কিছু মানুষ অতীত নিয়ে পড়ে থাকে, অনেক চিন্তা করে দেখলাম আমিও মনে হয় সেই দলে। শীত আসছে, আর সেই সময়ে আমিও শীত আগে কেমন ছিল সেই চিন্তায় পড়ে আছি। সকাল বেলায় বের হতেই হালকা যেই বাতাসটা গায়ে লাগে সেই বাতাসটা কত বছর আগের ঠিক কোন সময়কার কথা মনে করিয়ে দেয় সেই হিসাব খুলে বসি। বলা চলে, নিজের অজান্তেই এসব শুরু হয়। শীতের শুরুর দিকে কলেজের স্টোর থেকে দুটো কম্বল দিত। জুনিয়র থাকতে রঙিন কম্বল ভাগ্যে জুটত। সিনিয়র হতে থাকলে কালোর সংখ্যা বাড়তে থাকত। ফাইনালি তিনটা করে কম্বল নিয়ে শীত পাড়ি দিতাম। বেড শীটটা সিল্কি ছিল, কম্বলের নীচে বেড শীট না দিলে চুলকানী হবার সম্ভাবণা থাকত। মরণ দুই দিকেই। বেড শীট সারা রাতেও গরম হত না। তাই “ওম” বলে যে বিষয়টা সেটা সারা শীত ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকত।
যাই হোক যে কথায় ছিলাম সেখানে ফিরে আসি । ইদানীং লেখা শুরু করে অন্যদিনে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। আমার লেখার শিরোনাম “বকর-ব্লগর” তাই আমি যখন-যেখানে-যেভাবে খুশী ঘুরাফেরা করতে পারি। এই যেমন সকাল বেলার শীতের রাস্তায় ঠান্ডা বাতাস থেকে কলেজের কম্বলে চলে গেলাম। এরপর আমি আমার ছোটবেলার শীতকালের সকালে চলে যেতে পারি। সেই অধিকার লেখার শিরোনামের মাধ্যমেই আমি অর্জন করেছি। যা বলছিলাম, নস্টালজিয়া। ব্যাপারটা হল দিন যায় কথা থাকে, সকাল বেলায় কুয়াশার ভিতর দিয়ে ছুটে চলা বাসে নস্টালজিয়ারা অট্টহাসি দিয়ে যায়। ফিসফিস করে কানে কানে বলে দিয়ে যায় আমি কিন্তু ছিলাম! এই চক্রটা এলোমেলো। বন্ধু এক গল্প বলেছিল। কোন এক বনের শিয়াল প্রতিদিন সবাইকে গিয়ে বলে চল আমরা সবাইকে বুঝাই ‘গাঁজা’ খাওয়া ভাল না, এটা ক্ষতিকর। তোমরা সবাই আমার সাথে আস। তো প্রতিদিন বনের জীব জন্তুদের নিয়ে শিয়াল সবার কাছে যায়। একদিন এক বাঘের সাথে দেখা। ক্লান্ত বাঘ হুংকার ছেড়ে বলে, এই গাঁজাখোরের পিছনে সবাই ঘুর কেন? কালকে ও গাঁজা খেয়ে আমাকে সারা বন ঘুরাইছে এভাবে। ব্যাপারটা হল একা একা নেশা করতে পছন্দ করে না অনেকে। সবাইকে সাথে দরকার হয়। আবার অনেকে আছে একা একা নেশা করতে ভালবাসে। প্রকৃত নেশাগ্রস্থ নাকি তারাই, যারা একা একা নেশা করতে পারে। আর যারা বন্ধুদের আড্ডায় নেশা করে তারা সিজনাল নেশাখোড়। একা একা নেশা করা যেমন খারাপ, তেমনি একা একা নস্টালজিক হওয়াটাও ভাল না।
শীতকালের আরেকটা আমেজ আছে। শীতকাল মানেই অ্যাথলেটিক্সের সময়। ব্রেকফাস্টের পরে অ্যাথলেটিক্স গ্রাউন্ড, শিশিরভেজা ট্র্যাক। সকালের নরম আলোয় পুকুর পাড়ে বসে রোদ পোহানো। বড়বেলায় তাবুর ভিতর বসে টাস পিটানো আর ছোটবেলায় রাস্তা দিয়ে গাড়ী দেখা। ঘোষণা কেন্দ্রের মাইকে গান বাজত। জেমসের, আগুনের আর মাঝে মাঝে কিছু ইংরেজী গান। গানের ফাঁকে ঘোষণা আসত। দিন শেষে সূর্যের তার কমে এলে দিনের সমাপ্তী করে হাউসের পথ ধরতাম। হীম শীতল ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার নিতে হবে। শরীরে তখন রাজ্যের জড়তারা এসে ভর করত। মনে তখন আনন্দের বন্যা। ছবি দেখানে হবে একটু পর। টিভি রুমের জানালায় কালো কম্বল জড়ানো থাকবে। সনি ২১ ইঞ্চি টিভিতে ছবি চলবে। রাত বাড়তে থাকবে আর চারদিক সাদা করে কুয়াশা পড়তে থাকবে।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
😀 😀 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
আহ, নস্টালজিয়া। দারুন লাগলো দিবস :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশ দা 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
ময়মনসিংহে হাড় কাঁপানো জার পরতো। সকালবেলা কাঁপতে কাঁপতে লাল নীল বালতিতে পানি ভরে বারান্দায় রেখে আসতাম রোদের তাপে গরম হবে বলে। তারপর লাঞ্চ শেষে যারা আগে বাথরুমের দখল পেতো তারাই হট ওয়াটার (?) শাওয়ার করতে পারতো। বন্ধুদের সাথে দৌড়ে কখনোই পারতাম না আমি, তাই সকালবেলা বরফ ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতাম প্রায়ই। এক বালতি পানি ভরে লা- ইলাহা পড়তে পড়তে একটা কাকের গোসল!
