আমার লেখাটা একটু পড়বেন কি?

যাবার কয়েকদিন আগে, প্রিন্সিপাল বাংলোর ল্যাম্ব রোস্টের গন্ধে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে, ২ দিন পরে কলেজ থেকে চলে যাবো। চেতনা ফিরলো যখন রানা ভাই এসে একটা হাঁক ছাড়লেন, ভাই কাপড় জমা দেন, কাপড়। হায়রে ক্যাডেট লাইফ। আমার এক ফ্রেন্ডকে প্রায়ই বলতে শুনতাম,”যৌবনের তেজ আর জোরে চাপা ছোটো বাথরুম দুইটাই ক্ষণস্থায়ী। ” সে যদিও হিন্দিতে বলতো আমি একটু অনুবাদ করে দিলাম আর কি! আরে, আর কি লিখতে গিয়ে মনে পড়লো আমাদের আর্কিমিডিস স্যারের কথা মানে ভূগোলের মকবুল স্যারের কথা। একদিন স্যার আমাকে ডেকে বলছেন, “এই মাজহার তুমি শোনো আর কি। তুমি ক্লাসে এত কথা বল কেন? সেদিন দেখলাম আর কি, তুমি ক্লাসে ঘুমাচ্ছো আর কি, …………” আমি শেষে বলেই ফেললাম, ” স্যার আসলে হয়েছিলো কি, আমি আর কি ……” ব্যাস এইটুকু বলতেই স্যার একেবারে রেগে টং!!

আমার অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার  নিয়ে কিছু বলি। ক্লাস এইটের প্রথম পাক্ষিক পরীক্ষায় গনিত পরীক্ষা নিলেন জাহিদুল ইসলাম স্যার। পেলাম ৫!! :bash: মাথার উপরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। পরেরবার এক্কেবারে যাকে বলে কোপায়ে পড়া শুরু করলাম, বিধি বাম, এবারে পেলাম ০০।  :brick:

তো সেই জাহিদ স্যার ছিলেন চাপা মারায় ওস্তাদ। তখন ক্লাস সেভেনে, একদিন তিনি আমাদের বলছেন, “আমি তো IELTS ও করেছি, কিন্তু ক্যাডেট কলেজে আসলে তোমরা ইংরেজিতে কথা বল না, তাই আমার স্কিলটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আমি কত পেয়েছিলাম জানো?” আমরা মাথা নাড়লাম যে আমরা জানতে চাই। তিনি বললেন,”হাইএস্ট, ৪৫ এ ৪৫।”

থাক ওনার কথা পরেও বলা যাবে, আগে রসায়নের মোহাম্মদ আলী স্যারের কথা না বললেই নয়। তিনি ছিলেন এক ভীতিকর বস্তু, হাউস ইন্সপেকশনে এসে তিনি সবাইকেই দুমাদুম পেটাতেন। তার কথা বলার একটা আলাদা স্টাইল ছিলো, যারা তাকে দেখেছেন তারাই বলতে পারবেন, কারণ আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। সেই মোহাম্মদ আলী স্যার একদিন অডিটরিয়ামে গার্ড। তখন আমরা এস এস সি’র টেস্ট দিচ্ছি। স্যার স্বভাবমত ঘুমুচ্ছেন, হঠাৎ দেখি যে তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যেতে যেতে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে উঠলেন। তারপরে চশমার উপর দিকে এদিক ওদিক তাকালেন, কেউ দেখে ফেলল কি না! যখন দেখলেন হল এর সবাই তার দিকে তাকিয়ে প্রানপনে হাসি আটকাবার চেষ্টা করছে, তখন তিনি তার বিখ্যাত গলায় বলা শুরু করলেন,” এখানে ভাঙ্গা চেয়ার কে লাগিয়েছে হ্যা?? ভাঙ্গা চেয়ার?” আমাদের অবস্থা শোচনীয়, তারপরেও সেদিন যদি সবাই ভদ্রতার বালাই না রাখতো তাহলে প্রিন্সিপাল স্যারের দৌড়ে আসার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো।

আবারো মোহাম্মদ আলী স্যার। তখন আমরা ক্লাস নাইনে। মেহেদী হাসান ভাই তখন জে পি। রাতের বেলা আমি সিক রিপোর্ট লেখাতে গিয়েছি মেহেদী হাসান ভাইয়ের কাছে। হঠাৎ দেখলাম উপর থেকে কোন ভাই যেনো অদ্ভুদ ড্রেসে নামলেন। সেটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আলী স্যারের চিৎকার, “মেহেদী হাসান, হোয়েন হি? হোয়েন হি? ” মেহেদী হাসান ভাই সাথে সাথেই কিছু বুঝতে পারলেন না। স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন। আবারো আলী স্যারের চিৎকার,” আরে হোয়েন হি? হোয়েন হি? ওটা কে?”

