ময়লা বাকেট চ্যালেঞ্জ

সেদিন একটা মজার জিনিস দেখলাম। একদল তরুণ তরুণী দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বারিধারা যাবার পথে যেখানে বিশাল বড় বড় ডাস্টবিন রাখা সেখানে। মনে মনে কই, ইয়াক থুঃ!!!! কি করে এরা এইখানে ? মাথাডা আউলাইয়া গেল যখন দেখলাম এরা সাথে করে বড় বড় ময়লার ঝুড়ি নিয়ে আসছে। শুধু এনেই ক্ষান্ত হয়নি। ঝুড়িগুলা ডাস্টবিন থেকে নেয়া ময়লা দিয়ে ভর্তি করছে আর নিজেদের গায়েই ঢেলে দিচ্ছে। অনেকটা ময়লা দিয়ে গোসল বলা যায়। রাস্তার মানুষজন হা করে দেখছে। ব্যাপারটা যথেষ্ট কৌতূহল জাগালো। সাহস করে নাকে রুমাল টিস্যু যা পাইলাম তা চেপে ধরে তাদের কাছে গেলাম। ওদের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনার নেপথ্য কি ?

 

যা শুনলাম তাতে আমি নিজেও হাবা হয়ে গেলাম। এরা দেশের ব্রোথেলগুলির বাচ্চাদের জন্য কাজ করছে। স্যানিটেশন, শিক্ষা, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সব দিক দিয়েই এইসব শিশুরা ভয়ানক ধরণের নির্যাতিত। তাই তারা তহবিল সংগ্রহ করছে এদের জন্য। কোনও এক এনজিওকে দিবে যারা এই ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি কইলাম, তা বুঝলাম তবে এই ময়লা দিয়ে গোসলের রহস্য কি ?

এরপর আরও হাবা হবার পালা। ওরা কয়, আমাদের দেশে সবচেয়ে ডিজগাস্টিং জিনিস হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। তাই আমরা Waste Bucket Challenge ছুঁড়ে দিচ্ছি একজন আরেকজনকে। যে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে তাকে এক ঝুড়ি ডাস্টবিনের ময়লা দিয়ে গোসল করতে হবে। যে পারবে না তাকে ৫০০ টাকা দান করতে হবে ওই শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহে। এখানে জনসম্মুখে এইটা করছে যেন ব্যাপারটা দেশজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। শুনতে ভালো লাগছিল। অসম্ভব ধরণের ভালো………………

 

এতক্ষণ যা বললাম তা সবই আমার আজাইরা গোবরসদৃশ মস্তিষ্কের কল্পনা। বাস্তবে এমনটা হয়নি। হলে মন্দ হতো না। বাস্তবে যা হয়েছে তা অনেকটা এইরকম।  Amyotrophic lateral sclerosis উরফে ALS নামক মোটর নিউরনের ডিসফাংশনজনিত একটা রোগ আছে। ইউরোপিয়ানদের বেশি হয়। এইটা স্টিফেন হকিং সাহেবেরও আছে। এই রোগের রিসার্চ এবং নির্মূলের জন্য যেই সংস্থা কাজ করছে তারা একটা অভিনব উপায় বের করে তহবিল সংগ্রহের জন্য। Ice Bucket Challenge বলে ইহা এখন বহুল জনপ্রিয়। প্রথমত শুরু হয় বিগশট ধরণের মানুষদের দিয়ে। নিয়মটা এরকম, যে এই চ্যালেঞ্জ পাবে সে হয় এক বালতি বরফগলা পানি নিজের মাথায় ঢালবে অন্যথায় ১০০ ডলার ওই তহবিলে দান করবে। চাইলে সে ওই চ্যালেঞ্জ অন্য কারো উপরও পাস করে দিতে হবে। প্রথমদিকে এই চ্যালেঞ্জ  চ্যালেঞ্জ খেলাটা বিল গেটস, অ্যাপলের নির্বাহী প্রধান থেকে শুরু করে হলিউড সেলিব্রিটিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফুটবল তারকারাও এতে যুক্ত হন যেমন মেসি, রোনালদো। বলিউড বাদ যাবে কেন ? উনারাও এই চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ খেলায় অংশগ্রহণ শুরু করে দেন। মিডিয়ার কল্যাণে ফেসবুক, ইউটিউব ভেসে যেতে থাকে এই IBC খেলার চ্যালেঞ্জে।

 

খারাপ লাগার মতো কিছু না অবশ্যই। তবে একটু মন খারাপ হয় যখন দেখি আমাদের দেশের তরুণ তরুণীরা এইটার অপভ্রংশ ভার্সন বের করে। আমি মেসি সাপোর্ট করি, তুমি রোনালদো। যা তোরে আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম। এইডাই এখন লেটেস্ট ট্রেন্ডের মধ্যে হিট, সো আমারও এইডা করতে হবে। কারণ আমরা স্মার্ট। হয়তো জানিও না এইটার মেইন পারপাস কি ছিল। তবু অন্ধ অনুকরণ করতে হবে। করেন আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেইটা ময়লা বাকেট চ্যালেঞ্জ হইলে আরও ভালো হয়। করেন, কিন্তু মেইন পারপাস হিসেবে কোনও দুঃস্থের সাহায্যের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য করেন। আমাদের দেশের মানুষরা এরচেয়ে কম ভয়াবহ রোগে কুকুর বিড়ালের মতো মারা যায়। তাদের জন্য করেন। এইটা একটা ইন্টারেস্টিং উপায় হইতে পারে। মিডিয়া প্রচার করবে। ব্যাপারটা ভাইরাল হবে। অনেক তহবিল জমবে। নকল করেন, সমস্যা নাই। তবে নকল থেকে আসল শিক্ষাটা নেন।

 

৭০০ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “ময়লা বাকেট চ্যালেঞ্জ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    গত কয়েকদিন ধরে আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ দারুন এঞ্জয় করছি, বিশেষ করে ফুটবলারদেরগুলো। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো কে কাকে চ্যালেঞ্জ করছে 🙂

    নকল করেন, সমস্যা নাই। তবে নকল থেকে আসল শিক্ষাটা নেন।

    :thumbup: :thumbup: :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    দেশে কি হুদাই বরফে ভেজা শুরু হইসে নাকি? :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: কয়েকটা লিংক দাও তো বিনুদুনে সামিল হই।
    আবাল ইজ হোয়াট আবাল ডাজ! :bash:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।