আমাদের ছিল ধূসর রঙা কম্বল, দেখলেই গায়ে চুলকানি শুরু হয়ে যেতো। আমরাও তোমাদের মতো নিচে সিল্কের বেড কভার জড়িয়ে নিতাম। তিনটে কম্বলের দরকার পরতো না, একটাতেই ঘেমে নেয়ে একাকার হতাম। হেমন্তেও সেই ধূসর কম্বল, শীতেও। শীতে ভাপা পিঠা খেয়েছি কলেজে মনে আছে। সবচে প্রিয় ছিল ধোঁয়া ওঠা কোয়ার্টার বয়েলড ডিম আর চা। এখন আমরা প্রায় সারা বছর কম্ফোরটার জড়িয়ে ঘুমাই। হেমন্তে হাল্কা কিছু, শীতের শুরুতে অন্যটা, আবার হাড় কাঁপানো জারে আরেকটা। মন চাইলে ইলেকট্রিক কম্বলও। নিউ ইয়র্ক থেকে আসা ভাপা পিঠা পাওয়া যায় লোকাল গ্রোসারীতে। পাঁচ ডলারে চারটে ফ্রোজেন ভাপা পিঠা। আমাদের ক্যাম্পাস থেকে এক ঘণ্টা ড্রাইভ করলে সেই পিঠা কিনতে পারি।
তোমার মতো আমিও খানিক বকর বকর করে গেলাম সুযোগ পেয়ে! 😛
হট ওয়াটার কোথা থেকে পেতেন আপা?! আমরা তো ঝর্ণার নিচে যাবার জন্য কুপন বাজি ধরতাম। আজকে গোসল করলে একটা স্লাইস খাওয়াবো, কিংবা বুধবারের পুডিং। তারপরে এই খাবারের লোভে গুটি গুটি পায়ে বাথরুমের দরজার সামনে এগিয়ে যাওয়া। এর মিনিটখানেক পরে পানি পড়ার শব্দ আর আর্তচিৎকার। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই আবার চুপ কারণ অতিঠান্ডায় অনুভূতি গুলো জমে গিয়েছে। 🙁
বিকালে গেমসের পরে আরেকটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কাজ করতাম। খেলা থেকে এসেই গা গরম থাকতে শাওয়ারের তলে। যাতে ঠান্ডা পানির ধাক্কা কম লাগে! 😕
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
হট ওয়াটার কোথায় পেতাম? হাহ! ঐ যে বললাম সকাল বেলা লাল নীল বালতিতে পানি ভরে বারান্দায় রেখে আসতাম রোদের তাপে গরম হবে বলে... 😛
ঠিক আগের লাইনটা পড়লাম না কেন?! :brick:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বাতাসে উইকেন্ডের গন্ধ! 😛
আমার কোন উইকেন্ড নাই। সকাল ৭টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পড়লাম লিখলাম মাথা জ্যাম হয়ে গেল বাসায় চলে এলাম। আবার যাবো একটু পরে! কালকেও যাব। তারপরের দিনও যাব। এভাবেই চলবে এই সেমিস্টার! :brick:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:boss: :boss:
শরীর গরম এবং স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ কাজ বলতে ঝাতি কি বুঝাতে চায় মকা দা 😉 ;;; :)) :frontroll: :frontroll: :frontroll: (সম্পাদিত)
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
খেলা বা শারিরীক পরিশ্রম শেষে সাথে সাথে পানি পান কিংবা গোসল করতে নাই। বিশেষ করে গোসল করলে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে হঠাৎ শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে যায়। এটা ভালো না। ওয়ার্কআউটের শেষে সাধারণত কুলিং অফ সেশন বলে একটা বিষয় থাকে। হালকা নড়াচড়ার মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা ও হৃদপিন্ডের স্পন্দন কমিয়ে আনা হয় এর মাধ্যমে। তারপরে শরীর রিহাইড্রেট করা। সেটা পানি পান কিংবা গোসল যে ভাবেই হোক।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
শীতকালে নামাজ আগে ছিল, টি পরে। এর জন্য গেমস থেকে এসে আর গোসল করতাম না। সবাই নামাজে গেলে সন্ধ্যার অন্ধকার যখন নামে তখন শাওয়ারের নীচে দাড়িয়ে সাইড জাম্প করতাম। কোন এক সময় লাফ দিয়ে শাওয়ারের নীচে। সিলেটের হিমশীতল জলে এই সন্ধ্যার সময় কিভাবে গোসল করতাম সেটা ভাবি এখন মাঝে মাঝে। আমাদের কিছু পোলাপান ছিল, ছোট এক বালতি পানি গরম করত ইলেক্ট্রিক হিটার দিয়ে সেটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকত। সেইটুক পানি দিয়ে মুখটাও ধোঁয়া যেত কিনা সন্দেহ! 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
শীতকাল মানেই থার্ড টার্ম। আর থার্ড টার্ম মানেই কলেজের শ্রেষ্ঠ সময়!!
