন্দেহ নেই বাংলার উচ্চারন অনেক সমৃদ্ধ, কিন্তু আমি যেটা বলতে চেয়েছি যে সব ভাষারই ( বা একই ডোমেইনের ভাষার) কিছু সাত্বন্ত্র্য আছে যা অন্য ভাষা দিয়ে অতিক্রম করা যায় না। ভাষার তুলনাটা বড়ই কঠিন ব্যাপার। আমি তুলনার চেয়ে স্বাতন্ত্র্যেই বেশি মহিমা খুজে পাই। আর বাংগালীর যেকোন জায়গাতেই খাপখাওয়ানোর যোগ্যতা অনেক বেশী, ভাষার শক্তিমত্তাও হয়তো একটা কারন হবে।
সহমত।
কেন যে মামা ডাকার প্রপোজালটা দিয়েছিলাম। :bash: :bash: :bash:
সে চুবো চকাল বলছে কেন ?? নিশ্চয়ই তার ভাষায় "শ" ধ্বনিটা নাই....... নয়তো শুভ বলত সে....
আমার পয়েন্ট ছিল এটাই....... আমাদের বর্ণমালায় উচ্চারণস্থানভেদে ৫টি বর্গ আছে , বাকিগুলো আলাদা আলাদা স্থানকে নির্দেশ করছে......যেকোন ভাষায় উদ্ভুত উচ্চারন হতে পারে এমন সব স্থানেই বাংলা ধ্বনিও আছে...
আমরা যেকোন উচ্চারনস্থানকে রিপ্রেজেন্ট করতে সক্ষম.......
আরবীতে ৪ আলিফ মানে কতক্ষন জানি সেই অক্ষরটা উচ্চারণ করতে হয়.....উচ্চারণ সময় যতক্ষনই হোক না কেন, উচ্চারণ আসবে তো এক জায়গা থেকেই......
আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল: কোন ভাষাকে রিপ্রেজেন্ট করতে গেলে আমরা এই সমস্যায় পড়ব না যে, আমাদের বর্ণমালায় এই ধ্বনিটার জন্যে কোন বর্ণ নাই তাই এটা লিখা যাচ্ছে না...... অন্য ভাষায় এই সমস্যাটা আছে.....
না এখানেই তোমার ভুল হচ্ছে, বর্ন ও উচ্চারন সব সময় এক সাথে চলে না। ইংরেজী 'এইচ' কে আমরা এইচ বললেও ইংরেজরা কিন্তু 'হেইচ' বলে। তুমি ওদেরকে 'এইচ' বলতে বললে ওরা শুনবেও 'হেইচ', এবং বলবেও 'হেইচ'। এমনকি আমাদের বরিশালের ভাষায় যেমন 'শ' 'হ' , রংপুরে 'র' কে 'অ' শোনার প্রবনতা তারই একটা রুপ হলো 'চুবো চকাল' ।
লেখার চেয়েও তুমি বড় বিপদে পড়বে উচ্চারন করার সময়েই। যেকোন বিদেশির কাছে তার ভাষা শুদ্ধভাবে বলতে গেলেই তোমার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিজ্ঞতা হবে। তুমি যতই ভাবো তুমি ঠিক মতো বলতে পেরেছো, সে কিছুতেই তাতে সন্তষ্ট হবে না। ঠিক যেমন আমরা বিদেশি উচ্চারন শুনলেই ধরতে পারি।
এমনকি অতি পরিচিত ইংলিশের ক্ষেত্রেও এমন হবে। তুমি ইংলিশ এর একটা ভালো ফোনেটিক ক্লাস ট্রাই করে দেখতে পারো ।
ভাইয়া বর্ণ তো উচ্চারনের জন্যেই...... তাইনা ??? আমরা যা বলি তা ঠিক সেভাবে লিখিনা...... যেমন : আমরা লিখব- জিজ্ঞাসা কিন্তু বলব - জিক্ গা শা
