সময়টা ১৯৭১ সালের মার্চ মাস। আইয়ুব ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেটদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেই বা কি, অনেকেই বাড়ি ফিরে যায় নি। অনেকেই বলতে অনেক সাহসী ক্যাডেট। দেশমাতৃকার এই চরম দুর্দিনে বাড়ি গিয়ে আরামে ঘুমাবে কি করে? চারঘাটের ছেলে আব্দুল মান্নাফও এর ব্যাতিক্রম নয়। এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন আব্দুর রশীদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কোথায় কবে অপারেশন হবে তার সবকিছুই বলতে গেলে মান্নাফ জানে।
এপ্রিলের প্রথমদিকে। নাটোরের ১৪ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল ইফতেখার রানা অর্ডার পাঠালো সারদাহ পুলিশ একাডেমী দখল করতে, তখনো ইফতেখার জানতো না যে, ক্যাপ্টেন আব্দুর রশীদ আইয়ুব ক্যাডেট কলেজে রয়ে গেছেন। তাই তুচ্ছ একটা অপারেশন ভেবে পাঠিয়ে দিলো দুইটা মাত্র পিক-আপ ভর্তি সৈনিক আর একজন অফিসার। কিন্তু গোয়েন্দা মারফত খবর পেলেন ক্যাপ্টেন রশীদ, বানেশ্বরে বসালেন কিছু ফাঁদ। কয়েকটা গাছ ফেলে তার মাঝে কিছু বুবিট্র্যাপস আর কিছু ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখলেন তিনি আর তার দলবল। যথারীতি পাকিস্তানিরা ধরাও খেলো। কেউ আর অক্ষত ফিরতে পারলো না। এতে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সুবিধা হল, কিছু অত্যাধুনিক অস্ত্র পেয়ে গেলো তারা। কিন্তু এদিকে কাউকে ফিরতে না দেখে মেজর জেনারেল ইফতেখার খবর নিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারলো।
দুই সপ্তাহ পরের ঘটনা। আবারো আসছে পাকিস্তানিরা পুলিশ একাডেমি দখল করতে। এবার আর মাত্র দুই পিক-আপ নয়। এবারে এক্কেবারে পুরোপুরি রেডি হয়ে। বলতে গেলে এক ব্যাটালিয়ন। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চাপা আতংক এবারে কি হবে? তারপরেও মাত্র কয়েকটা ৩০৩ নিয়ে তারা পজিশন নিয়ে ফেললেন সারদা পুলিশ একাডেমির আশেপাশে, সম্মুখ যুদ্ধ করার মত অস্ত্র তাদের নেই তাই তারা লুকিয়ে লুকিয়ে অলিগলি দিয়ে হামলা চালাবেন বলে ঠিক করলেন। ক্যাডেট মান্নাফ, তার আপন দুই ভাই, আপন দুই চাচা বসে গেলেন একটা ট্রেঞ্চে। বেলা এগারোটার দিকে দেখা গেলো অনেকগুলো বিশাল বিশাল ট্রাকে করে সৈন্য আসছে। মুক্তিযোদ্ধারা এতো কল্পনাতেও আনতে পারে নি। তাই বাস্তবে দেখা গেলো মাত্র ২০-২৫ মিনিট গোলাগুলির পরেই তাদের এ্যামুনিশন শেষ হয়ে গেলো। শেষে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলেন। কিন্তু পিছু হটলেন না মান্নাফেরা। তারা গোলাগুলি চালিয়েই যেতে লাগলেন, কিন্তু আর কতক্ষণ? পাকিস্তানিদের অত্যাধুনিক অস্ত্র আর তাদের সামান্য ৩০৩ রাইফেল। সবার আগে গুলি খেলেন মান্নাফের চাচা, তারপরে তার বড় ভাই, তারপরে আরেক চাচা, তারপরে তার ছোট ভাই, এবং আহত মান্নাফ ভাই ট্রেঞ্চে পড়ে রইলেন তারপরেরটুকু লিখছি না, জানোয়ার রাজাকার এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে তাকে প্রথমে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে পরে গুলি করে চলে যায়।
এতদিনে যদি মান্নাফ ভাই বেঁচে থাকতেন তাহলে তার ছেলেমেয়েরা বড় হত। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো তার বাড়ির উঠোন। তার বড় ভাই বেঁচে থাকলে হয়তো ঈদে নতুন শাড়ি নিয়ে আসতেন তার স্ত্রীর জন্যে, লজ্জা মাখা হাসিতে হয়তো সেটা গ্রহন করতেন কিন্তু মুখে শুধু বলতেন কেন এতো টাকা খরচ করলেন? তার ছোট ভাইটা হয়তো যুদ্ধ শেষে কলেজে যেতো। কিন্তু তা আর হয় নি। একই পরিবার থেকে তারা একই সাথে ৫ জন বিদায় নিলেন। কেন নিলেন? আমরা কি বলতে পারবো? শুধু দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, এদেশের কোটি কোটি মানুষ একদিন আবার স্বাধীন ভাবে হাসতে পারবে খেলতে পারবে এই ভেবে। আবারো পদ্মা নদীর মাঝি নদীর বুকে স্বাধীনভাবে পাল উড়িয়ে নৌকা চালাবে, জেলে মাছ ধরে ঘাটায় নিয়ে যাবে বেঁচতে এই ভেবে। তারা নিজেদের কথা চিন্তা করেন নি। তারা একবারের জন্যেও চিন্তা করেন নি তারা ৫ জনই শহীদ হলে পরিবারটার কি হবে। একবারও না। তাদের হারিয়ে তাদের পরিবার যেরকম কষ্ট পেয়েছে, এরকম কষ্ট পাওয়া পরিবার হয়তোবা আরো থাকতে পারে। মান্নাফ ভাইয়ের ভাবী আজো তাদের ছবির ফ্রেমে অশ্রু মাখা আঁচল বুলিয়ে যান। এতদিন হয়েছে তার হৃদয়ের মধ্যেখানের ভালোবাসা এতটুকু কমে নি, এবং তার কষ্টটাও এতটুকু কমে নি। এরকম ৩০ লক্ষ মানুষের ৩০ লক্ষ কষ্ট, এতো কষ্ট আমরা কোথায় রাখবো?
আমরা সিসিবি থেকে উচ্চকণ্ঠে বলছি,”আমরা ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।”
আর মান্নাফ ভাই আপনাকে একটা স্ট্যান্ডিং এ্যাভেশন দিই। আমরা ক্যাডেট কলেজ কমিউনিটি আপনাদের মত বীরের জন্যে গর্বিত।
...যাঁরা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ... :salute: (সম্পাদিত)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!
ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়।
সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নিতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
::salute::
:clap: :clap: :clap:
::salute:: ::salute::
খেয়া (২০০৬-২০১১)
মাজহার, খুব ভাল লাগল। চালিয়ে যাও।
_____________________
আমি বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত
ভাই ধন্যবাদ 🙂
MH
Sir, I'm extremely sorry. I couldn't recognize you.
To all, I told my adjutant sir 'vai'. Koyekta ::frontroll::
MH
::salute:: ::salute::
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।