জামান স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয় ক্যাডেট কলেজে। সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়মতান্ত্রিক এ প্রতিষ্ঠানে যখন প্রথম ভর্তি হই, তখন থেকেই বাবা-মাকে ছাড়া থাকার কষ্ট অনুভব করতাম। সেই কষ্ট কিছুটা হলেও কমে গেল, যখন জামান স্যারকে কাছে পেলাম। ক্যাডেট কলেজে আবাসিক থাকতে হয়। এক রাতে মায়ের চিঠি পড়ে কাঁদতেই পেছন থেকে মাথার ওপর একটা হাত অনুভব করি। তাকিয়ে দেখি জামান স্যার। আমার দিকে তাকিয়ে মমতামাখা কণ্ঠে বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজে সবাইকেই বাবা-মা ছাড়া থাকতে হয়। ধরে নাও আমি তোমার বাবারই মতো।’ সেদিন থেকে স্যার আমার মনে গেঁথে রইলেন। স্যার চারুকলার শিক্ষক ছিলেন। অনেক ভালো ছবি আঁকতেন। কথাও বলতেন খুব গুছিয়ে। মনে হতো অনেক ভেবেচিন্তে কথা বলছেন। স্যার ছিলেন কঠিন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। গানও গাইতেন খুব ভালো। যেকোনো ব্যাপারে স্যার খুব ভালো অনুপ্রেরণা দিতে পারতেন। কৈশোরের দুষ্টামিগুলোকে স্যার ভালোবাসার চোখে দেখতেন। ঠিক যতটুকু শাসন করা দরকার, ততটুকুই করতেন। আর তাই ছোট ছোট সব আবদার স্যারের কাছে করতাম। ক্যাডেট কলেজের নিষপ্রাণ গুমোট পরিবেশে স্যার ছিলেন আমাদের সবার বাবা। সম্পূর্ণ আলাদা এক সত্তা। একসময় কলেজ থেকে চলে আসি। থেকে যায় স্যারের সঙ্গে টুকরো স্মৃতিগুলো। এখনো মন খারাপ কিংবা চরম হতাশায় স্যারকে ফোন দিই। স্যার বাবার মতোই বলে ওঠেন, নিজের খেয়াল রেখো।
(আজ প্রথম আলো বন্ধুসভায় প্রকাশিত)
১টি মন্তব্য “নিজের খেয়াল রেখো…”
মন্তব্য করুন
স্যার কে পাইনাই আমরা। তবে আমাদের চারুকলা টিচার ছিলেন দেবব্রত মল্লিক স্যার। স্যারের কথা মনে হলেই আমার খালি মনে হয় কতোগুলাই না থাপ্পর খাইছি স্যারের হাতে। এখনো গাল ব্যাথা করতেছে x-( x-( x-( x-(