পাঠকের ডায়েরীঃ ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ

বাংলা সাহিত্যের এখন যারা লিখছেন মানে নবীন লেখক তাদের কাজের সাথে আমার সেই অর্থে কোন পরিচয় নেই। মাঝে মাঝে কোন সাহিত্য সাময়িকীতে বা ঈদ সংখ্যায় হয়ত তাদের দুই একজনের লেখা পড়া হয়েছে। কিন্তু কোন লেখকের পূর্ণ একটা বই পড়া সেই অর্থে কোন নবীন লেখকদের সাথেই পরিচয় হয় নি। তাই আহমাদ মোস্তফা কামালের ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ বইটা যখন পড়ার জন্য হাতে তুলে নেই তখন সেই অর্থে কোন উচ্চাশা মনে ছিল না, যাকে বলে পুরা সাদা মনেই বইটা পড়া শুরু করি।বইটা আসলে পাঠসূত্র থেকে বের হওয়া নয়টা ছোট গল্পের সমাহার।

রাতে খাবার পরে সাধারণত কানে এফএম গুঁজে দিয়ে হালকা চালে কিছু পড়ার চেষ্টা চালাই। এরকম একদিন অনেকদিন বালিশের পাশে পরে থাকার পর একরাতে বইটা হাতে তুলে নিই। রেডিওতে গান শুনতে শুনতে বইয়ের প্রথম গল্প মধুবাবুর আশ্চার্য কান্না গল্পটা পড়ার চেষ্টা করতে থাকি। গল্পের দুই তিন পাতা পড়তে পড়তেই হঠাত খেয়াল করি কান থেকে রেডিওর হেডফোন কখন যেন নিজেই সরিয়ে রেখেছি। কারণ গল্পের প্রধান চরিত্র মধুবাবু আর তার কাছে গল্প শুনতে যাওয়া যুবকেরা আর বেশী মনোযোগ দাবি করছে। তাই গল্পে ডুবে যেতে যেতে যুবকদের মত আমিও টের পাই এককালের বিখ্যাত যাত্রাদল নিউ গণেশ অপেরার প্রতিষ্ঠাতা বহু সফল পালার লেখক মধুবাবুর জীবন কাহিনী আমিও তন্ময় হয়ে শুনছি। নেশার ঘোরে থাকা যুবকদের সাথে আমিও মধুবাবুর যাত্রাদলে আসার কাহিনী শুনতে উন্মুখ হয়ে থাকি। কিন্তু মধুবাবু আমাদের শোনান শিল্প সৃষ্টি করার আনন্দের গল্প, শিল্প সৃষ্টি করতে না পারার অক্ষমতার গল্প, নিজের সৃষ্টির ধ্বংসের গল্প। আর এর সাথে টুপ করে একসময় আমরা বুঝতে পারি গল্পটা শেষ হয়ে গেছে, পাঠকের মাঝে কিছুটা হাহাকার রেখেই শেষ হয়ে গেছে।

আর তাই দ্রুতই বইয়ের বাকী পৃষ্ঠা গুলো উলটে যাই। চোখের সামনে একের পর এক উঠে আসে- “স্বপ্ন ও বাস্তবতার ভেতরকার দেয়ালটি ভেঙে যাবার পর”, “বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্প” “কনফেশন”। পড়তে পড়তেই আরও সামনে আসে- “ঘুমোবার সব আয়োজন ব্যর্থ হবার পর” “তারা যখন পবিত্রতা রক্ষা করছিল” “আমাদের শহরে একজন অচেনা লোক- ১/২” আর সব শেষের গল্প “উন্মচোন”।