এইচ আর হেইচ এর ব্যাপারটাও সেরকম..... আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল মানুষ যাই উচ্চারণ করুক না কেন উচ্চারনটা আমাদের ভাষা্য় লিখা সম্ভব.... কারন আমাদের বর্নমালা সব উচ্চারনস্থল কাভার করে........... 🙂
রংপুরের যারা প্রাচীন অধিবাসী তারা র কে অ বলেন এটা সত্যি... আমার নানীকেই আমি বলতে শুনি....... কিন্তু র কে উনি অ বললেও আমাদের ভাষা কিন্তু তার উচ্চারণটাকে প্রকাশ করতে পারছেই...... হেইচ আর এইচ এর ব্যাপারটাও মনে হয় সেরকমই
একবার শিশ দিয়ে সেটা বানান করে লিখে দেখ সেটা পারো কিনা।
লিখে শিশের (সমজাতীয় ধ্বনির) ধ্বনিগুলোর সম্পূর্নরুপে রিপ্রোডাকশন হয়না বলেই শিশ জাতীয় শব্দের আলাদা আলাদা নাম আছে। যেমন আমরা বলি 'হু হু করে বাতাস বইছে' , বাতাস কিন্তু ঠিক হু হু করে শব্দ করে না, ভিন্ন রকম শব্দ করে যা 'হু হু' লিখলেই সবাই কল্পনা করে নেয়। এইজন্যই মিউজিককে বানান করে লেখা হয়না, সবগুলো নোটের বিশেষ সংকেত দিয়ে লেখা হয়।
আফ্রিকান কিছু উপজাতি জিহবা দিয়ে 'টাক টুক টাক' জাতীয় শব্দ উচ্চারন করে ভাষা প্রকাশ করে। চাইলে 'গড মাস্ট বি ক্রেজি" দেখে ধারনা পেতে পার। ঐসব শব্দের একজাক্ট রিপ্রোডাকশন লিখে করতে গেলে এইজীবন পার হয়ে যাবে।
:thumbup:
খুব ভালো লাগলো এটা পড়ে। অনেক কিছু জানলাম। আমি আমার নিজের কি ভাবি তাই বলছি এখানে। এ প্রসঙ্গে কিছু পুরানো কথা বলি সংক্ষেপে। মূলত মান্নান আর ইউসুফের কথোপকথনের সূত্র ধরে বলছি।
এই কৌতুকটা জান কি,"ফাথ্যক্য আর ফাথ্যকের (পার্থক্যের) মধ্যে কোন ফাথ্যক্য নেই"। কিন্তু না অবশ্যই ফাথ্যক্য আছেও।
তাই আমার মতে তোমার কথা ঠিক আবার ঠিকও না। যেমন ইংরেজীতে এস (s)একটি শব্দ, আরবীতে সিন, শিন, ছোয়াত। অন্যদিকে বাংলায় শ, স, ষ, ছ। যেহেতু আমদের বর্ণমালার উচ্চারনে চারটি বর্ণ আছে তাই এদের মাঝামাঝি যেকোন উচ্চারণ সহজে করা সম্ভব।
রংপুর এলাকার লোকজন "র" কে "অ" বললেও তাদের "র" কে "র" বলা শিখানো সম্ভব। আমি আমার ব্যাটম্যনকে নিজে শিখিয়েছি।কারন যে পড়তে জানে সে "র" উচ্চারন করতে পারে। এখানে উচ্চারন করতে পাড়ার বিষয়টি উল্লেখ্য।
তুমি বাংলা ছবি,"ওগো বধু সুন্দরী" বা ইংরেজী ছবি,"My Fair Lady" দেখলে আমি কি বলতে চেয়েছি তা সহজে বুঝতে পারবে।
তবে প্রত্যেক ভাষায় আলাদা মৌলিকতা আছে তা অস্বীকার করিনা।
মান্নান কে ধন্নবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
মান্নান ভাই, চমৎকার একটা লেখা। :clap: :clap:
আলোচনাগুলো পড়তে বেশ ভাল লাগছে।
তোমাকেও ধন্যবাদ।
:thumbup: :thumbup:
Life is Mad.