১.
বিকেলের সময়টায় কোন কাজ থাকে না সৌরভের। প্রায়ই হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডি লেকে চলে যায়। তারপর একটা জুতসই জায়গা দেখে বসে পড়ে। আমোদপ্রবণ মানুষগুলোর ছুটে চলা দেখে , আর দেখে প্রেমিক যুগলের খিলখিল শব্দে লুটোপুটি খাওয়া। বিচিত্র মানুষের সমাগম ঘটে, কেউ আসে মজা করতে কেউ আসে লুটতে। সৌরভ আসে মানুষ দেখতে। এক একটা মানুষের মুখ দেখে গল্প খুঁজে বেড়ায় সে, জীবনের গল্প। মানুষকে বিভিন্ন শ্রেনীতে ফেলে, পরিচিত মুখগুলোর নামও দিয়েছে। এই যেমন হাদারোমিওটা প্রায়ই তার প্রেমিকার সাথে গায়ে গা লাগিয়ে বসে ন্যাকামি করে যায়, মাথায় ক্যাপ পড়ে তেজপাতাটা ঘন্টা ধরে হেঁটেই চলে কোনদিকে না তাকিয়ে। সবটা ধরতে পারে না ছলনার মুখোশ পড়ে থাকা বহুরূপী মানুষগুলোকে। কখনওবা দেখতে দেখতে অকারণে হাসি পায় সৌরভের। মানুষ দেখার একটা নামও দিয়েছে সে, ‘মানবধ্যান’। আজকেও সে বসেছিল ধ্যানে। তার মানবধ্যানে বিঘ্ন ঘটিয়ে ভারি গলায় ক্লান্ত কেঊ বলে উঠে,
-ইয়াং ম্যান… কি দেখ??
বুড়ো মানুষটা যে এতক্ষণ পাশে বসেছিল খেয়াল করে না সৌরভ। অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
– নাহ কিছু না… এমনি।
অনেক্ষণ ধরে হেঁটে ক্লান্ত বুড়ো বলে,
-তুমি করে বললাম কিছু মনে করনি ত? আজকালকার ছেলে তোমরা হা হা হা…
হাসির কি আছে ঠিক বুঝে না সৌরভ। বলে,
-নাহ ঠিক আছে… বলতে পারেন।
বুড়োঃ তোমরা টাকা পয়সা পেলে কাউকে আর চিন না। আচ্ছা তুমি অনেক টাকা পেলে কি করবা??
সৌরভ চিন্তায় পড়ে যায়। স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
– স্যান্ডেল কিনব।
বুড়ো আরেকদফা বাতাস কাঁপিয়ে হেসে উঠে,
– হা হা হা হা…তুমি মজার মানুষ।
সৌরভ এই হাসিরও অর্থ খুঁজে পায় না। স্যান্ডেলের সোলটা এফোঁড় ওফোঁড়। শেষবার নিতেন দা একগাল হাসি দিয়ে বলেছিল, “মামা এইবার একখান জুতা কিনা ফেলান”। দুনিয়াতে মনে হয় এই প্রথম কোন মুচি খদ্দের তাড়াতে ব্যস্ত। তাই আর ওমুখো হয় না সে। অন্য মুচির কাছে যে যাবে তারও উপায় নেই, বাকিতে যে শুধু নিতেন দা-ই স্যান্ডেল সেলাই করে দিতেন।
আবার বুড়ো বলে ঊঠে,
– তা কি করছ?
সৌরভঃ তেমন কিছুই না। দুটো টিউশনি করাই…।
বুড়ো বসা থেকে উঠে পড়ে,
– হা হা হা… বুঝেছি। তোমার নামটাই জানা হল না।
-জ্বী আমি সৌরভ।
-নাও… আমার কার্ড নাও। সময় করে একদিন চলে এসো, গল্প করা যাবে।
বুড়ো দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়। সৌরভ তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, ‘সুখী মানুষ’।
২.
এখানে আসার ইচ্ছে ছিল না সৌরভের, কিন্তু নিরুপায়। একটা চাকুরী না হলে আর চলে না। বুঝতে পারছে না; চিনতে পারবে-ত বুড়ো মানুষটা। চৌকস অফিসের ঝাকঝমক দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছিল সে। তাও কপালে যা আছে চিন্তা করে ঢুকে পরে। রিসিপসনিস্ট মেয়েটা কার্ড হাতে নিয়ে বলেছিল,
-কি চাই?
-জ্বী আমি সৌরভ। উনি আসতে বলেছিলেন।
-স্যার এখন মিটিংয়ে, ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। আপনি চাইলে অপেক্ষা করতে পারেন।
মেয়েটার কপালের টিপের দিকে তাকিয়ে ছিল সৌরভ, অবাক হয় এখনও টিপ পড়ে মেয়েরা। ভাল লাগে সৌরভের। মেয়েটা মনে হয় বুঝতে পারে।
-ওয়েটিং রুম ঐদিকে।
ললনার নির্দেশিত পথে হাঁটা দেয় সৌরভ, দীঘির সাথে এভাবেই পরিচয়।
এসির ঠান্ডা সহ্য হয়না সৌরভের, জড়োসড়ো হয়ে থাকে। ওয়েটিং রুমটায় তার সাথী কয়েকটা পুরনো মলিন হয়ে যাওয়া ম্যাগাজিন। অনেকক্ষণ হয়ে গেল, রিসিপসনের মেয়েটা অপেক্ষা করতে বলে সেই যে গায়েব হ্ল আর কোন খবর নেই। একসময় অপেক্ষার পালা শেষ করে ত্রানকর্তারুপে টিপ তরুনীর দেখা মেলে, বাহ নামটা সুন্দর হয়েছে বিড়বিড় করে সৌরভ।
-কিছু বললেন?
সৌরভঃ নাহ… অফিসটা কোন দিকে?
-সামনে গিয়ে শেষ মাথার রুমটাই স্যারের। দরজায় এমডি লেখা দেখবেন।
সৌরভঃ ধন্যবাদ।
অবশেষে যখন বুড়ো মানুষটার অফিসে ঢুকে সে, সামনে থাকা মানুষটাকে আর বুড়ো মনে হয় না তার, অনেক ক্ষমতাধারী কেউ যেন বসে আছে রাজ্য নিয়ে। বহুরুপী মানুষ।
– আসুন…আসুন।
তুমি থেকে আপনি-তে আসায় সৌরভ দ্বিধায় পরে যায়, চিনতে পারেনি নাকি?!
-কি হ্ল দাঁড়িয়ে কেন?? বসুন.. স্যান্ডেল কেনা হয়েছে।
নাহ ভুলেনি তাহলে। সৌরভ মুখে হাসি নিয়ে বসে পড়ে।
-জ্বী।
-তা কি খবর বলুন?
-জ্বী ভাল।
সাথে করে নিয়ে আসা ফাইলটা সামনে বাড়িয়ে দেয় সৌরভ।
-কি এটা?
সৌরভঃ আমার বায়োডাটা, বিএ সার্টিফিকেট।
-ও আচ্ছা। কিন্তু সৌরভ সাহেব অপনাকে-ত কথা দিতে পারছি না। এক কাজ করুন আপনি রিসিপসনে বায়োডাটা দিয়ে
যান, আমি ব্যাপারটা দেখছি।
আর কথা বাড়ায় না সৌরভ। মানুষগুলোকে চেনা হয়ে গেছে তার। রিসিপসনের সামনে দিয়ে হনহন করে বের হয়ে যাওয়ার সময় পিছন থেকে দীঘি ডেকে উঠে,
-এই যে শুনছেন??
সৌরভঃ হুমম বলেন।
-স্যার আপনাকে সিভি দিয়ে যেতে বলেছেন।
সৌরভঃ কোন লাভ হবে?
-হতেও পারে। এই ফর্মটাও পূরণ করে দিন।
রিসিপসনের টেবিলে সৌরভ ফর্ম পূরণ করছিল তখন, চারপাশটা পারফিউমের ভারি গন্ধে ভরে উঠে। পাশ দিয়ে ঠুকঠুক
শব্দ তুলে হেটে যাওয়া মানুষটার দিকে তাকায়, নাকি কোন অপ্সরী।
দীঘিঃ আমাদের ম্যাডাম, স্যারের মেয়ে।
সৌরভঃ ও আচ্ছা।
বহুতল অফিসের শীতল কক্ষ ছেড়ে এসে গা জ্বলতে থাকে তার। আসলেই রাস্তার মানুষগুলোর সাথে বিস্তর ফারাক এদের। বাতাসটাই অন্যরকম মানুষ-ত হবেই। গলির মুখের দোকান থেকে একটা মিনিপ্যাক শ্যাম্পু কিনবে সৌরভ। তারপর মেসে গিয়ে ঘন্টা দেড়েকের গোসল। দুঃখ, যন্ত্রণা, লাঞ্ছনাগুলো এভাবেই শরীর থেকে ধুয়ে মুছে ফেলে সে, ভাল কাজ দেয়। সাথে রিফ্রেশমেন্ট হিসেবে এক কাপ দুধ ছাড়া চা।
(চলবে)
:thumbup:
অবশ্যই চলবে।
বাহ নতুন ইমো আইছে... :hatsoff:
হাসনাইন, চমতকার এগুচ্ছে গল্পটা। :clap: :clap:
অবশ্যই চলবে।
:hatsoff:
চলবে চলবে :hatsoff: :hatsoff:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
হ 😛
:thumbup: :thumbup: :awesome: :awesome:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
:tuski: :tuski: :hatsoff:
ভাল লাগতে শুরু করেছে গল্পের শু্রুটা... ভাইয়া চালিয়ে যান। :thumbup: :thumbup: :thumbup:
এইটা কি :tuski: ??
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তুমিত ভালই ডেনছার। :-B
হাত পা খুলে বসে আছি।
ইয়ে মানে ৪ তারিখের আগে দেয়া যাবে? ঈদে বাড়ি যাব তো
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাইজান আমি-ত চাইতেছি চার-পাঁচ পর্বের আগে শেষ করুম না। 🙁
ভাই এই ভাবে থামায়া দিলে তো দিলে চোট লাগে। প্লীজ ভাই তারাতারি চালান, গল্প শেষ না হইলে যে কষ্ট লাগে।
কষ্ট কর... কষ্ট কর। :-B
sala,junior req korlo to valo laglo na..............
eibar by order....taratari bakita lakh
শুরুটা ভাল ছিল। :clap: :clap: :clap:
যাক তুই অবশেষে লেখা দিসিস। :thumbup:
দারুন লেখা। অসাধারণ। হিংসা হচ্ছে খুব। কেন এত ভালো লিখতে পারি না আমি??? 🙁 🙁
দোস্ত, হিংসা আমারো হইত...তয় এখন আর হয় না, কারন আমি বুইঝ্যা ফেলছি- আমারে দিয়া এই রকম লেখা হইব না... :((
হাসনাইন, শুরু তো জটিল হইছে...রান রেট ঠিক রেখে ইনিংসটারে আগাইতে থাকো... :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
সৌরভরে বহুত জটিল বানায় ফেলছি।। ওরে লইয়াই মুশকিল... :bash:
কাব্য ভাই আর কবীর ভাই,
হিংসা করার আর মানুষ পাইলেন না। 🙁
সাবাশ হাস্না ... 😛
নইড়া চইড়া বসলাম। ধারাবাহিক গল্প ... শুরুটা চ্রম হইসে।
নেক্সট পর্বে কি ঘটবে চিন্তা করতেছি ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাই, বেশি নাড়াচাড়া করন ভালোনা! 😛
বস্! চিন্তাটা হাসনাইনরেই করতে দিলে ভালো হয়না? আপনি চিন্তা করলে তো গল্পের ডাইমেনশন পাল্টাইয়া শালিদের দিকে চইল্যা যাইব! :-B :-B
