আমার মাথা নত করে দাও হে
তোমার চরণ ধূলার পরে,
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে
ঠিক এ কথাগুলোই মনে বাজছিল যখন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একটি একক রবীন্দ্রসন্ধ্যা দেখছিলাম। ইচ্ছে করছিল তখনই গিয়ে ঠাকুরের পায়ের ধুলো নিয়ে আসি। কথায় আছে অতি শ্রদ্ধার মানুষের পায়ের ধুলো নাকি সোনালী হয়। রবীন্দ্রনাথের পদধূলি নিশ্চিত স্বর্ণই ছিল।
ঠাকুরবন্দনা আসার আগে বণ্যাবন্দনায় আসি। রেজওয়ানা চৌধুরীর নাম যিনি বন্যা রেখেছিলেন তার মত সার্থক নামকরণ বোধহয় খুব বেশি মানুষ করেননি। সত্যিই বন্যায় ভাসিয়ে দেন তাঁর গান দিয়ে। স্নিগ্ধতার বন্যায়; সৌন্দর্যের বন্যায়, কথার বন্যায়, ঠাকুরের ভাষার বন্যায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি একবার, একটিবারের জন্য যদি ঠাকুরের মন ঘুরে আসতে পারতাম। কতটা সুন্দর হবে সেই পৃথিবীটি? সত্যিই অদ্ভুত যায়গা এ পৃথিবী; কারো কাছে সুখের তো কারো কাছে দুঃখের, কারো কাছে সবই মায়া তো কারো কাছে পার্থিব ছায়া। আর ঠাকুরে কাছে তা ছিল শুধুই সৌন্দর্যের আধার। অদ্ভুত এক অদেখা সৌন্দর্যের খোঁজ পেতেন তিনি সবকিছুতেই। বহুরূপী এ ধরার সবটুকু দেখে শেষ করতে পারা যখন সম্ভব নয় তাহলে শুধু সুন্দরটুকু নিয়েই বেঁচে থাকাতে তো কোন অপরাধ নেই। বরং তাতেই এ ক্ষুদ্র জীবন অনেকটুকু সার্থক। তাই মনে হয় যদি একটু ঠাকুরমনের দেখা পেতাম; একটু ওনার সাথে কথা বলতে পারতাম, পাগল হয়ে যেতাম; হারিয়ে যেতাম।
তোমার সে দেশেরই তরে আমার মন যে কেমন করে,
তোমার মনের গন্ধে তারই অভাব আমার প্রাণে বিহারে
আজ হয়তো আমি সবার মাঝেই ঠাকুরকে খুঁজি। প্রতিটি বাঙ্গালির মনের এক নিষ্পাপ কোণে একটুকরো ঠাকুর আছে। যখন সে প্রেমে পড়ে, বসুধার সৌন্দর্য দেখে যখন আকাশপানে চেয়ে সে খোদাকে বলে “তোমায় ধন্যবাদ” , তখনই মনঠাকুর জেগে ওঠেন। তখন আমরা সবাই রবীন্দ্রনাথ, অথবা রবীন্দ্রনাথই সেসব মুহূর্তে আমাদের মতো হয়ে উঠেছিলেন। পার্থক্যটা হল তিনি কলম ধরেছিলেন আর আমরা ধরি না। পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে? তাহলে আরেক পাগলের প্রলাপ দিয়েই শেষ করছি।
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি,
সকল খেলায় করবে খেলা সেই আমি।
নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহুর ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।
যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
সকল রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
অসম্ভব ভালো লাগলো। আমি নিজেও মনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে পুষি। দুঃখ বেদনা তখন নিমিষেই লীন হয়ে যায়. . .
শুনে ভালো লাগলো, আমাদের সবারই হয়তো এরকম হয় 🙂
ধন্যবাদ
সবচে' বেশি পছন্দ হলো শিরোনামটাই। অনবদ্য।
আমাদের এতটা জুড়ে তিনি আছেন,
আমাদের আজকের বাঙালি হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর এতটা অবদান ---
তবু এমন করে ভাবিনি কখনো, যে, আমরা প্রত্যকেই একেকজন রবীন্দ্রনাথ!
তুমি তো কঠিন ছেলে হে!
আমরা রবীন্দ্রনাথ না হলে রবীন্দ্রনাথ আমাদের এভাবে ছুঁয়ে যান কিভাবে? এ চিন্তা থেকেই এদিকে আসা।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনার থেকে "কঠিন ছেলে" খেতাব পাওয়া মানে অনেক কিছু।