গত বুধবার সকালে ল্যাপটপে লেখালেখির কিছু কাজ করছিলাম। হঠাৎ ছোট বোনটা ফোন করে জানালো, আম্মার শরীরটা বেশী ভালো নেই, যেন ফোন করি। কয়েকদিন আগেই ফোনে আম্মার সাথে কথা বলেছিলাম, তখন তিনি ভালো ছিলেন। আমার স্ত্রীও আগের দিনই কথা বলেছিলেন, তখনো ভালোই ছিলেন এবং অনেকক্ষণ ধরেই কথা বলেছিলেন। তাই হঠাৎ কি হলো, এ কথা ভাবতে ভাবতেই আম্মাকে ফোন করলাম। আম্মা জানালেন, তার কিছু ভালো লাগেনা। যেন একবার গিয়ে দেখা করে আসি।
মানুষের মন, কারণে অকারণে মাঝে মাঝে বিষন্ন হয়, অবসাদগ্রস্ত হয়। মন খারাপ হলে আমি আম্মার সাথে কথা বলি কিংবা ওনার কাছে চলে যাই, ওনারও মন খারাপ হলে আমাকে ডেকে নেন। গত বুধবার সকালে আম্মার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, ওনার মন খারাপ। তিনি এখন থাকেন রংপুরে, আমার ছোট ভাই এর সাথে। আমাকে ডাকলেন সময় করে একবার তাঁকে দেখে আসতে। মাত্র দু’মাস আগেই তাঁকে দেখার জন্য রংপুরে কয়েকদিন থেকে এসেছিলাম। এত তাড়াতাড়ি তিনি আবার ডাকলেন, তাই অনুমান করলাম, তাঁর মন নিশ্চয়ই আবার খুব খারাপ হয়ে থাকবে। এর আগে প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে আমারও মনটা খারাপ যাচ্ছিল। তাই আর দেরী না করে লেখালেখি ঐ অবস্থাতেই ক্ষান্ত দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গোসল করে তৈরী হয়ে নিলাম। অসময়ে একটু আর্লি লাঞ্চ করে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে পাঁচ-ছয় ঘন্টার রাস্তা যেতে প্রায় দশ ঘন্টা লাগলো। অবশেষে রাত সাড়ে এগারটার সময় যখন আমি বাসায় গিয়ে পৌঁছলাম, ততক্ষণে আম্মা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তবে আমার কন্ঠস্বর শুনে তিনি জেগে উঠলেন এবং ধীরে ধীরে হেঁটে এসে আমার রুমের সামনে দাঁড়ালেন। আমি তাঁকে কদমবুসি করে দুচারটে কথা বললাম। আমাকে তিনি আগে ফ্রেশ আপ হয়ে এসে খাবার খেতে বসতে বললেন। আমি তাড়াতাড়ি গোসল সেরে এসে দেখি, তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন।
আম্মার সাথে যখন থাকি, তখন খুব যে আমাদের মাঝে কথাবার্তা হয়, তা নয়। অল্প স্বল্প আলাপ সালাপ, আর কিছুক্ষণ পর পর একে অপরের সামনে দিয়ে ঘোরাঘুরি, ব্যস এটুকু করলেই আমাদের উভয়ের বিষন্ন মন ভালো হয়ে যায়। বাঙালী মায়েরা সাধারণতঃ ছেলেদের সাথে তেমন একটা মন খুলে পেটের কথা বলেননা, যেমন বলেন মেয়েদের কাছে। আমার মায়ের বয়স ৮৫ বছর, আমি বলবো এখনো আল্লাহ’র অশেষ রহমতে তিনি যথেষ্ট ভালো আছেন। কারো সাহায্য ছাড়াই এখনো তিনি ঘরের মধ্যে চলাফেরা করতে পারেন, চশমা ছাড়াই এখনো পেনশনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে পারেন। তবে এবারে লক্ষ্য করলাম, তাঁর স্মৃতিশক্তি অনেকখানি লোপ পেয়েছে, দৃষ্টিশক্তিও কিছুটা। কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলেন, তবে ধরিয়ে দিলে আবার শুরু করতে পারেন। আম্মার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম, তাঁর মন খারাপের মূল কারণ একাকীত্মবোধ। ছেলে, ছেলের বৌ উভয়ে চাকুরিজীবী, দুই নাতি নাতনি স্কুলগামী। অবশ্য সবাই একসাথে গৃহত্যাগ করেনা, মাঝখানে শুধু ঘন্টা দুয়েক আম্মাকে ঘরে বসে একা একা সময় কাটাতে হয়। এটুকুতেই তিনি হাঁপিয়ে উঠেন। আমি যাওয়ার পরের দিনেই তাঁকে আগের দিনের চেয়ে অনেকটা সুস্থ বলে মনে হলো। বৃ্দ্ধ বয়সের এই একাকীত্ম নিয়ে আমিও ভাবিত হ’লাম এবং বিষন্ন বোধ করতে লাগলাম। বিকেলে ভাতিজা ভাতিজিকে নিয়ে দশতলা বিল্ডিং আর ছাদে উঠলাম, চারপাশের প্রকৃ্তিকে একটু দেখে নেয়ার জন্য। আকাশ আর গাছপালার দিকে তাকিয়ে মনে হলো, মানুষের মন যখন বিষন্ন থাকে, তখন প্রকৃ্তিতে সে তার বিষন্নতার প্রতিফলন দেখতে পায়। A melancholic mind finds its own reflection in nature.
ঢাকা
০৭ অগাস্ট ২০১৬
গোধূলির মৌনতা….
Meditation at twilight…
অস্তাচলের আবির…
A parting smile…
সন্ধ্যা ঘনায়ে এলো, বেলা গেল ঐ…..
Preparing to part…
আঁধার ঘনিয়ে এলো, দিবাকর চলে গেলো….
Heralding the dusk….
দিগন্ত রেখায় বিদায়ী আলোর ছটা….
A parting smile at the skyline….
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে….
The sky broadens my perceptions of life….
পেছনে দিগন্ত রাখি,সম্মুখপানে রহি চাহি ….
Horizon at the back, vision afar…
আমি ও নিমগ্ন প্রকৃতি….
Looking at the nature around…
বলাকারা উড়ে গেলে সুদূর পাড়ে…
When cranes fly to the distant horizon…
সন্ধ্যা এলো বলে…
Evening approaching….
আলো আঁধারির খেলা….
Light and darkness at play…..
চারিদিকে চেয়ে দেখো আঁধার ঘনিয়ে এলো….
Look around and see how darkness falls….
ধীরে ধীরে নিঃশব্দে নেমে আসে আঁধার …
And quietly descends the shroud of darkness…