:awesome: :awesome: :awesome:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
সিরিয়াস কমেন্টের ভাত নাই ... :((
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
খাটি কথা। 😉
এই জন্যই আমি ঐ লাইনে যাই না 😉 😉
তাইফুর (৯২-৯৮) বলেছেন:
আমার্মনের্কতাডা কৈআ ফালাইছেন। বুকে আসেন :hug: :hug: :hug:
আমি আবার সিরিয়াস কমেন্ট ছাড়া করতেই পারি না... :-B
ভাত যদি নাও পাই...চাইনিজ খেয়েই থাকব... B-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:khekz: :khekz: :khekz:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ব্লগে এইসব অসামাজিক কাজ চলবে না। 😉 😉 😉
:guitar: :guitar:
এফ সি সির পোলাপান নাড়াচাড়ার অন্য নাম দিসে গীটার বাজানো। রবিন ভাই কি.... 😉
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
বস আপনে আমার নামটা... :no:
আমিও চিন্তা করতেছি। :dreamy: :dreamy: 😀
সিরিজ লিখার ভ্যান চাই 🙁
অপেক্ষা করতে করতেই হার্ট এটাক হয়া যাবে 🙁
তাড়াতাড়ি লিখা দেন লেখক সাহেব, নাইলে ভালো কমেন্ট করব না 😀
তোমার কোন কথা ঠেকবে না। লেখা দেয়া নাই খালি এরে ভ্যান ওরে রিক্সা x-(
লেখা দেন ম্যাডাম।
কি যে কস। :shy:
আমিও লিখক, কাকও পাখি
আমিও লেখি, গোবর দিয়াও সুগন্ধ বাইরয় 🙁
হয় নাই, হবেঃ
আমিও লিখক, আর গরুও পাখি। :-B :-B :-B
হয়ছে... আর কইয়েন না।
লেখা দেন।
হাস্নাইন, এখন্থেকে এই স্রিজটার্শেষে "চলবে" লিকবি না, "দৌড়াইবে" লিখবি।
হ্যাটস অফ :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
😛 :hatsoff: :hatsoff:
ভালো লাগছে। :thumbup: নেএএএএএক্সসসসসসসসসসসসটটটটটটটটটটটটটটটটট! জলদি ~x(
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ওকে বস। :hatsoff: :hatsoff:
এমন গল্পের মন্তব্য হিসেবে তুহিনের কথাটাই সবচেয়ে উপযুক্ত:
অপেক্ষায় থাকলাম।
:salute:
আমাগো আরেক স্টার কথাশিল্পী হাস্না আইসা গেছে :clap: :clap:
স্যারের মেয়েডা ডিস্টার্ব দিবো মনে হইতাছে। 😉 দেখা যাক হাস্নায় কি করে 😀
:thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
:shy: :hatsoff: :hatsoff:
হ বস দেখা যাক সৌরভ কিতা করে।
ভাইয়ার দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে? :grr:
পড়তে পড়তে পুরাই জমে গেছিলাম।
ভালো লাগছে :clap: :clap: ।
Life is Mad.
:hatsoff: :hatsoff:
ভালো ছিল, ভালোভাবে চলুক।
:hatsoff: :hatsoff: .
পরের পর্ব কই??
আমি পরপো (থ্যাংকস মাস্ফু)
কি হল এটার পরের পর্ব কই? যখন লেখাটা পড়া শুরু করেছি তখনই বুঝেছি এই পোলা জ্বালাবে লেখা এই পর্বে শেষ করবেনা। চলে না কেন?
আদনান ভাই, কামরুলতপু ভাই(সরি ভাই অনিচ্ছাকৃত ভুল করছিলাম 😕 )
দিতেছি বস।
গল্প লেখা আস্লেই বহুত কঠিন। 🙁
শুরুটাতো ভাল লিখলে :clap: