প্রথম ব্লগেই এত্তো ভালো ভালো কমেন্টস তাই মনে হয় বদহজম হয়ে গেসে! ঘুম আসছিলোনা, আর সেই চিন্তাতেই কলেজে ক্যাডেটদের ঘুমের বিভিন্ন কায়দা কানুন মনে পড়তে লাগলো। আইডিয়াটা না আবার বেমালুম গায়েব হয়ে যায় তাই চটজলদি লিখে ফেলা-
আমাদের অনেক সকালে বিছানা ছাড়তে হতো বলেই যেন ঘুমটা আমাদের ঠিক বিছানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো না। প্রায়ই বিছানার গন্ডি ছেড়ে আরো বিভিন্ন জায়গায় নিদ্রাদেবী আমাদের চোখে ভর করতেন। ক্লাসে বিশেষ করে রোববার অথবা মঙ্গলবার ব্রেকফাস্টে পরটা খেয়ে ফার্স্ট পিরিয়ডে বাংলা ব্যাকরণ ক্লাসে অনেকেই ঘুমাতো। দুপুরের ফার্স্ট প্রেপে কজন যে জেগে থাকতো সেটাই দেখবার বিষয় ছিলো। আর প্রেপ মনিটরকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে ঘুমানো যায় এ ব্যাপারে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারে অনেকেরই উর্বর মস্তিষ্কে অনেক কল্পনা খেলতো। ডেস্কের ফুট-রেস্টটা ভেঙ্গে পা সামনে সটান লম্বা করে ছড়িয়ে দিয়ে থুত্নির নীচে দুহাত গুঁজে সামনে বই নিয়ে পড়ার অভিনয়ের কারণে অনেকেরই অস্কার বা সোনা-রুপার ভল্লুক/টল্লুক প্রাপ্য। প্রায় সবক্লাসেই ঘুমানোর আমাদের এক ক্লাসমেটের চোখ সবসময় রক্তবর্ণ হয়ে থাকতো আর তার কন্ঠস্বর ছিলোএকটু জড়ানো ! একারণে সবাই তাকে ভুল বুঝতো! সেনা বাহিনীতে কর্মরত এই বন্ধু নাকি কিসব ছাইপাশ খেয়ে নাকি কোন এক পাহাড়ী ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে পরে থেকে সারারাত ঘুমিয়েছে!
এক সিনিয়র ভাইতো আরো এক কাঠি সরেস। তিনি সকালের পিটি ও ব্রেকফাস্টের মধ্যকার সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যেও একটু ঘুমিয়ে নিতেন। জুম্মার নামাজের খুতবার সময় হুজুরের সুললিত আওয়াজ যেন ঘুমপাড়ানী গান! আর তাতে অনেকেই মসজিদেই দিব্যি একপাক ঘুমিয়ে নিতো। অডিটোরিয়ামে ‘সেইরকম’ প্রতিযোগিতা যেমন বাংলা/ইংরেজি কবিতা আবৃত্তির সময়ে অনেকের ঘুমিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার রেকর্ডও আছে। অনেকে ঘুমাতে যেতেন ‘লাইব্রেরিতে’! এমন নীরব চারিধার, সেলফে বড় বড় বালিশ(বই) আর ঠান্ডা বাতাস, ডিস্টার্ব দেবার কেউ নেই……এমন পরিবেশে ঘুম না এসে যাবে কোথায়? কাউকে দেখেছি হাউসের ভেতরে ফল-ইনে নোটিশ বোর্ডের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। এক ফেয়ারওয়েল অথবা টার্ম এন্ড ডিনারের পর ডাইনিং হলে আমাদের এক প্রিন্সিপালের রেকর্ড সৃষ্টিকারী অতিদীর্ঘ ভাষণে দেখি টেবিলে আমাদের এক স্যারের সহধর্মীনি ঢূলছেন! কেউ কেউ পরীক্ষার হলেও ঘুমিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন। আমাদের এক বন্ধু একবার ডিনারের পর নাইটপ্রেপে প্যান্টের হুক লুজ করে, টাই লুজ করে মোজা খুলে চেয়ারের পাশে ঝুলিয়ে এমন ঘুম দিলো ঘন্টা পরার পরেও সেই ঘুম ভাঙ্গেনি, দপ্তরি এসে দরজা তালা মারতে গিয়ে ‘অর্ধ-অচেতন’ সেই বন্ধুটিকে আবিষ্কার করে।
তবে ঘুম নিয়ে এতো কথা লেখার পর নজরুল স্যারকে ট্রিবিউট না দিয়ে পারছিনা! স্যার টেস্ট পরীক্ষায় গার্ড দিতে এসে অডিটোরিয়ামের শেষ মাথার সোফায় যে ভাবে টাইলুজ করে, জুতা-চশমা খুলে ঘুমাতেন তাতে মনে হতো স্যারে নিশ্চয় ছোট বেলায় অনেক সর্দি-কাসি হোত আর স্যার অনেক কফ-সিরাপ টিরাপ খেতেন আর সে অভ্যাস টা মনে হয় ব্ড় হয়েও যায়নি আরকি! কিন্তু ইসলামিয়াতের এই শিক্ষক (যদিও পদ্মার ওপারে বাড়ি বলেই মনে হতো) কে ঠিক অমনটা মনে হতোনা।
সবশেষে জামাল ভাই- শাহজালাল হাউজের হাউজ বেয়ারা জামাল ভাই যিনি পরীক্ষার সময় সকালে মার্চ-আপের পর হাউজে পাঠিয়ে দিলে, সব রুমের জানালায় ধাক্কা দিতে দিতে জোরে জোরে বলতেন…মাঠ থেইকা হাউজে পাঠাইছে ঘুমানির লাগি (জন্য) নি… উঠো উঠো…
২৪ টি মন্তব্য : “অথঃ নিদ্রা কথন”
মন্তব্য করুন
১ম হয়ে গেলাম নাকী :-B
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ঘুম নিয়ে কলেজের অনেক মজার স্মৃতি আছে। ভালো লেগেছে ভাইয়া :clap:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ঐ ব্যাটা, নাম বাংলায় করস না কেন???? :chup:
লেখাটা ভাল লেগেছে। ঘুম নিয়ে কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে... :dreamy:
কলেজের ঐ পাঁচ-দশ মিনিটের শান্তির ঘুম... :-B ;;)
আহা... :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:just: :pira: :pira:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সামিউর ভাল ছিল অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে যদিও। ঘুমের আরো কত কাহিনী আছে। অবকাশ ও ছিল যাই হোক। তোমার এই নামটা কি আসলেই অথঃ নাকি অতঃ হবে ?
আরেকটা সাম্প্রদায়িক ব্যাপার, নিজের সব লেখায় সিলেট ট্যাগটা দিয়ে দিও। এখানে কলেজে কলেজে একটা কম্পিটিশন আছে কোন কলেজ বেশি লেখে।সাম্প্রদায়িকতার জন্য আমার ব্যাঞ্চাই।
😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমার যে গুলা মনে আসছে লিখা ফেলসি...আপনে আরো add কইরা দিয়েন। আর ট্যাগ কেম্নে করে? আর ব্যাঞ্চাই মানে কিতা?
ঘুমের জন্য আমি মোটামুটি বিখ্যাত ছিলাম। B-) আমার ঘুম নিয়া একটা লেখা দিবো চিন্তা করছি।
বন্ধু **জ এর কথা মনে পরে গেল । সে সবসময় ঘুম স্টোর করে রাখতো পরে কাজে লাগাবে । শুনতে পেলাম এখোনো স্টোরিং চলছে 😀 ।
কদিন আগে আমরা সবাই মিলে বান্দরবান ট্যুরে গেলাম।ওখানে আমাদের এক ফ্রেন্ড...
