১
অনেক আগে বয়স যখন পনের-ষোল ছিল তখন সুনীলের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। বইটির নাম ‘জীবন যেরকম’। উপন্যাসের একটি চরিত্রের নাম ছিল শান্তা। একটি চরিত্র আমার মিতা ঠিক এ কারনে নয়, উপন্যাসটির ঘটনার বুনন আমাকে পড়ার সময়টুকুতে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল। অক্ষর দিয়ে বোনা চলচিত্র। মনে হচ্ছিল চরিত্রগুলো সত্যি সত্যি শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। সুনীলের এই এক বাহাদুরী। এই বইটি আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে ছিল না। কার থেকে নিয়ে পড়েছিলাম তাও মনে নেই। কতদিন যে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত চষে বেড়িয়েছি এই বইটি হাতে পাওয়ার জন্য। পাইনি। অনেক বছর পরে কোন এক সময় হঠাৎ করেই একদিন বুয়েটের ছাত্রীহলে কোন এক সিনিয়র আপার টেবিলে বইটা আবিষ্কার করি। সেদিনই কি প্রথম বুঝতে পারি হারিয়ে যাওয়া প্রিয় জিনিষ খুঁজে পেলে কেমন লাগে? মনে হচ্ছিল ক্ষনিকের জন্য টাইম মেশিনে চেপে পুরনো স্মৃতিটার সেই জন্ম মুহূর্তে চলে গিয়েছিলাম। এক লাফে চব্বিশ থেকে পনেরতে। এরপরেও কত কিছু হারিয়ে গেছে। বিয়ের আংটি, পারিবারিক ছবি, ডায়েরী, বই, চিঠি – কত কী। তার কিছু খুঁজে পেয়েছি, কিছু খুঁজে পায়নি। প্রতিবারই প্রতিটি প্রিয় জিনিষের খুঁজে পাওয়ার মুহূর্ত দুম করে আমার জীবনের কয়েকটা বছর কমিয়ে দিয়েছিল। তার স্থায়ীত্বকাল হয়তো এক কি দুই মুহূর্তের। কিন্তু তারপরও কী অনাবিল আনন্দ সেখানে!হয়তো বয়স বাড়ার মতো বয়স কমা অবধারিত নয় বলেই।
‘জীবন যেরকম’ আর পড়া হয়ে উঠেনি। কী জানি এখন আর পড়তে সেই আগের মতো ভাল লাগবে কিনা। জীবন যেরকম আর সেরকম থাকে না। সময়ে সময়ে তা বদলে যায়। সাপ তার খোলস বদলে ফেলে। ক্যাটারপিলার এক সময় প্রজাপতি হয়। মানুষের বয়স বাড়ে। কিন্তু আপাদমস্তক হাতে-পায়ে দেখতে-শুনতে মানুষ মানুষই থেকে যায়। মানুষ বদলায় মনুষ্যত্ব, মূল্যবোধ, স্থান, স্বভাব, বাড়িঘর, ব্যাংক ব্যালেন্স, স্ট্যাটাস। আরো কত কী!আমাদের খোলসবদল, রংবদল চোখে দেখা যায় না। আবার তা গুনেও শেষ করা যায় না। তাই মানুষেরই জীবন যেরকম নিয়ে অতীতে অসংখ্য গল্প লেখা হয়েছে। বর্তমানেও হচ্ছে। ভবিষতেও হবে।
সময়ের স্রোতে ভাসমান জীবন যেরকমই হোক না কেন – প্রতিটি পর্বেই হতে চাই মোহাবিষ্ট, বিস্ময়াভূত, আনন্দিত, উদ্বেলিত, সংবেদিত, দুঃখিত, সমব্যথিত। আমার কাছে এরই নাম বেঁচে থাকা। মরে যেতে ভয় না। ভয় হয় মরে যাওয়ার আগে মরে যাওয়াকে।
২
‘এখন কী করছো?’ কেউ আমাকে এই প্রশ্ন করলে একটু দ্বিধায় পরে যাই। চিন্তা করে দেখলাম আমার এখনকার পর্বের জীবনে ‘ড্রাইভিং মা’ হবে সবচেয়ে যথার্থ শব্দ। নিজের দুইটা আর বোনের দুইটা মিলে এখন আমার চার বাচ্চা। একজন হাইস্কুল, একজন কমিউনিটি কলেজ আর দুজন এলিমেন্টারী স্কুলে। প্রায় সকালে তিনজন, মাঝে মাঝে চারজনকে নিয়ে সকালবেলায় ঘর থেকে বের হই। ওদেরকে স্কুল, কলেজে নামিয়ে দিই। সপ্তাহে দুদিন ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করি। কম্যিউনিটি আর বাচ্চাদের স্কুলে। বাদবাকী দিন কিছুক্ষনের জন্য একাকী আমি। প্রতিদিনকার ড্রাইভিংএ একই পথ পাড়ি দিতে হয়। তারপরও সে পথটুকু পেরুই একই রকম মুগ্ধতা নিয়ে।
এখন বসন্তকাল। দেখতে দেখতে যাই নীল আকাশ, সাদামেঘ, কচি সবুজ ঘাস, গাঢ় সবুজ পাইনের সারি, কলাপাতা সবুজ সিক্যামোর, হলুদ বন্য ফুল,বিন্দু বিন্দু মুক্তোদানার মতো সাদা কিম্বা গোলাপী ফুলে ছাওয়া চেরী, ন্যাড়া ম্যাপেল, দূরের বেলাভূমির রূপালী রেখা, পাহাড়, বন-বনানী আর তার মাঝখানে মসৃন পীচঢালা রাস্তা। সকালের আলো খুব নরম। মাঝে মধ্যে খুব বৃষ্টি। রং গায়ে মেখে নিথর হয়ে থাকা চারপাশ কখনো ঝলমল,কখনো ভেজা। তখন শুধুই গান আর গান। খবর শুনি সূর্য যখন মাথার উপর। নিজের একাকি সময়ের কোটা পেড়িয়ে যখন বাচ্চাদের এক এক করে বাড়ি ফেরবার সময় হয়। তখন মনে মনে হিসেব কষি সারাদিনের। বাচ্চাদের খাওয়া, হোমওয়ার্ক, সুইমিং ক্লাস, টাইকোয়ানডো, ব্যালে, পিয়ানো, টিউশন ক্লাস, বাজার-সদাই ইত্যাদি ইত্যাদি। কান খাড়া হয়ে থাকে জাপানের সুনামী, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, আমেরিকার অর্থনীতি এসব খবরে। এখন একটা গ্রুপের সাথে পরিচয় হয়েছে যারা ঠিক নিজেদের ভাল থাকা নিয়ে অতো আহলাদিত নয়। আন্তরিকভাবেই চিন্তা করে পৃথিবী কিভাবে আরো বেটার প্লেস করা যায়। তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা এই আমির চোখে সেই গ্রুপের অনেককিছুই ন্যাকামী বলে মনে হয়। তারপরও এটা বুঝি চিন্তার স্তরটা ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’তে উত্তরণ করতে না পারলে মনুষ্যত্বের জাতে উঠা হয় না। নিজেকে সেই বিপদের মধ্যে কল্পনা করে অনুভব করতে হয় আরেকজনের বিপর্যয়। দূরের সাগর জানে কিভাবে ফেঁসে উঠতে হয়, পাহাড় ধবসে যেতে জানে, মাটির নীচে ভূমির বেসপ্লেটের ফাটলে জমছে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি। এ তো গেল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সবার নিশ্চিত জীবন নির্ধারনের জন্য মানুষ এখনও কোন পরিপক্ক পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি। এর আগে আমরা কম্যিউনিজমের একটা প্রায়োগিক ধারা ব্যর্থ হতে দেখেছি। পুঁজিবাদী আমেরিকা মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তার জনগনকে আক্ষরিক অর্থেই ভালো রাখতে চায়। নইলে তো ভোটে টান পড়বে। কিন্তু আমেরিকা কি পারছে তার অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে?
