পর্ব – ২
হাকিম চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ১৯৮৬
রোকেয়া হল থেকে বেড়িয়ে একটু হাটলেই হাকিম চত্বর। দুপুরের পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনায় এ জায়গাটা কোলাহলমুখর হয়ে উঠে। সকালের দিকটায় কিছুটা নিরিবিলি থাকে। দেশের রাজনীতির সাথে সাথে এই বছর গ্রীষ্মও খুব উতপ্ত। তবে সকালের রোদটায় তেতে উঠতে কিছুটা সময় নেয়। চারপাশে একটু মিষ্টি মিষ্টি আমেজ ছড়িয়ে আছে। বসে আছি প্রকাণ্ড কড়াই গাছটার নিচে। আমার সামনে একরাম ‘ব’এর মতো করে হাটু ভেঙ্গে ঘাসের উপর বসে আছে। একটু পেছনের দিকে হেলে হাতদুটোর করতল পিঠের পেছনে মাটির উপর ঠেকিয়ে রেখেছে। তাকিয়ে আছে উপরে আকাশের দিকে। চোখদুটো একটু কুচকে আছে। এর মধ্যে একরামের এ ভঙ্গিটি আমার বেশ পরিচিত হয়ে গেছে। সে এখন কথা শুনছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। তারপর পুরো কথা শোনার পর এমন সব প্রশ্ন করবে যা আগে হয়তো কোনভাবেই আমার মাথায় আসতো না। এই যেমন এখন প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা, তুই আর খালাম্মা মানে তোরা মা-মেয়ে দুজনেই উনাকে হোসনা আপা বলে ডাকতি। কারণটা কী?‘
আমি মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেলাম। কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না ঠিক কখন থেকে আমি ওনাকে হোসনা আপা নামে ডাকতে শুরু করি। যেদিন থেকে উনি কলেজে আমার সরাসরি শিক্ষক হলেন নাকি তারও আগে সেই ঊনিশ একাত্তর সাল থেকে যেসময়টায় প্রথম উনার সাথে পরিচয় হয়? আমি একদমই মনে করতে পারলাম না। স্মৃতির ফ্রেম পেছাতে পেছাতে একদম প্রথম ফ্রেমে এসে স্থির হই। সেখানেও উনার প্রতিচ্ছবিটা হোসনা আপা নামের মোড়কে মোড়ানো। মনে হচ্ছে কখনই আমি উনাকে খালাম্মা বা চাচি ডাকিনি। আমাদের সময় তখনও আন্টির প্রচলন হয়ে উঠেনি। আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে শুধু ফারজানা অন্য সবার আম্মাকে আন্টি ডাকতো। তাই নিয়ে আমরা ফারজানাকে বেশ ক্ষেপাতাম। তবে আম্মা একদম প্রথম থেকেই উনাকে হোসনা আপা ডাকতেন। ভাবি ডাকটা নাকি উনার শুনতে একটু নাটুকে নাটুকে বলে মনে হয়।
একরামকে বললাম, ‘তুই আমাকে খুব গোলক ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিস। এমন সব অদরকারী প্রশ্ন করিস যে উত্তর খুঁজে পাইনা।’
‘তাহলে প্রশ্নগুলোকে অদরকারী বলছিস কেন? বলবি তো কঠিন প্রশ্ন।’
‘তুই খুব পেঁচিয়ে কথা বলিস।’
‘তাহলে আরেকটু প্যাচাই। মনে আছে মর্ডান স্কুলে থাকতে একবার আমি তোর বর হয়েছিলাম?’
‘নাটকের বর। বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে স্কুলের ফাংশনে নাটকটা নামানো হয়েছিল। ইসলাম স্যার পরিচালনা করেছিলেন। তাই না?’
‘ইসলাম স্যার আর জাহানারা আপা দুজন ছিলেন। কথা সেটা না। যা বলতে চাচ্ছি তা হলো এতোদিন আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একসাথে পড়ছি, দুজন দুজনের পূর্বপরিচিত, তারপরও কিছুদিন আগপর্যন্ত আমাকে দেখে না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতি ক্যান? ছোটবেলায় একটা ভুল করেছিলাম বলে?’
প্যাচানোর নাম করে একরাম আমাকে গভীর কূয়ায় ফেলে দিতে চাচ্ছে। সে কি জানেনা কেন আমি শামুকের মতো গুটিয়ে ছিলাম? নাকি ইচ্ছে করেই হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে কথার পিঠে কথা আসবে। আমি পাশ কাটানোর চেষ্টা করলাম। ‘আচ্ছা আগেরবার তুই আমার রুমমেট শিখা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলি। কেন বলতো?’
