(এই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট আর সময় বোঝাতে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা এবং চরিত্র উল্লেখ করা হয়েছে। আর বাদবাকী ঘটনা আর চরিত্রগুলো কাল্পনিক, তবে অবাস্তব নয়। অনেক ঘটনাই বাস্তব আমজনতার অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া হয়েছে।)
এক দুই তিন চার এবং পাঁচ
ছয়
সাত
নয়-আট
দশ
খবরটা আমিই প্রথম শুনলাম। জেঠা কুমিল্লায় বেড়াতে এসেছেন। উনার সাথে খান মঞ্জিলে গিয়ে বড়দের আড্ডায় বসেছিলাম। একতলার বৈঠক খানায়। সেখানে সিএসপি চাচাও ছিলেন। একদিন আগে হোসনা আপাসহ উনি কুমিল্লায় এসেছেন। আরও ছিল মেলিতা আপার আব্বা, ডিসি চাচা, নাম জানি না এরকম তিনজন ভদ্রলোক। তাদের কথাবার্তায় ঘুরে ফিরে বার বার কতগুলো শব্দ উচ্চারিত হচ্ছিল। শেখ সাহেব …সর্বহারা …ইন্ডিয়া …পাকিস্তান …চালের দাম…ভাগনা …মুক্তিযুদ্ধ … তাজউদ্দীন…কম্বল-চোরা গাজি …বঙ্গবন্ধু। ইত্যাদি,ইত্যাদি। আমার বড় ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু জেঠার পাশ থেকে উঠে যাওয়ার সাহস আমার নেই। আমাকে উনার না হওয়া মেয়ের শখ মেটাতে হয়। বার বার হাই তুলছিলাম। এসময় হঠাৎ করেই সচকিত হয়ে উঠলাম। ঘুমে প্রায় বন্ধ হয়ে আসা চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাসায় ফিরেই দাদামনুকে খুঁজতে লাগলাম। সে বাসার ভেতরে ছিল না। তাকে পেলাম ছোট গেটটার পাশে। ঢাকনা সহ আম্মার ভাড়ারের সবচেয়ে বড় পাতিলটা মাটির উপর রাখা। তার সামনে সে বসে আছে। এই পাতিলটা আম্মার খুব শখের। আব্বার সাথে অনেক ঝগড়া করে কেনা। আম্মাকে দেখেছি শুধু কোরবানি ঈদের সময় এই পাতিলটা ভরে মাংস রান্না করতে। এখন দাদামনু হাতে দুইটা শুকনো গাছের ডাল নিয়ে ঢাকনাটাকে বেদম পিটিয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনার চোটে ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগলো না। এক নিশ্বাসে তাকে কথাটা বলে ফেললাম। সে এক ফুঁৎকারে তা উড়িয়ে দিল। বলল, ‘ধুর যা! হিরণ ভাই বলে গেছে এই বছর আমরা একটা ব্যান্ড পার্টি তৈরি করব। সব ফাইনাল। আজম খানের মতো নিজেরাই গান বানাব। গান গাইব।’
আমিও তো মনে প্রাণে কথাটা মিথ্যা বলে ভাবতে চাইছিলাম। এই মুহূর্তে খুব দাদামনুকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হল। শুধু এটাই নয়। মনে মনে ধরে নিলাম হিরণ ভাই শুধু আমার কথা ভেবেই ব্যান্ড বানাতে চাচ্ছেন। তাই দাদামনুর কাছে একটু ভাব নেওয়ার জন্য বললাম, ‘আগে থেকে বলে দিলাম আমি কিন্তু সব সময় গান গাইতে পারব না।’
‘তোকে গান গাইতে বলেছে কে!’ দাদামনুর চোখে রাজ্যের বিস্ময়, ‘ব্যান্ডদলে কোন মেয়ে থাকে না।’
‘হিরণ ভাই বলেছে আমি ব্যান্ডে থাকব না?’হঠাৎ করেই রাজ্যের অভিমান চোখটাকে ভেজা ভেজা করে দিল।
‘এটা আবার বলা লাগে নাকি? কে কি করবে সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি ড্রাম বাজাব। এই ডিসেম্বরে আসার সময় উনি একসেট ড্রাম সাথে করে নিয়ে আসবে।’
আমাকে ছাড়া হিরণ ভাই ব্যান্ডের দল ঠিক করে ফেলেছে!দাদামনুটাও কতো নিষ্ঠুর। কি অবলীলায় আমাকে ছাড়াই ব্যান্ড দলে ভিড়ে গেল। ঠিক আছে আমিও দেখিয়ে দিব। এখন থেকে প্রতিদিন ভোরবেলা গলা সাধবো। এমন গান গাইবো যে একদিন আমাকে সবাই শাহনাজ বেগমের মতো চিনবে। তখন হাজার অনুরোধ করলেও হিরণ ভাইকে কোন গান শোনাব না। আমার বয়েই গেল ব্যান্ড দলে ভিড়তে। দ্রুত বাসার মধ্যে ঢুকে গেলাম। আগে আম্মাকে বলতে হবে দাদামনু তার সাধের কোরবানির পাতিলের বারোটা বাজাচ্ছে।
আম্মাকে পেলাম বৈঠক খানায়। ও বাড়ি থেকে হোসনা আপা আর ‘হিরিম্বা’খালা বেড়াতে এসেছেন। দুইজন দুটো বেতের চেয়ারে বসে খাটে বসা আম্মার সাথে গল্প করছেন। আমিও আম্মার একপাশে বসে পড়লাম।
’এই ছাড়া উপায় আর কোন উপায় দেখছি না। উনি বাকশালে যোগদান করাটা এড়াতে চাইছেন। আর কিরণ যখন গিয়েছে তখন হিরণও তো যেতে চাইবে বিদেশে পড়াশোনার জন্য। দুই ছেলে বাইরে চলে গেলে আমরা আর কি নিয়ে থাকব?’হোসনা আপা কিছুটা কৈফিয়তের সুরে আম্মাকে কথাগুলো বললেন।
‘আপনাদের এখানে এতকিছু। এসব কে দেখবে?’ মনে হল আম্মাও আমার মতো হতবিহবল;উনাদের আটকানোর জন্য কোনরকম একটা যুতসই যুক্তি খুঁজছেন।
‘আসলে আপা উনি সব মিলিয়ে খুব হতাশ। চাইলে পরে তো সেই সত্তর সালেই লন্ডনে সেটল করতে পারতেন। করেননি। স্বাধীন দেশে চলে এসেছিলেন দেশের জন্য কাজ করবেন বলে। কিন্তু কাজের মানুষ কাজ করতে না পারলে ভাল থাকে?’
