প্রথম পুরো মাসব্যাপী রোযা রেখেছিলাম সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রোযার খেলাফ হয়েছে কেবল একটি বৎসরে, যে বৎসর বিএমএ তে কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলাম । এর পরে আর কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। ব্যাচেলর থাকতে রাতে উঠে খেতে একটু অসুবিধে হতো, কিন্তু মোটামুটি কম বয়সেই বিয়ে করেছিলাম বলে এই অসুবিধেটুকু বেশীদিন সহ্য করতে হয়নি। বিয়ের পর পর রোযার আনন্দ অনেক বেড়ে গেল ইফতারের কারণে। বিয়ের কয়েকদিন পরেই স্ত্রীকে নিয়ে নিউ মার্কেট থেকে সিদ্দিকা কবীর এর একটা রান্নার বই কিনে দিয়েছিলাম। তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে কারণে অকারণে নিউ মার্কেটে যাওয়া হতো। সেখানে Novelty নামে একটা ice cream parlour ছিল (বোধকরি এখনো সেটা আছে), সেখানে আমরা আইসক্রীম খেতাম। বইটি কেনার পর থেকে শতচ্ছিন্ন অবস্থায়ও সেটি আজ অবধি মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমার স্ত্রী অত্যন্ত উৎসাহের সাথে সেই বইটি ঘেঁটে এবং তখনকার দিনের একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি’র রান্নার অনুষ্ঠান দেখে নিত্য নতুন ইফতারির আইটেম বানাতো এবং আমরা দু’জনে মিলে খুব মজা করে খেতাম। ছোট্ট একটা কাজের ছেলে ছিল, ও ছিল রাঁধুনীর ‘ফুড টেস্টিং অফিসার’। আমার স্ত্রী খুব মন দিয়ে এসব বানাতো বলে যেটাই বানাতো, সেটাই খুব মজা হতো। লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদির সাথে এক চিমটে ভালবাসাও থাকলে সমন্বিত এন্ড রেজাল্ট খুব সুস্বাদু হয়।
ঢাকা থেকে বদলী হয়ে এলাম উত্তরবঙ্গের একটা স্টেশনে। এরই মধ্যে এরশাদ সাহেবের সামরিক আইন ফরমান জারি হলো। জেলায় জেলায় সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালত গঠিত হলো। আদালতের চেয়ারম্যান/সদস্য হিসেবে অধিনায়কদের কাছে অফিসারদের নাম চাওয়া হলো। আমি সেখানে সদ্য আগত, বলা যায় অনেকটা স্পেয়ার প্লাগের মত। বাকী সবাই সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত। অধিনায়ক আমার অগোচরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতের সদস্য হিসেবে আমার নাম সুপারিশ করে পাঠালেন। কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে নতুন দায়িত্বে যোগ দিতে হলো। বিএমএ’র প্রশিক্ষণে মিলিটারী ল’ পড়ানোর সময় বাংলাদেশ পেনাল কোড এবং ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর উপর হাল্কা একটু ধারণা দেওয়া হয়। কিন্তু পরে মেজর পদবীতে পদোন্নতির সময় এ বিষয়ের উপর আলাদা করে পরীক্ষা নেয়া হয়। আমি কিছুদিন আগেই মেজর পদবীতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হই, সুতরাং বিষয়টির উপর টাটকা পড়াশোনা ছিল। কিন্তু নতুন কাজ শুরু করার পর টের পেলাম এ ব্যাপারে আমাদের পড়াশোনা কতটাই নগণ্য ছিল, আর সিআরপিসি পড়ার সময় হাড়ে হাড়ে টের পেতাম উপনিবেশ শাসন করার জন্য ব্রিটিশরা কতটা আট ঘাঁট বেধে এ আইনটি প্রণয়ন করেছিল।
যাহোক, আমি অত্যন্ত নিবিষ্টমনে আমার নতুন দায়িত্বে আত্মনিয়োগ করলাম। মাত্র তিন মাস এ দায়িত্ব পালন করেছিলাম, এর মধ্যে পুরো এক মাস রোযার মাস ছিল। এখন যখন পেছন ফিরে তাকাই, আমার মনে হয় সেটাই ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং শুদ্ধতম রোযার মাস। এ মাসে আল্লাহ’র হক হয়তো তেমনভাবে আদায় করতে পারিনি, কিন্তু একজন বিচারকের কাছে বান্দার যে হক, তার যেন কোন ব্যত্যয় আমার হাতে না ঘটে সে ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়সংকল্প ছিলাম। এর আগে সারাজীবন ভোর ছ’টায় আমার দিন শুরু হতো। এ দায়িত্বে আসার পর থেকে আমার দিন শুরু হতো সকাল দশটা থেকে, চলতো আসরের নামাযের পর পর্যন্ত। তারপর বাড়ী ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ইফতার, তারাবীর পর আরেকটু বিশ্রাম নিয়ে সেহরীর আগে পর্যন্ত আইন বিষয়ক পড়াশুনা এবং চলমান মামলাগুলোর উপর আত্মপঠন। সেহরীর পর ফজর নামায পড়ে একটা নাতিদীর্ঘ ঘুম, ঘুম থেকে উঠে তৈরী হয়ে নিয়ে আদালতে গমন। এই ছিল সেই রোযার মাসে আমার দৈনিক রুটিন।
