এর আগের পর্বটি পাবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপি (১)…..
আজ ‘মেরী ক্রিস্টমাস’ দিবস। সরকারী ছুটির দিন। ছেলে বললো, সন্ধ্যায় আমাদেরকে নগরীর আলোকসজ্জা দেখার জন্য সিটি সেন্টারে নিয়ে যাবে। এখন এখানে সন্ধ্যা নামে নয়টায়। আমরা রওনা দিলাম সাড়ে সাতটার দিকে, তখনো বিকেলটা রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। এসব দিনে রাস্তাঘাটে সহজে পার্কিং স্পেস পাওয়া যায় না। ফ্ল্যাগস্টাফ রোডে কোন রকমে একটা পার্কিং স্পেস পাওয়া গেল। সেখানে গাড়ী রেখে আমরা পায়ে হেঁটে মেট্রোরেল স্টেশনে এলাম। সেখান থেকে রেলে করে মেলবোর্ন সেন্ট্রাল স্টেশনে নামলাম। স্টেশন থেকে বের হয়ে বেশ কিছুটা উঁচু-ঢালু পথ হেঁটে প্রধান আলোকসজ্জা স্থলে উপস্থিত হ’লাম। রাস্তায় প্রচুর ভিড়। জনতার ঢলকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক এবং নৈমিত্তিক কর্মচারী নিয়োজিত ছিল। তরুণ যুবা সহ বয়স্করাও একাজে মোতায়েন ছিল। ভিড়ভাট্টা সত্ত্বেও কারো মুখাবয়বে কোন উত্তেজনার ছাপ ছিল না। সবাই একে অপরকে হাসিমুখে ‘মেরী ক্রিস্টমাস’ জানাচ্ছিল। জনতা সুশৃঙ্খলভাবে স্বেচ্ছাসেবক এবং নৈমিত্তিক কর্মচারীদের নির্দেশ মেনে চলছিল।
জায়গায় জায়গায় ফুলের সমাহার ছিল। রাস্তার মাঝখান দিয়ে ট্রাম চলাচল অব্যাহত ছিল, তাই পথচারী নিয়ন্ত্রণ খুব সতর্কতার সাথে করতে হচ্ছিল। মেরী ক্রিস্টমাস উপলক্ষে ব্যাপক মূল্যহ্রাসের বিজ্ঞাপন জায়গায় জায়গায় এবং বিপণী বিতানসমূহের দরজায় দরজায় শোভা পাচ্ছিল। এরা বিভিন্ন উৎসবের সময় জনস্বার্থে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তার মধ্যে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যহ্রাস অন্যতম। জনগণের সহজ যাতায়াতের সুবিধার্থে ঐসব দিনের জন্য মেট্রোরেল এবং বাস ভাড়া ফ্রী করে দেয়া হয়। আবার যারা ডিউটি করবে (যেমন বাস, ট্রেন এবং ট্রাম চালক, গাইড, পুলিশ, সকল ইমার্জেন্সী বিভাগের লোকজন, ইত্যাদি), তাদেরকে সেসব দিনের জন্য দ্বিগুণ হারে বেতন দেয়া হয়। শুধু সরকারী বিভাগেই যে এটা করা হয়, তা নয়। বেশীরভাগ প্রাইভেট কোম্পানীগুলোও এ নিয়মটা মেনে চলে। এ ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। সাধারণ জনগণের প্রতি মায়া মমতা থাকলে, এবং তাদেরকে সহ দেশের সমৃদ্ধি ভাগাভাগি করে নিতে চাইলেই কেবল এ ধরণের কল্যাণকর, গণমুখী সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
এখানকার আলোকসজ্জাকে অবশ্য আমার কাছে তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। এখন এর চেয়ে ভাল আলোকসজ্জা আমরা আমদের নিজ শহর ঢাকাতেই দেখতে পাই, বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে। তবে ভাল লেগেছে এদের উৎসবমুখরতা এবং সুশৃঙ্খল আচরণ দেখে। ঘুরে ঘুরে জায়গায় জায়গায় কিছু ছবি তুলে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। পুনরায় সেই মেলবোর্ন সেন্ট্রাল মেট্রোরেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আসার পথে একটি দেয়াল ঘড়ি দেখতে পেলাম। ছেলে বললো, প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ঐ ঘড়িটি থেকে একটা পাখি (বলা বাহুল্য, ব্যাটারি চালিত, রিমোট কন্ট্রোল্ড) বের হয়ে এসে কিছুক্ষণ ওড়াউড়ি করে, ডাকাডাকি করে আবার ভেতরে প্রবেশ করে। ততক্ষণে ঘড়িটি ডিংডং বেজে সময় জানিয়ে দেয়। এটা শুনে আমার পাখিটি দেখার আগ্রহ হলো। সময় তখন এগারটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকী। আবার ট্রেন ধরার সময় এগারটা চার মিনিটে। আমরা এগারটা এক মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলাম, কিন্তু সেদিন বোধহয় কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাখিটি বের হলোনা। আমরা প্ল্যাটফর্মে এসে ট্রেন ধরলাম এবং ফ্ল্যাগস্টাফ স্টেশনে নেমে যেখানে গাড়ীটি পার্ক করা ছিল, সেখানে এসে গাড়ীতে উঠলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত বারটার মত হয়ে গেল।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৭ জানুয়ারী ২০২০
শব্দ সংখ্যাঃ ৪৩৫
ভ্রমণ কাহিনী আমাকে খুব টানে। এ সংক্রান্ত লেখা পড়তে ভীষণ ভাল লাগে। আপনার লেখা সামনে পেলেই পড়ে ফেলি। এটা শুরু করলাম... আপনার সুস্থ ও দীর্ঘজীবন কামনা করি খায়রুল ভাই।
অনেক ধন্যবাদ মামুন তোমাকে, শুধু এই পোস্টটা পড়ে মন্তব্য করার জন্যই নয়, বরং এত সুন্দর করে কথাগুলো এখানে বলে যাবার জন্য। আশাকরি, এ সিরিজের বাকি পর্বগুলোও এখানে পোস্ট করে যাব এবং তুমিও পড়ে বলে যাবে, কেমন হয়েছে সেগুলো।