এরপর হয়তো আম্মা আর বলার কিছু খুঁজে পান না। চুপ করে থাকেন। আমার আম্মার জন্য খুব কষ্ট হতে থাকে। মানুষ যেমন নিজের বাবার নামে কোন খারাপ কথা শুনতে পারে না, ঠিক তেমনি আম্মাও বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে একচোখা। তবে এখন বোধহয় চোখ বন্ধ করে থাকতে পারলে বেঁচে যান। দিন দিন আব্বাকে আম্মার বকাবকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। রেশনে না কুলালে, চালের দাম বেড়ে গেলে সব দোষ যেন আব্বার। এই মুহূর্তে আম্মার নিরুত্তর দীর্ঘশ্বাস অনেক না বলা কথা বলে দিল।
নীরবতা ভাঙ্গল ‘হিরিম্বা’ খালার কর্কশ কণ্ঠস্বর। ‘এই মেয়ে জানালাগুলো খুলে দাওত। কিসের জানি বোটকা গন্ধ বেরুচ্ছে।’
কথাটা শুনে আম্মা খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তার থেকেও বেশি অপ্রস্তুত হলেন হোসনা আপা নিজে। আর বেশিক্ষণ থাকলেন না। ‘হিরিম্বা’ খালাকে নিয়ে দ্রুত ‘মোল্লা হাবেলি’ ত্যাগ করলেন।
গেট পেরবার সময় হোসনা আপা উলটা ঘুরে আমাদের দিয়ে ফিরে বললেন, ‘খোদা হাফেজ। দোয়া রেখেন আপা।’ আমরাও মা আর মেয়ে একসাথে বলে উঠলাম,’খোদা হাফেজ।’
মহামতি ‘হিরিম্বা’ একবারও পেছনে না ফিরে গটগট করে গেট দিয়ে বের হয়ে গেলেন। ভাবখানা এই যে মহারাণী ভিক্টোরিয়া ভুল করে রেলগাড়ির তৃতীয় শ্রেণির কামরায় উঠে পরেছিলেন।
আম্মার মুখ থেকে শুনেও দাদামনু বিশ্বাস করলো না। সে বোধহয় অতো সহজে তার ড্রামবাদক হবার স্বপ্নটা ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছিল না। আম্মার বকুনি সত্ত্বেও সে বিপুল উদ্যমে হাড়ি পিটিয়ে যাচ্ছে। আমিও চাই দাদামনু তার ড্রামবাদক হবার চেষ্টা অব্যাহত রাখুক। তাহলে আমিও আমার শেষ আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে পারি। এই আশাটুকু ছাড়া চারপাশ ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছিল। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে দুপুরবেলা খেতে বসলে। সেসময় মোল্লা হাবেলির গেট ধরে ভিখিরিরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতে থাকে। তারা এখন আর ভাত চায় না। ভাতের মাড় চায়। কিভাবে তা দিব?বেশ কয়েকদিন যাবত দুপুরে আমাদের খাবারের মেনু হচ্ছে মাড়ে চুবানো এক মুঠো ভাত আর আলু ভর্তা। সাথে একটু খানি ঘি। দাদামনুর ভাষায় ‘মোগলাই স্মেলি রাইস স্যুপ’। একটা একটা করে দিন পার হতে থাকে। আমিও শিখে যাই কিভাবে গেটের কাছের চিৎকারগুলো উপেক্ষা করতে হয়। মনে মনে কাকদের সাথে ওদের উপমা খুঁজে ফিরি। এক সময় অভ্যস্ত হয়ে পরি। ঠিক যেমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি কাকদের কা কা ডাকে।
তারপরও চোখের সামনে কিছু দৃশ্য দেখে ভোলা যায় না। এই বছর অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার শুরুতে দেখেছিলাম আমার স্কুলের সামনে এক কংকালসার মা কংকালের মতো দেখতে তিনটা বাচ্চাকে নিয়ে ভিক্ষা করছিল। পরীক্ষার শেষে দেখলাম তিনটা বাচ্চার জায়গায় এখন মাত্র একটা বাচ্চা বেঁচে আছে। সে মায়ের এখন ভিক্ষা চাওয়ারও শক্তি নেই। হয়তো এতোদিনে শেষ দুজনও বাকীর খাতায় চলে গেছে। ভাগ্যিস স্কুল তার আগেই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আমাকে আর নিজের চোখে তাদের শেষ পরিণতি দেখতে হয়নি। বরং জেঠা এবার এসে স্কুল ছুটি বলে আমাকে তার সাথে ঢাকা নিয়ে যেতে চাইলেন। আমিও চলে গেলাম।
বড়দের কথায় শুনেছিলাম যে জেঠা এখন বেশ বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। এবার ঢাকায় এসে তার মানেটা বুঝতে পারলাম। গুলশানে বিশাল জায়গা জুড়ে জেঠার আলিশান বাড়ি তৈরি হচ্ছে। বাড়ির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারপরও জেঠার পরিবার এ বাড়িতে উঠে পরেছে। গেটের কাছে খাকী ড্রেস পড়া একজন দারওয়ান সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। উঠোন জুরে কি সুন্দর সবুজ ঘাস! এই ঘাসের চারা নাকি বিদেশ থেকে এসেছে। এখনও বাগান করা হয়নি। জেঠি বলেছে গোলাপের বাগান করবেন। বেলজিয়াম থেকে আসবে ঝাড় বাতি। ঘরের ভেতর থেকেই একতলা থেকে দুইতলা উঠার জন্য একটা ঘোরানো সিঁড়ি থাকবে। বাড়ির পেছনের উঠোনে পুকুরের শহুরে সংস্করণ একটা সুইমিংপুল থাকবে। সিনেমাতে দেখা বড়লোকদের বাড়ির সাথে মিলিয়ে আমি এই বাড়ির পূর্নাংগ চেহারা কল্পনা করে নিই। ঈশ আমার বান্ধবীদের যদি দেখাতে পারতাম! মুখে বললে তো ওরা বিশ্বাসই করবে না যে আমার নিজের জেঠারই এরকম একটা বাড়ি আছে। জেঠির কাছেও আমি মেয়ের মতো। উনি আমাকে নিয়ে পুতুল খেলার মতো ব্যস্ত হয়ে উঠেন। গুলশান দুই নম্বরের কাছে একটা মার্কেটে নিয়ে যান। মার্কেটটা লাল ইটের দোতলা বিল্ডিং। একতলার ইকবাল স্টোরে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছু কিনে দেন। তার মধ্যে একটু খেয়ে কাজু বাদামের প্যাকেটটা আমি রেখে দিয়েছি। দাদামনুকে দিব। এতো মজার বাদাম! একা খেয়ে মজা নেই। জেঠি ছাড়া এই বাসায় আমার আর কারো সাথে কথা বলা হয়না। ভাগ্যিস আরিফ ভাই এখন আমেরিকাতে। বাকী দুজন জেঠাতো ভাইয়ের সাথে আমার তেমন ভাব নেই। কথাবার্তাও হয় কালে ভদ্রে। ওদেরকে মনে হয় অনেক দূরের মানুষ। দাদামনু এমনকি হিরণ ভাই কারো সাথেই তাদের মেলাতে পারি না। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে গ্রামোফোন বাজিয়ে কি সব ইংরেজি গান শোনে। আর খেতে বসলে কি অবলীলায় আধ-খাওয়া ভাতের প্লেট রেখে উঠে যায়। দেশের মানুষ খেতে পায়না আর জেঠার বাসায় খাওয়া নষ্ট হয়। জেঠিও ওদের কোন বকা দেয় না। সারাক্ষণ বেটা বেটা করে মাথায় হাত বুলাতে থাকে। এক সপ্তাহ পরেই এই বাসা আমার অসহ্য ঠেকে। ভেবেছিলাম ঢাকায় আসলে হিরণ ভাইয়ের দেখা পাব। উনার মুখ থেকেই শুনতে চাই আসল ঘটনা। কিন্তু আমার সে আশা গুড়ে-বালি। কুমিল্লা আর ঢাকার অনেক পার্থক্য। এজন্যই বোধহয় জেঠা সিএসপি চাচার সাথে দেখা করার জন্য কুমিল্লা চলে আসেন।
দু সপ্তাহ পরে কুমিল্লা ফিরে এসে দেখি দাদামনু আর পাতিল পেটায় না। এর মধ্যে হিরণ ভাই একবার কুমিল্লা এসে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকার তেজগাঁ এয়ারপোর্ট থেকে সপরিবারে সবাই লন্ডন চলে যাবেন। হিরণ ভাইকে ধরতে আমি গেলাম ঢাকায় আর সেসময় উনি আসলেন কুমিল্লায়। টিলো-এক্সপ্রেস খেলায় হেরে যাওয়ার মতো হতভম্ব আমি। তখনও জানতাম না আমার জন্য অপেক্ষা করছিল এক অপ্রত্যাশিত বিস্ময়। হিরণ ভাই তার অতি আগলে রাখা সংরক্ষিত সম্পদ আমাকে উপহার দিয়ে গেছে। ফেলুদার সাত সাতটা বই!
(চলবে)
আমি ফার্স্ট হইছি কতদিন পরে !!!! :tuski: :tuski: :tuski:
তুমি খালি মাঠে গোল দিয়েছ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
বিরহ শুরু... =((
হয়ত বিরহ --- কিন্তু জীবনের ঘটনা তো থেমে থাকে না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু চালিয়ে জান।আমি একজন নিয়মিত পাঠক এই উপন্যাসের। দুই পর্ব করে দিলে আরো ভালো লাগতো 😛
ভাবছি তিন চার পর্ব করে দিব। পড়তে চাইলে আস্তে ধীরে পড়ে নিও। ধন্যবাদ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শেখ সাহেবের একটা ক্ষেদোক্তি এখানে উল্লেখ না করে পারছি না,
"দেশে কোটি কোটি কম্বল রিলিফ আইলো, আমার কম্বল টা কই? চাটার দল সব চেটে খেয়ে ফেলেছে !"
সর্ব কালের সর্ব বিখ্যাত কম্বল চোর, দেশের তৎকালীন "রেড ক্রস" প্রধান 'গাজি গোলাম মোস্তফা' র উদ্দেশ্যে শেখের এই উক্তি!
