পর্ব(-১)
ফলসম, ক্যালিফোর্নিয়া -জুন, ২০০৮
জুনের প্রথম সপ্তাহেই একদম চাঁদি ফাটা গরম। চারপাশের পাহাড়ের সবুজ ঘাস জ্বলে শুকনো খড়ের মতো হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পরে পাহাড়গুলোর গায়ে একটুও সবুজ থাকবে না। খোলস বদলে হয়ে যাবে মেটে। ক্যালিফোর্নিয়াতে ম্যাপল গাছ আর পাহাড় এই দুটোর দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই বলে দেওয়া যায় এখন কী ঋতু চলছে। এ দেশে শীতকাল আর বর্ষাকাল একসাথে মিশে গেছে। এরা কোনদিনই বুঝবে না বৃষ্টিতে ভেজার কি আনন্দ!কতদিন বাংলাদেশের বর্ষা দেখিনা!প্রায় বিশ বছরতো হবেই। এই সেপ্টেম্বরে বিশ বছর পুরবে। তারিখটা স্পষ্ট মনে আছে। ২৩শে সেপ্টেম্বর। ঐদিন আমি ছাব্বিশে পা দিই। সেদিন পোর্টল্যান্ডে এমন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল যে প্লেন সহজে ল্যান্ড করতে পারছিল না। আকাশে একটা চক্কর দেওয়ার পর আরেকটা চক্কর দিতে শুরু করে। যাত্রীরা সবাই প্রায় ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। অথচ আমি খুব শান্ত মনে বসেছিলাম। ভাবছিলাম প্লেনটা যদি সত্যি সত্যিই নামতে না পেরে এক সময় বিধবস্ত হয়ে যায় তাহলে এয়ারপোর্টে অপেক্ষমাণ আমার পতিদেবতা কী করবে? আর দেশে আম্মা-আব্বা?
দেশ থেকে আসার সময় মনটা খুব খারাপ ছিল। তখনও আরেক সমস্যা। বন্যার পানি উত্তরা এয়ারপোর্টে প্রায় উঠি-উঠি করছিল। আম্মা রীতিমতো জায়নামাজে বসে আমার জন্য দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করে দেন। মানত করে বিরতিহীন রোজা রাখছিলেন। প্লেনটা আমাকে নিয়ে আকাশে উড়তে শুরু করার পর বন্যার পানিতে এয়ারপোর্ট ভেসে যাক তাতে আম্মার আর কোন মাথা ব্যাথা হবে না। আমি কোনমতে একবার আকাশে উড়াল দিতে পারলেই হলো। এতো টেনশনের মধ্যেও দাদামনু কানের কাছে এসে বললো,’তোর সহযাত্রীদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছেরে।’ আমাকে আর মুখ ফুটে কেন বলতে হলো না। দাদামনু নিজেই উত্তর দিয়ে দিল, ‘তুই তো আবার বিখ্যাত অপয়া।’ ফাজলামো করতে করতে দাদামনু আমার অপয়া খেতাবটাকে একদম পানসে বানিয়ে দিয়েছে। শুনতেও খারাপ লাগে না আর তার ধারও দেখলাম বেশ কমে গেছে। প্লেন ঠিকই আমাকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিল। সেই প্রথম জীবনে প্লেনে চড়া। প্লেনের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে প্রথম দেশ দেখা। চারদিকে পানি পানি পানি। অষ্টাশির ভয়াল বন্যা। সেবার আমাদের তালতলা এলাকাটা পুরো পানির নীচে তলিয়ে গিয়েছিলো। রিক্সার বদলে নৌকা চড়ে বড় রাস্তা রোকেয়া সরনীতে এসে উঠেছিলাম। সেখান থেকে বড় জেঠার গাড়ি করে উত্তরা এয়ারপোর্ট। প্লেন থেকে পানিতে ডোবা ঢাকা শহর দেখে মনে হয়েছিল এ পরিবারে বোধহয় একা আমিই বেঁচে যাচ্ছি। আর পরে পোর্টল্যান্ডের প্লেনে চক্কর খেতে খেতে ভাবছিলাম শেষ পর্যন্ত আমার কপালেই বুঝি সবার আগে মৃত্যুর ঘন্টা বাজলো।
অবশেষে প্লেনটা পোর্টল্যান্ড এয়ারপোর্টে ঠিকঠাক মতো নামতে পারলো। ওদিকে দেশে বন্যার পানিও নেমে গেল। পরিবারের সবাই এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি, অক্ষতভাবে। মাঝের বিশ বছর সুরুৎ করে উড়ে গেল। এখন কতো সহজেই সুরুৎ বলতে পারছি। অথচ দিনের হিসেব ধরলে বিশ বছর মানে প্রায় সাত হাজার তিনশ দিন। একটা একটা করে সেসব দিন পার করতে হয়েছে। তাদের পরতে পরতে রয়ে গেছে কতো ভাংগা-গড়ার ইতিহাস!
গাড়িটা ফ্রিওয়ে থেকে ফলসম বুলভার্টে উঠিয়ে দিলাম। সাদি মোহাম্মদের রবীন্দ্রসংগীত বাজছিলো। সেটা বদলে নতুন একটা সিডি লাগালাম। এই সিডিটা গত সপ্তাহে সহকর্মী দেবাঞ্জন কোলকাতা থেকে এনে দিয়েছিল। পুরোনো দিনের বাংলাগান বাজতে শুরু করলোঃ
আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে এসেছি
বাঁশি কই আগের মতো বাজে না
মন আমার তেমন কেন সাজে না
তবে কি ছেলেবেলা অনেকদূরে ফেলে এসেছি?
আমার গাড়ির সব সিডি বাংলা। আমার গাড়িতে উঠলে মেঘাকেও বাংলা গান শুনতে হয়। বাসায় খেতে হয় বাংলাদেশের খাবার। এখনও আমার সব সূক্ষাতিসূক্ষ্ অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে বাংলায় ছবি আঁকে। বাংলায় স্বপ্ন দেখি, বাংলায় ভাবি। একটা বয়সের পর দেশ বদলালে শুধু স্থানই পরিবর্তন হয়, স্থানের সাথে সাথে পোষাক-আশাক বদলে যায়, বদলে যায় কিছু আচার-আচরণ। কিন্তু তার সাংস্কৃতিক আদলটা আর তেমন বদলায় না। মৌলিক কিছু ভাললাগা, চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রটিতে এখনও নিজের ভেতরে সেই সাত বছর বয়সের ছোট শিশুটিকে খুঁজে পাই। ভিনদেশ থেকে আসা আমার আরো বান্ধবী ক্যামিলা, চিত্রা, মে লু ওরাও সব একই কথা বলে। আমেরিকাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রথম প্রজন্ম কাজের ক্ষেত্রে বা স্কুল কলেজে আমেরিকান। কিন্তু যেই নিজের বাসার ভেতর ঢুকলো অমনি তারা হয়ে পড়লো ইতালিয়ান,ইন্ডিয়ান বা চাইনীজ। সামাজিকতার জন্য নিজেদের আলাদা আলাদা কম্যুনিটি আছে। সামারের সময় লেক এলিজাভেথ পার্কের চারপাশে একটা চক্কর দিলে ব্যাপারটা বেশ বোঝা যায়। কোন একপাশে র্যাপ সংগিত বাজছে আর সেই সাথে কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেনের গন্ধ আসছে তো বুঝতে হবে এখানে আফ্রিকান-আমেরিকানরা পার্টি করছে। আবার আরেকটু হেটে গিয়ে কাবাবের গন্ধের সাথে এয়ারাবিয়ান নাইটসের মিউজিক কানে ভাসলে চোখ তুলে আরবদের দেখা যাবে। বাংলাদেশি কম্যুনিটি সব জায়গাতেই আছে। তাদের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে দু-তিনটা পার্টি চলছে। বাংলাদেশীরা অবশ্য পার্টি বলে না। বলে দাওয়াত। দ্বিতীয় প্রজন্ম জন্ম থেকেই এই দাওয়াত শব্দটির সাথে পরিচিত হয়ে উঠে। তবে সেই পোর্টল্যান্ড ছাড়ার পর সে অর্থে আর অতোটা বাংলাদেশি কম্যুনিটির সাথে উঠাবসা করা হয়ে উঠেনি। নেটওয়ার্কটা বাড়ানোর জন্য এখন আবার তা শুরু করেছি। এবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের এক্টিভিস্ট ক্যাম্পেইনার হিসেবে কাজ করছি। লড়ছি বারাক ওবামার পক্ষে। যত পারছি বাংলাদেশি সিটিজেনদের ভোটার লিস্টে যোগ করছি। অবাক হয়ে দেখলাম অনেকেই দশ কি বার বছর ধরে এ দেশের নাগরিক হয়ে আছে কিন্তু কখনও ভোটার হয়নি। অনেকেই নিজেদের আমেরিকান নাগরিক অধিকার সম্পর্কে কম সচেতন।
আজকে ফলসম হাবের বইয়ের দোকান বর্ডার্সে একটা মিটিং আছে। ক্যাথেরিন,জেসমিনা, ক্যামিলা আর আমি এই চারজন মিলে ২০০৮ সালের যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বারাক ওবামার জন্য একটা ফান্ডরেইজিং ডিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছি। আজকে আমাদের মিটিংএ পিটার রিকেনবার্গ আসবে। ভদ্রলোক এলাকার বেশ নামকরা লোক। ২০০০ সালের দিকে ডটকম বিজনেসের যখন পোয়াবারো তখন নিজের একটা সফটওয়ার কোম্পানি মাইক্রোসফটের কাছে বেঁচে দুইশ মিলিয়নের মতো টাকা বানিয়েছে। এখন নিজে একজন কেউকাটা ধরনের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট। অন্যান্য ছোট কোম্পানীতে টাকা ঢালছে। তারপর সেইসব কোম্পানি সুযোগ সুবিধা মতো অন্যসব বড় কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবে টাকা বানিয়েই যাচ্ছে। এলডোরাডো হিলসে একশ একর জায়গার উপরে বিশাল খামার বাড়ি। ব্যক্তিগত প্লেন আছে। কাজের ক্ষেত্র এখান থেকে দুইশ মাইল দূরে সিলিকন ভ্যালিতে। প্রায়ই প্লেনে আসা-যাওয়া করে। এই দেশে মেধা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস আর পরিশ্রমী হলে মানুষকে আর পেছনে তাকাতে হয়না। লেগে থাকলে একদিন না একদিন সে তার স্বপ্ন ছুঁতে পারে। আমাদের ইলেকশন ক্যাম্পেইনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পিটার। উদ্দেশ্য একটাই – ভাল ফান্ড পাওয়া। ক্যাথেরিন সুসংবাদ দিল পিটার নিজেই নাকি এখন ক্যাম্পেইন টিমে থাকছে চাচ্ছে। ভদ্রলোক জর্জ বুশকে একদমই দেখতে পারে না। অথচ বুশের কল্যানে এইসব বড়লোকদের অনেক কম ট্যাক্স দিতে হয়েছে। আমেরিকার এ আরেক সৌন্দর্য। সব বড়লোকই চামার না। এদের মধ্যে অনেকেই খুব মানবতাবাদী।
বর্ডারসে পৌছে দেখি এরমধ্যে ক্যাথেরিন আর জেসমিনা চলে এসেছে। জেসমিনা আমাদের এখানে ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। সাংগঠনিক কাজে আর দায়িত্ববোধে এক কথায় নির্ভুল। ক্যাথেরিন স্বেচ্ছাসেবকদের সম্বনায়ক হিসেবে কাজ করছে। আমি হিসাবরক্ষক। এখানে একটা জিনিষ সবাই মেনে চলে তা হলো সময়ানুবর্তীতা। দরকার হলে আগে চলে আসবে তারপরও যার যে সময়ে আসার কথা সে সময় মেনে চলবে। আজকে ক্যামিলা আসতে পারবে না। কিন্তু পিটারকে দেখলাম না। সে কথাই ক্যাথেরিনকে জিজ্ঞেস করলাম।
‘পিটারকে একটু দেরিতে আসতে বলেছি। তার আগে আমরা বাদবাকী কাজগুলো সেরে নিই।’
আমরা আমাদের ল্যাপটপ আর পাল্ম পাইলট বের করে আগামী ৬ জুন অনুষ্ঠিত ফান্ডরেইজিং ডিনারের খুঁটিনাটি দেখে নিলাম। আজকাল এতো ভাল সফটওয়ার বাজারে এসেছে যে সব ডাটা বসিয়ে দিলেই সুন্দর একটা প্রোগ্রাম চলে আসে। অতো বেশি চিন্তাভাবনা করা লাগে না। তবে বড় বড় কানেকশনগুলোর সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। এতে ভাল ফলও পাওয়া যাচ্ছে। পিটার রিকেনবার্গকে দলে ভেড়ানো গেলো। এই হাই প্রোফাইল ভদ্রলোক আমাদের ফান্ডরেইজিং ডিনারটার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্যাথেরিন জিজ্ঞেস করলো ‘কি মনে করো শেষ পর্যন্ত ওবামা উৎরে যাবে?’ এখনও ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। হিলারীর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।
‘আমার কোন সন্দেহ নেই। হিলারির ফান্ড থেকে ওবামার ফান্ড অনেক এগিয়ে গেছে। লোকটার আসলেই ক্যারিশমা আছে। আমরা সার্পোট দিয়ে ভুল করিনি।’ জেসমিনা বললো। জেসমিনা দ্বিতীয় প্রজন্মের রোমানিয়ান। একদম খাঁটি আমেরিকান বয়স্ক ককেশিয় মহিলারা এখনও হিলারির আশা ত্যাগ করতে পারছে না। তবে যেভাবে ওবামা উঠে যাচ্ছে তাকে রীতিমত বিস্ময় ছাড়া আর কি বলা যায়?
‘প্রচার কাজে প্রযুক্তির ভাল সংযোগ করতে পেরেছে। আর তার একটা আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রয়েছে। ওবামার ফান্ডে সারা পৃথিবী থেকে টাকা আসছে।’ আমি বললাম।
‘বুশ সারা পৃথিবীতে আমেরিকার ইমেজটার একদম বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।’ ক্যাথেরিন বললো। আমি মনে মনে বললাম আমেরিকার ইমেজ সব সময়ই খারাপ ছিল। এখনও আছে। তবে এর বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়লে দেশটাকে আর খারাপ লাগবে না। আমেরিকার ভেতরে এর নাগরিকদের জন্য আসমানী কিতাবের মতো কঠোরভাবে ডিক্লারেশন অব ফ্রিডম মেনে চলা হয়। সেখানে সবাইকে সমান বলা হয়েছে, বাক স্বাধীনতার কথা বলা। একসময় এ দেশে পিউরিটান আর প্রোটেস্টেনরা এসেছিল স্বাধিনভাবে ধর্ম পালন করার উদ্দেশ্য। যে যার আপন বলয়ে যেভাবে থাকতে চায় সেভাবে থাকতে পারবে। বাংলাদেশের মতো এখানে কেউ আজ কাদেয়ানী কাল আহমেদিয়াদের বিরুদ্ধে ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় বেরুবে না।
‘আর এখন অবস্থা এমন দাড়াচ্ছে যে তুমি মুসলিম হলেই সন্দেহজনক।’ ক্যাথেরিনের শেষ কথাটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলাম। মুসলিমরা আসলেই দিন দিন সাধারণ আমেরিকানদের কাছে ভয়কংর কিছু একটা বলে চিহ্নিত হচ্ছে। ওরা আমাকে বলে ‘সাইদা তুমি অনেক প্রগতিবাদী মুসলিম।’ কথাটা সেভাবে ঠিক নয়। আমি তো দেখেছি আমার মতো আরো অনেকেই আছে। সমস্যা শুধু এই যে তেমন কেউ মূলধারার সাথে যুক্ত হতে চায় না। মূলধারা মানে একসাথে পার্টি করা নয়। আমেরিকান স্টাইলের পার্টি আমারও পোষাবে না। কিন্তু কম্যুনিটির অনেক কাজ আছে যেখানে মুসলিমরা এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু মুসলিম সংগঠকগুলো এখনও মূলত কোরান শরীফ বিতরণ আর দুই ঈদের সময় কিছু দান খয়রাত করার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। অবশ্য প্রজন্মগতভাবে সবে তো শুরু হলো। আস্তে আস্তে এগুবে হয়তো।
কাজ মোটামুটি গুছিয়ে এসেছে। ক্যাথেরিন জিজ্ঞেস করলো,’সাইদা তোমার সেক্সুয়্যাল হ্যারাশমেন্টের উপর বইটা কতখানি এগুলো?’ সে আমার এ বিষয়ে বই লেখার কথা জানে।
‘এগুচ্ছে। এটা একটা গবেষণাধর্মী লেখা। এক ভারতীয় ছাত্রী পেয়েছি। তাকে নিয়ে গবেষণা করছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখাটা তুলে ধরতে চাচ্ছি। অতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি না।’
জেসমিনা জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা সেক্সুয়্যাল হ্যারাশমেন্টের জন্য কোন জিনিষটাকে তুমি প্রথমে দায়ী করবে? জেন্ডার নাকি পাওয়ার?’
‘আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম তখন মনে করতাম শুধু মেয়ে হবার অপরাধে মেয়েরা যৌন নির্যাতন ভোগ করছে। কিন্তু এদেশে এসে এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে মনে হচ্ছে আসলে যে নিজেকে বেশি শক্তিশালী মনে করছে সেই কিন্তু নির্যাতনটা করছে।’ আমি বললাম।
জেসমিনা বললো, ‘চাকরির কারণে আমাকেও এ বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়। একটা গবেষণায় দেখা গেছে কর্মক্ষেত্রে ১৬% ভাগ ছেলেরা যৌনহয়রানির শিকার হচ্ছে।’জেসমিনা ইন্টেল করপোরেশনের হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের কাজ করে।
‘তার মানে দাঁড়ায় ৮৪% ভাগ মেয়ে নির্যাতিত। সংখ্যার দিক দিয়ে মেয়েদের ভোগান্তিটা অনেক বেশি। কারণ অধিকাংশ সুপারভাইজার ছেলে। অর্থাৎ ডেজিগনেশনের দিক দিয়ে তারা আসলেও ক্ষমতাবান।’ জেসমিনার কথার পেছনে লেজ লাগালাম।
ক্যাথেরিনা বলে উঠলো, ‘তুমি শিশুদের কথা বাদ দেবে কেন? এদেশে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে শিশুদের উপর অনেক যৌন নির্যাতন হয়। তারা খুব সহজ শিকার অর্থাৎ খুব কম ক্ষমতাবান।’
আমি বললাম,’তবে সার্বিকভাবে মেয়েরা অনেক বেশি যৌননির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব হচ্ছে ঘরের বাইরে। আবার ঘরের মধ্যে দেখো ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের কারণে প্রতিবছর কতো মেয়ে ডিসেবল হচ্ছে, মারা যাচ্ছে।’
‘এর মূলেও রয়েছে ক্ষমতা। একবার বাসার ভেতরে ঢুকলে তুমি অফিসে কতো বড় হর্তাকর্তা কিম্বা কতো কামাচ্ছো তা কি আর স্বামীরা মনে রাখে? তার পুরুষালী ইগো আর বেশি শারিরীক শক্তির কারণে বাইডিফল্ট সে নিজেকে ক্ষমতাবান বলে মনে করে।’জেসমিনার কথা শুনে অনেকদিন পর পোর্টল্যান্ডের স্মৃতি মনে পরে গেলো। স্বামীদের ইগো কতো ভয়কংর হতে পারে তা আমার খুব ভাল জানা আছে। শুধু কি ইগো? তাদের হতাশাবোধ? বাংলাদেশে ট্রাফিক পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে রিক্সাওয়ালা ঘরে গিয়ে বৌ পেটাচ্ছে। অনেক ঘরেই এইটা একটা সাধারণ চিত্র। শুধু একটু যোগ-বিয়োগ করে নিতে হবে। এই আমরা মারও খাই পুরুষের হাতে আবার এগুইও পুরুষেরা উদার মনে একটু ছাড় দিলে।
ক্যাথেরিন গলা শুনতে পেলাম। ‘পিটার সবার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই। এই হলো সাইদা। স্যাক্রামেন্টো স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজীর প্রফেসর। আর জেসমিনা। ইন্টেল করপোরশেনের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ম্যানেজার। আর এই যে পিটার রিকেনবার্গ। একজন বড় বিনিয়োগকারী। ডটকম মিলিয়নিয়ার আর কি বলবো পিটার?’
‘যা বলেছো তাতেই আমি ফ্লাটার্ড। এখন মহিলারা আমাকে পছন্দ করতে হয়। শুভ বিকাল জেসমিনা। শুভ বিকাল সাইদা। নামটা ঠিকভাবে উচ্চারণ করেছি তো?’
পিটার প্রথম বাক্যেই বুঝিয়ে দিল আমেরিকানদের মতো রসিকতা তার রক্ত মজ্জায়। আর বেশভূসা দেখে একজন আতেল মিলিওনিয়ার বলে ধরে নিতেই হয়। এই দেশে অল্পবয়সী টেকি আঁতেলদের দেখেছি যে যত বড়লোক তত ক্যাসুয়্যাল থাকে। হাটু পর্যন্ত লম্বা একটা হাফ প্যান্ট পড়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে বাগান করার সময় এই প্যান্টটা পড়ে। গায়ের গেঞ্জিটা কত পুরোনো কে জানে। কোনদিন ইস্ত্রি পড়েনি। কুচকিয়ে আছে। পোষাক – আশাক যাই হোক না কেন দেহের অঙ্গভঙ্গিতে আত্নবিশ্বাস ঠিকড়ে পরছে।
‘হ্যা একদম ঠিক।’এদেশে আমেরিকানরা বিদেশিদের নাম উচ্চারণ আর বানান নিয়ে খুব সচেতন।
‘তা সেক্সুয়্যাল হ্যারেশ্মেন্ট নিয়ে কথা বলছিলে। আমি কিন্তু এখানে সংখ্যালঘু একমাত্র পুরুষ। ভয়ে আছি। কোন হয়রানির মধ্যে কিন্তু আমি নেই। আমার বউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো। বৌ চাইলো বলে এক কথায় বোস্টন ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে আসলাম।’
আমি বললাম, ‘তোমার বৌ ভালই উপদেশ দিয়েছে। আমি আগে বোস্টনে থাকতাম। সামার ছাড়া সারা বছরই ঠান্ডা। আর শীতের সময় কী যে বরফ পড়ে! এখানে এসে মনে হচ্ছে স্বর্গে আসলাম।’
‘কী বলো তুমি! বোস্টন তোমার ভালো লাগেনি? ওটা আমার জন্মস্থান। এই জায়গা তো একদম খটখটা। খ্রীস্টমাসের সময় খুব বরফের অভাব বোধ করি। বরফ ছাড়া খ্রীস্টমাস হয়?’
‘এতো পছন্দের জায়গা তাহলে ছেড়ে আসলে কেন?’ জেসমিনা জিজ্ঞেস করলো।
‘বৌএর জন্য। বৌ ক্যালিফোর্নিয়া থাকতে চায়। হিসেব করে দেখলাম বোস্টন থেকে ক্যালিফোর্নিয়া আসার খরচ ডিভোর্সের খরচের থেকে অনেক কম। তাই আসা।’
লোকটা আসলেই একটা জাত আমেরিকান। ডিভোর্স নিয়েও কত সহজে ফাজলামো করতে পারে। এই শব্দটা শুনলে এখনও আমার বুকে ধবক করে বাজে।
ক্যাথেরিন বললো, ‘তোমার ভয় পাবার কিছু নেই। ওটা সাইদার গবেষণার বিষয়। সে ওই বিষয় নিয়ে একটা বই লিখছে। তা নিয়েই কথা হচ্ছিল।’
‘ছেলে হয়ে জন্মে আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হয়। যেমন আমরা যদি মেয়েদের আগ বাড়িয়ে ডেটের কথা না বলি তাহলে হয়ে যাই নপুংশক, ভীতু। আবার আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইলেই হয়ে পড়ি শিকারি। এটার কি সমাধান বলতে পার?’
পিটার আমাকে জিজ্ঞেস করলো। ইংরেজিতে একটা সুবিধা যে আপনি তুমির কোন ঝামেলা নেই। আমি বললাম,’যৌন হয়রানির কিন্তু খুব স্পষ্ট সংজ্ঞা আছে। একবার ডেটের কথা বলাটা হয়রানির মধ্যে পরে না। কিন্তু অপরপক্ষ চাচ্ছে না তারপরও বারে বারে ডেটের কথা বলাটা হয়রানির মধ্যে পড়ে।’
‘ভাগ্যিস আমার বৌ এই সংজ্ঞাটা জানতো না। তাকে আমি বেশ কয়েকবার অনুরোধ করে ডেটে নিয়ে গিয়েছিলাম। এখন বৌ সংজ্ঞাটা জানতে পেরে যদি কোর্টে কেস করে তাহলে বিপদে পড়বো।’
পিটার বার বার রসিকতা করে ভাব দেখাচ্ছে বৌকে সে খুব ভয় পায়। ব্যাপারটা মনে হয় বেশ সার্বজনীন। আমাদের দেশের ছেলেরাও রসিকতার ছলে বৌকে ভয় পাওয়ার ভাব করে। ছেলেরা বোধহয় মনে করে বৌরা ব্যাপারটা খুব পছন্দ করে। অথচ মেয়েরা এই রকম রসিকতাটা করে না। দুর্বলকে ভয় পাওয়া হাসির বিষয়। তাই বৌকে ভয় পাওয়া হাসির বিষয়,বরকে নয়। আমাদের রসিকতা করতে হয় বরকে আমরা চোখে চোখে রাখি এই ধরনের। চোখে চোখে রাখা মানে সে অনেক ক্ষমতাশালী। চাইলেই ক্ষমতার বলয়টা বিস্তার করতে পারে। চাইলেই একাধিক নারী সে তার অধিকারে নিয়ে আসতে পারে। আমাদের চোখে চোখে রাখতে হয় যাতে সে কাজটা করতে না পারে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আর আমেরিকা নারীদের দুইরকম সার্ভিস দেয়। বাংলাদেশে মেয়েরা ডিভোর্সের সময় দেনমোহর ছাড়া আর তেমন কোন টাকা পায় না। কিন্তু আমেরিকাতে ডিভোর্স হলে সব সম্পত্তি সমান দুইভাগ হবে। এমনকি রিটায়েরমেন্ট ফান্ডে যে টাকা জমছে তাও ভাগ হয়ে যায়। তাই হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে গেলে বাংলাদেশে যতো সহজে আরেকটা বিয়ে করা যায় আমেরিকাতে তত সহজে করা যায় না। বৌ চলে গেলে তো টাকা পয়সা আধাআধি ভাগ হয়ে যাবে। এ বছরের হিসেবে পৃথিবীর এক নম্বর ধনকুবের ওয়ারেন বাফে আর তার স্ত্রী অনেক দিন থেকেই আলাদা থাকছেন। কিন্তু ডিভোর্স হয়নি।
‘আচ্ছা এবার আমরা আমাদের মূল ফান্ডরেইজিং নিয়ে আলোচনা শুরু করি।’ ক্যাথেরিন প্রসংগে ফিরতে চাইলো।
কাজের সময় সবাই বেশ গুছানো। সবার দায়িত্ব সম্পর্কে ভাগ করে দেওয়া হলো। পিটার ওর কানেকশন কাজে লাগাবে। মনে হচ্ছে ৬ জুনের প্রোগ্রামটা বেশ সার্থক হবে। শুরুতে আমরা এতো আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। নিউ হ্যাম্পশায়ায়ার আর ওহাইতে প্রথমিক নির্বাচনের পরও ভাবতে পারছিলাম না ওবামা এভাবে এগিয়ে যাবে। ওবামার এখন ক্যান্ডিডেট হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। হিলারী যে কেন এখন দাত কামড়ে ধরে লেগে আছে কে জানে। ভাবতে পারেনি যে ওবামা কখনো জিততে পারবে। হিলারির বক্তৃতা এখন বেশ হতাশগ্রস্তের মতো শোনায়।
পিটার জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা বলোতো তোমরা মেয়েরা হিলারিকে সার্পোট না দিয়ে ওবামাকে দিচ্ছ কেন?’
জেসমিনা জিজ্ঞেস করলো, ‘একই লিঙ্গের বলে কি তুমি ওবামাকে সমর্থন দিচ্ছ?’
‘সেটা লুকিয়ে রেখে অন্য দুটো কারণ বলবো। এক আমি বুশ-কিলনটন-বুশ-ক্লিনটন এই ধারা দেখতে চাচ্ছি না। দুই যে মানুষটা তার এতো বৈচিত্র্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এতো দূরে উঠে আসতে পারলো সেই মানুষটার নিশ্চয় কিছু কোয়ালিটি আছে। আমেরিকাতে এতো ময়লা জমে গেছে যে এইবার খুব যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ এগিয়ে আসতে না পারলে দেশটার বারটা বাজবে। এবার তোমাদের কারণটা বলো। তোমরা কি স্রেফ ইর্ষাবশত হিলারির থেকে সমর্থন তুলে নিলে?’
আমরা তিনজনই নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম।
আমি বললাম, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে হিলারির থেকে ওবামা মানুষ হিসেবে অনেক বেশি সৎ। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আমি একজন সৎ মানুষকে দেখতে চাই।’
ক্যাথেরিনও আমার কথার সাথে কথা মিলালো। ‘নিজের সুবিধা দেখতে গিয়ে ম্যারেজ ইন্সটিটিউশনটাকে হিলারি অনেক খেলো করে ফেলেছে। বিষয়টা আমেরিকান মেয়েদের সামনে একটা খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
পিটার বললো, ‘পলিটেশিয়ানদের জন্য তো এ নতুন কিছু নয়। তোমরা মহিলারা এতো টাফ হচ্ছো কেন?’
‘ধরো তুমি তোমার কোম্পানির জন্য একজনকে চাকরি দিলে। একদিন দেখলে যে সে আসলে তোমার কোম্পানীতে বসে আরেক কোম্পানির কাজ করছে। তখন কি তুমি তাকে বরখাস্ত করবে না। ঠিক তেমনি ম্যারেজটাও তো একটা কোম্পানি। চিটিং ধরা পরলে সেটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত নয়।’ ক্যাথেরিনের এই যুক্তিটা খুব পছন্দ হলো। ‘খুব ভালো পয়েন্ট।’ আমি বললাম।
ক্যাথেরিন বলতে থাকলো,’কেউ যদি একই সাথে একাধিক সম্পর্ক রাখতে চায় তাহলে তার বিয়ে করা উচিত নয়। দেশের সংবিধান যেমন খুব কঠোরভাবে পালন করা হয় ঠিক তেমন ম্যারেজের সংবিধানের ব্যাপারেও আমাদের একই কঠোর নিয়ম পালন করা উচিত। ‘
ক্যাথেরিন আসলে বিল ক্লিনটনের বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে হিলারির ছাড় দেওয়ার কথা বলতে চাচ্ছে। এই ব্যাপারে ক্যাথেরিনের ব্যক্তিগত দুঃখজনক ইতিহাস আছে। গতবছর ওর ডিভোর্স হয়। ওর স্বামী লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকটা প্রেম করছিল। ধরা পরার পর ক্যাথেরিন আর একদিনও দেরি করেনি। ডিভোর্স ফাইল করে দিয়েছে। ওর তখনকার স্বামী অবশ্য নানাভাবে মাপ চেয়ে ওর কাছে ফিরে আসতে চেয়েছিল। এমনকি হিলারির কথাও বলেছে যে হিলারি যদি ক্লিনটনকে মাপ করে দিতে পারে তাহলে ক্যাথেরিন পারবে না কেন।
আমেরিকাতে এখন বিবাহিত মানুষদের লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার প্রবণা এতো বাড়ছে যে এ দেশের বেশিরভাগ ডিভোর্সই হচ্ছে এখন সে কারণে। ক্যাথেরিনের কথা পিটারও জানে। তাই আর কথা বাড়ালো না। মিটিং বিষয়ে আরো কিছু কথা শেষ করে আমরা সে যার বাসার দিকে রওয়া দিলাম।
(থামতে থামতে চলবে)
:brick: আগে ইটা ফালাই। কাল বা আজ রাতেই পড়ে ফেলবো। :-B
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
প্রিন্সিপ্যাল স্যার আপনে ইটা ফেলালেন। কি করবো বুঝতে পারছি না। রকিইব্যা এখানে এক কাপ চা --- জলদি জলদি।
একটু ভয়ে আছি পড়া যদি শেষ করতে পারেন তাহলে কি বলেন সেই অপেক্ষায়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছি; ট্যাগে-শিরোনামে উপন্যাস বলেছেন। কিন্তু পড়তে গিয়ে মনে হলো যেন আত্মকথন। 😕 😕
তথাপি ট্যাগেই বিশ্বাস স্থাপন করিলাম। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের 'জননী' শেষ করলাম ঘন্টাখানিক হলো; না চাইলেও কেন যেন ঐটার রেশ আপনারটা পড়তে গিয়েও মাথা থেকে সরতেছে না। আবার পড়া লাগবে।
প্রিন্সু স্যারের জন্য গরম চা :teacup: :teacup: 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ট্যাগে যা দেখেছ এটা তাই। আত্মকথন ভাবলে এক্সটা ক্রেডিট হিসেবে নেব। আর আত্ম বা আমি জিনিষ আসলে কী? এই তুমিই সব সময় তোমার জীবনের বাস করো? কোন জ্বীন, ভূত, পরী কিম্বা কোন শাকচুন্নী পেত্নী এসে কি কখনো সেখানে ভর করে না? কিম্বা তুমি অন্য কোথাও?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আফজা আপু@অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম,একটা নাম নিশ্চয়ই ভেবে ফেলতে পারব! কিন্তু যতই সময় এগুলো,গল্পের মাঝে ডুবে গেলাম।তবে চেষ্টা জারী রাখব নাম খুজে বের করার।
আপনি সাইকোলজিস্ট?? কী সাংঘাতিক। আপনি কী জানেন আমি সাইকিয়াট্রিতে এক বছর ট্রেনিং করেছি,এবং এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি? :hatsoff:
আমি প্রফেসন্যাল সাইকোলজিস্ট না। তবে আনপ্রফেসন্যালি আশেপাশের মানুষের সাথে অনেকবার এই ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। যখন ক্যারিয়ার বাছার সময় এসেছিল রুটি-রুজির প্রয়োজনে তখন ইঞ্জিনিয়ারিং বেছেছিলাম।
ট্যাগে তো উপন্যাস লেখা আছে। আত্মকথন ভাবছো কেন?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আফজা আপু@আত্মকথন ভাবতে চাইনি।ভুলে ভেবে ফেলেছি।আসলে উপন্যাসের চরিত্রটা সাইকোলজিস্ট এটা আমাকে অতি উৎসাহী করে ফেলেছিল।কিছু মনে করবেন না। :shy: উপন্যাস ভাল এগুচ্ছে,দয়া করে তাড়াহুড়ো করবেন না। তাড়াহুড়ো উপন্যাসের শত্রু।
আমার মাঝে মাঝে একজন সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে।
আপু প্লিজ চলতে থাকুক।
উপন্যাসটা মোটামুটি ৮০% শেষ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
গল্প বলাটা চমৎকার হয়েছে শান্তা আপা। প্রথম পর্ব পড়ে এখনো প্লটটা ধরা যাচ্ছে না। মানে লেখা ভাল হচ্ছে। পড়ে মনে হলো - গল্পটা মাত্র জেঁকে বসছে। লেখকের চোখ দিয়ে অনেকগুলো বিষয় দেখলাম।
প্যারাগুলো আরেকটু ঠিক করে দিলে পাঠকের পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য হবে পাঠকের। মিটিংয়ের কথোপকথোন মনে হলো বেশি টপিক স্পর্শ করেছে যদিও মূল ফোকাস ঠিক আছে। সাইকোলোজির প্রফেসররা সম্ভবত স্যোশাল ফেনোমেননগুলোকে অনেক বেশি কগনেটিভ এবং জেনেটিক ট্রেইটস দিয়ে বিশ্লেষন করে।
ভাল হচ্ছে। চলুক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
উপন্যাসের প্লট বা বিষয়বস্তু ভালভাবে না জানলে নামের পরামর্শ দেয়া আমার মতো আম-কাঁঠাল জনগনের জন্য শুধু কঠিন না একেবারে অসম্ভব।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
বুঝছি মিঃ আমকাঠাল।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
এই ট্রেন্ডটার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম এডিএইচডির উপর ক্লাস করতে গিয়ে। দেখলাম জেনেটিক ট্রেইটস দিয়ে বিশ্লষন করে শেষে সমাধান হিসেবে বিভিন্ন ড্রাগের নাম দিয়ে দেয়। জিনিষটা আমার অতো পছন্দ হচ্ছিল না। পরে একটা ডকুমেন্টারি (ম্যাডনেস এন্ড মেডিসিন) দেখে আমি মোটামুটি কনভিন্স যে এই ধরনের আউটপুট আসার জন্য ড্রাগ কোম্পানিগুলো সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টগুলোতে অনেক টাকা ঢালে। তোমার হাড় ভেংগে গেলে এক্সরে করে দেখতে পার তা ভেংগেছে। কিন্তু সাইকোলজিকাল সমস্যাগুলো এমন যে মাথার নিউরনে কি হচ্ছে তা দেখার কোন এক্সরে নেই। এখন তো কম্পিউটার এডিকশন, শপিং এডিকশনেরও ড্রাগ বের হচ্ছে। সবই নাকি কোন না কোন জিনের ডিএনওর প্রভাবে হচ্ছে।
প্লেটো নট প্রোযাক বইটা পড়ে ভাল লাগলো। এক্সট্রিম কিছু কনডিশনে ড্রাগ ঠিক আছে। কিন্তু বাদ বাকী সমস্যা ফিলসফিক্যালি সমাধান করা সম্ভব।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
Apu lekha bhalo hocche, apner ae lekhata ekbar porae bujhe felsi 😀
Porer 20% er opekkhai achi 🙂
আমার লেখা তোমার দুইবার পড়ে বুঝতে হয়!!!!
তাহলে মাহমুদ, রাব্বী(মাঝে মাঝে), আন্দা এদের লেখা কয়বার পড়ো???
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
'জীবন মানে উঁচু নীচু পথে অবিরাম গড়িয়ে যাওয়া।
পথ চলতে ভাবনাগুলো বয়ে যায় বহতা সময়ের সাথে।
কিছু হারিয়ে যায় - কিছু যায় তলিয়ে।
আর কিছু লুকিয়ে থাকে নুড়ি পাথরের ফাঁকে ফাঁকে।'
আপু, আপনার প্রথম পর্ব পড়ে মাথায় এ ভাবনাটুকু এলো। আপনার চমৎকার প্লটে বুনন করা এই উপন্যাসের ভিত্তি অনেক সলিড - প্রস্তর-সম। এই আঙ্গিকে এর জন্য আমি প্রথমত একটি নাম প্রস্তাব করি-
'নুড়ি পাথর'
এছাড়াও আরো ক'টি মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাবনাসমেত
নামগুলি জুড়ে দিলাম।
উদ্বায়ী
অন্তরীণ
উত্তরণ
পরিশিষ্টঃ
শুধু প্রথম পর্ব পড়েই এহেন মন্তব্যটুকু বাড়াবাড়ি হলো হয়তো। আপনার লেখনীর আবেশে অনেক খানি সীমানা পেরিয়ে গেলাম বুঝি।
অনেক ভাল থাকুন।
সৈয়দ সাফী
নুড়ি পাথর নামটা পছন্দ হয়েছে। তবে ভাই প্লট কিন্তু বিস্তার করি নাই।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ধন্যবাদ আপু।
সামনের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
সৈয়দ সাফী
এমন কিছু নিয়ে লিখছেন, যা সম্পর্কে কোন আগ্রহ নেই 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আপু, আমার প্রথম মন্তব্যে আপনি দুঃখ পাবেন না প্লিজ, আমি আসলে একটা নাম দেব এই আগ্রহ এবং ইচ্ছা নিয়েই পড়তে শুরু করেছিলাম। পুরোটা পড়েছি, আপনার লেখা বলেই হয়ত বাকী গুলোই পড়ব, কিন্তু ব্যক্তিগত ইচ্ছার যে একটা ব্যাপার আছে, যেখানে আপনার এই প্লটের জায়গা হবে না।
আপনি যাদের নিয়ে লিখছেন তাঁদের কস্টের একটা জায়গা আছে, হয়ত একটা নয়, অনেকগুলো। তাঁরা এমন এক দেখে জন্মেছেন, যেখানে তাঁরা থাকতে চাননা বা চাননি, আবার এমন একদেশে থাকছেন যেখানে তাঁরা বারবার শিকড় খুঁজছেন। যা মিলানো যায় না তা মিলাতে চাচ্ছেন। প্রথম দুটি প্রজন্মই বোধহয় এই কস্টটুকু বেশী পায়।
আমার কাছে এটা অনেকটা ভরপেট খেয়ে পূর্নিমার চাঁদ দেখার মত, উপভোগ তো হবেই।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এতো সহজে তো প্লট বিস্তার করবো না। খানিকটা ধৈর্য্য ধর না?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
(সম্পাদিত)
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
খুবই মজা পেয়েছি। এই পর্বে খানিকটা কেমোফ্লজ আছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা: প্রথম পর্বটা পড়লাম। শিরোনামে বলেছো "হৃদয়স্পর্শী প্রেমের উপন্যাস"। কাহিনী তো এখনো সেখানে যায়নি। নাম প্রস্তাব করি কী করে! কাহিনী আরো এগিয়ে যাক।
লেখা সাবলীল হয়েছে। তবে আরো ঘষামাঝা করলে ঝরঝরে হয়ে যাবে মনে হয়। আরো কয়েক পর্ব পড়ে তারপর ভালো করে মন্তব্য করি। ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ সানাভাই। আসলে সর্বোপরি এটা একটা প্রেমের উপন্যাস। তবে আমাদের জীবনতো আকার ধারণ করে পারিপার্শwইকতার উপরে। যেমন একাত্তুরে যে মেয়েটা রেপ হলো সে তো রাজনৈতিক কারণে রেপ হলো। কিন্তু এরপর তার জীবন যেভাবে চলতে শুরু করলো আপাত দৃষ্টিতে সেখানে তো আর তার হাত ছিল না। সে বলতে গেলে সমাজের আজ্ঞাবাহক। আমি এরকম (একাত্তুরের বিরাংগনা নয়) একজন নারীর জীবন আঁকতে চেয়েছি যে শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের প্রেম জয় করার চেষ্টা করবে। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই প্রেমেরও বয়স বাড়ে - চেহারা বদলে যায়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
কোন উপন্যাস সম্পূর্ণ না পড়ে কোন মন্তব্য করাটা উচিত না। তাই তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে - আমিও যেমন অপেক্ষা করে যাচ্ছি তোমার উপন্যাসের একটি অধ্যায় পড়ে অপরটির জন্যে।
আচ্ছা পোর্টল্যান্ড এয়ারপোর্টের পর হঠাৎ করে ১৮টি বছর 'সুরুৎ' করে বাদ দেবার পক্ষে কি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে?
আমার কিন্তু খুব ভাল লাগছিল পড়তে এবং জানতে কেমন করে জীবনে প্রথম প্লেনে চড়ে 'সাইদা' (একই নাম আমার ছোট বোন লেখে - 'সাঈদা') একেবারে 'তালতলা' থেকে পোর্টল্যান্ড-এর জীবনে আস্তে আস্তে অভ্যস্থ হলো সেই কাহিনী।
ভাল থেকো।
সাইফ ভাই - উপন্যাসটার কাঠামোটা নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে। যেমন গঠনটা হবে এরকম -
এক ঝলক
১ম পর্ব - ২০০৮
২য় পর্ব - ১৯৮৬
৩য় পর্ব - ১৯৭৬
প্রথম পরিচয়
২৫ টা পর্ব - ১৯৭১ থেকে ১৯৮১
মধ্যবর্তিনী
৮/১০ টা পর্ব - ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮
শেষ বিদায়
২০ পর্ব - ১৯৮৮ থেকে ২০১১
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আমি নিদারুণ আগ্রহ নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম...
আপু, typical literature এর style এ লেখা না। analytical একটা ভাব আছে। পড়ে অন্যরকম লাগলো। (অ ট- এত কিছু ভাইবা কেমনে ঘুমান?? :-B :-B ) ভাল হয়েছে অনেক। :hatsoff:
আপু কিছু কথা খুবই সত্যি যেমন " সব বড়লোকই চামার না। এদের মধ্যে অনেকেই খুব মানবতাবাদী"
যাই হোক লিখাটার পট পরিবর্তন হয়ে গেছে খুব দ্রুত... এর দুটি অংশ হতে পারতো।। ভালো লাগলো
click this link and download my 1st Upornash "Shisho"
http://www.mediafire.com/?k8h31raknz9nyrk
🙂 🙂
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
তারাতারি ২য় পর্ব প্রকাশ করেন.........নইলে অবস্থান ধর্মঘটে যাব কিন্তু............ 😛
This part is taken from one of the chapters of my novel "Titikkha". "Titikkha" is the sequel of "Bitongsho". Probably I'll not post the next part of it here. You have to wait for the book or else I'll start strike ...
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
চলবে
:boss:
আপু কিছুই বুঝলাম না
আমি উপন্যাস পড়তে ভালবাসি তাই তোমার কাছে ছুটে আশি
লেখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে 🙂