যদি কিছু মনে না করেন

বাজার থেকে বিস্কুট কিনে আনলাম। প্যাকেট করা। প্যাকেট খুলে দারুন মজাদার ফ্রেশ বিস্কুট খুলে খাওয়া শুরু করলাম। প্যাকেট করা কেন? কারন না করলে “ফ্রেশ থাকবে” না, নস্ট হয়ে যাবে।

বাসা থেকে বের হবার আগে ল্যাপটপটা ব্যাগে রেখে আসি। বাইরে নিয়ে গেলেও ব্যাগেই রাখি। কারণ? কারন ময়লা ধূলো পড়তে পারে। এত টাকার জিনিষ “ময়লায় নষ্ট” হতে দেওয়া যায় না।

বাজার থেকে আপনি মোবাইল কিনে আনুন। নানা অলংকরনে ঢাকা, নানা বিজ্ঞাপণে ভরা মোড়ক। ক্রেতা কে জানিয়ে দেয়া হল যে, আপনি দারুন মোবাইল কিনেছেন, যাতে রয়েছে এত্ত সব সুবিধা, আবার “দূর যাতায়াতজনিত বিপত্তিও” এড়ানো গেল।

সোনাদানা টাকাপয়সার কথা তো বাদই দিলাম, লকারের বাইরে কোনদিন থাকেনি, থাকবেও না। পাছে যদি “লোকজন দেখে সর্বনাশ ঘটিয়ে” ফেলে?

বাহ, প্যাকেটের তো দারুণ সুবিধা! চলুন আসেপাশের সবকিছু প্যাকেট করা শুরু করি।

প্রথমেই আপনার কলম। দারুন করে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে শুধু নিবটা বের করে রাখুন। কাজ করতে যা একটু অসুবিধা হবে, ব্যাপার না, প্যাকেট করলে তো ভাল থাকবেই।

তারপর আপনার মোবাইল। ও হ্যাঁ, মোবাইলের তো কাভার আছেই, কিন্তু না, ওই কাভারে তো চলবে না, সবাই যে মোবাইল টা দেখছে, সবাই জানে আপনার কাছে রয়েছে দামী মোবাইল। যেকোন মুহূর্তে হয়ে যেতে পারে ছিনতাই। তাই আর দেরী করবেন না, তাড়াতাড়ি আগা-গোড়া-মোড়া প্যাকেটে মোবাইল ভরে রাখুন, ব্যবহারে অসুবিধা হলেও এটাই সবচেয়ে নিরাপদ।

এভাবে বাসার সব আসবাব দৈনন্দিন জিনিষ সব “মোড়কিত” করুন। সব। কোনকিছু যেন বাকী না থাকে। কোন কিছু যেন পাড়াপ্রতিবেশী কিংবা অশুভাকাঙ্খী কারো নজরে না পড়ে।

ঠিক করে দেখুন তো কিছু বাকি পড়ল কিনা। ঠিক করে দেখুন। ভালো করে দেখুন। ও হো, আরেকটা গৃহস্থালী পণ্য তো বাকী রয়ে গেল! আপনার ঘরে মা, বোন, স্ত্রী, কিংবা প্রেমিকা? এরাও পণ্য না? তো আর দেরী কেন? তাড়াতাড়ি তাদেরও হাতের পাতা আর পায়ের পাতা বাদে বাকী সব কিছু প্যাকেট করে ফেলুন। আর তাতেও ঝুঁকি থাকলে ওই গুলোও মুড়িয়ে দিন। যাতে করে এগুলো-

“ফ্রেশ থাকে”

“ময়লায় নষ্ট” না হয়

“দূরযাতায়াতজনিত বিপত্তি” এড়ানো যায়

“লোকজন দেখে সর্বনাশ” না ঘটাতে পারে

তারপর, আর কিছু বাকী আছে? হ্যাঁ, আর একটা জিনিষই বাকী। ওটা করে ফেললে সব শেষ। কোনটা?? আপনার মাথা। আপনার মগজ, বিবেক। ওগুলো করে ফেললেই সব ঠিক। আপনার যুক্তি, আপনার মুল্যবোধ বাইরের আজেবাজে দূষণ থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত। মোড়কের ভেতরে থাকা আপনার মাথায় আর কিছুই ঢুকবে না। সেটাই আপনার তখন মনে হবে “পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।”

“এক হাতে তালি বাজে না” তত্ত্বের অনুসারীদের পক্ষ থেকে ভিকারুন্নেসার বোনটির কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

১,৩৭০ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “যদি কিছু মনে না করেন”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    “এক হাতে তালি বাজে না” তত্ত্বের অনুসারীদের পক্ষ থেকে ভিকারুন্নেসার বোনটির কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    লেখা দারুন হয়েছে :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. আসিফ খান (১৯৯৪-২০০০)

    “এক হাতে তালি বাজে না” তত্ত্বের অনুসারীদের পক্ষ থেকে ভিকারুন্নেসার বোনটির কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
    আর তাদের কাছে জানতে চাই তাদের প্রিয় মানুষগুলোর ক্ষেত্রেও কী তাদের একই বক্তব্য হত?
    খাবার খোলা থাকলেই যদি খাওয়া যায়,তাহলে ওরা নর্দমা থেকে ময়লা পানি,ডাস্টবিনের পঁচা খাবার বা কুকুর বিড়ালের মল-মূত্র খেলেই পারে। ওরাও পেট পুরে খেতে পেল,আমরাও শান্তিতে থাকলাম।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।