জীবনে চলার পথে পরিস্থিতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ছ্যাকা দিয়েছে আমাকে , আমাদের। একলা একলা ছ্যাক এর চেয়ে দলগত ভাবে ছ্যাকা খাওয়ার পরিমাণটাই জীবনে বেশী। ছ্যাকার কোয়ালিটি একেকটা একেক রকম। একরকম ছ্যাকা আছে ” হতবিহ্বল ছ্যাকা” । যা খাবার পর মুখ দিয়ে কোন বাণী নিঃসৃত হয় না। এমনি এক ছ্যাকার দেখা পেয়েছিলাম আমরা একাদশ মান এর , ৭ দিনের শিক্ষা সফরে। সময়- ২০০৫ সাল, স্থান- ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এর হাসপাতাল। কক্সবাজার ঘুরে , সমুদ্র দুষিত করে, গোটা বিশেক বর্মি কিশোরীর হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে, মোবাইল নম্বর জোগাড় করে আমরা তখন ফিরতি পথে। যাবার সময় ফৌজদারহাটের রেস্ট হাউজে স্থান মিললেও শিক্ষা সফরের মৌসুম বলে ফেরার সময় জায়গা হল ওদের হাসপাতালে। আমাদের কলেজের তৎকালীন মুড়ির টিনটা নষ্ট থাকায় আমাদের জন্য বাইরে থেকে বাস ভারা করা হয়েছিল । যে কারনে আমরা বেশ খুশী ছিলাম। কারন আমাদের কলেজের নিজস্ব বাসে শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা অগ্রজদের কাছে শুনেছি- ভয়াবহ। যাই হোক আমাদের বাস চালক সারাটা দিন পান চাবাতেন ও তার প্রিয় জ্ঞান ছিল — ” আমি ন্যাংটা ছিলাম ভালছিলাম……… ” । সাতদিনের প্রথম দিনেই আমরা সবাই মোটামুটি গানটা আয়ত্ত করে ফেললাম। আমাদের নিজস্ব গানের সিডিগুলো যাত্রা পথে আমরা বহুবার বাজানোর চেষ্টা করে বিফল হই । দুই- একটা গানের পরই বেজে ওঠে—-আমি ন্যাংটা ছিলাম…………। বাসের হেল্পার মারফত জানলাম যে এই গান না শুনলে নাকি তার জোশ আসে না। কিন্তু মামা বাস চালাতও তুখোড়। চিটাগং- কক্সবাজার রোডে তার স্লাইডিং, ড্রিফটিং এর নমুনায় একদম পেছনের সিটে বসা তিতাসের তানভির কতবার যে সিট থেকে উড়ে গেছে তার হিসাব মনে নেই। এই ঘটনার নায়ক ড্রাইভার নয়, নায়ক – হেল্পার। সাতদিনের শিক্ষাসফরে আমাদের ফর্মুলা- ১ এর অভিজ্ঞতা দানকারী ড্রাইভার এর একমাত্র চ্যালা। আমরা সাথে করে ডিভিডি প্লেয়ার নিয়ে গিয়েছিলাম। পঞ্চম রাতে আমাদের মনে হল ফৌজদারহাটের হাসপাতালে এই ডিভিডি প্লেয়ার এর সর্বোত্তম ব্যাবহার আমাদের করা উচিত। কিন্তু ডিভিডি কে এনে দেবে ? এডজ্যুটেন্ট যে ডিভিডি দিয়েছেন তাতো আমরা সে রাতে চাই না। আমরা চাই বিশেষ কিছু। যৌবনের আহবান বড় কঠিন। হটাত মনে পড়ল হেল্পারের কথা। বয়স কম আছে, ম্যানেজ করে ফেলা যাবে। আমাদের ম্যানাজার গোষ্ঠী তাকে ডেকে আনল ও ম্যানেজ করা শুরু করল।
ম্যানেজারঃ ভাই, একটা ডিভিডি আইন্যা দেন না।টাকা দিতেছি।
হেল্পারঃ ঠীক আছে, দেন। কুন অসুবিধা নাইতো আবার?
ম্যানেজারঃ আপনি খালি কিন্যা সোজা আমগরে দিবেন, আর কাউরেরে ভুইল্যাই দিবেন তো নাই ই আর কইবেন ও না।
হেল্পারঃ বুজছি, কি আনুম?
ম্যানেজারঃ ( ছোট ছোট ২ টা কাশি দিয়ে) টারজান…… এই দেখেন হাতের দিকে দেখেন… বুঝছেন তো?
হেল্পারঃ আরে হ বুঝছি।
ম্যানেজারঃ বুঝছেন তো নাকি ?
হেল্পারঃ আরে কি কন না বোঝার কি আছে?
ম্যানাজার সবাইকে সুসংবাদ শুনিয়ে তার হাতে টাকা গুজে দিয়ে বিদায় করল। সন্ধ্যা থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রস্তুতি শুরু হল , যেমন– কম্বল দিয়ে জানালা ঢাকা, অন্য ডিভিডি ছেড়ে অডিও আউটপুটের মাত্রা নির্ধারণ করা…… গার্ড ডিউটি ভাগ করা ইত্যাদি। তারপর প্রতীক্ষা……… কখন আসবে কবি? আবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাত ১০ টা নাগাদ সে ফিরে আসল। হাতে তার বাদামি কাগজে মোড়ানো সেই প্রতীক্ষিত বস্তু।
ম্যানেজারঃ এত লেট করলেন যে?
হেল্পারঃ আরে খুইজ্যা পাইতে হইব তো… অনেক খুইজ্যা তার পর পাইছি। ( হাসি)
ম্যানাজারঃ যাউক গা, পাইছেন এইডাই অনেক, নেন আপনি এই বিশ টাকার চা খাইয়েন।
হেল্পার খুশি মনে বগল বাজাতে বাজাতে প্রস্থান করল। ম্যানাজের প্যাকেট সহ বিজয়ীর ভংগীতে আমাদের মাঝে উপস্থিত। এখন মোড়ক উন্মোচন হবে। মোড়ক উন্মোচিত হোল। আমাদের হাস্যজ্বল মুখে চপেটাঘাত করে বেরিয়ে এলো——–
“টারজান দ্যা ওয়ান্ডার কার”
শ্রেষ্ঠাংশে- আয়শা টাকিয়া…………… ।