৩
খেলার দিন সকাল থেকেই নীলদের দলের সবাই ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনা নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকলো বিকালের। গত কাল ওরা কেবল ওয়ার্ম আপ করে ড্রিবলিং, ওয়াল পাসিং, অ্যাটাক- কাউন্টার অ্যাটাক, কর্ণার আর পেনাল্টি প্র্যাক্টিস করলো। শেষে ১০ মিনিট-১০ মিনিট করে ছোট গোল বারে খেলে অনুশীলন সেশন শেষ করে নিজেদের পরিকল্পনা গুলো আরেক দফা শানিয়ে নিল ওরা। তারপর আর একটি রাত ফুরাবার পালা।
রাশেদ ঘড়ি দেখলো। পৌনে চারটা বাজে। দলের সবাই উপস্থিত আছে নিশ্চিত হয়ে ও নীল’কে ইশারা করতেই নীল এগিয়ে এলো। নবীনদের এই দলটির সবাইকে এক বার দেখে নিলো নীল। তারপর ওর ডান হাতের তালু উল্টো করে পেতে দিল। তার উপরেই রাশেদ, সবুজ এবং একে একে সবাই ওদের ডান হাত রাখলো। নীল বললো আমরা সবাই আজকের এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা জানি – আমাদের কি করতে হবে। আমাদের হারাবার কিছুই নাই। রাশেদ যোগ করলো -কিন্তু ওদের খোয়াবার আছে বিস্তর। রাশেদের কথা শেষ হতেই সবুজ চেঁচিয়ে উঠলো- কি রে? হইবো তো। সবাই এক সাথে হৈহৈ করে উঠলো আর হাতগুলো শূন্যে তুলে নিজেদের টেনশনটুকু হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়ালো।
আর ঐ দিকে পাশের পাড়ার দলটি নিজেদের অহমিকা সুলভ গা ছাড়া ভাবে তাদের নিয়মিত খেলা খেলেছিল গতকাল। খেলা শেষে ফিরে যাবার আগে- ক্যাপ্টেন সবাইকে এক বার মনে করিয়ে দিল যে – কাল রাশেদ কে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ঐ দলকে কমপক্ষে দুই হালি গোল দিতে হবে। দলের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
ঘড়িতে চারটা দশ বাজতেই নীলরা মাঠে পৌঁছে গেল। অন্য দল তখনো আসে নি। ওরা মাঠে নেমে ওয়ার্ম করা শুরু করলো। এর আগে দু দলের সম্মতিতেই ঠিক হয়েছে আলতাফ ভাই আজকের রেফারী হবে। আলতাফ ভাই সে সময়ে সেকেন্ড ডিভিশনের একটা দলে খেলতো। উনি সাথে দুজন লাইন্স ম্যানও এনেছেন। কিছুক্ষনের মধ্যে ঐ দল মাঠে এসে গেল। সবাই কালো রঙ এর ম্যাচিং জার্সি, বুট মোজা পড়ে একজন আরেকজনের কাঁধে হাত দিয়ে রেলগাড়ী বানিয়ে বিশাল একটা ভাব নিয়ে মাঠে নামলো। ওদের পাশে নীল’দের দলটি কে দেখতে বেমানান লাগছিলো। ওরা সবাই শুধু নীল রঙের (তাও একরকম নয়) গেঞ্জি পড়ে এসেছে। বিষয়টা দেখেই রাশেদ- সবুজ আর নীল চোখ টেপাটেপি করলো। আর সাথে সাথে দলের সবাই একচোট হেসে নিয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানাল অন্য দলটিকে।
রেফারী লম্বা একটা হুইসেল দিয়ে দুই দলকে সেন্টারের কাছে দুই সারিতে দাঁড় করালেন। সবাইকে একবার মনে করিয়ে দিলেন -একজন প্রকৃত স্পোর্টস ম্যানের গুনাবলী। তারপর খেলোয়াররা সবাই হাত মিলিয়ে যে যার হাফে চলে গেল। টস এ নীল’রা জিতে সাইড নিল যাতে প্রথমার্ধে গোল কীপারের চোখে সূর্য না লাগে । অন্য দল সেন্টার করবে।
পাড়ার ছেলেরা খেলবে দেখে দুই পাড়া থেকেই পায়ে পায়ে ভালই লোক সমাগম ঘটলো খেলার মাঠে। ছোট হুইসেল এর সাথে ক্যাপ্টেন আলতো করে বলটা পাশে ঠেলে দিয়ে খেলা শুরু করলো। মিড ফিল্ডার পায়ে বল রেখে অনেক খানি এগিয়ে নিয়ে বাম দিক থেকে আক্রমনে গেল। লেফট উইং বল টেনে নিয়ে চিপ করলো। কিন্তু তা সময় মত না করায় বল অনেক বাইরে দিয়ে আউটে চলে গেল।
বল্টু দৌড়ে বল নিয়ে এলো। বল বসিয়ে দিল ও। সবুজ এসে টেনে লম্বা কিক করলো। বল একেবারে অপর হাফে পৌঁছে গেল। একটু দূরে রাশেদ ছিল। সে বলের ফ্লাইট মেপে নিয়ে দৌড়ে কাছে গিয়ে বল রিসিভ করে নিল। চকিতে চারপাশটা দেখে নিয়ে ও বল ড্রিবল করে একজন কে কাটিয়ে উঠে গেল বড় ডি বক্সে। একটা ছোট ওয়াল পাস ঠেলে সে চমৎকার ভঙ্গীতে ট্যাকেল করে একটা জোস বল বানিয়ে দিল নীল’কে। নীল একটু পিছিয়ে থাকায় সময় করে বলে পা লাগাতে পারল না। বলটা ফুস্ করে সাইড বার ছাড়িয়ে আউটে চলে গেল। রাশেদ মাথায় হাত দিয়ে ইশ্ করে উঠলো। নীল দূর থেকেই দুই হাত উঁচু করে হাততালির ভঙ্গি করলো। তারপর দৌড়ে রাশেদের কাছে এসে শাস্তি হিসেবে কায়দা করে কানে হাত দিয়ে বললো- বস্ আরেকটা দিয়েন এই রকম। জান দিয়া দিমু। রাশেদ ওর পিঠ চাপরে দিয়ে হাল্কা দৌড়ে নিজেদের হাফে চলে এলো।
এরই মাঝে পেরিয়ে গেল বেশ কিছু সময় আক্রমন -পাল্টা আক্রমনে। ঐ দলের ক্যাপ্টেন যত সহজ ভেবেছিল – খেলাটা মোটেও সে রকম হলো না। বরং এই বিচ্ছুদের সাথে রাশেদটা মিলে যাওয়ায় তাল মিলিয়ে খেলতে যেয়ে ওদের এখন ভালই বেগ পেতে হচ্ছে। দু দল ২টি করে কর্ণার পেলেও কেউ কাজ লাগাতে পারলো না। নিজেদের হাফে বল এলেই বল্টু এমন ভাবে চেঁচাতে থাকে যে সবুজ তার দুই ব্যাক নিয়ে হেভী জোশে একেবারে চীনের প্রাচীর বানিয়ে দেয়। তারপর সাইজ মত বল পেলেই একেবারে জাম্বুরা শট…।
হাফ টাইমের ঠিক দুই মিনিট আগে ঐ দলের ক্যাপ্টেন সুকৌশলে দুজন’কে কাটিয়ে সজোরে কিক নিল দূর থেকে ক্রসবার এর কোণা লক্ষ্য করে। বল্টু শট দেখেই ঠিক দিকেই লাফ দিলো। বেচারা নিজের হাইটের কারনে শেষ রক্ষা করতে পারলো না। 😕
আহ! মাঠের একাংশ গো…ল …গো…ল বলে উল্লাসে মেতে উঠলো।
নীলেরা দ্রুত বল নিয়ে সেন্টার করতে চলে গেল। একটা হাল্কা আক্রমন করলো ওরা বাম দিক দিয়ে। লাভ হলো না।
এর কিছু পরেই হাফটাইমের হুইসেল পড়লো।
😡
অসাধারণ ধারাবিবরণী ... সেকেন্ড হাফটা তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় না বস ??
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
দিয়ে দিছিলাম তো লগে লগেই।
ম্যালা থ্যাংক্স buddy.
🙂
সৈয়দ সাফী
বয়েজ, কিপ ইউর মোরাল আপ... :thumbup:
সেকেন্ড হাফে দেখায়া দাও... :-B
চিয়ার আপ, বিল্লাল... B-)
হবে হবে... :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হুম্ম - দেখা যাক ।
কি আছে খেলার ভাগ্য।
ধন্যবাদ।
🙂
সৈয়দ সাফী
আয় হাই আরো বাকি আছে দেখি ...।
নাহ! জলদি করেন তো ভাইজান 😀 😀 😀
আলবৎ আলবৎ।
😀
সৈয়দ সাফী
হুম। যলদি। বেলা যে পড়ে এল জলকে চল। (এইটার মানে জিগাইয়েন না। নিজেও জানিনা। ক্লাস টেনে বাংলা ব্যাকরণ বইয়ে পড়সিলাম 🙁 )
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমার যতদুর মনে পরে ডাইলগটা ছিল "বেলা যে হয়ে এল জলকে চল।
(আমার ajke যেন কি হইছে ?? সিরিয়াস কমেন্ট আস্তেছেই না। দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিই বোধহয় 'অস্তিত্ত্ব জানান দিতে' বাধ্য করছে। আপাতত, guys, please bear with me)
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
তাইফুর ভাই, আপনে কত সুখি... O:-)
আমি তো চাইলেও সিরিয়াস কমেন্ট ছাড়া করতেই পারি না... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
সবাই তো সুখী হতে চায় !
কেউ সুখী হয় কেউ হয় না।
😀
সৈয়দ সাফী
আইচ্ছা জিহাদ,
আমি জিগাই নাই।
তাইফ আবার কারেকশন দিছে।
দেখে নিও।
🙂
সৈয়দ সাফী
ভাই, আপনার লেখার হাত অসাধারন। :boss: :boss: :boss:
অনেক ধন্যবাদ শার্লী।
তোমার একাগ্র অনুসরন অনেক উৎসাহ দিলো আমায়।
শুভেচ্ছা নিও ভাইয়া।
🙂
সৈয়দ সাফী