প্রথম প্রথম মামলার রায় দেয়ার ব্যাপারে আমাদের উপর তেমন কোন চাপ ছিলনা। আর সেটা ‘সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালত’ ছিল বিধায় ছোট খাট মামলাগুলোই আমাদের আদালতে আসতো, যার সর্বোচ্চ দন্ডসীমা ছিল সাত বছরের জেল। বড় কোন মামলা সেখানে আসতো না। মামলার নথিপত্র ঘেঁটে সহজেই বুঝতে পারতাম যে বেশীরভাগ মামলার কারণই ছিল প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের অবাধ্যতা, কিংবা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের বনিবনা না হওয়া। আমাদের আদালতে আমরা তিনজন ছিলাম- আমার উপরে একজন চেয়ারম্যান, আমার অধীনে একজন কনিষ্ঠ সদস্য। সৌভাগ্যক্রমে, আমাদের সবার মন মানসিকতা একই ধরণের ছিল- বিনা দোষে কেউ যেন শাস্তি না পায় এবং লঘু পাপে কেউ যেন গুরুদন্ড না পায়, তা নিশ্চিত করা। ফলে, আমাদের আদালতে অভিযুক্তরা একে একে খালাস পেতে থাকলো, কেউ কেউ লঘুদন্ড পেলো, জামিনযোগ্যরা জামিন পেতে থাকলো। একবার এক মামলার রায়ে অনেক আসামী একসাথে সবাই বেকসুর খালাস পাওয়াতে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই ওরা সমস্বরে কান্না শুরু করেছিল, অপ্রত্যাশিত আনন্দে। বয়স্ক পাবলিক প্রসিকিউটর সাহেব বিনয়ের সাথে আমাদেরকে পরামর্শ দিতে থাকলেন, স্যার, “সামরিক আইন আদালতে আমি এর আগেও কাজ করেছি, এরকম কখনো দেখিনি। আপনারা আরেকটু কঠোর হউন, নাহলে আপনাদের সাথে সাথে আমারও ক্ষতি হয়ে যাবে”।
যাহোক, আমরা আমাদের মত চলতে থাকলাম। পরের দিকে একটু একটু করে চাপ আসা শুরু করলো। আমাদের আর সেখানে বেশীদিন থাকা হলোনা। প্রথমে গেলাম আমি, পরে আস্তে আস্তে বাকী দু’জন- হয়তো ক্যারীয়ার প্ল্যানিং এর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই। যাইহোক, আমরাও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! সেই রোযার মাসটাতে আমাদের প্রথম সন্তান মাতৃগর্ভে ছিল। অনাগত সন্তানের কথা ভেবেও আমি খুব সাবধানে থাকতাম আর আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করতাম একটি সুস্থ, সুসন্তানের জন্য। আমাদের দু’জনার সংসারে তখন কোন গৃহকর্মী ছিলনা, কারণ নতুন জায়গায় সংসারটা তখনো ঠিকমত শুরুই করা হয়নি। একদিন আমি অফিস থেকে ফিরে বাসায় ঢোকার সময় দেখি ফুটফুটে একটা ফ্রক পড়া মেয়ে, ১১/১২ বছর হবে, বাসায় ঘোরাঘুরি করছে। আমি ভেবেছিলাম, বাসায় হয়তো কোন অতিথি এসেছে, নয়তো আশে পাশের বাসার কেউ হবে, যাদের সাথে তখনো আমি ঠিক পরিচিত হয়ে উঠিনি। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করাতে ও বেশ উৎসাহ নিয়ে ওর কাহিনী বলা শুরু করলো। দুপুরের দিকে মেয়েটা বাসার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। চোখাচোখি হওয়াতে ও আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে কোন কাজের মানুষ লাগবে কিনা। আমার স্ত্রী না বলাতে ও অনুনয় বিনয় করে জানালো যে ওর কোন যাবার জায়গা নেই, ওকে যেন আমরা রেখে দেই। পরে আরো বিশদ জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে সে সেনানিবাসের বাইরে একটা বাসায় কাজ করতো। সে বাসায় দুই বুড়োবুড়ী আর তাদের এক ছেলে এবং ছেলের বউ থাকে। শুধু বুড়ো লোকটা বাদে আর সবাই ওকে খুব নির্যাতন করে, সহ্য করতে না পেরে সে পালিয়েছে। ইহজগতে তার রক্তের সম্পর্কের কেউ আছে কিনা, তা সে জানেনা। মেয়েটার নাম ছিল হালিমা।
পরে আমি হালিমার বর্ণনা শুনে সেই বুড়ো ভদ্রলোকের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। হালিমা পালিয়ে যাওয়াতে উনিও খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। উনি পেশায় ছিলেন একজন পেশকার; কুড়িগ্রামের একটি পথে কুড়িয়ে পাওয়া সেই মেয়েটিকে তিনি দয়াপরবশ হয়ে নিজ গৃহে নিয়ে এসেছিলেন বলে জানালেন। বাসায় আনার আগে তিনি মেয়েটির পরিবারের খোঁজ নিয়েছিলেন। তার শুধু এক চাচা ছিল বলে তিনি জানালেন। সেই চাচা তাকে লালন করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাছাড়া মেয়েটি তখন খোস পাঁচড়ায় আক্রান্ত, এ কারণেও চাচা চাচী তাকে রাখতে নারাজ। মেয়েটির প্রতি মায়া হওয়াতে তিনি ওকে বাসায় নিয়ে এসে অত্যন্ত যত্নের সাথে চিকিৎসা করান এবং ওকে সুস্থ করে তোলেন। ভদ্রলোক আমার কাছে অকপটেই স্বীকার করলেন যে তার স্ত্রী, পুত্র এবং পুত্রবধূ ওর সাথে সদ্ব্যবহার করতো না, তাই ও পালিয়ে এসে আমার আশ্রয়ে রয়েছে জেনে তিনি অত্যন্ত প্রীত বোধ করলেন এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এর পরের কাহিনী দীর্ঘ। শুধু এটুকু এখানে বলে রাখি, এর পর থেকে হালিমা আমাদের সাথেই রয়ে যায়। আমাদের সাথে বড় হতে থাকে। আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় সেও নিরক্ষর হওয়া সত্তেও সিদ্দিকা কবীরের অনেক রেসিপি মুখস্থ করে ফেলে। আমাদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর থেকে পরবর্তী চার পাঁচ বছর ওর অবদান কখনো ভোলার নয়। মেয়েরা জন্মসূত্রে মা। সেই ছোট্টবেলা থেকে ও আমাদের ছেলেকে আপন বড় বোনের মত আদর করে রাখতো।
একদিন আমি অফিস থেকে চিঠি পেলাম, আমাকে বৈদেশিক মিশনে নিয়োগ করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নতুন দায়িত্বে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠিটা পড়ে একদিকে যেমন খুশী হ’লাম, অন্যদিকে চিন্তিত হয়ে পড়লাম, হালিমার কী হবে সে কথা ভেবে। ওকে কোথায় কার কাছে রেখে যাবো! এরই মধ্যে সে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেছে। আল্লাহ সহায় হলে কোন বিপদই বিপদ নয়। আমার এক বিশ্বস্ত অধঃস্তন কর্মচারী মাস কয়েক আগে ওর এক চাচাতো ভাইকে আমার কাছে এনে অনুরোধ করেছিল ওকে কিছু একটা করে খাবার ব্যবস্থা করে দিতে। ছেলেটিকে আমার ভাল লেগেছিল তার সরলতার কারণে। সে সৎ, সত্যবাদী এবং ভাল চরিত্রের ছেলে ছিল। বাড়ীতে সৎ মায়ের নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে সে ঢাকায় তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে এসেছিল। সৌভাগ্যক্রমে তখন কিছু চতুর্থ শ্রেণীর বেসামরিক পদে লোক নিয়োগ চলছিল। আমি নিজে ওর বায়োডাটা বানিয়ে পাঠালাম এবং ওকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করলাম। আল্লাহ’র ইচ্ছায় ও ভর্তি পরীক্ষায় উৎরে গেল। চাকুরী দেয়ার আগে আমি ওকে আমার বিদেশ চলে যাবার কথা বলে হালিমাকে ও বিয়ে করবে কিনা জানতে চাইলাম। সে বললো তার বাবা রাজী হলে সে রাজী। তার বাবাকে আমার বাসায় আমন্ত্রণ জানালাম। তিনি মেয়েকে দেখে এক কথায় রাজী হয়ে গেলেন। খুবই দ্রুত ওদের বিয়ে সুসম্পন্ন হলো। সেই বিয়েতে আমি আমার ভাই বোন ও আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধু পরিবারকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম। আমার এক বন্ধু হালিমার উকিল পিতা হয়েছিল।
আমি বিদেশে থাকতে হালিমার বর শফিক আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিল যে তাদের এক পুত্র সন্তান হয়েছে, নাম রেখেছে হাবীব। এর পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। ৫ বছর পর আমি দেশে ফিরে এসে আরো ৪ বছর ঢাকার বাইরে চাকুরী করার পর পুনরায় ঢাকায় বদলী হ’লাম। অল্প ক’দিনের মধ্যে শফিক আমার ফোন নাম্বার যোগাড় করে সপরিবারে আমাদের সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলো। প্রথম দেখাতেই ওদের কান্নার রোল পড়ে গেল, তা দেখে ওদের এবং আমাদের সন্তানেরা হতচকিত হয়ে গেলো- কাঁদে কেন? সেটা ছিল আনন্দাশ্রু, এতদিন পর দেখা হবার আনন্দে। ইতোমধ্যে ওদের কোলে আরেকটা মেয়ে এসেছে। পরীর মত সুন্দর, কারণ শফিক এবং হালিমা উভয়ে দেখতে খুব সুন্দর ছিল। যাইহোক, হাবীবের পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করে বুঝলাম, এ দিকটাতে ওরা মোটেই নজর রাখেনি, শুধুমাত্র স্কুলের উপরে ভরসা রেখেই ছেড়ে দিয়েছে। আর নজর রাখার সে যোগ্যতাও শফিকের তেমন ছিলনা। আমার বাসায় তখন একজন ড্রাইভারের থাকা ও রান্নার আলাদা ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু আমার নিজস্ব কোন ড্রাইভার ছিলনা। সেই অব্যবহৃত ব্যবস্থাটা দেখে ওরা উভয়ে সেখানে একটা মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দেয়ার আব্দার জানালো। আমি কথাটা শুনে প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হলেও, ওদেরকে কয়েকদিন পরে অনুমতি দিলাম। তারপর আব্দার এলো হাবীবকে একটা স্কুলে ভর্তি করে দেয়ার। কিন্তু ওর তখন যে অবস্থা, তাতে ওকে কোন স্কুলে ভর্তি করানোটা খুবই কঠিন কাজ ছিল। আমি নিজে ওকে মাঝে মাঝে বইপত্র নিয়ে এসে আমার সামনে পড়তে বলতাম। অফিসে যাবার আগে ওকে হোমওয়ার্ক দিয়ে যেতাম, সুবিধামত সময়ে পড়া নিতাম। আমার ছেলেদেরকেও বলতাম ওকে টুকটাক পড়াতে। হাবীব ওদেরকে মামা ডাকতো। পরে দেখতাম, পড়াশোনার বদলে মামা ভাগ্নের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে উঠছে। ওকে নিয়ে একদিন শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুলের হেডমাস্টার এর সাথে দেখা করলাম। হেডমাস্টার সাহেব প্রাথমিক একটা পরীক্ষা নিয়ে আমাকে জানালেন, ছেলেটা বুদ্ধিমান, তবে অনেক ঘষা মাজা করতে হবে। আমি তাকে অনুরোধ করলাম সম্ভব হলে ওকে ভর্তি করে নেয়ার জন্য, স্কুলের পড়ায় ভাল ফল অর্জনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমি নিজেই নিলাম।
আজ আমি ওদের কথা ভেবে বড্ডো তৃপ্ত বোধ করি। ওদের ছেলে হাবীব সাফল্যের সাথে এইচএসসি পাশ করে আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মার্ড কোরের একজন গর্বিত সৈনিক, মেয়েটারও এইচএসসি’র পর ভাল ঘরে বিয়ে হয়েছে। তার স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী। আর শফিক এখনও সেই একই চাকুরীতে একই পদে কর্মরত রয়েছে। নিরক্ষর, অনাথিনী মা এবং অষ্টম শ্রেণী পাস, মাতৃহীন বাবার জন্য এ এক অসাধারণ, অভাবনীয় সাফল্য। সবচেয়ে বড় কথা, শফিক হালিমাকে এখনও সেই আগের মতই ভালবাসে!
(রমজানের স্মৃতিচারণ করতে করতে রমজানের বাইরেরও অনেক কথা ঘটনা পরম্পরায় চলে এসেছে। লেখার কলেবরও অনাবশ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ত্রুটি পাঠকগণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি)
ঢাকা
০২ জুন ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
দারুণ লাগল, ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম... 🙂
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ, জুনায়েদ কবীর। ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হ'লাম।
পরের পর্বটাও আজ পোস্ট করলাম।