কল্পনা আর বাস্তবতা দু’টো বিপরীত কিন্তু একটাকে ছাড়া আরেকটার অস্তিত্ব কি সম্পূর্ণ? “স্বপ্ন ও বাস্তবতার ভেতরকার দেয়ালটি ভেঙে যাবার পর” গল্পের মাহবুব তাই বুঝতে পারে না কোনটা তার কল্পনা আর কোনটা বাস্তব। তাই তার চিন্তিত স্ত্রীর সাথে আমরা সাইকিয়েট্রিয়েস্ট এর কাছে যাই, নির্বিকার চিত্তে মাহবুবের মায়ের বলে যাওয়া তার ছোট বেলার গল্প শুনতে পাই। হয়ত বাস্তব কে গুলিয়ে ফেলার জন্য আমরা মাহবুবের জন্য কিছুটা করুণা অনুভব করি কিন্তু গল্প শেষে কি আমরা এর জন্য কিছুটা স্বস্তিও অনুভব করি না? সমাজের নিষ্ঠুর ঘটনা গুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বাস্তব এর সাথে কল্পনা কে গুলিয়ে ফেলার থেকে আর ভাল অস্ত্র কী হতে পারে। কল্পনা আর বাস্তবতার দ্বন্দ্ব আমরা আবার দেখতে পাই বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্পে। উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা আবু নাসেরের মনে তার সুন্দরী মডেল স্ত্রী মিতুল কে নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। রাস্তার বিলবোর্ডের ভিতর স্থান পাওয়া মিতুল যেন অন্য মিতুল, বাস্তবের মিতুল থেকে অনেক সুন্দর, আবেদনময়ী আর আকর্ষণীয়া। বাস্তবের মিতুলের পাশে থেকেও কল্পনার মিতুল কে পেতে চাওয়া গল্পটি আমাদের একটি অন্য রকম পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

নিয়ম রক্ষার নামে আমাদের যত ভ্রষ্টতা, সমাজ পরির্বতনের নামে কিছু মানুষের শ্রেণী চ্যুত হওয়ার ব্যর্থ গল্পও বইটিতে উঠে এসেছে। “তারা যখন পবিত্রতা রক্ষা করছিল” গল্পটিতে আমারা দেখতে পাই একটা বিশেষ সময়ের প্রতিচ্ছবি। ধর্মের নামে, নৈতিকতা রক্ষার নামে কিছু মানুষের শিউরে উঠা কাজকর্ম উঠে আসে এই গল্পে। আর “কনফেশন” গল্পটি যেন আমাদের চারপাশে দেখা বহু পুরাতন গল্প যা কিনা লেখকের জবানীতে পুনরায় বর্ণিত হয়। সমাজ বদলে ফেলার, বিপ্লব করার ইচ্ছে কিভাবে আমাদের কাছের মানুষ গুলোর সামনে এসে মিইয়ে যায়, মুখে বলা বিপ্লবের কথা যে সবাই অন্তরে ধারন করতে পারে না তারই গল্প কনফেশন।

এই বইয়ে আমার পড়া শ্রেষ্ঠ গল্প হচ্ছে উন্মোচন। এটি আসলে একটা মানুষের অতীত খুজতে যাওয়ার গল্প। তার বাবার আত্মহত্যার রহস্যর গল্প, মায়ের হঠাৎ পাগল হয়ে যাওয়ার ইতিহাস এই সব খুঁজতে থাকা এক যুবকের ইতিবৃত্ত এই গল্প। শৈশবের রয়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি, বাবার বন্ধুর সাথে কথোপকথন, বাবার ডায়েরী সব তার সামনে অতীতের এক ঝাপসা পর্দা সরিয়ে নতুন এক রং নিতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর সব রহস্য কিছু ছোয়া যায়? উন্মোচন করা যা? তাই সব কিছু উন্মোচিত হয়েছে ধরে নেওয়া যুবকের প্রতি তার উন্মাদ মায়ের হঠাৎ স্বাভাবিক স্বরে করা প্রশ্ন- কোন কুল কিনারা করতে পারলি? যেন আমাদের এক অন্য রকম মহাজাগতিক রহস্যের সন্ধান দেয়। রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ যুবকের সাথে গভীর রাতে হাটতে হাটতে আমরা তার মত অন্য রকম এক অস্তিত্বের স্বাদ পাই।

একজন লেখকের প্রধান দায়বদ্ধতা কোথায়- নান্দনিকতা না রূঢ সামাজিক বাস্তবতা? এই বির্তক বহু পুরাতন। আমার মতে একজন লেখকের শুধু মাত্র নান্দনিকতার দিকে ঝোক যেমন তার সামাজিক দ্বায়িত্ব কে অস্বীকার করার সামিল আবার শুধু মাত্র রূঢ সামাজিক বাস্তবতা কে তুলে ধরা লেখা পাঠকের কাছে যথাযথ ভাবে পৌছাতে ব্যর্থ হতে পারে। আর সমাধান হল দু’য়ের সুন্দর সমন্বয়। ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ বইটিতে লেখক আমার মতে এই দুইয়ের সমন্বয় সাধনে সফল। বইয়ের গল্প গুলো শুধু মাত্র সমাজের নানা অসঙ্গতীর দিকে ইশারাই করে না সাথে সাথে লেখার নান্দনিকতাকেও এড়িয়ে যায় না।

একজন একদম অচেনা লেখকের লেখা পড়ার একটা সুবিধা আছে। ছাপহীন পাঠকের মনে ছাপ ফেলা তার পক্ষে সহজ হয়। আর জাদুবিস্তারি বর্ণনায় মেদহীন ভাষায় প্রথম আলোর বর্ষসেরা পুরষ্কার প্রাপ্ত বই ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ তে লেখক আহমাদ মোস্তফা কামাল সেই কাজটাই সুনিপুণ ভাবে করেছেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ বইটা পড়তে দেওয়ার জন্য সচলের নজরুল ভাইয়ের অবশ্যই একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য

৩,৬৪৬ বার দেখা হয়েছে

৪৩ টি মন্তব্য : “পাঠকের ডায়েরীঃ ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ”

  1. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এই সময়ের অনেকের লেখাই আমার পড়া নেই। কষ্ট এবং অপরাধবোধ কাজ করে এজন্য। একটা বিলাসী ভাবনা আসে, আহ্, একটা জীবন যদি পাওয়া যেত শুধুই পড়ার জন্য....

    রাশেদ লেখককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আরো কৃতজ্ঞতা গল্পগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য....... :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      আসলে নতুন কার লেখা পড়া হয় না তো তাই এইটা পড়ে ভাল লেগেছে কারণ নতুন লেখকদের মাঝেও অনেক ভাল ভাল লেখক আছে। তাই আশা আমরা মাঝে মাঝে যে হতাশা দেখাই নতুন কেউ উঠে আসছে না তা হয়ত সত্য হবে না। বইটা পড়ে ফেল, আশা করি আশাহত হবি না। আজিজে পাবি।


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন
  2. বইটার নাম আগেই শুনেছিলাম, অথবা 'প্রথম আলো'-তেই দেখেছিলাম। পড়া হয়ে ওঠেনি। রিভিউটা চমৎকার লাগল। বইটা পড়ার জন্য ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে। যোগাড় করে হয়ত পড়ে ফেলব শিগগিরই।

    বই এবং গল্পের নামগুলো ইনভার্টেড কমার (" ") ভেতর দিলে, বুঝতে সুবিধা হয়।

    সবশেষে ধন্যবাদ, নতুন এই লেখকের সাথে এত ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। আরো রিভিউ পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    রাশুদা খাসা লিকেচেন দাদা। বইখানা পইড়বার খায়েস হচ্চে। আপনি কি বইটা আমারে কিইন্যা দিবেন? :shy:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. শওকত (৭৯-৮৫)

    আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাই সামুর একজন দারুণ ব্লগারও বটে। সেখানেই পরিচয। মেইল চালাচালিও করছিলাম কিছুদিন। ইদানীং দেখছি না তাকে।
    লেখাটা পড়ে মনে হলো আজই একটা মেইল দিতে হবে। আর না হয় এফবিতে ওয়াল মেসেজ।
    রিভিউ ভাল হইছে।
    নজরুলের কাছ থেকে বই নিলে কী ফেরত দিতে হয়? জানা থাকলে ভাল হইতো। 🙂

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      হুম উনার সামুর ব্লগের সন্ধান কালকেই পেলাম, দেখে এসেছি। পড়তে হবে সময় করে। আপনাকে উৎসর্গ করেও একটা পোস্ট দেখলাম 🙂

      নজরুল ভাই ভালু লুক, বইয়ের রিভিউ লিখলে আর বই দেওয়া লাগে না 😀


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    গ্রেট জব রাশেদ। এই সিরিজটা থামিয়ো না, নিয়মিতি চালু রেখ।
    আর লেখকের নিজের একটা ওয়েবসাইট আছে, ওখানে গেলে মনে হয় বইটা পড়া যাবে।

    http://www.amkamalbd.com/


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      আপনার কথাটা অবশ্যই মানার চেষ্টা করব ভাইয়া 🙂 তবে সাধারণ লেখার থেকে বই নিয়ে লিখতে কষ্ট বেশী মনে হয়। কারণ সাবধান থাকতে হয় বই পড়ে কি বুঝতে কি বুঝে ফেললাম তাই নাম দিয়ে দিয়েছি পাঠকের ডায়েরী যাতে বই নিয়ে যা খুশি লিখা যায়।
      আর লিংকের জন্য আপনার কথা আপনাকেই ফিরিয়ে দেই, গ্রেট জব ডান তারেক ভাই 🙂


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    রাশেদ, বইটা পড়া হয়েছে কিন্তু এইখানের "বিরাট" আড্ডা আর হয়নি। ব্যাপার না। গল্পগুলির ব্যাপারে আমার মতামতগুলি বলে যাব সময় করে। আহমদ মোস্তফা কামালের ব্লগের লিংক অংশ থেকে তার অনেকগুলো লেখাই পড়া যায়, অন্যগুলি নিয়েই রিভিউ লিখে ফেলো। আর এই বইয়ের একটা রিভিউ সামুতে আছে। সেটাও শেয়ার করলাম।

    http://www.somewhereinblog.net/blog/himalay777/29107937

    জবাব দিন
  7. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বইটা সম্পর্কে কিছু বলার আগে বই কেনা নিয়ে কিছু কথা বলি। গত বইমেলায় সামু ব্লগের ব্লগ সংকলনের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। যতটা নিজের লেখা বইয়ে থাকার খুশিতে তারচেয়ে তারচেয়ে বেশি ভালো লাগার ভার্চুয়াল লেখকদের সাক্ষাত পেতে। আহমদ মোস্তফা কামালের সাথে দেখা হয় সেখানেই। এই রিভিউ পড়ার পর এই বই কেনাটা ডিশিশনই ছিলো। লেখককে পেয়ে বইটি কিনে তাঁর স্বাক্ষর নেয়ার লোভটিও সামলাতে পারিনি। তাঁকে আমি স্যার হিসাবে সম্বোধন করলেও বইয়ে শুভেচ্ছাবাণী লিখে তিনি নিচে "কামাল ভাই" কথাটা লিখে বুঝিয়ে দিলেন স্যারের চেয়ে ভাই হিসাবে পরিচয় দিতে তিনি স্বস্তিবোধ করেন। বইয়ের বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা দিয়ে এসেছিলাম। ব্লগের আরেক ছোট ভাই বইটির রিভিউ লিখে কষ্ট কমিয়ে দেয়। সেই রিভিউ উপরের কমেন্টে শেয়ার করেছি। আর সেখানে আমার মন্তব্য থাকলেও এখানে আলাদাভাবে আমার পাঠভাবনা রেখে গেলাম।
    মধুবাবুর কান্না গল্পটা সত্যিকার অর্থেই দারুণ লেগেছে। গল্পের মাঝে যে দর্শন প্রকাশ পেয়েছে তাতে আমি অভিভূত। মধুবাবুর যাত্রার গল্প শিল্প সৃষ্টির আনন্দের গল্প মানুষকে কাঁদিয়ে দুঃখ বের করে দেয়ার গল্প দারুণ। তেমনি ভাবে নগরবাদী কর্মনাশা টানে সেই শিল্পিত আনন্দ বিলীন হওয়ার বিলাপ লেখক শুনিয়েছেন মধুবাবুর জবানিতে।
    স্বপ্ন অথবা বাস্তবতার দেয়াল ভেঙে পড়ে গল্পটা আইডিয়া চমকপ্রদ হলেও গল্পের ভেতরকার কাহিনী বেশ ফ্ল্যাট কিছুটা ক্লিশেও বটে। গল্পটা পাঠককে ধরে রাখতে সক্ষম কিন্তু শেষদিকে খুব দ্রুত কাহিনী সঞ্চালিত হয়েছে। একদম অকস্মাৎ একটি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে গেছে পাঠকের বুঝার আগে।তবে বর্ণনা ভঙ্গির সৌন্দর্য শেষ পর্যন্ত গল্পটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে।
    ঘুমানোর সব আয়োজন ব্যর্থ হবার পর, গল্পটা খুব সুন্দর করে শুরু হয়েছিলো। এবং এগিয়েছিলোও চমৎকার। শেষটা খারাপ হয়েছে এমনও বলা যাবে না। কিন্তু পাঠক হিসাবে যেটা মনে হয়েছে পাঠকের চাইতে পুরস্কার প্রাপ্তির ব্যাপারটা লেখকের মাঝে বেশি কাজ করেছে (কামাল ভাইয়ের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি)। গল্পের মাঝে হঠাৎ করেই ঐতিহাসিক পট উঠে এসেছে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে। যেটা লেখক চাইলে গল্পে অন্তর্ভুক্ত না করলেও পারতেন।
    বিজ্ঞাপন ও মানুষের গল্প দারুণ লেগেছে প্রধাণত লেখক ক্লিশ পথে না হেঁটে নতুন দিকে আলোকপাত করাতেই। এই গল্পের ফিনিশিং গল্পের নায়কের মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব , যেটা সাধারণ ভাবে হুট করে মাথায় আসবে না তার প্রকাশ চমৎকার।
    তারা তখন পবিত্রতা রক্ষা করছিলো, এই গল্পটি আমার বিশেষভাবে ভালো লেগেছে লেখকের বিষয় নির্বাচন এবং আমাদের ভণ্ডামিগুলোকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি। এবং লেখকের সারকাসটিক ফিনিশিং এবং শেষে চিত্রকল্পে রূপকের ব্যবহার
    খুব ভালো লেগেছে।
    সাধারণ প্লটকে ভিন্নভাবে ভিন্নচোখে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কনফেশন গল্পটাতে। লেখকের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। গল্পটাকে মোটামুটি শ্রেণীতে ফেলা যায় এর কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে।
    আমাদের শহরে অচেনা আগন্তুক -- দু পর্বের গল্পও বলা যায় ইচ্ছা করলে। গল্পের নাটকীয় শুরু আড় লেখকের পরিমিত রসবোধে কিছু যুবকের দার্শনিক হয়ে যাওয়ার গল্। এবং লেখক অচেনা আগন্তুক কে দিয়ে দুটো দার্শনিক প্রশ্ন রেখেছেন আড় তার জবাব খুঁজে গেছেন শেষ পর্যন্ত।
    উম্মোচন গল্পটাও দারুণ। লেখক এখানে কিছুটা আধ্যাতিকতা আড় কিছুটা রহস্যময়ত নিয়ে পাঠকের সাথে লুকোচুরি করেছেন। আর গল্পের বিষয়টা ভাবিয়েছে পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক পড়েও।
    পরিশেষে বইটির ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে গেলে একে নিঃসন্দেহে সুপাঠ্য বলতে হবে এবং লেখক হিসাবে আহমাদ মোস্তফা কামালের সার্থকতার সার্টিফিকেট দেয়।

    ছোট খাটো ব্যাপারগুলো নিয়ে আরো আলোচনা হতে পারে। যেহেতু কিছু গল্পের জায়গায় আমি পাঠক হিসাবে প্রশ্ন তুলে গেলাম, অন্যপাঠকদের ভাবনা জানার আগ্রহও জানিয়ে গেলাম।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।