‘রুমমেট হিসেবে সন্দেহজনক কিছু দেখিসনি? মেয়েটা কী কাজ করে জানিস?’
‘কোন একটা লিটল ম্যাগাজিনে সাংবাদিকতা করে। এর জন্য মাঝে মধ্যে বাইরেও থাকতে হয়। ওকে খরচ নিজের চালাতে হয়। দেশে পরিবারেও মাঝে মধ্যে টাকা পাঠায়।’
‘সেদিন আমার সাথে যাকে দেখেছিলি সে আবার লেখালেখির সাথে জড়িত আছে। সে কিন্তু তোর বান্ধবীকে দেখে অন্য কথা বললো।’
‘কি বললো?’
‘আমার বন্ধুর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করা ঠিক হবে কিনা বুঝছি না। সারাক্ষনই বড় বড় কথা বলছে। নিজেকে সে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে দাবী করে। বন্ধুরে দেখে বুঝলাম এই দেশে লেখকরা যতটুকু না লেখে তার থেকে ভাব নেওয়ার জন্য মদ গিলে বেশি। তোর বান্ধবীকে সে নাকি কোন বারে ওয়েট্রেসের কাজ করতে দেখেছে। কথাটার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না তবে তোকে কথাটা বলা দরকার বলে মনে করছি।’
একরামের কথাটার আংশিক সত্যতা থাকলেও তা খুবই অবাক করা ব্যাপার হবে। তবে অনেক আগেই আমি আমার অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছি। শেষ কবে খুব আনন্দে হেসেছি, দুঃখে কেঁদেছি তা ভুলে গেছি। মাঝেমধ্যে নিজেকে একটা গাছের মতো বলে মনে হয়। চুপচাপ আশেপাশের সব কিছু দেখে যাচ্ছি। কিন্তু কোনকিছুতেই কোন ভাবান্তর নেই। প্রায়ই অন্যমনস্ক থাকি। ঠিক এই মুহূর্তটাতেই হয়ে গেলাম। মাথা ঝাঁকি দিয়ে আবার সরব জীবনে ফিরতে চাইলাম। একরামের সাথে কথা বলতে গেলে সবসময় ভয় হয় এই বুঝি আমার জীবনের পুরনো অধ্যায়টা উঠে আসবে। আবার জীবনের বদ্ধতা কাটিয়ে উঠাবার জন্য ওর সাথে কথা বলবার ইচ্ছেটা জেগে থাকে। এক্ষেত্রে কথা চালানোর জন্য রাজনীতি সবচেয়ে ভাল বিষয় হবে। একরাম খুব সক্রিয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়ন করছে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের একজন সোচ্চার কর্মী।
‘শিখার আর দোষ কি যেখানে দেশের বড় বড় নেতানেত্রীরা সব ডাবল স্টান্ডার্ড নিয়ে চলছে। কখনও ভেবেছিস শেখ হাসিনা এরকম পালটি দিবে?’
সামনের মে মাসে পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার বিশ্বাসঘাতকতায় এখন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় উন্মাতাল। এমনকি রোকেয়া হলের পাঁড় আওয়ামীলিগার মেয়েরাও হতভম্ব। গতবছর এরশাদ পরের বৎসর ১৯৮৬ এর মার্চ মাসে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ দেন। যথারীতি ১৫ ও ৭ দল, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), আইনজীবি সমিতি সমন্বয় পরিষদ – সকলেই তা প্রত্যাখান করে। ১৯ মার্চ শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদিঘির জনসভায় ঘোষণা দিলেন, নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেঈমান। নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে দুই জোটের পক্ষ থেকে হরতাল ডাকা হল। ২২ মার্চ হরতাল হবে।
ঠিক তার আগের দিন, ২১মার্চ। এ দিন নির্বাচন বর্জনের দাবিকে সামনে রেখে এবং পরদিনের ঘোষিত হরতাল উপলক্ষ্যে ১৫ ও ৭ দল অর্থাৎ ২২ দলের যৌথ মশাল মিছিল হবার কথা। সে মিছিল হয়েওছিল। হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত ঘোষণা, এরশাদকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। অথচ আগেরদিন রাতে অর্থাৎ ২০ মার্চে এরশাদের সাথে ১৫ দলের সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল। তাই ২২ মার্চে মিছিলের দিন শেখ হাসিনা আসেননি। খালেদা জিয়া এসেছিলেন। এই ঘটনাটার পর থেকেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজনীতির পারদমাত্রায় খালেদা জিয়া হারিয়ে দেন শেখ হাসিনাকে।
একরাম ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে খুব খাটছে। তার দশভাগও হয়তো লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করে না। ওকে দেখলে মনে হয় রাজনীতির সাথে ওর জীবনমরণ জড়িয়ে আছে। অবশ্য আমাদের সময়টাই এরকম। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ থাকছে। হরতাল হচ্ছে। কারো কোন অভিযোগ নেই। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সব ছাত্রছাত্রী একাট্টা। যেই আমি এখন কোন কিছু নিয়ে মাথা ঘামাই না সেই আমিও শেখ হাসিনার ডিগবাজী দেখে আহত হয়েছি।
‘আমাদের পার্টির লোকজন এখনও ঠিক আছে।’ একরামদের ছাত্র সংগঠন একটা হলেও ওদের মূল রাজনৈতিক দল যে কোনটা সেটা বুঝি না। বামপন্থীদের দল তো ভাংতে ভাংগে শেষ। একরাম বোধহয় ওয়ার্কাস পার্টির কথা বোঝাচ্ছে। এই দলও কতদিন ঠিক থাকে কে জানে? একরামের কাছেই শুনেছিলাম কাজী জাফর এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হবার কয়েকদিন আগে কাপ্তেন হালিম চৌধুরীর মন্ত্রী হবার ঘটনাকে বিদ্রুপ করেছিলেন। আবার মওদুদ হোসেন কাজী জাফরকে সমালোচনা করার দুদিন পরে নিজেও মন্ত্রী হন। রাজনীতিবিদরা ক্রমাগত ডিগবাজী খাচ্ছেন। আর মরছে সব ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এ পর্যন্ত কতজন মারা গেছে তার কোন হিসেব নেই। মূলত ১৯৮২ সালের চৌদ্দই ফেব্রয়ারী এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের শিক্ষানীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়। ড. মজিদ খান ২৩ সেপ্টেম্বর ‘৮২ তারিখে একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়। আরেকটি বিতর্কিত বিষয় ছিলো উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। সারাদেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ এই নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। শুরু হয় মিছিল প্রতিবাদ। কয়েক দফায় আন্দোলন তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চলতে থাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী মিছিলসহ স্মারকলিপি পেশ করতে সচিবালয়ের দিকে ধেয়ে যায়। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং আন্দোলনে অংশ নেয়। মিছিলটি যখন হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছেছে তখন মিছিলের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল ঘিরে রাখা হয়েছিলো। নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের ওপর পুলিশ লাঠি, টিয়ারগ্যাস, জল কামান ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, গুলিও চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়। একসময় ছাত্ররা আশ্রয় নেয় শিশু একাডেমীতে। সেখানে তখন শিশুদের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। পুলিশ সেখানেও ঢুকে যায় অস্ত্রহাতে। কোমলমতি শিশুরাও সেদিন রক্ষা পায়নি এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে। প্রায় সারাদিনব্যাপী এই অসম সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ নিহত হন। দশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সরকারি প্রেসনোটে দাবী করা হয় ১ জনের মৃত্যুর কথা। আর আহতের সংখ্যা অগুনতি। গ্রেফতারের সংখ্যাও অগুনতি। সেবছর সারাদেশে আক্ষরিক অর্থেই শোকাবহ একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। বাংলা ভাষা ও শিক্ষার দাবীতে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়।
মাত্র কয়েক বছর আগেই একজন তরুনের অকস্মাৎ মৃত্যু সংবাদ পুরো শহরকে স্তব্ধ করে দিত সেখানে এখন ১৯৮৬ তে এসে মনে হচ্ছে হঠাৎ একটা গুলিতে কোন তরুনের মৃত্যু এখন আর মানুষকে অতোটা অবাক করবে না। আমাদের কিলবিল জন্মের মতো অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনাটাও কেমন জানি পানসে হয়ে যাচ্ছে। এ কোন সময়ে বাস করছি আমরা? এ দেশেই কি শুধু এমন হচ্ছে নাকি সারা পৃথিবীই এমন? মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কোথায় গেলে মুক্তি পাব? নাকি যুদ্ধ, আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, গোলাগুলি এসবই আমাদের নিয়তি বলে মেনে নিতে হবে। শান্তির সময় এ জীবনে মনে হয় আর দেখা হবে না। না। আমরা কিছুই না। আমাদের জীবন, আমাদের সুখ-শান্তি আর আমাদের নিয়ন্ত্রনে নেই। নিয়ন্ত্রন এখন রাষ্ট্রের হাতে চলে গিয়েছে। প্রভাবশালীর অঙ্গুলীনির্দেশে আমার নির্বিরোধী সৎ আব্বাকেও চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়। আমরা আদালতে যেতে পারি না। আমরা হঠাৎ করেই আমাদের বসতি থেকে ছিন্নমূল হয়ে পড়ি। যে ভিটামাটি আকড়ে থাকার জন্য একসময় আম্মার কি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার শেষ রক্ষা হলো কই? শেষ পর্যন্ত ঠিকই তো উদবাস্ত হতে হলো।
আমার পাশে বসা একরাম অবশ্য অন্যরকম করে ভাবে। ওর সব লক্ষ্য স্বৈরাচারী এরশাদকে ক্ষমতা থেকে হটানো। সহপাঠী সাদেক আওয়ামী লীগ করে। ওকে একদিন যেই প্রশ্নটা করেছিলাম এখন একরামকেও একই প্রশ্ন করলাম, ‘আচ্ছা ধর এরশাদ ক্ষমতা থেকে নেমে গেল, তারপর কি সব ঠিক হয়ে যাবে?’
‘পরের কথা পরে ভাবা হবে। আগে এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।’
‘আমি কথাটা জিজ্ঞেস করছিলাম এই কারণে যে একাত্তরেও তো আমরা একটা স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে পরবর্তী এজেণ্ডা কি হবে এ ব্যাপারে কোন রুপরেখা না থাকাতে স্বাধীন দেশটা কেমন একেবেকে চলতে শুরু করলো। স্বাধীন দেশটা নিয়ে কয়েকজন পিঠা ভাগাভাগির আসর শুরু করে দিল। খুব ভয় হয় এবারেও যদি সেরকম হয়? এরশাদ নামার পর যারা ক্ষমতায় আসবে তারা প্রথমেই দেশটার জন্য কি কি করবে তার তো একটা এজেণ্ডা থাকা দরকার। নইলে তো আবার সেই পিঠা ভাগাভাগির আসর বসবে।’
‘তুই এরশাদের দালাল নাতো? এসব কথা বলে দালালরা আন্দোলন দূর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তোর ভাইয়ের সাথে ডিএফআইয়ের আবার কানেকশন নাই তো?’
রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এখন আমাদের আলোচনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছি। একরামের কথা তো রীতিমতো ব্যক্তিগত আক্রমণ। তবে আমাদের বয়সী ছেলেদের মন-মানসিকতা বুঝি বলে আমি কথাটা ব্যক্তিগতভাবে নিলাম না। একরামের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা এখন আর্মিদের দেখতে পারে না। ডিএফআই এরশাদের গোয়েন্দা বাহিনী। ডিএফআই কে দিয়ে এরশাদ প্রথমে দল গড়ার চেষ্টা করেন। প্রথমে গঠিত হল নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ। তাদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করা হল ডিএফআই এর মাধ্যমে। ১৯৮৩ সালেই তারা কয়েক দফা সশস্ত্র আক্রমণ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সাহসী ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এখনও ভেতরে ভেতরে ছাত্রদেরকে জেলের ভয় দেখিয়ে কিম্বা টাকার লোভ দেখিয়ে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজে ভীড় করানো হচ্ছে। কিছুদিন আগে একরামের এক বিশ্বস্ত বন্ধু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে এরশাদের দলে চলে গেল। একরামের হঠাৎ করে আক্রমনাত্মক ভাষায় কথা বলার প্রেক্ষাপট আমার না বোঝার কারণ নেই। কিন্তু ভাইয়াকে এর মধ্যে টেনে আনাটা ভাল লাগলো না।
‘আমাকে অবিশ্বাস কর কিছু বলবো না। কিন্তু ভাইয়াকে এর মধ্যে টেনে আনিস না। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের তো চাকরি করে খেতে হয়। বলা তো যায় না পাশ করে তুই দেখা যাবে পুলিশে চাকরী করছিস। আর বসের নির্দেশে ছাত্র পিটাচ্ছিস।’
‘আমার কথায় কিছু মনে করিস না। আসলে মনটা ভাল নেই। রাজনীতিতে কোন নীতি নেই এইটা ভাবলে ভাল লাগে না। তবে শেখ হাসিনা পালটি খাওয়ার পেছনে ড কামাল হোসেনের হাত আছে শুনেছি। লোকটার একাত্তরের সময়ও বিতর্কিত ভূমিকা ছিল। আসলে এই দেশে সব সুবিধাবাদী। রাজনীতি করে ক্ষমতা আর পতিপত্তির জন্য। দেশের কথা কেউ ভাবে না।’
‘সবার কথা বলছিস কেন? তুই তো রাজনীতি করছিস দেশের কথা ভেবে।’
‘কতদিন করতে পারি সেটাই কথা। আমাদের বামপন্থীরা নেতারা অল্পবয়সে যতটা আদর্শবাদী ছিলেন বেশি বয়সে ঠিক ততটাই সুবিধাবাদী হয়ে গেছেন। ব্যবহার করছেন আমাদে মতো তরুনদের আবেগকে। হয়তো তারাও একটা সময় এভাবেই ব্যবহৃত হত। বয়স বেশি হলে দেশের থেকে নিজের পাওয়া না পাওয়ার হাহাকারটা মনে হয় বেশি বাজে।’
‘হয়তোবা। মাঝে মধ্যে মনে হয় নিজেকে খুব ভাগ্যবতী ভাবতে পারতাম যদি অল্পবয়সে মারা যেতাম।’ মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে আসলো। একরামের নজরে তা এড়ালো না। বললো, ‘চল আমরা এমন বিষয় নিয়ে কথা বলি যা আমাকে রাজনীতির কথা ভুলিয়ে দিবে আর তোকে ভুলিয়ে দিবে …’,এবার একরাম কথা শেষ করলো না।
‘তুই বরং সাথীর কথা বল। কেমন আছে মেয়েটা?’, নতুন প্রসঙ্গে কথা ঘুরালাম। সাথী কুমিল্লায় একরামের পাশের বাসায় থাকে। ওদের মধ্যে প্রেম চলছে।
‘ভাল আছে। সামনে বিএ পরীক্ষা। বেশ পড়াশোনা করছে। তবে দূর থেকে অনেক কিছু শোনে বলে খুব টেনশনে থাকে। রাজনীতি ছেড়ে দিতে বলে।’
‘কাছ থেকে দেখে আমরাও তো টেনশনে থাকি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত কতো ছাত্র মারা গেছে বলতে পারবি?’
‘না বলতে পারবো না। এখন আর কেউ হিসেব রাখে না। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রয়ারীর দিন যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তারা সবচেয়ে ভাগ্যবান। তাদেরকে এখনও প্রতিবছর স্মরণ করা হয়।’
‘দিন দিন মৃত্যুগুলো কারণহীন আর মুল্যহীন হয়ে পড়ছে।’আবারও ঘুরেফিরে কথাবার্তা রাজনীতির দিকেই এগুচ্ছে। আসলে আমরা এমন এক অস্থির সময়ে বাস করছি যে চাইলেও বেশিক্ষণ রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবো না। কী পত্যক্ষ্য কী পরোক্ষভাবে। একাত্তরে যুদ্ধটা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র নয়মাস। কিন্তু এবারের যুদ্ধটা যেন শেষই হতে চাচ্ছে না। আবার মাঝে মধ্যে দ্বিধান্বিত হয়ে যাই এটা কি আসলেই সত্যি সত্যি একটা যুদ্ধ নাকি কৃত্রিম একটা আন্দোলন তৈরী করেছে আমাদের রাজনীতিবিদরা। কারণ আন্দোলন না হলে উনারা বেকার থাকেন তাই। অধিকাংশের তো নিজের কোন পেশা নেই। বেকার থাকতে পারে না তাই আন্দোলন করে সময় কাটায়। নইলে গরিব দেশে কোথায় সবার জন্য খাদ্য, সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্যের নিশ্চিতকরণের জন্য আন্দোলন হবে তা না খালি ক্ষমতা বদলের জন্য আন্দোলন হয়। না, এসব নিয়ে আর ভাববো না। এই কথা বলার জন্য এখন কাছের বন্ধু একরাম আমাকে দালাল উপাধী দিল।
মাথার উপর সূর্য উঠে গেছে। রোদটা এখন বেশ তেতে উঠেছে। সেই সাথে হাকিম চত্বর জমজমাট হয়ে উঠছে। এ চত্বরের খিচুড়ি আর হাকিম ভাইয়ের চায়ের বেশ নামডাক আছে। আশেপাশে ছাত্রছাত্রীরা খিচুড়ির প্লেট হাতে এখানে ওখানে বসে পরেছে। টুকটাক কথা কানে আসছে। প্রায় সবই রাজনীতি বিষয়ক। দু সপ্তাহ পরে মে মাসে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন সেখানেই।
আমরা উঠে পড়লাম। একরামকে মানা করলেও শোনে না। রোকেয়া হলের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়। সাধারণ ভদ্রতা। এমনিতে তো আমি সবসময় একা একাই চলাফেরা করছি। বিদায় নিয়ে চলে যাবার আগে একরামকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো।
‘তুই আজকে বলছিলি ছোটবেলায় তোর কোন ভুলের কারণে আমি নাকি তোকে এতোদিন পাত্তা দিইনি। কী ভুল ছিল সেটা?’
‘তোর মনে নেই?’
‘না।’
‘বাঁচালি। তাহলে আর মনে করিয়ে দেব না।’
আসলেই আমার কিছু মনে পড়ছে না। তবে একটু চালাকি করে বললাম,’হ্যা হ্যা এবার মনে পরেছে।’
‘ওই ঘটনার পর তুই আমার উপর এমন ক্ষেপে গিয়েছিলি যে আমি ভেবেছিলাম তুই আর কোনদিনই আমার সাথে কথা বলবি না।’
আমি এখনও মনে করতে পারছি না। কিন্তু অনুসন্ধান চালিয়ে গেলাম, ‘সেটাকে তুই ভুল বলছিস কেন?’
‘পরে বুঝতে পেরেছিলাম বড্ড বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছি। ভুলটা এ জায়গাতেই। তোর মতো কাউকে আমি প্রেমপত্র পাঠাতে পারি না। তোর জন্য হিরণভাই মানানসই।’
ধক করে শেষ কথাটা কানে বিঁধলো। নিজের অজান্তেই প্রতিক্রিয়া বের হয়ে গেল, ‘হিরণ ভাই!’
‘মানে হিরণ ভাইয়ের মতো কেউ।’কথাটা বলে একরাম আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। শুধু আমিই দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাস্কর্যে গড়া কোন মূর্তির মতো স্থির হয়ে। অনেকক্ষণ। একসময় একরাম চোখের আড়ালে চলে যায়। আমার তখন মনে হয় ওকে আমার একটা কথা বলার ছিল।
একটু রাজনৈতিক বকবক মনে হয় বেশি হয়েছে। অংশটা বদলে যাবে হয়তো।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপনি চাইলে বদলাতে পারেন। তবে খারাপ লাগছে না। যখন 'চিলেকোঠার সেপাই' পড়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল যেন '৬৯ এ দেশের অবস্থাটা দেখতে পাচ্ছি। আপনার এই লেখাটা পড়েও মনে হচ্ছে '৮৬-তে আছি। দেশের বা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো যদি এইভাবে উপন্যাস হিসেব পাওয়া যেত তাহলে খুব ভাল হত। বিশেষ করে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে।
তাহলে আর বদলাবো না। উপন্যাস লেখা পাজল বানানোর মতো। এক জায়গায় বদলালে আরো কয়েকটা চ্যাপ্টারেও বদলাতে হয়। কাজটা বেশ কষ্টসাধ্য।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
গুলশান - ‘চিলেকোঠার সেপাই’ কার লেখা? পড়তে আগ্রহী। '৬৯-যে আমার জীবনে ভীষন ভাবে জড়িয়ে আছে।
সাইফ ভাই@চিলেকোঠার সেপাই- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা।
আপু,
২য় পর্বে একটু পেছনে গেছেন।
পাশাপাশি দুটি সময় টেনে যাবেন হয়তো।
সুন্দর করে তুলে এনেছেন - সে সময়টুকু।
রাজনীতি আমি খুব ভাল বুঝি না তবে ইতিহাসটুকু উঠে আসছে - দেখে ভাল লাগলো।
সাধুবাদ নিন।
সৈয়দ সাফী
প্রথম তিনটা পর্বে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন স্থান, ভিন্ন ভিন্ন সময় আর জীবনের তিনটা ফেজের উল্লেখ করতে চেয়েছি। তারপর থেকে ১৯৭১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত অবিছিন্নভাবে ঘটনা এগুবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
এবার বুঝলাম। তোমার প্রথম পর্বে লেখা মন্তবের জবাব আর তাহলে দরকার নেই।
আগের পর্বে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন খুব ভালো করে খেয়াল নেই। শুধু মনে আছে চারিদিকে খুব টান টান উত্তেজনা থাকত আর গরম গরম আলোচনা হতো। অথচ কেন জানি ৮৮ র বন্যায় এরশাদের স্পিডবোটে ঘুরে বেরানো মনে আছে। স্পিডবোট দেখতে তখন অনেক ভালো লাগত।
এরশাদের পতনের পর আম্মুকে প্রশ্ন করেছিলাম , "আচ্ছা আম্মু খালেদা জিয়া কি নতুন এরশাদ হয়েছে ? " প্রশ্নশুনে সবাই তো হেসে গড়াগড়ি। এখনো মাঝে মাঝে ভাবি আসলেই হাসিনা-খালেদা তো এরশাদের চেয়ে খুব ব্যতিক্রম কিছু না। এই দুইমহিলার শাসনামলেও আমরা কি খুব ভালো আছি ? তাহলে আমার সেই প্রশ্নে ভুল তো ছিল না কিছু।
আপনার লেখাটা পড়ে মনে জমে থাকা সেই সময়ের কিছু খন্ড খন্ড ছবি মেলাতে পারছি। লেখাটা চলুক ।
১৯৯০ সালের পর থেকে সারা পৃথিবীতেই একটা বড় রকমের পরিবর্তন আসছিল। ১৯৯০ থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ (সংখ্যাটা মনে নেই তবে অনেক) দারিদ্র অবস্থা থেকে মধ্যবিত্ত হয়েছে। ভারত, চীন এর সুবিধা নিয়ে এখন সুপার পাওয়ার হওয়ার পথে। আমাদের দেশেও কিছু উন্নতি হয়েছে কিন্তু কিছুটা উছিষ্ট পাওয়ার মতো। নেতৃত্ব ভালো এবং বিজ্ঞ হলে হয়তো দেশে আরো অনেক দূরদর্শী পরিকল্পনা নেওয়া হতো।
তুমি তো ভালই ভবিষৎ বাণী করতে পার।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
সব চাইতে বেশী দরকার 'সত্য' বলার 'অধিকার'। এটা ঠিক যে, যেটা আমার চোখে 'সত্য' মনে হচ্ছে সেটা আর এক জনের কাছে 'সত্য' নাও মনে হতে পারে। তবে তার জন্যে যদি সবাইকে 'পলিটিকালি ক্যারেক্ট' হিসাব করে লিখতে হবে - তাহলে সত্য কোন দিন প্রকাশ পাবে না।
আমি বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে বেশ আশাহত বোধ করছি। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার আমলেও আমরা যে ভাবে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতাম - মনে হচ্ছে এখনকার বাংলাদেশে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর এটার জন্যে সরকারের চাইতে তার 'অতি ভক্ত' চামচাগোষ্টি বেশী সক্রিয়। এটা আর যাই হোক গনতন্ত্রের স্বরূপ হতে পারেনা।
তুমি এখন পর্যন্ত যে ভাবে 'মুক্ত মন' নিয়ে লিখে যাচ্ছ - আশা করি সেভাবেই লিখতে থাকবে।
আমার খুব ভাল লাগছে পড়তে।
এই ব্যাপারটা আমিও খুব ফিল করি। বর্তমান সময় থেকে এক একটা জেনারেশন পেছাতে থাকলে দেখি যে আগের জেনারেশন অনেক বেশি স্মার্ট এবং তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্র আছে। তবে এই সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী।
তুমি এখন পর্যন্ত যে ভাবে ‘মুক্ত মন’ নিয়ে লিখে যাচ্ছ – আশা করি সেভাবেই লিখতে থাকবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আফজা আপু, সমাজ বাস্তবতা থেকে ব্যক্তি সত্ত্বা কখনোই বিচ্ছিন্ন হতে পারেনা। আপনি যেভাবে সেটা তুলে আনছেন তা অত্যন্ত সাবলীল ও আকর্ষনীয়। আশা করি এটা থেকে সরে আসবেন না। আমাদের জানতে দেন আসলেই কী হয়েছিল সেই সময়গুলোতে। সত্যি কথা বলতে গেলে সেই সময়টাকে যেন দেখা যাচ্ছে আপনার লেখার ক্যানভাসে।উপন্যাস বেশ জমে উঠেছে।নাম নিয়ে ভাবা চালিয়ে যাচ্ছি,দোয়া রাখবেন।
আসিফ-আমার উপন্যাসের সময়কাল (১৯৭১-২০১১) অনেক বড় হওয়ায় এই উপন্যাসে শুধু আশির দশক নিয়ে আমি খুব একটা গভীরে যাব না। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষৎএ শুধু আশির দশকের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার। দেখা যাক কতদূর এগোয়। উপন্যাস লেখা থিসিস লেখার থেকেও পরিশ্রম সাধ্য। এখানে তথ্য এবং কল্পনা দুটো মিশাতে হয়। যদিও বাইরে থেকে মনে হয় এইসব হাবিজাবি কি লিখছে? লেখাতে এতো ফোকাসের দরকার পরে যে এটা আসলে মোর দ্যান ফুল টাইম জব। এই উপন্যাসে আমি মূলত যে জিনিষটা তুলে আনতে চাচ্ছি তা হলো কিভাবে রাষ্ট্র এবং পারিপার্শwইকতা আমাদের জীবনটার আকার নিয়ন্ত্রণ করে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
না, না, রাজনীতির কথাবার্তা থাকুক! হুদাই পেমের প্যাচাল তেমন ভাল লাগে না। বরং সম্ভব হলে আরো গুছিয়ে রাজনৈতিক ইতিহাসে চরিত্রগুলোকে দাড় করান, শুধু ইতিহাস বয়ান না করে।
শান্তা আপা, ইমেল এ্যার্ডেস দিয়ে পরের পর্ব দিলে দু'একটা নাম ভেবেটেবে পাঠানো যায় কিনা চিষ্টা করে দেখতে পারি।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী - উপরে আসিফকে এই ব্যাপারে কিছু লিখেছি যে শুধু আশির দশক নিয়ে আলাদা একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছা আছে।
এই প্রেম 'হ্যারি মিটস শ্যালি' ধরনের নয়। ষোল বছর বল আর আশি বছর বল - আমাদের আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রেমের দরকার হয়। এই প্রেম খুঁজে বেড়াই কোন না কোন ফর্মে, কোন না কোন ভাবে। বলতে পার এই প্রেম জীবনকে পরিপূর্ণ করার ফুয়েল, এগিয়ে যাবার মটিভেশন। ষোল বছর বয়সে যেমন সহজেই বলা যায় ওই ছেলে বা ওই মেয়েটাকে পেলেই আমি সবচেয়ে সুখী। কিন্তু চল্লিশে এসে তো আর তা মনে হবে না। কিন্তু তখনো তো এই ফুয়েলের দরকার হয়। যাই হোক বেশি প্যাচাল পারতেছি --- উপন্যাসে মূলত জীবন আর তার পারিপার্শwইকতা তুলে ধরতে চেয়েছি। এবার দেশে গেলে অনেক বই নিয়ে আসবো আশির দশকের উপর। এই মুহূর্তে আমার হাতে মাত্র দুটো বই আছে। বইয়ের ব্যাপারে তোমার কোন সাজেশন থাকলে দিও।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সবাই আগেই বলে দিয়েছে, আবারো বলি। ঐ সময়ের ঘটনাগুলো নিয়েই কাহিনি এগিয়ে যাক।
পরের পর্বের অপেক্ষায়...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
তোমার প্রশ্নের উত্তরও আগে দেওয়া হয়ে গেছে। তোমাদের ইন্টারেস্ট দেখে আমার তো বাংলাদেশের বিভিন্ন সময় নিয়ে খালি উপন্যাস লিখতে ইচ্ছে করছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
লেখা শুরু করে দেন আপু, আমরা উপন্যাসের মাঝ দিয়ে সেই সময়গুলো দেখি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:thumbup:
শান্তা,
উপন্যাসে মাঝে-মধ্যে ইতিহাস বর্ণনা আসছে। সময়-কাল, সমসাময়িকতার জন্য জরুরি। সেটা লেখাকে আকর্ষনীয় করে। কিন্তু ধরণটা কি হবে? এই খন্ডটা অনেকটা প্রবন্ধ বা ইতিহাস পাঠ হয়ে গেছে বলে আমার মতো পাঠকের কাছে মনে হয়।
তবে এটা একান্তই আমার মত। অন্য অনেক পাঠকের কাছে নাও মনে হতে পারে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সানা ভাই আশির দশক আপনার তারুণ্যদীপ্ত সময়। সেইসব ঘটনা প্রবাহে অনেক সুগারকোটিং বা ফ্রস্টিং না লাগিয়ে পরিবেশন করলে আপনার ভাল না লাগারই কথা। সে সময় একজন অতি অরাজনৈতিক ছাত্রীও চিন্তাভাবনা বা কথাবার্তায় রাজনীতির প্রসংগ চলে আসে আমি শুধু এই ব্যাপারটা বোঝাতে চেয়েছি। কিছুটা সময়াভাবে ইতিহাসকে আর গল্পচ্ছলে পরিবেশন করিনি। এতে উপন্যাসের আকার অনেক বড় হয়ে যেতো।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
পড়তে বেশ লাগছে।
অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিনা।
৯০ এর উত্তাল সময়টার কথা মনে পড়ে গেলো।
এ পর্বে চরিত্রগুলোকে অনেক সপ্রাণ মনে হলো।
প্রথম পর্বের কথোপকথনে এদের একটু যান্ত্রিক মনে হচ্ছিলো, যেনো তর্ক করতে হবে বলে করছে।
এ পর্বে এটা স্পষ্ট সে তুমি সিরিয়াস একটা গল্প বলার আয়োজন করছো - সেটা উদ্দীপক।
বুনতে থাকো। অনেক শুভকামনা।
এখন স্পষ্ট হলো প্রথম পর্বের সমস্যাটা কোথায়। পরে ওটা ঠিক করবো।
সিরিয়াস কিনা জানি না তবে একটা গল্প বলার চেষ্টা করছি। সিরিয়াস পাঠকরা যে পড়ছে এতেই আমি কৃতার্থ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আমি কিন্তু আছি আপা এখনো গভীর মনোযোগে..
অনেকদিন পর সামিয়া। পরীক্ষা ছিল?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
:clap:
অনেক সুন্দর হয়েছে।