এবার সাদেক স্যার। তার ইংরেজি আরো মারাত্নক। এইতো আসার কিছুদিন আগে, তিনি হলেন ডাইনিং হল ও আই সি। এক টেবিলে গিয়ে বলছেন, “এ, হু ইস ইন দিস চেয়ার টেবিল?” (সেই টেবিল থেকে সেদিন ডিউটি ক্যাডেট ছিল বলে চেয়ারটা ফাঁকা ছিলো)

ছেড়ে আসলাম সেই ক্যাডেট লাইফ। কত স্মৃতি কত গান, আর কত গিটারের টুং টাং! তাইতো আজো যখন টেইক মি হোম কান্ট্রি রোড গানটার কথা মনে পড়ে তখন কেন জানি সেই কলেজের গেইটের কথা মনে পড়ে। সেইটাই আমার হোম কি না। শেষ এক্সকারসনের পরে বাসে করে যখন কলেজে ফিরছিলাম তখন আমাদের জনৈক বন্ধু শেষ এক্সকারসন বলে হঠাৎ আবেগে আপ্লুত হয়ে যখন কেঁদে দিয়েছিলো তখন অন্ধকারের মাঝেও আমি তার চোখে রঙ্গিন পানি দেখেছি, তা তো হবেই, ৬ বছরের স্মৃতি রঙশূণ্য হতে যাবে কেন?

২,৯৮৬ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “আমার লেখাটা একটু পড়বেন কি?”

  1. সুষমা (১৯৯৯-২০০৫)

    ব্লগে স্বাগতম, সুন্দর লেখা 🙂
    আর নয়া এক্স ক্যাডেট হিসেবে বাইরের দুনিয়াতেও স্বাগতম, এখন মন প্রান ভরে কলেজ কে মিস করতে থাক 😛
    ও হ্যাঁ, সিসিবির নিয়ম অনুযায়ী পয়লা মেম্বারদের ফ্রন্টরোল দিয়ে নভিসেস প্যারেড করানো হয় :))
    স্টার্ট ফ্রন্টরোল, কুইক

    জবাব দিন
  2. সাকলায়েন (১৯৯২-১৯৯৮)

    মাজহার, তুমি কেয়ামত পর্যন্ত :frontroll: দিতে থাক।
    আর একটা ব্যাপার আমাকে অবশ্যই জানাও যে, গণিতের জাহিদ স্যার বরিশাল ক্যাডেট এ ছিলেন কিনা।
    বরিশাল এ যে জাহিদ স্যার ছিলেন, তিনি আমার দেখা সেরা একজন শিক্ষক। তিনি এতই ভাল ক্যালকুলাস শিখিয়েছিলেন যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই Maths এর 2nd year এর এক ভাইয়াকে ক্যালকুলাস পড়াতাম।
    আর একটা বিষয়, তিনি ক্যাডেটদের যেকোন দোষ তাঁর নিজের ঘাড়ে তুলে নিতেন। সকালে PT তে আমাদের কারো দেরী হলে তিনি Adj কে বলতেন যে উক্ত ক্যাডেটকে তিনি জরুরী কাজে ডেকেছিলেন...ভাবা যায়!!!!!!
    পরে তাঁকে Punishment Transfer করে ৯৬/৯৭ সালের দিকে সম্ভবত FCC তে বদলী করা হয়।

    জবাব দিন
    • মাজহার (০৬-১২)

      সাকলায়েন ভাই, আপনি যার কথা বলছিলেন তিনিই জাহিদ স্যার। অবশ্যই স্বীকার করি তিনি অনেক ভালো পড়াতেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ক্যাডেটদের বাঁচিয়েও দিতেন, কিন্তু তাঁর দয়ামায়ার বড়ই অভাব ছিলো। অনেক ফালতু কারণেও আমার অনেক ফ্রেন্ডদের তার কাছে ভয়ানকভাবে লাত্থি খেতে দেখেছি।
      এবং তিনি আবারো ২০০৯ সালে পানিশমেন্ট ট্রান্সফারে রাজশাহী থেকে সিলেট চলে যান, এবং আবারো ২০১১ সালে সিলেট থেকে পানিশমেন্ট ট্রান্সফারে ঝিনাইদহ চলে যান।


      MH

      জবাব দিন
  3. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    ভালা লিখছ ভায়ে! এই মোহাম্মদ আলী স্যার কি সেই বিখ্যাত মোহাম্মদ আলী স্যার? আমাদের কলেজে ছিল!! বুঝতে পারছি কোন ধরনের কথা বলার কথা বলছো!!!


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।