১ম রাতঃ দোস্ত আজকে সারাদিন অনেক জার্নি গেছে আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলাম..
২য় রাতঃকালকে বগা লেক হেঁটে হেঁটে যেতে হবে তাই ঘুম স্টোর করতে হবে।।ঘুমাতে গেলাম...
৩য় রাতঃআজকে সারাদিন হাঁটছি আর কালকে কেওক্রাডং যাবো দোস্ত ঘুম স্টোর করতে গেলাম...
৪র্থ রাতঃ কালকেতো চলেই যাবো আজকে আর রাত জেগে কি হবে..যাই একটু ঘুম স্টোর করি...
ওর আর রাত জেগে আড্ডা মারা হলো না...... :((
:)) :)) :))
আগে কি সুন্দর ঘুমাইতাম 😀
সামিউর ভাই কি খবর আপনার??
কেটে যাচ্ছে, রক্ত ঝরছে না...
হায়রে আমার নানান রঙ্গের ঘুমগুলি। :dreamy: :dreamy:
লেখা ভাল হয়েছে সামিউর। :clap: :clap:
আহরে ঘুম আর তার জন্য পাংগা............।
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হায় রে ঘুম রে... এটার জন্য একটা ব্লগ এ্যাওয়েইট করছে আমার। পরীক্ষা টা যাক তারপর দিমুনে।
কলেজে এক বছর হুলুস্থুল ইন্সম্নিয়াতে ভুগছি ... সারারাত হাউজের বারান্দায় হাটতাম আর ঘুমন্ত পোলাপাইন গুলাকে দেখে হিংসায় বুক জ্বলে যেত ...
তবে ফজরের আযান শুনলেই চনচন করে ঘুম আসত ... সকালের ঘুম আমার বড় প্রিয় ...
চমৎকার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু মনে পইরা গেল ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ইন্সম্নিয়ার কথা শুইনা একটা ঘটনা মনে পড়ল
তখন ক্লাস ইলেভেন, রাইতে ঘুম আসেনা হাটাহাটি করতে করতে কায়সার এর জানলার পাশে গিয়া শুনি হেই ব্যাটা ঘুমের মধ্যে কথা কয়। ভাবলাম একটু মজা করি, এর পর ওরে জিগাই "অই কায়সার তুই কি কস" ও আবার বিড়বিড় করে, এই ভাবে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম, ওই ব্যাটা উত্তর দিল, আমি তো হাস্তে হাস্তে গড়াগড়ি,
পরের দিন সকাল বেলা পিটি টাইমে ওকে কইলাম কান্ডটার কথা, ও তখন আর বিশ্বাস করে না।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই ... প্রশ্ন আর উত্তর গুলা ঝাতি ঝান্তে চায় ... ঝাতিও হাইসা গড়াগড়ি দিতে চায় ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
ঐ..
ঐ
প্রথম প্রথম ব্লগ লেখার উত্তেজনা আসলেই অন্যরকম। মনে আছে সামইনে ফার্স্ট ব্লগ লেখার জন্য কি প্রস্তুতিটাই না নিসিলাম। একেবার রাফখাতার মধ্যে প্রথমে লিখে তারপর সেখান থেকে দেখে দেখে টাইপিং। হায়রে!
ক্লাস নাইন টেনে ফজলুল হক হাউসের দোতলার করিডোরে লাইটস অফের পর একা একা হাঁটাহাঁটি করা রীতিমত অভ্যাস হয়ে গেসিল আমার। সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকতো আমি তখন বাইরের অন্ধকারটা আরেকটু ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করতাম। নাইটগার্ডের জেগে থাকা দেখতাম। ডাইনিংহলের পেছনের কুকুরগুলার ঘুমিয়ে থাকা দেখতাম...
এখন খুব বেশি মনে হয় দিনগুলো তখন যতটা খারাপ ভাবতাম আসলে ততটা খারাপ ছিলনা...
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভাল ছিল...