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি। এবারের মন্দা অর্থনীতির প্রভাব চোখের সামনে দৃশ্যমান। একে একে নিভে যাচ্ছে আমার পছন্দের সব দীপাবলী।
৩
বার বছর আগে প্রথম যখন আমেরিকায় আসি তখন ক্যালিফোর্নিয়ার এই ফ্রীমন্ট শহরেই উঠেছিলাম। ঘুরে ফিরে এখন আবার সেই ফ্রীমন্টেই বাস করছি। বার বছর আগে পছন্দের এক বইয়ের দোকান ছিল বার্নস এন্ড নোবেল। তখন সে দোকানটায় খুব যেতাম। মনে আছে একবার ওদের লাগোয়া কফিশপে এক্সপ্রেসো কফি চেয়েছিলাম। ওরা আমাকে ছোট একটা কাপে এক ইঞ্চি উচ্চতার ঘন কালো কী এক নিমের রস দিয়েছিলো। সেদিনই প্রথম শিখলাম চাইতে হবে ল্যাটে বা ক্যাপাচিনো। বাংলাদেশে থাকতে আমরা বান্ধবীরা মিলে প্রায়ই নিউমার্কেটের নোবেলে যেতাম। ওখানে এক্সপ্রেসো কফি চাইলে বড় এক গ্লাস ভর্তি ফেনা ফেনা দুধেল কফি চলে আসতো। বুঝলাম দেশী জ্ঞান নিয়ে আমেরিকায় বেশিদূর চলা যাবে না। বার্নস এন্ড নোবেল থেকেই প্রথম পেলাম বৈদেশী জ্ঞান। পরবর্তীতে ফ্রীমন্ট ছেড়ে গিয়েছিলাম। আবার যখন আসলাম তখন যেতাম বর্ডারে- আরেকটা বইয়ের দোকান। আগেরটার কাছাকাছি।
বছর দুই-তিন আগ পর্যন্ত বই পড়ার অভ্যেসটা সুপ্ত ছিল। তারপরও সময় পেলে বইয়ের দোকানে যেতাম। রান্না, ফটোগ্রাফী, বাচ্চা – এরকম নানা বিষয়ের উপর কতো বই কিনতাম। উপহার দেওয়ার জন্য বই কিনতাম। আর নিজের জন্যও কোন একদিন পড়বো মনে করে অনেক বই কিনে আনতাম। আমার বই কেনার নেশা দেখে কিছুটা আতংকিত হয়ে নির্ঝর আমাকে একটা কিন্ডেল কিনে দেয়। অনলাইন থেকে বই কিনে ডাইনলোড করে যত ইচ্ছে তত বই পড়তে পারবো। ঘরের কোন জায়গা নষ্ট হবে না। কিন্তু একটা বইও কিন্ডেলে পড়িনি। বই না স্পর্শ করলে, পাতা উলটে পালটে না দেখলে কেমন জানি শূন্যতা বোধ হয়। কমলালেবু আর ভিটামিন সি’র মধ্যে তো একটু পার্থক্য আছে। কিন্তু কম্পিউটার যুগের প্রভাব তো আর রুদ্ধ করে রাখা যাবে না। অন্যরাতো ঠিকই ই-বই পড়ছে।
ফ্রীমন্টে প্রথমে বন্ধ হলো বার্নস এন্ড নোবেল। সেখানে এখন একটা হোল ফুডের চেইন স্টোর হবে। ওরা অরগানিক খাবার বেঁচবে। সে দোকানের একটা আইলে বইও পাওয়া যাবে। খুব একটা দুঃখ পাইনি। কারণ তখন আমি বর্ডারে অভ্যস্ত। এই কিছুদিন আগে বর্ডারের সামনে বিদ্যুৎপৃষ্টের মতো থমকে দাড়ালাম। বড় বড় সাইনে ক্লিয়ারেন্স সেল লেখা। ৪০%, ৫০% কমে যত পার বই কিনে নিয়ে যাও। বর্ডারও উঠে যাচ্ছে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এতো আর প্রিয় জিনিষ হারিয়ে যাওয়া নয় যে আবার ফিরে পাওয়ার আশায় থাকবো। এতো কাছের মানুষের চিরদিনের জন্য প্রস্থান।
বাসার কাছে একটা ব্লকব্লাস্টার ভিডিও দোকান ছিল। সেখানে প্রায়ই যেতাম। ডিভিডি রেন্ট করে নিয়ে আসতাম। তবে মাস দুয়েক হবে আর যাওয়া হয় না। নেটফিক্স আমেরিকার অনলাইন ডিভিডির দোকান। আমরা কম্পিউটারে বসে ওদের কাছে ছবি চাই। ওরা ডাকে পাঠিয়ে দেয়। এখন আবার ডাকেও ছবি চাইতে হবে না। টিভিতে উইই সংযোগ থাকলে সেখান থেকেই নেটফ্লিক্সের ছবি দেখা যাবে। মাকড়শার জালের মতো ইন্টারনেটের জাল ক্রমশ আমাদের আটকিয়ে ধরছে। এই কম্পিউটার জগতের ফিলসফিটা মনে হচ্ছে ডলার আয় করো আর খরচ করো। আমেরিকান ড্রিম। খরচ করার জন্য এখন আর কেউ সময়ের অজুহাত দিতে পারবে না। ঘরে বসেই সব সম্ভব। আর তাই আজকে ব্লকব্লাস্টার ডিভিডির দোকানে ক্লিয়ারেন্স সেল ঝুলছে। ব্লকবাস্টারের এই শাখাটা ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। মন্দা অর্থনীতি নাকি টেকনলজী কার দোষ দেব? এতো আর বাংলাদেশ নয় যে সব দোষ সামাজ্যবাদী পুঁজিবাদ আর তার দেশীয় চরদের চক্রান্ত বলে উপসংহার টানবো।
পনেরশ শতাব্দীতে গুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কার হবার পর থেকে পৃথিবী আর তার আগের জায়গায় থেমে থাকেনি। এরপর খুব দ্রুত এগিয়ে গেছে। বই নকলকারী হস্তরেখাবিদগন তাদের চাকরি হারিয়েছিল। আবার অন্যদিকে ছাপাখানায় চাকরির নতুন বাজার তৈরী হয়েছিল। তখনও নিশ্চয় অনেক সন্দেহ, হইহই রইরই হয়েছিলো। ঠিক এখন যেমন ঘোলওয়ালার চাকরি নিধনকারী শক্তি দইকে লোকে সন্দেহের চোখে দেখছে।
পৃথিবী এক জায়গায় থেমে থাকে না। কেউ থামিয়ে রাখতে পারেনি। বইয়ের দোকানগুলোকে তাদের ব্যবসা বদলাতে হবে নয়তো শুধু অনলাইনে বই বেচা শুরু করতে হবে। তাও তো ভাল – শুধু নতুন করে শুরু করা। এ প্রজন্মকে তো এখনও কোন সিভিল ওয়ার, বিশ্বযুদ্ধ কিম্বা গ্রেট ডিপ্রেশনের মধ্যে দিতে যেতে হয়নি। আমেরিকানরা খুব ডায়নামিক। চাকরি থাকবে, যাবে এমনটাই এরা দেখে এসেছে। এরা মূলত ডোবে এদের খরুচে স্বভাবের কারণে। অর্থনীতি যখন ভাল থাকে তখন ঋণ নিয়ে হলেও ভ্যাকেশনে যাবে। আবার খারাপ অর্থনীতির সময় ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাবে, বারগুলো ভর্তি থাকবে।
৪
গাড়ি চালাতে চালাতে যেসব দোকানপাট বন্ধ হতে দেখছি তার সাথে কম্পিউটার যুগের প্রভাব আর সিলিকন ভ্যালির অভিবাসী সংস্কৃতি বেশি সম্পর্কিত বলে মনে হয়েছে। বইয়ের দোকান, ডিভিডির দোকান বন্ধ হচ্ছে। আমেরিকান গ্রোসারী স্টোরগুলো বন্ধ হচ্ছে। আবার আরেকদিনে চাইনীজ আর ভারতীয় গ্রোসারীতে এলাকা ছেঁয়ে যাচ্ছে। বার বছর আগে ফ্রীমন্টে বড়জোর দুটো ভারতীয় গ্রোসারী ছিল। এখন তা প্রায় বারতে দাড়িয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট। আমার এখনকার বাসার কাছে নতুন আরেকটা শপিং সেন্টার গড়ে উঠছে। সেখানে একটা হাফপ্রাইস বইয়ের দোকান হয়েছে। সব বড় বড় ব্রান্ডের দোকানগুলো নতুন পসরা সাজিয়ে বসছে। স্টারবাকস, জাম্বাজুস এরকম খাওয়ার দোকানগুলো রীতিমতো জমজমাট। গাড়ি পথে পাঁচ মিনিট দূরত্বে আছে চেইনস্টোর ট্রেডার জো, ওয়ালমার্ট, কস্টকো, টার্গেট। কিচেন,ওয়ারড্রোপ, বুকসেলফ – সবকিছু ভরবার তৈজসপত্র নিয়ে এরা সেজে আছে। ব্যস্ত কাস্টমারকে ঘুরে ঘুরে দশটা দোকান থেকে সাংসারিক প্রয়োজনীয় মেটানোর হাত থেকে বাঁচিয়েছে। আয়েসী কাস্টমারের কথা ভাবা এখন বাতুলতা মাত্র। বর্ডার বা বার্ন এন্ড নোবেল যে সার্ভিসটা দিতো তা এখন কেমন জানি স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। চেয়ার পাতা আছে, টেবিল বিছানো আছে, কফি খেতে চাইলে একটা কফিশপও জুরে দেওয়া হয়েছে। তুমি বস, আইলে আইলে গিয়ে বই দেখ, টেবিলে বসে বই নাড়াচাড়া কর – ইচ্ছে হলে বই কিন। কোন জোরাজুরি নেই। টেক ইওর টাইম। জসিমুদ্দিনের ‘নিমন্ত্রন’ কবিতাটির মতো।
গত কয়েকবছরে লাখ লাখ লোকের চাকরি যাওয়ার ফলে ক্যালিফোর্নিয়ার এখন বিশাল বাজেট ঘাটতি। সারা আমেরিকাতেই তাই। সে ঘাটতি ব্যালেন্স করতে স্কুলের পয়সায় টান পড়ছে। তাতে স্কুলের সুযোগ সুবিধাগুলো কমে যাচ্ছে। তারপরও আমার কাছে এদের পাবলিক স্কুল সার্ভিস খুব ভাল মনে হয়। এখন আমি তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা একজন। আমেরিকার অন্যতম একটা দামী এলাকায় থাকি। স্কুল ডিস্ট্রিক্ট বেশ ভাল। স্কুলে যেসব ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে তাদের বাবামায়েদের অধিকাংশেরই মাস্টার্স ডিগ্রি, প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী। তাদের জীবনযাত্রার মান এবং মূল্যবোধ দুটোই বেশ উন্নত। সবাই বাচ্চাদের ব্যাপারে খুব যত্নশীল। আবার স্কুলের শিক্ষকরা হয় ককেশিয়ান নয় তিন-চার প্রজন্মের এশিয়ান। দেশে আমরা যেরকম শিক্ষক দেখেছি তার সাথে এদের মেলানো যায়না। সবাই খুব ভাল। অভিযোগ করার মতো আমি তেমন কোন কারণ দেখি না। বরং স্কুলের গুনগত মান ধরে রাখার জন্য স্কুল কতৃপক্ষের আন্তরিকতা খুব মুগ্ধ করেছে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমার মেয়ে এ বছর থেকে কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া শুরু করেছে। স্কুল কতৃপক্ষ জানালো বাজেট ঘাটতির জন্য এবারের কিন্ডারগার্টেনের (কেজি) ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রতি ক্লাসে বিশ থেকে ত্রিশ করা হয়েছে। কেজির জন্য সংখ্যাটা অনেক বেশি। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজিকে দুইভাগ করা হবে। মর্নিং শিফট আর ডে শিফট। তাহলে প্রতি ক্লাসে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা দাঁড়াবে পনেরজন। অর্থাৎ শিক্ষকরা দ্বিগুন কষ্ট করতে রাজী। কিন্তু কোন ভাবেই গুনগত মান কমতে দেবে না।
বলা হয় চায়না, ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। আমার একটু সন্দেহ হয়। মৌলিক সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে আসলেও কি ওরা আমেরিকাকে অতো সহজে ছাড়িয়ে যেতে পারবে? উৎপাদনশীলতার সাফল্যের একটা প্রধান উপাদান টিমওয়ার্ক। এশিয়ানদের মধ্যে বেশ আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা কাজ করে। এদের প্রধান গুন চোখকান বন্ধ করে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারা। ঠিক যেমন কে কতক্ষন পড়ার টেবিলে বসে থাকতে পারে। যেসব এশিয়ানদের অনেক উপরে উঠতে দেখেছি তারা মানুষ হিসেবেও বেশ ভাল। এগুতে হলে মূল্যবোধটাতেও গুরুত্ব দিতে হয়। যে ব্যবসায় সার্ভিস কম, তার পসারও কম। অনেকটা সময়জুরে ভাল মানুষ সেজে থাকা যায় না। তাকে আসলেও ভাল মানুষ হতে হয়। এই কম্পিউটার যুগে সব কিছুই যখন খোলা বুক হয়ে যাচ্ছে, তখন সুপার হতে গেলে ভাল না হয়ে উপায় নেই। মানুষকে দমিয়ে শাসন করার দিন গেল বলে।
৫
এবার বাংগালিদের কথায় আসি। মন্দা অর্থনীতির ধাক্কায় অনেকেই চাকরি-বাকরি হারিয়েছে। তবে দু-তিনবছর আগে খুব লোকের চাকরি যাওয়ার খবর শুনতাম। গতবছর থেকে তাদের আবার চাকরি পাওয়ার খবর শুনছি। সিলিকন ভ্যালিতে বাংগালি প্রফেশনাল বেশ কয়েক হাজার তো হবেই। সামাজিকতা যার যার ছোট ছোট সার্কেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সামাজিকতার ধরণটা এরকম যে সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনগুলোতে কোন দাওয়াতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজব করে চলে আসা। কে কোন স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কার চাকরি গেলো, কে বাড়ি খোয়ালো, কার ডিভোর্স হলো – সেসব জানতে একটু সময় হয়। সুসময়ে বাংগালিরা তাদের মেটেরিয়ালিস্টিক সাফল্যগুলো শেয়ার করে। কোন সমস্যা বা স্বপ্নের কথা শেয়ার করে না। তাই নিজেদের কাছেই নিজেরা হয়ে পরে সেসব মেটেরিয়ালিস্টিক সূচকের গ্রাফচিত্র। গাড়ি, বাড়ি, চাকরির লেবেলে নিজেদের অস্তিত্ব অনেকটা নামফলকের মতো। তাই কারো চাকরি চলে গেলে সে নিজেকে হঠাৎ করে অস্তিত্বহীন ভাবতে শুরু করে। তখন আবিষ্কার করে সে আসলে একদমই বন্ধুহীন। আসলে বন্ধুহীন সে আগেও ছিল। কিম্বা বই থেকে মুখ তুলে কখনই তার বন্ধু বানাবার অভ্যেস তৈরী হয়নি। চল্লিশের কাছাকাছি বয়স হলে অনেক অভিবাসী বাংগালিরা খুব ধার্মিক হয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে একজন আমাকে একটা মজাদার ব্যাখ্যা দিলো। স্ট্রেস কমানোর জন্য চাইনীজ বা ভারতীয়রা ড্রিংক করছে। কিন্তু মুসলিম সংসারী বাংলাদেশি ছেলেরা খুব কমই ড্রিংক করে। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য তারা ধর্মকে বেছে নেয়। আমি অবশ্য এর একটা বাস্তব প্রমান পেয়েছি। ২০০৩ এর মন্দার সময় আমারই এক সহপাঠির চাকরি গেলো। আবার ২০১১ তে যখন ওর সাথে দেখা তখন যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। পুরো নাস্তিক থেকে শতভাগ আস্তিক। শুধু হুজুরী বেশ নিতে বাকী। সে বন্ধুটিও অকপটে স্বীকার করলো জীবনের কঠিনতম সময়ে ধর্মকেই সে সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে খুঁজে পায়। আবার আরেক বন্ধুর তেমন কোন স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। তার সমস্যা জীবনটা বড্ড বেশি গতানুগতিকভাবে প্রেডিকটেবল হয়ে গেছে। জানি না এসব অভিবাসী নাকি সার্বজনীন সমস্যা।
২০০৩ সালের দিকেও আমেরিকার মন্দা দেখেছিলাম। তখন বরং অবস্থা আরো খারাপ ছিল। এবারে যে জিনিষ খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করলাম তা হলো চাকরির বাজারে মন্দায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চাকরির বাজারে ঢুকতে চাওয়া অনভিজ্ঞ নতুনরা এবং বয়স্করা। মোটামুটি যাদের কাজের পাঁচ+ বছরের অভিজ্ঞতা আছে তাদের চাকরি চলে গেলেও এক বছরের মধ্যে আরেকটা চাকরি যোগার করে ফেলতে দেখেছ। এ এলাকায় যারা সিনিয়র আছেন, বয়স পঞ্চাশ-ষাটের উপর, তারা অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। তাদের চাকরি পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। যারা ডাবল ইনকাম অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন তাদের অন্তত একজনের চাকরি থাকলে তেমন অসুবিধা হয় না। অসুবিধা হয় সিংগেল ইনকাম পরিবারগুলোর। আরেকটা জিনিষ খেয়াল করলাম তা হল বাংলাদেশিদের রিটায়ের প্ল্যান খুব একটা ভাল না। পঞ্চাশোর্ধ অনেককেই বলতে শুনেছি যতদিন সামর্থ আছে ততদিন তাদের কাজ করে যেতে হবে। অনেকেই স্টক মার্কেটে তাদের সঞ্চয় খুইয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বুশের সময় বাড়ির মার্কেটে খুব ইনফ্লেশন যাচ্ছিল। ব্যাংকগুলো সাবপ্রাইমের মতো অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু ঋণের ব্যবস্থা করে কাগজে কলমে বাড়ির মর্টগেজের পেমেন্ট কম দেখিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে লোকজনকে বাড়ি কিনিয়েছে। বছর ঘুরতে এসব বাড়িই তাদের গলায় ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সাধ্যের বাইরে বেশি ঋণ নিয়ে খরচ করা, স্টক মার্কেটে টাকা খোওয়াকে একজনের অর্থনৈতিক অজ্ঞতা এবং অপরিপক্কতা বলে মনে হয়। একবার বিপদে পড়লে তার থেকে বেড়িয়ে আসার সুযোগ থাকা উচিত। কিন্তু যখন মানুষ ঝুঁকি আর লোভের মধ্যে পার্থক্য বুঝে না তখনই সমস্যা। পরিনত মানুষের মূল্যবোধের অজ্ঞতা দূর করা বেশ কঠিন।
৬
আপাত দৃষ্টিতে বড় বাড়িতে আছে, দামী গাড়ি চড়ছে – আশেপাশে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। কিন্তু ভেতরে ভেতরে এদের অনেকেরই ব্যাংক ব্যালেন্স উই পোকায় কেটে গেছে। কেন এমন হয়?
গতসপ্তাহে একজন আপার সাথে কথা হলো। বয়স পঞ্চান্নের মাঝমাঝি হবে। উনি খুব আক্ষেপের সাথে বলছিলেন যে অল্পবয়সে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে দুহাতে টাকা কামিয়েছেন এবং ঠিক সেভাবে উড়িয়েছেনও। খুব দামী দামী ভেকেশন করেছেন, জীবনে বিলাশিতার কোন কমতি ছিল না। অথচ আজ বেশ অর্থকষ্ট, ভবিষৎ নিয়ে চিন্তিত। ছেলেদুটো পাশ করে ভাল চাকরি করছে এবং একই ভাবে দুহাতে টাকা উড়াচ্ছে। বাবা-মায়ের কথা ভাববে কী, বরং এখনও আশা করে বাবা-মা তাদের দামী উপহার দেবে। আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি শুনে বললেন, ‘তোমার এখনও অল্প বয়স। যতটা পার চাকরি করে টাকা-পয়সা জমাও। নইলে বয়স হলে আমার মতো সমস্যায় পড়তে হবে।’ আমি মনে মনে বললাম, আপনিও তো অনেক পয়সা কামিয়েছিলেন কিন্তু বিপদ তো ঠেকাতে পারলেন না। আয় না ব্যয় কোনটা নিয়ে বেশি ভাবা উচিত? বাস্তবিকক্ষেত্রে আমার নিজের একটা কৌতুহল মেটানোর জন্য উনাকে একটা হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন করলাম। ‘আচ্ছা ধরেন আপনার রিটায়েরমেন্ট নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অনেকটা নিরাপদ। তাহলে আপনি আপনার অল্প বয়সে কী করতেন?’
‘ঘুরে বেড়াতাম। পৃথিবীর প্রতিটা দর্শনীয় স্থান বেড়িয়ে আসতাম।’
উত্তরটা শুনে মনে হলো এই মহিলাকে আবার তার যৌবনবেলা ফিরিয়ে দিলে, বৃদ্ধ বয়সে একই সমস্যায় পড়বে। শুধু এই মহিলা নয়, এরকম আরো অনেকের সাথে কথা হয়েছে যারা বিলাসিতা, ভোগ আর কতটা অভিজাত হতে পারলেন তার ভিত্তিতে নিজেদের জীবনের সার্থকতা মাপেন। এরা কিন্তু আমাদের দেশের সবচেয়ে একাডেমিক ব্রিলিয়ান্ট গ্রুপ। অনেকদিন ধরে প্রবাসী। উনাদের সাথে জীবনদর্শন নিয়ে কথা বলে কখনও শুনিনি যে বলেছেন, ‘সমাজের জন্য কাজ কর, দেশ নিয়ে ভাব।’ বরং এরকম ভাবনা থাকাটা এক ধরনের অপ্রতুলতা। তবে সবাই এরকম নয়। তরুন প্রজন্মের প্রবাসীরা বিভিন্ন সংগঠন করে দেশে সাহায্য পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ তো বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে দেশে চলে যায়। আবার হতাশা নিয়ে ফিরে আসে। ভালমন্দ মিলিয়ে সবই চলছে।
এ দেশে অর্থনৈতিক মন্দা আসে যায়। এর চলার গতি বৃত্তাকার। তবে জীবন সরলরৈখিক। বৃত্তের পরিধীর অতি ক্ষুদ্রাকৃতি অংশ। এরজন্য পরিকল্পনার দরকার পড়ে। শুধু আজকের জন্য বাঁচতে পারলে ভাল হত। কিন্তু আমাদের কালকের কথাও ভাবতে হয়। আমি আমার এই এক জীবনে অনেক রকম মানুষ দেখেছি। অনেক বয়সের মানুষ দেখেছি। এই পর্যন্ত যা বুঝেছি তা হলো স্বপ্ন বা আরেকটু হিসেবী ভাষায় বলতে গেলে পরিকল্পনার একটা বিরাট ভূমিকা আছে। বৃদ্ধবয়সে অর্থকষ্টে না পড়বার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়, জীবনে সুখী হবার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। অথচ এই কথাগুলো সময় থাকতে আমাদের কেউ বলে দেয়না।
৭
আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন আমাদের পরিবার তার স্বর্নযুগ পেড়িয়ে ক্রমশ গরীব হচ্ছিল। হয়তো সে কারনেই আমি প্রতিটি পয়সা খুব হিসেব করে খরচ করি। নিজের প্রয়োজন সীমিত করে রাখি। এতে দেখলাম জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। বাচ্চাদেরকেও এই দীক্ষা দেব বলে ঠিক করেছি। ছোটবেলার শিক্ষা সারাজীবনকে প্রভাবিত করে। এই দেশে এমনিতেও না চাইতে বাচ্চাদের অনেক খেলনা জমে যায়। তারপরও পিয়ার প্রেসার, বিজ্ঞাপন – অনেক প্রলোভন নতুন নতুন কিছু কেনার ফাঁদে আটকে ফেলতে চায়।
একদিন মেয়েকে নিয়ে একটা খেলনার দোকানে গিয়েছিলাম। মেয়ে একটা পুতুল দেখে কিনতে চাইলো। বললাম,’তোমারতো অনেক পুতুল আছে। ওসব দিয়েই খেল। নতুন কোন পুতুল দেখলেই কিনতে হবে নাকি?’
পাঁচ বছরের মেয়ে সাথে সাথেই উত্তর দিল, ‘ঠিক তোমার জুয়েলারীর মতো। তোমার পুরনো জুয়েলারিগুলোই তুমি পড়ো। নতুন আর কিছু কেন না।’
মেয়ের মুখে পাকা কথা শুনে মনে মনে হাসি আর ভাবি আমার দীক্ষা তাহলে ঠিক পথেই এগুচ্ছে।
বাসার ঝাড়ুটা দুদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই একদিন চাইনীজ মার্কেটে মাছ কিনতে গিয়ে আরেকটা ঝাড়ু কিনে নিয়ে আসলাম। সেদিনই মেয়ে খুব শাসনের সুরে আমাকে বললো, ‘মামনি আজকাল তুমি খুব অযথা পয়সা খরচ করছো।’
আমি অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকাই। আমার শ্বশুর-শাশুরি প্রায় চার বছর আমাদের সাথে ছিলেন। শাশুরি আমাকে কখনও এরকম কথা বলেননি। এখন মেয়ে কথা শোনাচ্ছে।
‘রাইসা আমি কিভাবে অযথা পয়সা খরচ করলাম?’ আমি জানতে চাইলাম।
দুহাতে দুটো ঝাড়ু নিয়ে এসে রাইসা আমার সামনে দাড়াল। বললো, ‘একটা ঝাড়ু থাকার পরও তুমি আরেকটা ঝাড়ু কিনলে। এটা কি পয়সা নষ্ট না?’
হু, মেয়ে আমার গুরুমারা বিদ্যায় এখন ওস্তাদী দেখাচ্ছে। খোদার উপর খোদকারী। এজন্যই বলে ক্ষমতা নিরংকুশ রাখতে হলে কখনোই জনগনকে শিক্ষিত করতে নেই।
৮
বাড়ির পেছনের বাগানটা তৈরী করবো বলে একজন মালিকে ডেকে এনেছিলাম। এদেশে সাধারনত মালির কাজ করতে পাশের দেশ মেক্সিকো থেকে লোক আসে। মালি মহাশয় বেশ অভিজ্ঞ। নাম চিকো। চিকোর সাথে বাগানের প্ল্যান নিয়ে কথা বলছিলাম। বাগানে আগে থেকেই দুটো গোলাপ গাছ ছিল। গাছদুটো ছিল বড় বেশি বেমানান জায়গায়। চিকোকে বললাম প্রথমেই গাছদুটো তুলে ফেলে বাগানটাকে একদম শূন্য থেকে সাজাতে। চিকো বুদ্ধি দিলো গাছদুটো না তোলার। প্রথমে যে অংশটুকু অনাবাদী আছে সেখান থেকে কাজ শুরু করার। চিকোর উপর আস্থা রাখলাম। অনাবাদী অংশটুকু গাছ লাগিয়ে আবাদী করার পর দেখা গেলো আগের দুটো গোলাপ গাছ পুরো বাগানটার সাথে দিব্যি মানিয়ে যাচ্ছে। আমার সময়,পয়সা এবং শ্রম তিনটাই অনেক বেঁচে গেল।
আমেরিকা আমার অনেক কারণেই ভাল লাগে। তার একটা কারণ হচ্ছে এখানে সিস্টেমটা এমন যে ষোলভাগের চৌদ্দভাগ জায়গাতেই যোগ্য লোকেরা বসে কাজ করছে। মাঝেমধ্যে ভাবি যোগ্যতাই যখন সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা – বাংলাদেশের মাথামুন্ডের চিন্তাভাবনার এই ঘোর অমাবশ্যা কাটবে কবে?
জয় হে নিরংকুশ ক্ষমতার।
আমাদের সবার জীবন যেরকমে আরেকটু রং লাগুক, আশা জাগুক, পরিবর্তন আসুক – এই কামনা করে শেষ করছি।
৩-৩০-১১
এক টানে পড়ে ফেল্লাম। ভাল লাগল বরাবরের মত।
আপু কি কোন ছবি আপ্লোড করছেন নাকি লেখার মধ্যে, লিঙ্কের মত দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কোন ছবি আসছে না 🙁
ধন্যবাদ সাব্বির।
পোষ্ট করেও বাইরে বেরুতে হয়েছিল। পরে ঠিক করে ছবি আপলোড করলাম।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তাপা, আপনার লেখা পড়তে পড়তে আজকের সকালটাই সুন্দর হয়ে গেল... :dreamy:
কি সহজ-সরল আপনার জীবন-দর্শন! অথচ কত কার্যকর...
জীবনকে আমরা অযথাই জটিল করি... :-B
অল্প চাওয়া, তারচেয়ে কিছুটা কম বা বেশি পাওয়া...ছোট ছোট দুঃখ-কষ্ট, তারচেয়ে একটু বড় (এই ক্ষেত্রে একটু না হয় লোভীই হলাম... 😀 ) সুখ-আনন্দ...আর 'সেইরকম' কিছু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন...ব্যাস! আমার কাছে এমন জীবনই কাম্য... O:-)
আপনাদের (মা-মেয়ের) ইন্টার্যাকশনে অনেক মজা পেলাম। আপনি সম্ভবত লেখার সাথে পিচ্চির ছবি দিতে চেয়েছিলেন...কোন সমস্যার কারনে ছবি আসছে না।
অনেক অনেক ভাল থাকবেন।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
তোমার কমেন্টে সকাল সুন্দর করার কথা পড়ে আমার দুপুর উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ধন্যবাদ।
জুনা তোমাকে আর সিসিবিতে দেখা যায় না। দ্রুত একটা গল্প লিখে ফেল।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপনার এই লেখাটা পড়ে মনটাই ভাল হয়ে গেল। সহজ ভাষায় চোখের সামনে বদলে যেতে থাকা সময়টাকে কি চমৎকার শব্দবন্দী করলেন! লেখাটা এত স্পষ্ট কেমন যেন ছবি দেখার মতো পড়লাম। জীবন যেরকম সিরিজ হতে পারে কিন্তু। দারুন হবে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
এবার ছবিগুলো ঠিক মতো দিলাম। দেখতো মেলে কিনা?
অতীত বয়ানটাই তো একটা সিরিজ। বড়বেলায় আমার আর ডায়েরী লেখার অভ্যেস হয়ে উঠেনি। তাই সরলরৈখিক ঘটনাবলী না ্লিখে কোন একটা বিষয় কভার করার চেষ্টা করি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
প্রথম ছবিটা খুব সুন্দর। আমি একবার একটা এ্যামিশ মেনোনাইটদের গ্রামে ছিলাম দুদিন। ওদের ওখান থেকে ফেরার পথে এরকম সব বাড়ী দেখেছিলাম। ছবিগুলো কল্পনার সাথে তেমন মিলে নাই। আমি মনে করেছিলাম আপনার নেইবারহুড খুব ব্যস্ত না হলেও স্টারবাকস, বর্ডার বা বার্নস এন্ড নোবেল, ছোট ছোট এথনিক গ্রোসারি আছে বেশ। হয়তো আছে, ছবিতে নেই।ভেবিছিলাম রাইসা আর একটু ছোট। রাসীন টাইকোয়ানডো শিখে বেশ চোয়াল শক্ত, ছবিতে বরং একটু লাজুক দেখাচ্ছে। না মেলাটাই লেখার সার্থকতা। যে যার যার মতো কল্পনা করে নিতে পারে।
অতীত বয়ান সিরিজ ঠিকই।এটা তো বর্তমান বয়ান তাই বলেছিলাম আরকি। একভাবে লিখলেই হলো। 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আপু আপনার লেখাটা খুবই ভাল লাগল। অনেকগুলা প্যারা নিয়েই পড়ার সময় অনেক কথা মনে এসেছিল সেগুলো বললে কমেন্টেই ব্লগ হয়ে যাবে। আপনার পিচ্চির কথা শুনে খুব ভাল লাগল।
আমার কেন যেন মনে হয় খাবার দোকান ছাড়া আর কিছু থাকবে না কিছু দিন পরে। যেভাবে সবাই ই-শপিং এ চলে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন দেখে এত খারাপ লাগে।
ব্লগেই না হয় লেখা দাও - কোনভাবে কথাগুলোকে কী ধরে রাখা যায় না?
সবকিছু ওভারটেকনোলাইজড হয়ে যাচ্ছে। এতে সবরকম ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা আছে। দেখ অনেকদিন কোন বড় ফিলসোফার আসছে না। অথচ কম্পিউটার যুগের সমস্যাগুলো বিশ্লেষন করার জন্য তার খুব প্রয়োজন রয়েছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু, পড়লাম। একটানে পড়লাম। এত ভাল লেখেন কিভাবে?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মাষ্টার সাহেবের কাছ থেকে ভালোর সার্টিফিকেট পেয়ে যারপর নাই আনন্দিত। ধন্যবাদ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
দেশে চলে আসুন, খামোখা এমন এক দেশে পড়ে আছেন যেখানে আপনার কন্ট্রিবিউট করার কিছু নেই, আত্মতৃপ্তি ছাড়া 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
একদম ্মনের কথা বলছো ফয়েজ।
তবে দেশে গিয়েই বা কী করবো? কন্ট্রিবিউট করার কথা বলছো - আমি পিঁপড়ার ডুবতে সময় লাগবে না।
একবার এক আমেরিকান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন নিজের দেশ ছেড়ে আমেরিকায় এসেছি? বলেছিলাম আমাদের দেশে অনেক জনসংখ্যা। আমি দেশ থেকে বেড়িয়ে গেলে অন্তত কিছু জায়গা খালি হয়।
এ সান্তনা নিয়েই আছি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
জনসংখ্যা কনসেপ্ট পছন্দ হয়েছে। এভাবে ভাবা যেতে পারে। বরং আরও সুদূরপ্রসারী ভাবে, অন্য দেশে গিয়ে ছোট ছোট কলোনী টাইপ করে (বাংলা টাউন টাইপ আরকি) আরও বেশী সংখ্যায় বাংলাদেশী নিয়ে যাওয়া যায়। অথবা অন্যদেশে গিয়ে এমন ভাবে তাদের কর্মকান্ডে জড়িয়ে ফেলা নিজেদের, যাতে তারা বাধ্য হয় বাংলাদেশীদের নিতে।
সারভাইভ্যাল ফর দ্যা ফিটেস্ট 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
:thumbup:
:thumbup:
আপু আপনার ইমেজগুলো তে কিছু একটা সমস্যা আছে। সম্ভবত ফরম্যাটে। ডিরেক্ট লিংক দিয়েও দেখতে পারছিনা কিংবা মিডিয়া লাইব্রেরিতে ঠিকমত শো করছেনা। একটু কষ্ট করে আবার যদি আপলোড করে লিংক করে দেন খুব ভালো হয়। 🙂
আর লেখা নিয়ে কি বলবো। বরাবরের মতই মুগ্ধ পাঠক 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আবার আপলোড করলাম।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু অসাধারন লাগল......... খুব সুন্দর করে লিখেছেন......... :boss: :boss:
আর রাইসার ফ্যান হয়ে গেলাম............... 😀 ওর ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে না।
রাইসা যখন জেনেছিল যে ওর কথা আমি ব্লগে লিখি, আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। ও নাকি প্রাইভেট পারসন (!), ওর কথা লেখা যাবে ্না। যাই হোক আমি অভিভাবকত্বের সুবিধাটুকু ব্যবহার করছি।
ধন্যবাদ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
:))
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
রাইসা :boss: :boss: ::salute::
অসাধারন!! cadet college blog poribarer keo hoito ami na..kintu lekha ta pore khub valo laglo bole comments na diye parlam na.. 🙂
সাকিল মাসুদ - আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। ব্লগ পাঠকের জন্য। তাই এই ব্লগে যতো পাঠক আসবে ততই ব্লগের সার্থকতা। লেখক হিসেবে একটা গ্রুপিং করার সুবিধা এই যে লেখাটা বেশ কিছুদিন ধরে প্রথম পাতায় ঝুলে থাকে। বুঝলেন সবই ইন্টারনাল পলিটিকস 🙂 🙂 🙂
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
:))
আপনার চোখে আমেরিকা দেখতে ভালো লাগল। :boss:
ছবিগুলো দেখতে চাই।
দোয়া করবেন আপু, GRE- TOEFL দেয়ার ইচ্ছা আছে
এবার বলো তো বাছা আমার হাতে (বুঝতে হবে ফটোগ্রাফী) আমেরিকা দেখতে কেমন লাগছে?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
অনেক সুন্দর আপু। :boss:
এইবার নিজের চোখে দেখতে মঞ্চায় :dreamy:
রাইসামণি কে আদর রইল
এরকম লেখায় অনেক কিছু কমেন্ট করতে মন চায়, আবার দেখা যায় লিখতে গিয়েও কিছু লিখতে পারছিনা...
মোটের উপর- লেখাটা অনেক সাবলীল এবং পড়তে গিয়ে একটা আরামের অনুভূতি (ঠিক আরাম বলা ঠিক হবে না, অনেক কম্ফোর্টেবল বলা যায়...না না, প্রাঞ্জল হবে মনে হয় বাংলা শব্দটা) হল, সাথে নানান রকমের রঙ- ঠিকমত প্রশংসাও করতে পারছিনা আপু 🙁
আপনার ফটোগ্রাফিতে লাইক, রাইসা আর রাসীনের জন্য অনেক অনেক লাইক 🙂
অনেকদিন পর তানভীর। তোমার প্রোফাইল পিক বদলে গেছে।
এবার একটা তোমার জীবন যেরকম দিয়ে দাও। ঢাকা শহরে কর্পোরেট তরুন-তরুনীদের জীবন কেমন জানতে ইচ্ছে করে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপনার আর সব লেখার মতই একটানে পড়ে গেলাম... দারুন লাগলো :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
কি করি 🙁
তোমার কোটেশনে লেখাটা দেখে মনে হচ্ছে এশিয়ান কথাটা ঢালাও ভাবে মিন করা হয়েছে। শব্দ চয়নে আরো সাবধানী হতে হবে। লেখা উচিত ছিল আমেরিকায় অফিস পাড়ায় সে সব এশিয়ানদের দেখেছি তাদের অনেককে দেখে মনে হয়েছে ---
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
লেখাটা কয়েকবার পরেও মন্তব্য করার কিছু খুঁজে পেলাম না।
খুবই সাবলীল প্রাঞ্জল, একটানে পড়ে গেলাম।
ছবিগুলো ভালো লেগেছে।
( চোথা মারা কমেন্টের জন্য :frontroll: :frontroll: )
তোমার মন্তব্য আমি করে দিই --- কেমন লেখা লেখে যে পাঠকের মধ্যে কোন ভাব তৈরী করাতে পারে না। ফ্যাল ফ্যা্ল তাকানোর মতো পড়ার পর মনে হলো এতক্ষন কী পড়লাম তার কিছুই মনে করতে পারছি না।
ফ্রন্টরোলে হবে না - তোমার কপালে আছে মাইর।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
প্রফেসর ইউনুসকে তোমার দলের মধ্যে না আনা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছিল না - হাজার হলেও তো আমি বাঙ্গালী। এখনো বাংলাদেশে সরকারের বালখিল্য কার্যকলাপে মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে।
ঠিকই বলেছো।
এত বোঝার ক্ষমতা খুবই খারাপ - অনেক কষ্ট আছে তোমার জীবনে। তার মধ্যে দোয়া করি সুস্থ থাকো।
সাইফ ভাই মন্তব্যের জন্য খুব ধন্যবাদ।
প্রফেসর ইউনুসের ঘটনাটা আমার একটা স্বপ্নের ্বাক্সে পেরেক মারার মতো। দেশে ফিরে কিছু করবো এই ইচ্ছেটা এখন তুলে রেখেছি। তবে আশার কথা হলো এই যে শুধু আমিই না দেশের মানুষ ভেতরে ভেতরে সবই বোঝে। বিভিন্ন ব্লগে ঘুরেফিরে দেখলাম প্রফেসর ইউনুসের বিরুদ্ধে যেসব লেখা এসেছে - মন্তব্যের যুক্তি-তর্কে তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আগে বুদ্ধিজীবিরা মিথ্যাচার করে পার পেয়ে যেতে পারতো। এখন তা সম্ভব না। তবে সমালোচনা বা ভিন্নমত সবসময়ই কোন তত্ব তথ্যকে আরো পরিপক্ক করতে সাহায্য করে। মনে মনে এখনও স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি এতসব বিতর্ক যেন গ্রামীন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ফেসবুকে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহন আমাকে খুব উৎসাহিত করে। শিখলাম কখনও আশা ছাড়তে নেই।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ছোটবেলাতে মনে হতো, বড় হয়ে যখন চাকরী বাকরি করা শুরু করবো তখন দুনিয়ার সব গল্পের বই কিনে ফেলবো। ভার্সিটিতে পড়ার সময় টিউশনীর টাকার একটা বড় অংশ বরাদ্দ ছিলো বই আর সিগারেটের জন্যে। কিন্তু চাকরী পাবার আগেই জীবনের প্ল্যানিং আরেকজন করা শুরু করায় এই স্বাধীনতা অনেক কমে গেলো।
বহুল শ্রুত ডায়লগ -
১) চিন্তা ভাবনা করে খরচা পাতি করতে হবে।
২) বাসার রেসপসিবিলিটি নেয়া শুরু করতে পারিস না?
৩) ভবিষ্যতের কথা কবে থেকে চিন্তা করা শুরু করবি?
তারপরেও বই কিনতাম। বাচ্চা হবার পরে যখন বাসা বদল করছি, তখন আম্মু আর সে মিলে আমার একগাদা বই ফেলে (আসলে দান করে) দেয়াতে মারাত্বক কষ্ট লেগেছিলো। তখন থেকেই এই কম্পিউটারের পর্দাতে পড়ার অভ্যাস শুরু। কাগজের পাতা উলটে পড়ার মজা নেই তা ঠিক, কিন্তু বিচ্ছেদের ভয়ও তেমন একটা নেই।
আপনি, রাইসা আর ঝাড়ু কাহিনী পড়ে মজা পেলাম। এখনকার বাচ্চারা অনেক স্মার্ট। গুরুমারা বিদ্যার দোষ দিয়ে লাভ নেই। শনিবারে সবসময় বেলা করে ঘুম থেকে উঠতাম। এক শনিবারে আধোঘুমের মধ্যে শুনলাম আমার বউ আমার মেয়েকে বলছে, মারিয়াম, তোমার পাপাকে ঘুম থেকে উঠাও, বলো যে ব্যাংকে যেতে হবে। সে দৌড়ে এসে ডাক দিলো -
--- পাপা, পাপা। ঘুম থেকে উঠো।
--- উঠছি মা।
--- পাপা, আমি তোমার আম্মু।
--- থ্যাংক ইউ মা।
--- আর হানির শ্বাশুড়ী।
--- ওকে মা।
--- পাপা, তুমি বাইরে গেলে আমার জন্য একটা মিকি মাউসের ফ্লোটিং বেলুন নিয়ে আসবাআআআ?
চিন্তা করে দেখেন আড়াই বছর বয়েসেই এদের প্রেজেন্টেশন আর নেগোসিয়েশন স্কিল কেমন ডেভেলপ করে গিয়েছে।
দাম্পত্যের কতগুলো স্তর আছে। যেমন, ফর্মিং, স্টর্মিং, শেষেরটা হচ্ছে পারফর্মিং। অনেকেরই দ্বিতীয় স্তরটা পেরুতে অনেক সময় লেগে যায়।
আমার নিজের স্পেসটা তৈরী করার আগে আমি নির্ঝরের স্পেসটা তৈরী করতে করতে সাহায্য করেছি। এজন্য ওর অনেক ছোটখাট ইচ্ছে আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও গুরুত্ব দিয়েছি। আমার কাছে দাম্পত্য ইনিস্টিটিশনটাকে একটা ছোটখাট অন্য আর দশটা ইনিস্টিটিশনের মতোই মনে হয় - তা শুনতে যতই মেক্যানিকাল লাগুক না কেন। এটা ভালভাবে চালাতে গেলে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা এবং পরিপক্কতার দরকার হয়। সবারই নিজেদের একটা স্পেস দরকার হয়। বিশেষ করে একটা মেয়ে যতক্ষন পর্যন্ত নিজের একটা স্পেস খুঁজে না পাবে ততক্ষন পর্যন্ত সে কোথায় প্রকৃত শান্তি খুঁজে পাবে না। জানি না বোধহয় অপ্রাসংগিকভাবে অনেক কথা লিখে ফেললাম।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi