আমাদের ছোটোবেলায় রোজার মাসের আগে থেকেই এক রকম রেওয়াজ-রীতির আয়োজন আর উদগ্রীব অপেক্ষা শুরু হতো।
শৈশবের এই বিষয়ক ভাবনার শুরুটা ছিলো কে কয়টা রোজা রাখতে পারলাম এটা নিয়ে। যে বেশী রাখলো তার বুকের ছাতি নাসের ভুলু পালোয়ান। আর অন্যরা সব যেনো রবিউল (ঐ আমলের হার জিরজিরে খ্যাংড়া কাঠি কৌতুক অভিনেতা)।
পাড়ায় মহল্লায় ছেলে পুলেদের আর একটা প্রতিযোগিতা ছিলো তারাবীর নামাজ পড়া নিয়ে। দল বেধে সব কাচ্চা-বাচ্চা, কিশোর, তরুণ, যুবক বাড়ী বাড়ী থেকে একসাথে হয়ে যেতো মসজিদে। আর কিছু দুষ্টু সেই নিরিবিলি সময়ে ফন্দি ফিকির অনুযায়ী বাঁদরামিটা করে নিতো, যা নিয়ে পরে হয়তো লোকে গবেষণায় নামতো, কে করলো। কোনো মহল্লায় হয়তো আবার উল্টো কিছু একটা হলে যেই করুক লোকে ধরে নিতো করেছে নিশ্চিত ট্রেড মার্ক কোনো লেজছাড়া বানর বা বানরের দল।
একটা খুব আন্তরিক সামাজিক পর্ব ছিলো বাড়ী বাড়ী ইফতার পাঠানো। ট্রেতে ঢেকে কয়েকজন মিলে দল বেধে। মাঝে মাঝে যেনো বাহিনী নামতো কোনো বাসা থেকে সব ভাই বোনেদের মিলে। আড়ালে এক রকম কমপিটিশান, কে কতো বেশী পদ আর মজাদার পদ ইফতার বিলি করলো। এটার একটা গ্রান্ড ফিনালে হতো যেনো সাতাশ রোজার রাতে।
কারো কারো বাসায় মহল্লার কোনো গরীব বা মিসকিনের মাস কাবারি ইফতারের বন্দোবস্ত থাকতো। কখনো ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়াতো যে অন্যরা অমন ইফতার খাওয়াবার বুকিংটাই আর পেয়ে উঠত না।
সেহেরীর সময়টার একটা আলাদা আকর্ষণ ছিলো মহল্লায় মহল্লায় ঘুম ভাংগানোর গানের দলের মিছিল করে হামদ-নাত এসব গানের মতো মিছিল করে বলে বলে পাড়া প্রদক্ষিণ করা। একে একে বাড়ী বাড়ী মানুষ জন ঘুম ছেড়ে ওঠার শব্দ টের পাওয়া যেতো অন্য বাসা থেকে। কখনো কখনো কার বাসায় কি রান্না হলো সেই সুবাসও ভেসে বেড়াতো বাড়ী বাড়ী। যদিও পরিণত বয়সে এসে গানের দলের এই চর্চাকে পুঁজি করে এক রকম এক্সটর্শানও হতে দেখেছি।
মাংস ভূনা, মুরগীর ঝোল, মাছের দোপেয়াজা কি কি সব নানা রকম স্বাদু খাবারের গন্ধ ভেসে বেড়াতো। সব ঘরে শব্দের দ্যোতনা ক্রমশ: দ্রুততর লয়ে হতে থাকতো। তারপর এক সময় থিতু হয়ে আবার ঘর থেকে বের হয়ে কলতলায় গিয়ে শুরু হতো ফের।
শব্দগুলো ক্রমশ: কমে আসতে থাকতো আর মুরুব্বীরা গলা খাকাড়ি দিতে দিতে মসজিদের দিকে এগোতো প্রায়ন্ধকার ভোরে পাড়া-মহল্লার অলি-গলি দিয়ে। এই পর্বে ছেলেপুলেদের সংখ্যা কিছুটা কমে আসতো মাগরেব আর এশার তুলনায়। একদল সদ্য তামাক সখ্যতা পাতা তরুণ আড়াল আবডাল, ছাদ, সিড়িঘর, কিংবা অমন কোনো ঘুপচিতে শেষ টান দেবার এক অভিযানে লিপ্ত থাকতো মাইকে মুয়াজ্জিনের গলা পরিষ্কার করবার শব্দ পাওয়া পর্যন্ত।
সবকিছুর মধ্যে সেই যে এক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ছবি আর পার্বণের চর্চা দেখেছি তা আজ শধুই স্মৃতি। শুধুই অতীত। সেই সহজ সরল শাদামাটা দিনগুলো কোন ঝড়ে কোন জলোচ্ছ্বাসে হারিয়েছে জীবন থেকে ! কে জানে !
পুনশ্চ: ইহা কোনো পাক্কা রোজাদারের স্মৃতিনামচা নহে। যদিও উপবাসটা আমি থাকি। দ্যাট ইজ ইন সলিডারিটি টু দ্যা হ্যাভ নটস। আর সেই সাথে কৃচ্ছতার প্রয়াসটিকেও আবশ্যিক মানি।
'ছিল ছিল' রব কেন লুৎফুল ভাই? আমার তো ধারণা ছিল এ রেওয়াজ এখনো আছে।
আসলে সেই রেওয়াজগুলো অনেক কিছুই আজ নেই। আমার ফেবুতে দিয়েছিলাম হঠাত আসা এই ভাবনাগুলো নিয়ে লেখাটা। ওখানে একিবার ঢু মেরে এলে দেখবে মানুষভকি কি বলেছে। আর যারা বলেছেন তারা সবাই আমার বয়সী বা আরো বয়সী।
এ বছর একটা ভালো কাজ হয়েছে সাউন্ড পলিউশন রোধের বিচারে। তা হলো এই যে সেহেরীর মিছিল গেলো ক'বছরের মতোন নেই, মসজিদের মাইকে সেহেরীর সময় সীমা জানিয়ে উঠবার আর তাড়াতাড়ি সেহিরী শেষ করবার। আর সেই অতীতের অধিকাংশ শহরের সাইরেনের চল সব থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টা কেনো কিভাবে হলো তা জানিনা। তবে সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনের কমিশনার প্রার্থীরা এই শব্দ দুষণের ব্যাপারটা থেকে ঠিক একটা রেহাই দিতে পারেন নি (সবাই নয় যদিও)।
মাঝে আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো ভেতরে ভেতরে এক রকম নস্টালজিকতায় ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিলো অকস্মাত। তাই লেখা, ওই নস্টালজিকতার ভাইরাসটাকে কিছুটা ছড়িয়ে দেবার জন্য।
উপসসস ...
পেজ খুলে মোবাইলে লগড না আনলগড বুঝি না। বেশ কিছু দিন আগেও একবার এমন ধরা খেয়েছিলাম এলিয়েন বনে গিয়ে।
শেষ রাতে উঠে এক ঝলক দেখেছিলাম। পড়া হয়নি। আজ অফিসে আসতে আসতে পড়ে ফেললাম। পড়ে ফেললাম মানে সেই সময়ে ফিরে গেলাম। আসলেই কত কী যে বদলে যাচ্ছে।
আমাদের ছোট্ট শহরে তো সেহরি ইফতারিতে সাইরেন বাজানো হত।আমাদের বাড়ির কাছে একটি মসজিদের মিনারে সবুজ রঙের বাতি জ্বলে উঠতো ইওফতারের আগে। বিকেল হতেই ঘুরে ফিরে চোখ চলে যেত মসজিদের মিনারে
ছোট বেলায় তারাবির মজা ছিলো অন্যরকম। দল বেঁধে অনেক ধরণের বাঁদরামিও করেছি তারাবির ফাকে
একদল মানুষ ঢেঁরা পিটিয়ে গান গাইতে গাইতে ঘুম ভাঙাতে আসতো আমাদের শহরেও। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে সেহরির আয়জনের ফাঁকেই আকাশের তারা চিনতাম ভাই বোনের সাথে পাল্লা দিয়ে, কোনটি কাল পুরুষ, কোনটি তারা নয় গ্রহ এসব নিয়ে হইচই লেগে থাকতো আমাদের ছাদে। তখন আকাশ অনেক বড় ছিলো। লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। এ যুগের হিসাবে সাহসীও বলা যায়
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সেই ছোটো বেলার স্মৃতির মতোন নেই অনেক কিছুই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবু নস্টালজিকতা বলে কথা, স্মৃতির নাছোড় লেগে থাকা।
আমার স্মৃতিতে আরো খুব মনে পড়ে আমার নানার সাথে, দাদার সাথে সেহেরীর স্মৃতি।
রাতে ঘুম ভাংগানোর পর নানান রকম অনুভূতি। খাওয়া সাজানো হতে হতে উঠোনে বসে থাকার নানান স্মৃতি।
"তখন আকাশ অনেক বড় ছিলো"
কি চমৎকার একটা কথা বলে ফেললে সাইদুল!
হা হা... 😀
আমরা বেশি খানিকটা জুনিয়র হলেও এসব পেয়েছি। তারাবির সময়টা ছিল উঠতি ছেলেদের মাস্তির সময়...নামাজের নামে বের হয়ে নানা অভিযান চলত! নামাজের মধ্যেও অনেক ঝামেলা হত। কে কার পিঠে কিল পারতে পারে কম্পিটিশন হত!!
সবচেয়ে ঝামেলা হত সেহরির মাইকিং করা নিয়ে। পাড়ার সুন্দরী মেয়েদের বাড়ির সামনে মাইক ওয়ালা বেশিক্ষণ চিল্লাইত! আর ঈদের আগে আগে একাধিক গ্রুপ আসত মাইকিং এর জন্য টাকা চেয়ে! অথচ মাইকিং করত একটি গ্রুপই...
কত কথা মনে পড়ে গেল!
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ ভাই!
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
মাইকিং করে গানের চল অবশ্য আমার স্মৃতিময় কোথাও সেভাবে পাইনি । হতো কোথাও কোথাও ।
ক'বছর আগে পর্যন্ত ছিলো । আর ইফতার বিনিময়ের সেই রকম আয়োজনের পেছনের দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবেশী বা স্থায়ী বাসিন্দা না হবার বদৌলতে যদিওবা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তবে উত্তাপ হারিয়েছে ।
এবছর বেশ কটা জিনিস একসাথে চোখে পড়ায় ভাবনাগুলো এই লেখার মতোন করে মনে এলো ।
খাবার দাবারেও মনে হয় বেশ পরিবর্তন এসেছে। যেমন শাশ্লিক প্রন ঝাল ফ্রাই ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে যেটা তা হল কেনা কাটার ধুম। আগে মধ্যবিত্ত্বের সংগতি অনেক কম ছিল, ঈদের ভোজের আয়োজন করে আর সবার জন্য জামা জুতো হয়ে উঠতো না। যাহঃ রোজার কথা বলতে ঈদের কথা বলে ফেলেছি।
খাবার দাবারে এখন বেশ অনেক পরিবর্তন এসেছে । এতো সব বাহারী ভিনদেশী নামের, রেসিপির কিংবা বাহারের খাবার তখন ছিলো না ।
আস্তে আস্তে আরো পরিবর্তন আসবে । এটা সামাজিক পরিবর্তন, মানুষের ব্যাস্ততা, আগেকার মতোন বয়-বেয়ারা-বাবুর্চি-আয়া-বুয়া না পাওয়া সবকিছুর মিলিত ফলাফল । তাই এখন ফিরনি পায়েশ পুডিং এসবও মানুষ তৈরী খাবারের দোকান থেকে কিনে মিটাচ্ছে অনেক সময় ।
এ পরিবর্তন অবিশ্যম্ভাবী । তবে চোখের ক্ষিধেটা মনে হয় মানুষের বেড়েছে । আর সেটার ডেমোনেস্ত্রাশন এফেক্টটাও যেনো দিনে দিনে ব্যাপ্তিময় হচ্ছে ।
এগুলো কি আসলেই আর নেই! অনেকদিন রোজায় ছুটি কাটাই না। তাই একদম বর্তমান পরিস্থিতি সসম্পর্কে ধারনা নেই।
নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এসবের স্বাদ পেয়েছি বলে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
যা কিছু যতোটুকুনই আছে তাতে প্রাণের চিহ্ন খুঁজতে ডগ স্কোয়াড লাগবে ।
😀
সেহেরিতে ঘুম ভাঙ্গানি ঐ গান গুলার পুরান ঢাকার নাক হলো "কাসিদা"
আর্লি নাইন্টিজে বিটিভিতে একসময় "কাসিদা প্রতিযোগিতা"-ও হয়েছিল।
কথাগুলোও ছিল অদ্ভুত...
"রোজা রাখো নামাজ পড়ো
ওরে মমিন ভাই......"
"দিলদারো, রোজদারো
আল্লাহ কা পেয়ার হো
ঊটঠো সেহেরি কা লেও"
ইত্যাদি...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
কাসিদা বলতো সব জায়গায়ই সম্ভবত । হঠাত লিখতে গিয়ে নামটা মনে আসেনি আর বাদও পড়েছে ।
আজকাল মনে হয় ধর্ম-রাজনীতি-এক্সটর্শান-সাউন্ড পলিউশন এসব নানান বিষয়ের কারণে এই রকম পরিবর্তনগুলো এসেছে । যা যৌক্তিক এবং খারাপ নয় । তবু আমাদের সেই অতীতের অনেক খারাপও যেনো আজকের অনেক অনেক কিছুর চেয়ে ভালোই ছিলো ।
মানুষ এক আশ্চর্য স্মৃতি পিপীলিকা! অতীতের খাঁজে খাঁজে ঘুরে ঘুরে স্মৃতির জীবাশ্ম সন্ধান করাই যেন তার শখ। আপনার স্মৃতিগুলোর সাথে আমার স্মৃতিগুলোর অনেক মিল আছে। সেগুলোর মাঝে ভ্রমণ করিয়ে নেবার জন্যে ধন্যবাদ।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
মানুষ তার অতীতের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি দুটাকেই জাবর কাটতে পছন্দ করে । দুটোর পেছনের কারণগুলো যদিও ভিন্ন । একটা তার প্রাপ্তির অহংকারের আর অন্যটা না পেয়েই এতোটা পথ চলে আসার বাহাদুরি বা আহাজারি । মনের মধ্যে তীব্র আকুতি থাকে তার অগম্য অতীতে যাবার । যা বাস্তবে হবার নয় অথচ মনের ভেলায় চড়ে চাইলেই যাওয়া যায় । সেই সাথে আছে আর এক মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার । স্মৃতির ভেতর জাবর কাটতে কাটতে কখনো কখনো কোথাও কোথাও ঘটনাগুলোকে তার মনের মতোন করে সাজিয়ে নেবার আকুতি, যা বাস্তবের অতীতে সে করে উঠতে পারেনি ।
স্মৃতি পিপীলিকা কথাটি খুব মনে ধরেছে। মগজের কোষে কোষে এই যে একাকী ভ্রমণ অথবা জাবরকাটা সেটি অমূল্য বৈকি!
সুন্দরীগণের বাড়ির সামনে মাইকে চেচানো? হাসছি তো হাসছিই, জুনা! আমাদের সময়ে সেহরীতে হাকাহাকি হতো বটে কিন্তু সেটি খালি গলায়।
কাসিদা? সাউন্ডস হিব্রু টু মি
স্মৃতিকথা পড়তে আমার বরাবর ভাল লাগে, ভাইয়া!
ইসলামিক অনেক কিছুর ভেতরেই আরবী, ফার্সী আর উর্দু শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে । আর শুনতে যেমনই শোনা যাক মোল্লা-মৌলভীদের কাছে এই শব্দগুলো (তা শুধু আরবী নয়, ফার্সী বা উর্দু হলেও) বিশেষ পবিত্র পবিত্র ঠেকে । তাদের কাছে হাজার শ্রুতিমধুর বাংলা শব্দ প্রস্তাব করলেও তাতে হিন্দুয়ানির গন্ধ পায় তাদের সরস নাক । তারমধ্যে হিব্রু শব্দটা পেলে তাদের জ্ঞানের পরিধি এই শব্দের প্রায়োগিক বাক বৈশিষ্ট্যের বুলি (ফ্রেজ) হিসেবে না মেনে বলে বসবে বক্তা বিধর্মী ইহুদী শব্দ ব্যবহার করে পাপ কাজ করেছে ।
অতএব কি আর করা ...
আমার শৈশবের বেশিরভাগ রোজা হয়েছে শীতকালে। তাই রোজার সেহরির কথা মনে করলেই হাড় কনকনে শীতের রাতের কথা কেন জানি মনে পরে যায়।
হুমমম । এটা আমার ক্ষেত্রেও ...
শীতের রোজার স্মৃতিই আমারো মনে পড়ে বেশী । গরমের রোজার স্মৃতিগুলো বড্ড ধূসর ।
খুব সুন্দর স্মৃতিকথা। আজকের প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এসবের সাথে ততটা পরিচিত নয়। তবে আমাদের সময়ের প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছে তোমার লেখায়।
স্মরণ করছি আমার এক অনাত্মীয় চাচার কথা। লেট টীন এজে ওনার বাসায় রোজার মাসে কয়েকদিন ছিলাম। উনি সেহরী খাওয়ার পর একরাতে আমাকে রোজার নিয়্যত জিজ্ঞাসা করলে আমি বলতে পারিনি, তাই খুব লজ্জা পেয়েছিলাম, কেননা আমার বয়সী ওনার ছেলেরা তা গড়গড় করে বলে ফেলেছিলো। পরপর তিন দিনে উনি আমাকে মুখে মুখে আওড়িয়ে রোজার নিয়্যতটা সম্পূর্ণ মুখস্থ করিয়েছিলেন। সেই যে শিখেছিলাম, আজও মুখস্থ আছে। আরো বড় হয়ে অবশ্য জেনেছি মুখস্থ নিয়্যত আওড়ানোর প্রয়োজন নেই।
এমসিসি তে যখন ছিলাম, তখন বেশীরভাগ রোযা পেয়েছিলাম হাঁড় কাপানো শীতে। ঘন কুয়াশার কারণে অনেক সময় হাউস থেকে ডাইনিং হলটা দেখা যেতোনা। ঢুলু ঢুলু চোখে যখন কাঁপতে কাঁপতে ডাইনিং হলের দিকে যেতাম, তখন মনে হতো, ইস, সেখানে যদি একটা বিছানা থাকতো, তবে না খেয়ে বরং কিছুটা ঘুমিয়ে নিতাম।
আপনার মন্তব্য আর তাতে বোনা স্মৃতির সূতোগুলো ছুঁয়ে গেলো খুব আমাকেও। শীতের শেষ রাতে ঘুম ভাংগানোর পর নানা রকম অনুভূতি, দৃশ্যপট জুড়ে নিজেদের বাসা - নানাবাড়ী - দাদাবাড়ী - খালা ফুপুদের বাড়ী... কতো কি যে হৈ হৈ করে চলে এলো চোখের সামনে।
অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা খায়রুল ভাই।