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই আপনার নীচের লিংক আমার রেফারে্নস হিসেবেও কাজে ্লাগবে (যদিও আমার লেখার রেফারেন্স আমি এখন লিখে রাখছি)। অনেক ধন্যবাদ।
বিদেশী সাংবাদিকদের লেখায় শেখ মজিবকে দেখলে একটু ভিমড়ি খেতে হয়। তবে আমি দেশের মানুষের আবেগের দিকটাও অনুধাবন করার চেষ্টা করছি। আমাদের পরের প্রজন্মের বাংলাদেশিরা হয়তো নির্মোহভাবে সবকিছু দেখতে চাইবে। কে জানে? দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার জন্য নির্মোহভাবে সবকিছু দেখা অতি জরুরী বলে মনে করি। কারণ বাংলাদেশে প্রতিটা রাজনৈতিক দল গড়ে উঠছে প্রফেট আর তার বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আমাদের দরুদ শরীফ পড়ার মত বংগবন্ধু বলতে হবে - নইলে বেয়াদবী হয়ে যাবে। একটা মাজার থাকবে, বর্তমান নেতৃত্বের কোন দিকনির্দেশনা থাকবে না - তারা শুধুই প্রতিষ্ঠাতা নেতার স্বপ্ন পূরণ করে যাবে। আরেকটা দলেরও একই অবস্থা। এইরকম রাজনৈতিক মৌ্লবাদীত্ব থেকে বের না হয়ে আসলে আমাদের মুক্তি নেই। ধন্যবাদ আপনার নিচের তথ্যগুলোর জন্য।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
বিদেশি পত্র-পত্রিকায় শেখ মুজিব-আমল:
by Hidden Truth on Tuesday, January 11, 2011 at 5:35pm
বাংলাদেশের নিজস্ব ইতিহাসে মুজিবের আসল পরিচয় পাওয়া মুশকিল। আওয়ামী বাকশালীদের রচিত ইতিহাসে রয়েছে নিছক মুজিবের বন্দনা। তাই তার এবং তার শাসনামলের প্রকৃত পরিচয় জানতে হলে পড়তে হবে সে আমলের বিদেশি পত্র-পত্রিকা। বাংলাদেশ সে সময় কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান বা খেলাধুলায় চমক সৃষ্টি করতে না পারলেও বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম হয়েছিল দুর্ভিক্ষ, দূর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, ব্যর্থ প্রশাসন ও স্বৈরাচারের দেশ হিসাবে। ১৯৭৪ সালের ৩০ শে মার্চ গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছিল, “আলীমুদ্দিন ক্ষুধার্ত। সে ছেঁড়া ছাতা মেরামত করে। বলল, যেদিন বেশী কাজ মেলে, সেদিন এক বেলা ভাত খাই। যেদিন তেমন কাজ পাই না সেদিন ভাতের বদলে চাপাতি খাই। আর এমন অনেক দিন যায় যেদিন কিছুই খেতে পাই না।” তার দিকে এক নজর তাকালে বুঝা যায় সে সত্য কথাই বলছে। সবুজ লুঙ্গির নীচে তার পা দু'টিতে মাংস আছে বলে মনে হয় না। ঢাকার ৪০ মাইল উত্তরে মহকুমা শহর মানিকগঞ্জ। ১৫ হাজার লোকের বসতি। তাদের মধ্যে আলীমুদ্দিনের মত আরো অনেকে আছে। কোথাও একজন মোটা মানুষ চোখে পড়ে না। কালু বিশ্বাস বলল, “আমাদের মেয়েরা লজ্জায় বের হয় না-তারা নগ্ন।” আলীমুদ্দিনের কাহিনী গোটা মানিকগঞ্জের কাহিনী। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাহিনী,শত শত শহর বন্দরের কাহিনী। এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৫০ লাখ টনেরও বেশী খাদ্যশস্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য পাঠানো হয়েছে তারা পায়নি।”
১৯৭৪ সালের ২৭ সেপ্টম্বর তারিখে লন্ডনের নিউ স্টেট্সম্যান লিখেছিল,
“বাংলাদেশ আজ বিপদজনক ভাবে অরাজকতার মুখোমুখি। লাখ লাখ লোক ক্ষুধার্ত। অনেকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। .. ক্ষুধার্ত মানুষের ভীড়ে ঢাকায় দম বন্ধ হয়ে আসে।.. বাংলাদেশ আজ দেউলিয়া। গত আঠার মাসে চালের দাম চারগুণ বেড়েছে। সরকারি কর্মচারিদের মাইনের সবটুকু চলে যায় খাদ্য-সামগ্রী কিনতে। আর গরীবরা থাকে অনাহারে। কিন্তু বিপদ যতই ঘনিয়ে আসছে শেখ মুজিব ততই মনগড়া জগতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভাবছেন, দেশের লোক এখনও তাঁকে ভালবাসে;সমস্ত মুসিবতের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। আরো ভাবছেন, বাইরের দুনিয়ী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ উদ্ধার পাবে। নিছক দিবাস্বপ্ন.. দেশ যখন বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে,তখনও তিনি দিনের অর্ধেক ভাগ আওয়ামী লীগের চাঁইদের সাথে ঘরোয়া আলাপে কাটাচ্ছেন। .. তিনি আজ আত্মম্ভরিতার মধ্যে কয়েদী হয়ে চাটুকার ও পরগাছা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।.. সদ্য ফুলে-ফেঁপে ওঠা তরুণ বাঙালীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের শরাবখানায় ভীড় জমায়। তারা বেশ ভালই আছে। এরাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা- বাংলাদেশের বীর বাহিনী। .. এরাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাছাই করা পোষ্য। আওয়ামী লীগের ওপর তলায় যারা আছেন তারা আরো জঘন্য। .. শুনতে রূঢ় হলেও কিসিঞ্জার ঠিকই বলেছেনঃ “বাংলাদেশ একটা আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি।”
১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর,লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলী লিখেছিলেন,
“একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। ..বহু বিদেশি পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ।.. প্রতি বছর যে চাউল চোরাচালন হয়ে (ভারতে) যায় তার পরিমাণ ১০ লাখ টন।”
১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইষ্টার্ণ ইকনমিক রিভিয়্যূ পত্রিকায় লরেন্স লিফঅসুলজ লিখেছিলেন,
সেপ্টেম্বর তৃতীয় সপ্তাহে হঠাৎ করে চাউলের দাম মণ প্রতি ৪০০ টাকায় উঠে গেল। অর্থাৎ তিন বছরে আগে -স্বাধীনতার পূর্বে যে দাম ছিল - এই দাম তার দশ গুণ। এই মূল্যবৃদ্ধিকে এভাবে তুলনা করা যায় যে, এক মার্কিন পরিবার তিন বছর আগে যে রুটি ৪০ সেন্ট দিয়ে কিনেছে,তা আজ কিনছে ৪ পাউন্ড দিয়ে। কালোবাজারী অর্থনীতির কারসাজিতেই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।.. ২৩শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে শেখ মুজিব ঘোষণা করলেন, “প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোট ৪,৩০০ লঙ্গরখানা খোলা হবে।" প্রতি ইউনিয়নের জন্য রোজ বরাদ্দ হল মাত্র দুমন ময়দা। যা এক হাজার লোকের প্রতিদিনের জন্য মাথাপিছু একটি রুটির জন্যও যথেষ্ট নয়।”
নিউয়র্ক টাইমস পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে লিখেছিলঃ
জনৈক কেবিনেট মন্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ বললেন,“যুদ্ধের পর তাঁকে (ঐ মন্ত্রীকে) মাত্র দুই বাক্স বিদেশি সিগারেট দিলেই কাজ হাসিল হয়ে যেত, এখন দিতে হয় অন্ততঃ এক লাখ টাকা।” ব্যবসার পারমিট ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগারদের ঘুষ দিতে হয়। সম্প্রতি জনৈক অবাঙ্গালী শিল্পপতী ভারত থেকে ফিরে আসেন এবং শেখ মুজিবের কাছ থেকে তার পরিত্যক্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানাটি পুরনরায় চাল করার অনুমোদন লাভ করেন। শেখ মুজিবের ভাগিনা শেখ মনি -যিনি ঐ কারখানাটি দখল করে আছেন-হুকুম জারি করলেন যে তাকে ৩০ হাজার ডলার দিতে হবে। শেখ মুজিবকে ভাল করে জানেন এমন একজন বাংলাদেশী আমাকে বললেন, “লোকজন তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করুক, এটা তিনি পছন্দ করেন। তাঁর আনুগত্য নিজের পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি। তিনি বিশ্বাসই করেন না যে, তারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে কিংবা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।”
দেখা যাক, প্রখ্যাত তথ্য-অনুসন্ধানী সাংবাদিক জন পিলজার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সম্পর্কে কি বলেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকায় লিখেছেনঃ
“একটি তিন বছরের শিশু -এত শুকনো যে মনে হল যেন মায়ের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরে গেছে। আমি তার হাতটা ধরলাম। মনে হল তার চামড়া আমার আঙ্গুলে মোমের মত লেগে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের আর একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান এই যে, বিশ্বস্বাস্থ্ সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছে।”
পিলজারের সে বক্তব্য এবং বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার সে অভিমতের প্রমাণ মেলে ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে। উত্তর বংগের এক জেলেপাড়ার বস্ত্রহীন বাসন্তি জাল পড়ে লজ্জা ঢেকেছিল। সে ছবি ইত্তেফাক ছেপেছিল। পিলজার আরো লিখেছেন,
“সন্ধা ঘনিয়ে আসছে এবং গাড়ী আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম-এর লরীর পিছনে পিছনে চলেছে। এই সমিতি ঢাকার রাস্তা থেকে দুর্ভিক্ষের শেষ শিকারটিকে কুড়িয়ে তুলে নেয়। সমিতির ডাইরেক্টর ডাঃ আব্দুল ওয়াহিদ জানালেন,“স্বাভাবিক সময়ে আমরা হয়ত কয়েক জন ভিখারীর মৃতদেহ কুড়িয়ে থাকি। কিন্তু এখন মাসে অন্ততঃ ৬০০ লাশ কুড়াচ্ছি- সবই অনাহার জনিত মৃত্যু।”
লন্ডনের “ডেইলী টেলিগ্রাফ” ১৯৭৫ সালের ৬ই জানুয়ারী ছেপেছিল,
“গ্রাম বাংলায় প্রচুর ফসল হওয়া সত্ত্বেও একটি ইসলামিক কল্যাণ সমিতি (আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম) গত মাসে ঢাকার রাস্তা,রেল স্টেশন ও হাসাপাতালগুলোর মর্গ থেকে মোট ৮৭৯টি মৃতদেহ কুড়িয়ে দাফন করেছে। এরা সবাই অনাহারে মরেছে। সমিতিটি ১৯৭৪ সালের শেষার্ধে ২৫৪৩টি লাশ কুড়িয়েছে- সবগুলি বেওয়ারিশ। এগুলোর মধ্যে দেড় হাজারেরও বেশী রাস্তা থেকে কুড়ানো। ডিসেম্বরের মৃতের সংখ্যা জুলাইয়ের সংখ্যার সাতগুণ।.. শেখ মুজিবকে আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বোঝা বলে আখ্যায়ীত হচ্ছে। ছোট-খাটো স্বজনপ্রাতির ব্যাপারে তিনি ভারী আসক্তি দেখান। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বাকী পড়ে থাকে।.. অধিকাংশ পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস, আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট রোধ করার কোন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম এ সরকারের নেই। রাজনৈতিক মহল মনে করেন, মুজিব খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বুনিয়াদ আরো নষ্ট করে দেবেন। তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। ডেইলী টেলিগ্রাফের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। জরুরী অবস্থা জারি করেছেন, আরো বেশী ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। অবশেষে তাতেও খুশি হননি, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে তিনি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে নিয়ে গর্ব করে, এ হল তার অবদান।
১৯৭৫ সালের ২১শে মার্চ বিলেতের ব্রাডফোর্ডশায়র লিখেছিল,
“বাংলাদেশ যেন বিরাট ভূল। একে যদি ভেঙ্গে-চুরে আবার ঠিক করা যেত। জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশ অতি গরীব দেশ। ১৯৭০ সালের শেষ দিকে যখন বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল ডুবে যায় তখন দুনিয়ার দৃষ্টি এ দেশের দিকে - অর্থাৎ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নিবদ্ধ হয়। রিলিফের বিরাট কাজ সবে শুরু হয়েছিল। এমনি সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুণ জ্বলে উঠল। --কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ যখন শুরু হল, তখন জয়ের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। একমাত্র ভারতের সাগ্রহ সামরিক হস্তক্ষেপের ফলেই স্বল্পস্থায়ী-কিন্তু ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী- যুদ্ধের পর পাকিস্তানের পরাজয় ঘটে এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।” পত্রিকাটি লিখেছে, “উড়োজাহাজ থেকে মনে হয়, যে কোন প্রধান শহরের ন্যায় রাজধানী ঢাকাতেও বহু আধুনিক অট্রালিকা আছে। কিন্তু বিমান বন্দরে অবতরণ করা মাত্রই সে ধারণা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। টার্মিনাল বিল্ডিং-এর রেলিং ঘেঁষে শত শত লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে,কেননা তাদের অন্য কিছু করার নাই। আর যেহেতু বিমান বন্দর ভিক্ষা করবার জন্য বরাবরই উত্তম জায়গা।”
পত্রিকাটি আরো লিখেছে,“আমাকে বলা হয়েছে,অমুক গ্রামে কেউ গান গায়না। কেননা তারা কি গাইবে? আমি দেখেছি, একটি শিশু তার চোখে আগ্রহ নেই,গায়ে মাংস নেই। মাথায় চুল নাই। পায়ে জোর নাই। অতীতে তার আনন্দ ছিল না, বর্তমান সম্পর্কে তার সচেতনতা নাই এবং ভবিষ্যতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না সে।”
দেশে তখন প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ চলছিল। হাজার হাজার মানুষ তখন খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছিল। মেক্সিকোর “একসেলসিয়র” পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবকে যখন প্রশ্ন করা হল, খাদ্যশস্যের অভাবের ফলে দেশে মৃত্যুর হার ভয়াবহ হতে পারে কিনা,শেখ মুজিব জবাব দিলেন,
“এমন কোন আশংকা নেই।”প্রশ্ন করা হল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্লামেন্টে বিরোধীদল বলেন যে, ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে।”তিনি জবাব দিলেন, “তারা মিথ্যা বলেন।”তাঁকে বলা হল,“ঢাকার বিদেশি মহল মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশী বলে উল্লেখ করেন।” শেখ মুজিব জবাব দিলেন,“তারা মিথ্যা বলেন।”প্রশ্ন করা হল, দূর্নীতির কথা কি সত্য নয়? ভূখাদের জন্য প্রেরিত খাদ্য কি কালোবাজারে বিক্রী হয় না..?শেখ বললেন, “না। এর কোনটাই সত্য নয়।”(এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড,ক্যালিফোর্নিয়া,
২৯/০১/৭৫)
বাংলাদেশ যে কতবড় মিথ্যাবাদী ও নিষ্ঠুর ব্যক্তির কবলে পড়েছিল এ হল তার নমুনা। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে,সে দুর্ভিক্ষে হাজার মানুষ মরছে সেটি তিনি মানতে রাজী নন। দেশে কালোবাজারী চলছে, বিদেশ থেকে পাওয়া রিলিফের মাল সীমান্ত পথে ভারতে পাড়ী জমাচ্ছে এবং সীমাহীন দূর্নীতি চলছে সেটি বিশ্ববাসী মানলেও তিনি মানতে চাননি। অবশেষে পত্রিকাটি লিখেছে,
"যে সব সমস্যা তার দেশকে বিপর্যস্ত করত সে সবের কোন জবাব না থাকায় শেখের একমাত্র জবাব হচ্ছে তাঁর নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি। জনসাধারণের জন্য খাদ্য না হোক,তার অহমিকার খোরাক চাই।" (এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড, ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)
শেখ মুজিব যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন তখন লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফে পীটার গীল লিখেছিলেন,
“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দেশ থেকে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার ঢাকার পার্লামেন্টের (মাত্র) এক ঘন্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অনেকটা নিঃশব্দে গণতন্ত্রের কবর দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদল দাবী করেছিল,এ ধরণের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া উচিত। জবাবে সরকার এক প্রস্তাব পাশ করলেন যে,এ ব্যাপারের কোন বিতর্ক চলবে না। .. শেখ মুজিব এম.পি.দের বললেন, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র ছিল “ঔপনিবেশিক শাসনের অবদান”। তিনি দেশের স্বাধীন আদালতকে “ঔপনিবেশিক ও দ্রুত বিচার ব্যহতকারী” বলে অভিযুক্ত করলেন।”
অথচ পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব ও তাঁর আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পদ্ধতির গণতন্ত্রের জন্য কতই না চিৎকার করেছেন। তখন পাকিস্তানে আইউবের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গনতন্ত্রই তো ছিল। গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে যে কতটা মেরুদন্ডহীন ও নীতিহীন মানুষের ভীড় জমেছিল সেটিও সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল। এত দিন যারা গণতন্ত্রের জন্য মাঠঘাট প্রকম্পিত করত তারা সেদিন একদলীয় স্বৈরাচারি শাসন প্রবর্তনের কোন রূপ বিরোধীতাই করল না। বরং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এতবড় গুরুতর বিষয়ে যখন সামান্য তিন দিনের আলোচনার দাবী উঠল তখন সেটিরও তারা বিরোধীতা করল। সামান্য এক ঘন্টার মধ্যে এতবড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল। অথচ গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এক টাকা ট্যাক্স বৃদ্ধি হলে সে প্রসঙ্গেও বহু ঘন্টা আলোচনা হয়। ভেড়ার পালের সব ভেড়া যেমন দল বেঁধে এবং কোন রুপ বিচার বিবেচনা না করে প্রথম ভেড়াটির অনুসরণ করে তারাও সেদিন তাই করেছিল। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের দাবী যে কতটা মেকী,সেটির প্রমাণ তারা এভাবেই সেদিন দিয়েছিল। দলটির নেতাকর্মীরা সেদিন দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়েছিল,এরকম একদলীয় স্বৈরচারি শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের বিবেকে সামান্যতম দংশনও হয়নি।
১৯৭৪ সালে ১৮ অক্টোবর বোষ্টনের ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরে ডানিয়েল সাদারল্যান্ড লিখেছিলেন,
“গত দুই মাসে যে ক্ষুধার্ত জনতা স্রোতের মত ঢাকায় প্রবেশ করেছে,তাদের মধ্যে সরকারের সমর্থক একজনও নেই। বন্যা আর খাদ্যাভাবের জন্য গ্রামাঞ্চল ছেড়ে এরা ক্রমেই রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকার এদেরকে রাজপথের ত্রিসীমানার মধ্যে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যককে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সারাদিন দুই এক টুকরা রুটি খেতে পাওয়া যায, মাঝে মাঝে দুই-একটা পিঁয়াজ ও একটু-আধটু দুধ মেলে। ক্যাম্পে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। “যে দেশে মানুষকে এমন খাঁচাবদ্ধ করে রাখা হয় সেটা কি ধরনের স্বাধীন দেশ”- ক্রোধের সাথে বলল ক্যাম্পবাসীদেরই একজন। ক্যাম্পের ব্লাকবোর্ডে খড়িমাটি দিয়ে জনৈক কর্মকর্তা আমার সুবিধার্থে প্রত্যেকের রুটি খাওয়ার সময়সূচীর তালিকা লিখে রেখেছেন। “তালিকায় বিশ্বাস করবেন না”-ক্যাম্পের অনেকেই বলল। তারা অভিযোগ করল যে, রোজ তারা এক বেলা খেতে পায়- এক কি দুই টুকরা রুটি। কোন এক ক্যাম্পের জনৈক স্বেচ্ছাসেবক রিলিফকর্মী জানাল যে, “সরকারী কর্মচারীরা জনসাধারণের কোন তোয়াক্কা করে না। তারা বাইরের জগতে সরকারের মান বজায় রাখতে ব্যস্ত। এ কারণেই তারা লোকদেরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাচেছ। বিদেশিরা ভূখা-জনতাকে রাস্তায় দেখুক এটা তারা চায় না।”
১৯৭৪ সালে ৩০ অক্টোবর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় পিটার প্রেসটন লিখেছিলেন,
“এই সেদিনের একটি ছবি বাংলাদেশের দৃশ্যপট তুলে ধরেছে। এক যুবতি মা -তার স্তন শুকিয়ে হাঁড়ে গিয়ে লেগেছে,ক্ষুধায় চোখ জ্বলছে - অনড় হয়ে পড়ে আছে ঢাকার কোন একটি শেডের নীচে,কচি মেয়েটি তার দেহের উপর বসে আছে গভীর নৈরাশ্যে। দু’জনাই মৃত্যুর পথযাত্রী। ছবিটি নতুন,কিন্তু চিরন্তন। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা দুনিয়ার সবচেয়ে -কলিকাতার চেয়েও -বীভৎস শহরে পরিণত হয়েছে। সমস্ত বীভৎসতা সত্ত্বেও কোলকাতায় ভীড় করা মানুষের যেন প্রাণ আছে, ঢাকায় তার কিছুই নাই। ঢাকা নগরী যেন একটি বিরাট শরাণার্থী-ক্যাম্প। একটি প্রাদেশিক শহর ঢাকা লাখ লাখ জীর্ণ কুটীর, নির্জীব মানুষ আর লঙ্গরখানায় মানুষের সারিতে ছেয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে যখন খাদ্যাভাব দেখা দেয়, ভূখা মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসে। ঢাকায় তাদের জন্য খাদ্য নেই। তারা খাদ্যের জন্য হাতড়ে বেড়ায়, অবশেষে মিলিয়ে যায়। গেল সপ্তাহে একটি মহলের মতে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই মাসে ৫০০ লোক অনাহারে মারা যাচ্ছে। এর বেশীও হতে পারে, কমও হতে পারে। নিশ্চিত করে বলার মত প্রশাসনিক যন্ত্র নাই।.. জন্মের পর পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের এক অভূতপূর্ব ফসল কুড়িয়েছিলঃ ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড। আজ সবই ফুরিয়ে গেছে। কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। রাজনীতিবিদ, পর্যবেক্ষক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান -সবাই একই যুক্তি পেশ করছে যা অপরাধকে নিরাপদ করছে, দায়িত্বকে করছে অকেজো। তাদের মোদ্দা যুক্তি হল এই যে, বাংলাদেশের ঝুলিতে মারাত্মক ফুটো আছে। যত সাহায্য দেওয়া হোক না কেন, দূর্নীতি, আলসেমী ও সরকারী আমলাদের আত্মঅহমিকার ফলে অপচয়ে ফুরিয়ে যাবে। বেশী দেওয়া মানেই বেশী লোকসান।”
পাত্রের তলায় ফুটো থাকলে পাত্রের মালামাল বেড়িয়ে যায়,তবে তা বেশী দূর যায় না। আশে পাশের জায়গায় গিয়ে পড়ে। তেমনি বাংলাদেশের তলা দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া সম্পদ হাজার মাইল দূরের কোন দেশে গিয়ে উঠেনি,উঠেছিল প্রতিবেশী ভারতে। আর এ ফুটোগুলো গড়ায় ভারতীয় পরিকল্পনার কথা কি অস্বীকার করা যায়? পাকিস্তান আমলে ২৩ বছরে পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ ছিল, সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারী বন্ধ করা। এ কাজে প্রয়োজনে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বসানো হত। অথচ শেখ মুজিব সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারি বন্ধ না করে ভারতের সাথে চুক্তি করে সীমান্ত জুড়ে বাণিজ্য শুরু করেন। এভাবে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে দেশের তলায় শুধু ফুটো নয়, সে তলাটিই ধ্বসিয়ে দিলেন। তলা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ তখন ভারতে গিয়ে উঠল। ভারত বস্তুতঃ তেমন একটি লক্ষ্য হাছিলের কথা ভেবেই সীমান্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব করেছিল। অথচ পাকিস্তান আমলে ভারত এ সুবিধার কথা ভাবতেই পারেনি। অথচ মুজিব সেটাই বিনা দ্বিধায় ভারতের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের বাজারে তখন আর রাতের আঁধারে চোরাচলানকারী পাঠানোর প্রয়োজন পড়েনি। দিনদুপুরে ট্রাক-ভর্তি করে বাংলাদেশের বাজার থেকে সম্পদ তুলে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা তখন পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানার যন্ত্রাংশ খুলে নামে মাত্র মূল্যে ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়। তলাহীন পাত্র থেকে পানি বেরুতে সময় লাগে না, তেমনি দেশের তলা ধ্বসে গেলে সময় লাগে না সে দেশকে সম্পদহীন হতে। ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্যের দাড়িয়েছিল,ত্বরিৎ বেগে দূর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল বাংলাদেশে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক ওরিয়ানী ফালাচীর সাথে শেখ মুজিবের সাক্ষাতকারটি ছিল ঐতিহাসিক। শেখ মুজিবের চরিত্র, আত্ম-অহংকার, যোগ্যতা ও মানবতার মান বুঝবার জন্য আর কোন গবেষণার প্রয়োজন নেই, সে জন্য এই একটি মাত্র সাক্ষাতকারই যথেষ্ট। এখানে সে বিখ্যাত সাক্ষাতাকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলঃ
রোববার সন্ধাঃ আমি কোলকাতা হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছি। সত্যি বলতে কি, ১৮ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তাদের বেয়োনেট দিয়ে যে যজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর এ পৃথিবীতে আমার অন্তিম ইচ্ছা ছিল যে, এই ঘৃণ্য নগরীতে আমি আর পা রাখবো না- এ রকম সিদ্ধান্ত আমি নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সম্পাদকের ইচ্ছা যে, আমি মুজিবের সাক্ষাতকার গ্রহণ করি। (এখানে তিনি এক বীভৎস বর্বর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করছেন। সেটি হলঃ ঢাকা স্টেডিয়াম কাদের সিদ্দিকী তার দলবল নিয়ে কিছু হাতপা বাধা রাজকারকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল। আন্তর্জাতিক আইনে কোন বন্দীকে হত্যা করা গুরুতর যুদ্ধাপরাধ। আর সেটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রকাশ্যে,ঢাকা স্টেডিয়াম হাজার হাজার মানুষের সামনে। এবং যে ব্যক্তিটি এ নৃশংস যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত তাকে জাতীয় বীর হিসাবে মুজিব সরকার স্বীকৃতি দেয়। হত্যারত কাদের সিদ্দিকীর ছবি বিদেশি পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে, কিন্তু মুজিব তাকে ছাড়িয়ে নেন।)
আমার স্মরণ হল, ১৮ই ডিসেম্বর যখন আমি ঢাকায় ছিলাম,তখন লোকজন বলছিল,“মুজিব থাকলে সেই নির্মম,ভয়ংকর ঘটনা কখনোই ঘটতো না”। কিন্তু গতকাল (মুজিবের বাংলাদেশে ফিরে আসার পর) মুক্তিবাহিনী কেন আরো ৫০ জন নিরীহ বিহারীকে হত্যা করেছে?
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই আমি আপনার এই রেফারেন্স টা একটি স্হানে ব্যাবহার করার অনুমতি চাচ্ছি।
আজিজ ভাই,
উপরে অনেক বড়সড় একটা মন্তব্য; স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিচ্ছি পুরোটাই আপনি নেট থেকে কপি করেছেন; আমার প্রশ্ন হলো- উপরের তথ্যগুলোর কোন রেফারেন্স আছে কী? নাকী সামহোয়্যারইন কিংবা সোনার বাংলা ব্লগ থেকে কপি করে আনা। ইনফ্যাক্ট গুগুল করে তাই পাচ্ছি, কিন্তু কোন রেফারেন্স কিংবা লিঙ্ক পাচ্ছি না যা নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হিসেবে প্রমাণ করবে। তার চেয়েও বড় কথা আপনার উপরের পুরো মন্তব্যটাই বেশ কিছুকাল যাবৎ সামু এবং সোনার বাংলায় জামাতী ব্লগারদের প্রপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। একটু খোঁজ নিলেই দেখতে পারবেন।
বাংলাদেশের সত্য ইতিহাস জানতে আমার সমস্যা নাই। কিন্তু ভাইয়া রেফারেন্সটা একটা প্রপাগান্ডা রেফারেন্স। আরো বহুবার এটা বিভিন্ন নিকে কপিপেস্ট হইছে। প্রকারান্তে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং বাংলাদেশের জন্ম এবং নেতৃত্ব একটি ভুল ছিল - এই রেফারেন্স সেইটাকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।
অতএব, সর্বাত্মক আপত্তি জানিয়ে গেলাম এ ব্যাপারে। 🙂
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:thumbup: :thumbup:
এই লাইনের মাজেজা নিয়া একটা চিন্তায় ছিলাম। এখন একটু একটু বুঝতেসি।
আজিজ ভাই, বেয়াদবি নিয়েন না। আমি বলতেসি না আপনার কথা ভুল বা অসত্য। কিন্তু রেফারেন্স সহ একটা কথা আসলে তার ভিত্তি বলিষ্ঠ হয়। আর অন্য কোন ব্লগ থেকে কমেন্ট কপি পেস্টিং কেন জানি মানতে পারি না।
রকিব আর আমিন :thumbup:
আজিজ ভাই, সত্যি সত্যিই গুগল করে যেটা পেলাম এই কমেন্টের তথ্যগুলোর রেফারেন্স হিসাবে তা সোনারবাংলা এবং সামহয়ারইন এর বেশ কিছু জামাত-শিবির মার্কড ব্লগারের ব্লগ থেকে আসা। অনলাইনে এদের পদচারণা অনেকদিনের এবং এদের লক্ষ্যও সবসময় এক, সেটি হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ষড়যন্ত্র। যে পত্রিকাগুলোর নাম এবং দিন তারিখের উল্লেখ দেখলাম সেগুলো কোনটারই বিশ্বাসযোগ্য রেফারেন্স অনেক খুঁজেও পেলামনা। বরং যা পেলাম তা হলো একই তথ্য বিভিন্ন জামাতী ব্লগারের পোস্ট এবং কমেন্টে আরও অনেক জায়গাতেই কপি পেস্ট হওয়া।
এরকম প্রপাগান্ডা রেফারেন্স যখন আরেকজন জামাত শিবির আপনার নামের কমেন্ট সহ কপি করে অন্য কোথাও রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করবে তা নিঃসন্দেহে অনেককেই ভুল বার্তা পৌছে দিবে।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আমি যেহেতু ৭৪এর দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করেছি সেহেতু আমি আমার লেখার রেফারেন্স উল্লেখ করাটাকে দায়িত্ব বলে মনে করছি।
প্রথমেই বলে রাখি আমি তাদেরকে লেখাকেই রেফারেন্স হিসেবে নিয়েছি যাদেরকে আমার মনে হয়েছে তারা দূর্নীতিপরায়ন এবং সুবিধাবাদী নয়। এই দেশে তো একক ব্যক্তি হিসেবে কেউই গ্রহণযোগ্য নন (্কোন না কোন দিক থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে) তারপরও যাদের কাজকে আমার দেশের জন্য উপকারি মনে হয়েছে, মনে হয়েছে তারা কোনক্রমেই অন্যের সম্পদ বা অধিকার হরণ করেন না, ব্যক্তি হিসেবে তোষামদীর পরিচয় দেননি, এবং নিজস্ব বিচার-বিবেচনাবোধ রয়েছে (কেউ একজনকে মহান বললেই উনারাও হুক্কা-হুয়া শুরু করে দেননা, সেই ব্যক্তিকে বিআর করার জন্য নিজস্ব বিবেচনাবোধ ব্যবহার করেন।)। এরকম দুইজন ব্যক্তিত্বের লেখা বই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দৃশ্য চিত্রায়নে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছি।
১- 'আমার উপস্থাপক জীবন' - লেখক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (পৃঃ ১০৬ থেকে ১০৯)
২-'শতাব্দী পেড়িয়ে' - লেখক হায়দার আকবর খান রনো (পৃঃ ৩১৬ থেকে ৩২৪)
পরে সময় করে উল্লেখিত রেফারেন্সের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে দেব।
ধন্যবাদ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi