সম্পর্ক যেন প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রতিদিন হাজিরা, ইয়েস স্যার, উপস্থিত ম্যাড্যাম,
হাজির…..
দু একদিন ক্লাস মিস গেলেই দরখাস্ত,
জবাবদিহীতা…কারণ দর্শাও নোটিশ।
প্রতিদিন জানান দিতে হয়, আছি, আছি, আছি।
সম্পর্কগুলো কেমন যেন, নড়বড়ে…
একটু গ্যাপ বাড়লেই তুই থেকে তুমি,
আর তুমি থেকে আপনি….
অচেনা অচেনা ভাব, আন্তরিকতার অভাব।
যেন মাত্রই পরিচয়,
শেষ যে কে কবে বলেছিল, কেমন আছো?
এরপর সত্যিই কেমন আছি জানার জন্য অপেক্ষা করে তাকিয়েছিল চোখ বরাবর।
সম্পর্কগুলো গোল্ডফিশ,
এক রৈখিক, শর্টটাইম মেমোরি লস।
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি?
2
তোমার কপাল ছোঁয়ানো ঠোট,
খামখেয়ালির কল্পনা,
তুমি আমি ‘আমরা’ হলাম
গল্প হলেও গল্প না…..
চিবুক চুয়ে জলের ফোটা,
নদীর মতো চলছি না,
ভিন্ন মনে একই চাওয়া,
একই কথা বলছি না।
গুনতে গুনতে দিন চলে যায়,
অলীক কোন কাব্য না,
দুজন ভাবি কাল থেকে আর
কেউ কাউকে ভাববো না।
ভাববো না তাই ভাবছি বেশিই,
এ মন তো আর যন্ত্র না,
আমরা দুজন স্বাধীন রাষ্ট্র
কিন্তু প্রজাতন্ত্র না।
3
নিপীড়িতের কন্ঠে তুই দিস স্বর,
ঈশ্বর।
নিপীড়কের কন্ঠে এখন বিষ স্বর।
ঈশ্বর।
4
কোথাও তোমার কাচের চুড়ি ভাংছে কাটছে খুব একঘেয়েমির দিন।
পাঠাও তোমার মনের সকল বার্তা শুনবো একাই
বিষণ্ণতার নিউজ বুলেটিন।
ভাল্লাগে না ভাবটি ছেড়ে এইতো তোমার জেগে ওঠার দিন,
কুচির পরে কুচি মেলে শাড়ির ভাজে আটকে রাখো ব্যথার সেইফটিপিন।
আজ সারাদিন আয়না দেখার দিন, আজ সারাদিন কাটুক ক্লান্তিহীন।
আজ সারাদিন নাকের পাদদেশে, জায়গা করুক বিলুপ্ত নোজপিন।
আজ সারাদিন নেইলপলিশের, আজ সারাদিন শাড়ি।
আজ সারাদিন ছুটে চলুক মন খারাপের গাড়ি।
আজ সারাদিন মন ভালো নেই, ভালো নেই যে মন,
আজ সারাদিন থাকুক তোমার সাইলেন্ট মুঠোফোন।
আজ সারাদিন কোল বালিশের, আজ সারাদিন কান্না,
আজ সারাদিন পুতুল বিয়ে, খেলনা বাটি রান্না।
আজ সারাদিন নিজের মতো, নিজের মাঝে ডুব।
আজ সারাদিন ডাটা অফের, ডিএক্টিভ ফেসবুক।
আজ সারাদিন যেমন ইচ্ছে তেমন সাজার দিন,
আজ সারাদিন নূপুর বাজুক, বুকের কোথাও করুক চিনচিন।
5
বিশাল সংসার তোমার, ছেলেমেয়ের স্কুল,নোট বুক
ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট সাইন, ব্রেকফাস্ট, রুচিশীল আউটলুক
নোংরা কাপড়, ডিটারজেন্ট, স্কুল ভ্যান, বাজারের ফর্দ,
ফুলদানিতে রাখা ফুল, ক্লাসিক্যাল হোম টেক্সট,
বিছানার চাদর পালটানো দিন
পিয়াজ-রসুন-আদা, মৌসুমী ফল, ফ্রেশ সবজি,সয়াবিন…..
আপ্যায়ন, অতিথি, সামাজিকতা, ল্যাডিস ক্লাব, ব্যাংক, চেকবুক
এরমাঝে ইতিউতি, সাম্প্রতিক বিশ্ব, নোটিফিকেশন, ফেসবুক।
সন্ধ্যায় চিত্রকলা, নাচ, মুদ্রা, গান, থিয়েটার, মঞ্চ নাটক দেখার দিন
সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া মুভি, ফটোগ্রাফি, ফ্রেম, হারমোনিয়াম
শাড়ির সেইফটিপিন।
বিশাল সংসার তোমার, ফুল পাখিদের যত্ন, আবদার।
আচলে চাবির থোকা, অপেক্ষারত চোখ,
সবাই খেল কি না, স্বামী, সন্তান এমনকি কাজের লোক।
আগামি কালের বাজার, বিদ্যুৎ গ্যাস বিল,
ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার, জানালার পর্দা, জন্মবিরতিকরণ পিল।
এরপর মশারি, মেডিপ্লাস, লরিয়েল লিপস্টিক, পারফিউম
আজকের সাহিত্য পাতা, প্রিয় কোন বই,
ফিনফিনে কাপড়
ঘুমের ক্লাসরুম….
ময়লা গাড়ির বাশি, আবার সকালে ওঠা,
গাছে পানি, গোসল ফেরা চোখে কাজলের দাগ,
বিশাল সংসার তোমার,
বিশালতায় ভরা সব মায়া মায়া অনুরাগ….
6
স্ত্রী ভালোবাসুক,
জন্মদিনে হুলস্থুল কান্ড করে বসুক,
ঘর ভর্তি জ্বালাক কয়েকশো মোমবাতি।
স্ত্রী ভালোবাসুক,
কাপড়ের মতো কাচুক,
পর্যাপ্ত নিংরিয়ে আলগোছে মেলে দিক তারে।
শুকিয়ে গেলে মমতামিশ্রিত আলনায় মেলে রাখুক।
স্ত্রী ইস্ত্রীর মতো পরিপাটি করুক,
ভাজ করে মনের ওয়াড্রোবে রাখার আগে
তার মধ্যে ন্যাপথেলিন দিয়ে রাখুক সবচেয়ে প্রিয়
শাড়ি……
7
জীবন একখানা ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস…
8
আমাদের বাস্তবিক প্রেমের দৃশ্যগুলোই
অন্যদের কাছে জাদুবাস্তবতা মনে হবে।
ঘোরলাগা কোন সন্ধ্যায় আমরা পরস্পরকে
জড়িয়ে ধরে যখন একশো কোটি চুমু খাবো,
তখন এতোকাল যারা চুমুর বদলে থুথু খেয়েছে
তারাও জেনে যাবে জীবানুগুলোকে প্রোটিনে রূপান্তরের কলাকৌশল।
জেনে যাবে, ঠোঁটে ঠোট রাখলেই চুম্বন হয় না
চুমুরও রয়েছে নিজস্ব নন্দন তত্ত্ব,
জেনে যাবে কামড়ের সাথে চুমুর মৌলিক পার্থক্য অনুভবে, কামনায় নয়।
আর, এই বিলুপ্তপ্রায় প্রেমসভ্যতায়
আমরা রেখে যাবো ভালোবাসার প্রত্নতাত্ত্বিক সব নিদর্শন।
9
অচল আচল তলে এক জোড়া কবুতর,
ক্ষণে ক্ষণে উঠছিল ডাকিয়া,
জোছনার রাত ছিল
জানালায় কাচ ছিল,
পর্দায় নাচছিল
আয়শা তাকিয়া……
10
বহুদিন পর জলের সাথে, বহুদিন পর নদী
দেখে মনে হলো এই দুর্দিনে তোমাকে পেতাম যদি।
তোমাকে পেতাম ঢেউয়ের তালে, তোমাকে পেতাম জলে
তোমাকে পেতাম আগুনের মতো মোমের শরীর গলে।
তোমাকে পেতাম নৌকার পালে, জলের এই কোলাহলে,
তোমাকে পেতাম বিষখালির এই বিশুদ্ধ ঘোলাজলে….
11
ঘামের ঘ্রাণে মিশে গেলে প্রসাধনী,
যেখানে তোমার লকেট পেয়েছে দেশ
একবার শুধু পেলে সে সোনার খনি,
ব্যথা বেদনায় হবো যে নিরুদ্দেশ।
নোনতা স্বাদের ফলগুলো খাবো পেড়ে,
এই হৃদয়ের সমস্ত ব্যথা ঝেড়ে,
যদি খুঁজে পাই বাদামী রঙের তিল,
তার সাথে আমি কবিতার দেব মিল।
কবিতায় আর কতোটুকু ফুটে ওঠে,
স্নেহময় সেই স্পর্শ, মোলায়েম।
যেখানে রয়েছে অমূল্য অনুরাগে
সাজানো মোড়ানো আরাধ্য এক প্রেম।
এই জীবনের যাবতীয় সঞ্চয়,
খরচ করে চলেছি একাই আমি,
দুর্গম দ্বীপের পাসোয়ার্ড দাও বলে,
শোনাই তোমাকে মনের সালতামামি।
পিঠের দেয়ালে স্বরলিপি লেখা কার
সে কথা তোমার নাই বা হলো জানা,
বহু সাধনার বেদনা যাত্রা শেষে,
পাবো কি তোমার অমূল্য দেহখানা?
নদীর মতো নারী যেন এক তুমি
ভাজে ভাজে তার কতো কামনার ঢেউ,
সারা পৃথিবীর অলগলি ঘুরে জেনেছি,
তোমার মতো পবিত্র নেই কেউ…..
12
নাম ধরে ডাকলেই কেউ ভালো লাগে,
এই যে এনামে বেনামে কতো নামেই না ডাকে সবাই,
মানুষ পাল্টায়, থেকে যায় সম্বোধন।
সেই একই সম্বোধন আবার ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জন্য।
ভালোবাসলে নাম ধরে ডাকুক কেউ।
নাম ধরে ডাকলেই বুঝতে পারি
ভালোবাসছে নিজস্ব আমাকে।
13
কিছু কিছু রাত, অযাচিত হাত
ভীড় করে এসে কাধে,
কিছু কিছু ক্ষণ খেয়ালে গোপন
সংশয়ে দানা বাধে।
কিছু অনুরাগ, দেয়ালের দাগ
পর্দায় ঢাকা ক্ষত,
সকলই গোপন করছি একাকী
চলছি নিজের মত………
কিছু কিছু ভুল, অন্য আংগুল
মিথ্যে হাতের ছাপে,
কিছু কিছু মন পুড়ছে ভীষণ
অতীতের অনুতাপে।
২ আর ১৩ এর সুন্দর ছন্দ ভালো লেগেছে।
একসাথে এতগুলো কবিতা পোস্ট না করে দুই একটা করে দিলে কবিতাগুলোর প্রতি সুবিচার করা হতো।
গুনতে গুনতে দিন চলে যায়,
অলীক কোন কাব্য না,
দুজন ভাবি কাল থেকে আর
কেউ কাউকে ভাববো না।
ভাববো না তাই ভাবছি বেশিই,
এ মন তো আর যন্ত্র না,
আমরা দুজন স্বাধীন রাষ্ট্র
কিন্তু প্রজাতন্ত্র না।
সুন্দর হয়েছে :shy:
৪ নম্বরের শেষ লাইন- আজ সারাদিন নূপুর বাজুক, বুকের কোথাও করুক চিনচিন - এখান থেকে 'করুক' কথাটা তুলে দিলে অর্থের কোন হেরফের হতো না, অন্ত্যমিলটাও আরো ভালো হতো। অথবা, 'বুকটা করুক চিনচিন'।