অবশ্য জেসিসিতে ব্যাপক ঠান্ডা পড়ত... সামান্য একটি পুলওভার (নীলটা) কিংবা কার্পেট সদৃশ কালো ব্ল্যাঙ্গেটে ঠান্ডা যেত না... 🙁
তারপরও কলেজের শীতকাল ছিল (অ্যাজমা পার্টি ছাড়া) ব্যাপক মাস্তির... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আহা থার্ড টার্ম! শব্দটা মাথায় ছিল না! 🙁 🙁 🙁
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
শীতকালে ঠান্ডার মধ্যে সকালে হাফপ্যান্ট পরে দৌড়ানো ছিল অনেক অপছন্দের। পাবনা এমনিতেই বাংলাদেশের সবচে ঠান্ডা এলাকার মধ্যে অন্যতম।
তবু অনেক ভাল লাগতো শীতকাল। কারণ পাবনা গ্রীষ্মকালের গরমের জন্যেও বিখ্যাত। 😛
নাইট প্রেপ থেকে আসার সময় অনেক সিনিয়র পোলাপান পুলওভার এর নিচ দিয়ে সাদা শার্ট ইন খুলে বের করে দিত।
ভাবই আলাদা!!!!!
শীতকালে আফটারনুন প্রেপ জিনিসটা থাকতো না। এটা অনেক মজার ছিল।
অনেক পুরোনো কথা মনে গেলো দিবস ভাইয়ের লেখাটা পড়ে।
By the way, "রাইফেল, রোটি, আওরাত" বইটা পড়ছিলেন?
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
যারা রাইফেল পড়ে নাই তাদের জন্য লিঙ্ক।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:boss: :boss:
আমি পড়ছি রাজীব ভাই। দিবস ভাইকে পিডিএফ পাঠাইছিলাম তো তাই জিজ্ঞেস করলাম। অনেক বেশি ভাল বই। মুক্তিযুদ্ধের টাইমে লেখা। সবারই পড়া উচিত।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
আমরা তো ফুল প্যান্ট পড়ে দৌড়াইতাম। তোদের মনে হয় অথরিটি আসল পুরুষ বানাইতে চাইত 😛
বই বেশ কিছু জমা হয়ে আছে। এই সেমিস্টারের চাপে আসলে চাপা পড়ে গেছি। এর আগে কোন চাপ নিতাম না। আর এগুলা সব এখন মাথার উপর পাহাড়ের মত হইছে। পড়ে ফেলব। একটু সোজা হয়ে নিই।
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
আহহারে ক্যাডেট কলেজের কম্বল আর ভোর না হতেই পিটির ফল ইন এ দাঁড়ানো!
🙂
দিবস কান্তি, পরীক্ষা শেষ নাকি? কোন একদিন কোরিয়ান নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলে কিছু একটা না হয় লিখে ফেলব! কলেজের থার্ডটার্মটা ভাল লাগার যদি একটা কারণ বলতে হয়, তাহলে বলব আফটারনুন প্রেপের মত বিরক্তিকর বস্তু ছিল না। শীতের ঐ সময়টা বেশ ঘটনাবহুল থাকতো যতদূর মনেপড়ে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিসপ্লে, অ্যাথলেটিকস এবং অ্যাথলেটিকস ফাইনালে আসা চীফ গেস্টের সম্মানে কালচারাল প্রোগ্রামের রিহার্সেল...। কম্বল নিয়ে শাহাদুজ্জামানের খাকি চত্বরের খোঁয়াড়িতে চমৎকার একটা লাইন আছে। "বউ হচ্ছে কলেজের কম্বলের মত, গায়ে দিলে কুটকুট করে আর গায়ে না দিলে ঠান্ডা লাগে।" তোমার স্মৃতিচারণ চলতে থাক।
আমি অত্যন্ত গোপনে একটা ইলেকট্রিক রড নিয়ে গেছিলাম কলেজে। এবং লেপ। খুব সাহস করে হাউজ মাস্টার স্যারের রুম থেকে পানি গরম করতাম।
এক বালতি পানি দুই রুম মেট ভালবেসে ভাগাভাগি করতাম।
" ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন ?"
মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........