আবার জমল মেলা…

১.
শুক্রবার সকাল।
আজ সেই সিসিবি শুক্রবার।আগের মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে আজকে সিসিবির সদস্যদের সমাবেশ হবে।পরে অবশ্য অ্যাডজুটেন্ট স্যার ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে,শুধু সমাবেশ নয়,আজকের দিনটি সিসিবির সদস্যরা কলেজের মতো করে কাটাবে,অনেকটা কলেজের শিডিউল ফলো করে।ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম,
স্যার পানিশমেন্টও আছে নাকি?
আসেনা আবার!ওইটা ছাড়া তোমাগো চলে নাকি?খালি শোয়ায়া ঢলা দিব নাকি ঢইলা শোয়ায়া দিব সেইটাই ভাবতেসি। :-B
কি কয়!ধুরর…ভাবুক,যার ভাবনা সেই ভাবুক আমার কি!
সকালে জানালা দিয়ে তাকাতে সুর্যটা দেখেই মন ভরে গেল,কি সুন্দর লাল টকটকে।এ সূর্যটা আমার জন্য উঠেছে,এ সূর্য ক্যাডেটদের জন্য উঠেছে। :shy:

২.
চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।দরজায় ধামধাম লাথির আওয়াজ শুনেই বুঝলাম ব্যাটেলিয়ান এসে গেছে।হঠাৎ দরজা খুলতেই রায়হানের ক্রমাগত মারা লাথির একটা এসে আমার পায়ে লাগল।শালা চোখমুখ সব বন্ধ করেই মারতেছিল।উফফফ… ~x(

পোলাপাইন সবাই মোটামুটি হাজির।সবার আগে ঢুকল মুহাম্মদ,তার টিশার্টে দেখি লিখা..ইট ওবামা,ড্রিংক ওবামা!খাইসে..মুহাম্মদের অবস্থা এত খারাপ তা তো জানতাম না.. 😉

কিন্তু এতগুলা পোলাপাইন যাব কিসে!দেখি হাসনাইন আমাকে ডাকতেসে।কাছে যেতেই বলল,দোস্ত একটা ট্রেন নিয়ে এসেছি।
আরে!আমার মনের কথা ও জানল ক্যামনে!!কিন্তু পরেই মনে হল লালপাহাড়ের আধমাইল দুর থেকেই যেখানে হেটে যেতে হয় সেখানে ট্রেন চলবে কেমনে।তাও আবার যেমনে বলল,একটা নিয়ে এসেছি যেন পারলে আরও কয়েকটা নিয়ে আসত!!
বল্লাম,
ট্রেন মানে!!ট্রেনে কেমনে যাব?
ট্রেনে যাওয়ার কথা বলসে কে তোকে?
তাইলে?
আরে আরেকটা গল্প লিখ্যা আনসি..সবাইরে শুনামু!
মরজ্বালা।ইশতিয়াকের আবার মাথা নাকি ঠান্ডা,ও নিশ্চয়ই সব ব্যবস্থা করে আসছে।দেখি ওরে জিগাই।
ইশতি দোস্ত,যাওয়ার ব্যবস্থা কি করছস?
আমার করার কথা নাকি?আইহায় কি বলিস?এখন কি হবে।
বাপস!বেশি ঠান্ডা। :boss:
চিন্তা করিস না,কেউ নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করছে। আমি বল্লাম।
চিন্তা করব না মানে?কি বলিস তুই!!আমি এখন কি করি!!ওফফ..
আল্লাহ মনে হয় আমার কথা শুনলেন। দেখি বাইরে একটা বিশাল বাস এসে হর্ন দিতেসে।সামনে সিসিবি সামবেশ লিখা বিশাল ব্যানার।সাইডেও দেখি কিছু পোষ্টার লাগানো।একটা আমার খুব মনে ধরল।
আইসিএল এ বাংলাদেশ
লাল পাহাড়ে সমাবেশ
গ্যাড়াকলে বিসিবি
লাল পাহাড়ে সিসিবি
খুব সুন্দর করে সব ব্যবস্থা করসে তো!!দেখেই মনটা ভরে গেল।কে করসে এই কামটা তা জানতে পোলাপাইনের দিকে তাকাতেই দেখি অ্যাডজুটেন্ট স্যার ম্যায় হু না টাইপ হাসি দিতেসেন। B-)

বুঝলাম..বুঝে ইজি থাকলাম। 😐
৩.
একঘন্টা ধরে বাসে চড়লাম।জার্নি একটা হইসে বটে-গান,গল্প,হালকা খাওয়া দাওয়া,টিজ সব।এরমধ্যে শার্লী আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। কি হইসে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম কিছুক্ষন পরপর ফ্লপ না খেলে নাকি সে এইরকম অসুস্থ হয়ে পড়ে।অগ্যতা কি আর করা,মিনিটখানেক ফ্লপ দিতেই শার্লী আবার চাঙগা হয়ে উঠল। :clap:

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে হাটতেসি।পাহাড়ে যাওয়ার এই পথটুকু পায়ে হেটেই যেতে হবে।সবাই রায়হানের পিছে পিছে হাটতেসি..এই এলাকা পুরো নাকি ওর হাতের তালুতে ভাসে।আমরা আর কেউ চিনিনা কাজেই ওর তালুর উপর ভরসা করা ছাড়া উপায়ও নেই।

হঠাৎ রায়হান চিল্লায়া উঠল,ওই তো দেখা যাইতেসে,আইয়া পড়ছি।
সবাই দেখি হেবী লাফায়া-ধাফায়া দেখার চেষ্টা করতেসে।আরে আজব,সামনে পুরা খালি,চোখ থাকলেই দুরে পাহাড় দেখবি,কিন্তু সবাই এক জায়গাতেই কেন একজন আরেকজনের কাধের উপর গড়াগড়ি দিতেসে বুঝলাম না।পোলাপাইনের সেভেনগিরি আর গেলনা। :grr:
যাই হোক দেইখা নেই।কিন্তু সামনে তো দুই তিনটা পাহাড়।
কিরে,আমরা কোনটায় যাব?
আঙ্গুল তুলে দেখাল রায়হান,ওই যে বড় একটা গাছ দেখা যাইতেসে না ওইটা-বলার সময় একটু ঢোক গিলল মনে হইল।
সবাই আবার হাটা শুরু করলাম,হাটা না দৌড়..
রায়হান দেখি আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বলল,দোস্ত এক্টা সমস্যা হইসে।
কি?
ওই যে গাছটা দেখায়া সবাইরে ডিরেকশন দিলাম না,ওইটা কিন্তু এখানে ছিলনা।
মানে কি!!
বুঝতেসিনা,পথ ভুল করলামনি?
কিন্তু এখন আর কিচ্ছু করার নেই।সবাই এমন দৌড় দিসে যে তাগো ডাইকা এখন এই কথা বল্লে সকালের দরজার মত আমারেই ক্রমাগত লাথি খাওয়া লাগবে।
কি আর করা।
চোখমুখ বন্ধ করে একটু দম নিলাম।তারপর মুখে ঝলমলে হাসির আভা ফুটিয়ে বয়েজ দাড়া বলেই খিচ্যা দৌড় দিলাম। :grr:

৫.

কাছে যেতেই ভুল ভাঙ্গল।আমি অবশ্য আগেই এইরকম কিছু একটা ধারনা করেছিলাম।আসলে দুর থেকে যে বিশাল বটগাছটা দেখা যাচ্ছিল সেটা মাসরুফ ভাই।আমাদের রিসিভ করার জন্য দাড়িয়ে আছেন। :khekz:

কি রে পিচ্চিপাচ্চা ক্যামন আছস বলেই উনার বিশাল দেহখানা নিয়া কোলাকুলি করতে আসলেন। ভাগ্য ভাল,ব্লগীয় ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়া শুধু :salute: দিয়া পার পাওয়া গেল। আমরা ঢুকতেই আরেক পার্টিকে দেখা গেল আসতে ।৯৪-০০ ব্যাচের ভাইয়ারা আসছেন।

সবার সামনে একজন চতুর্দিকে ব্রাশফায়ার :gulli2: করতে করতে আসতেছে।ওইটা কামরুল ভাই..জিগাইলাম এই সন্ত্রাসী রুপের মানে কি?বলল,ভিআইপিদের নিয়া আসতেসি তাগো এক্টা ইজ্জত আসেনা..বলতে বলতেই গুলি করে দুইয়া কাক নামায়া ফেললেন।ধুশ্শালা..আজীবন পাব্লিকই থাইকা গেলাম..

কিন্তু একি!!তানভীর ভাই আর সাইফ ভাই স্ট্রেচারে কারে নিয়া আসতেসে!কামরুল ভাই বল্লেন,ওইটা রবিন ভাই,পথিমধ্যে হাসতে হাসতে পিরা গিয়েছেন বলে তার এই অবস্থা।তারেক ভাই আসলেন ভাবীরে নিয়া।ভাবী আগেই বলে রাখলেন,আমি কিন্তু খিচুড়ী ভাবী না,সো..খুব খিয়াল কইরা.. 😀

তৌফিক ভাইকে দেখা গেল,কাধে ক্যামেরা।কাছে আসতেই উনি বল্লেন,উনি ব্রোকব্যাক মাউম্টেন ২ বানাবেন,যদি ভাল চিকিচুকি পায়া যান,তাই ক্যামেরাটা নিয়া আসছেন।চিকি শব্দটা কানে যেতেই মাসরুফ ভাই হাসিহাসি মুখে তৌফিক ভাইর সামনে দাড়ালেন,পুরোনো অভ্যাস মনেহয়।তার আবার ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের অনেক শখ,তাই তৌফিক ভাইর পিছে ঘুরঘুর করতে লাগলেন।কিন্তু ঘুরলেই কি হয়,জিনিস হওয়া লাগে লাগে।

এখন শুধু জুনায়েদ ভাই আসলেই হয়..উনি আবার ব্লগের একমাত্র সার্টিফিকেট প্রাপ্ত জিনিস। ;))

চলবে?( 😕 )

৪,৯২৪ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “আবার জমল মেলা…”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    চলবেনা মানে ...... দৌড়াবে ...
    বাই দ্যা বাই, মাসরুফরে কি দূর থিকা বটগাছের মত দেখায় ?? আমার ধারণা ছিল খেজুর গাছ টাইপ কিছু ... 😀


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    উনি আবার ব্লগের একমাত্র সার্টিফিকেট প্রাপ্ত জিনিস

    =)) =))
    বন্য শালা আসলেই একটা মাল =)) =))

    ভাবছিলাম কয়েকটা ডায়কগ কোট করুম, কিন্তু কোনটা ছাইড়া কোনটা কোট করুম বুঝতাছিনা
    পুরা পিরা গেছি হাসতে হাসতে, ভয় লাগতাছে, আবার মিরা না যাই! =)) =))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    আসলে দুর থেকে যে বিশাল বটগাছটা দেখা যাচ্ছিল সেটা মাসরুফ ভাই।
    ইটা রবিন ভাই,পথিমধ্যে হাসতে হাসতে পিরা গিয়েছেন বলে তার এই অবস্থা

    :goragori: :goragori: :goragori: :goragori:

    জবাব দিন
  4. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)
    আসলে দুর থেকে যে বিশাল বটগাছটা দেখা যাচ্ছিল সেটা মাসরুফ ভাই
    উনি আবার ব্লগের একমাত্র সার্টিফিকেট প্রাপ্ত জিনিস

    :khekz: :khekz: :khekz:

    হেব্বি মজা পাইলাম, তোরে লাইথথাইতে পারে মজাটা আরও বাড়ছে মনে হয়।

    সেইদিন আমি, কামরুল ভাই, ফৌজিয়ান ভাই, এডজুটেন্ট স্যার, মুহাম্মদ চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় ফৌজিয়ান ভাই আসলেই পাহাড়ে একটা সিসিবি সন্মেলন করার প্রস্তাব দিসিলেন। এমন হইলে কিন্তু ভালৈ হইতো। তাই ন??

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    তোর লেখা পড়তেছিলাম ভয়ে ভয়ে...জানতাম আমারে তুই পঁচাবিই... 🙁
    পড়তে পড়ে শেষ পর্যন্ত আইস্যা ভাবতেছিলাম এ যাত্রা বোধহয়... 🙂
    কিন্তু না... 😮

    আমি এলান করতেছি, বন্যরে যে খাঁচায় ভইরা পোষ মানাইব (শিষ্টাচার, গুরুজন মানচিন ইত্যাদি শিখাইব!) তারে আমি যেমনে হোক খাঁটি অক্সিজেন সারাজীবন সাপ্লাই করুম...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    আসলে দুর থেকে যে বিশাল বটগাছটা দেখা যাচ্ছিল সেটা মাসরুফ ভাই

    এই পর্যন্ত মাপ করা গেছিল। কিন্তু...

    চিকি শব্দটা কানে যেতেই মাসরুফ ভাই হাসিহাসি মুখে তৌফিক ভাইর সামনে দাড়ালেন,পুরোনো অভ্যাস মনেহয়।

    এর পরে তোর কুনু মাপ নাই।হালা,কলেজে আমারে মাইনষে "আগলি জায়ান্ট" কয়া জানত,নসুতেও এই নামটা কেমনে কেমনে ছড়ায় গেছে(ওয়েল,গিভেন মাই স্ট্যাচার,ইট ইজ নট দ্যাট আনলাইক্লি য়ু নো... :)) )
    আর তুই আমারে ফাঁকতালে চিকি বানায় দেওনের অপচেষ্টা করতাছস? চোখের বি* খায়া বইসা আসস নি? সায়েদ ভাইয়ের মত কই-তোরে ঠুয়া দেওন এক্কেরে ফরজ হয়া গেল।ভাল মন্দ যা আসে খায়া নে-বুঝস এ তো দুই দিনের দুইন্না x-( x-(

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।