প্যারেন্টস’ ডে
সপ্তম থেকে নবম শ্রেণীতে পড়া পর্যন্ত প্যারেন্টস’ ডে গুলো আমার খুব ভালো লাগতো। প্রতি মাসের শেষ রবিবারে প্যারেন্টস’ ডে হতো। যে মাসে দু’সপ্তাহের কম কলেজে থাকতাম, সে মাসে হতো না। দিবসগুলোর দিকে মুখিয়ে থাকতাম। প্যারেন্টসদেরকে আমাদের হাউসে আসতে দেয়া হতোনা। কলেজ অডিটরিয়াম, ক্লাসরুম, করিডোর, গ্যালারী, কলেজ হাসপাতালের সামনের খোলা জায়গা, ইত্যাদি স্থানে প্যারেন্টসরা এবং ভাইবোনসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনেরা ক্যাডেটদের সাথে নিভৃতে বসে কথাবার্তা বলতে পারতেন। তাদের জন্য নিয়ে আসা নানারকমের পছন্দের খাবার খাইয়ে দিতে পারতেন। সিরিয়াস মায়েরা অমনোযোগী পুত্রদের জন্য ঢাকার ভালো ভালো স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নোট সংগ্রহ করতেন এবং গোপনে সেগুলো পুত্রধনদের নিকট হস্তান্তর করতেন। অবশ্য এটার প্রচলন শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকে, যখন কলেজের আইন কানুন কিছুকালের জন্য একটু শ্লথ হয়ে গিয়েছিলো। সপ্তম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত যেসব কারণে প্যারেন্টস’ ডে’র দিকে মুখিয়ে থাকতাম, সেগুলো হলোঃ
১। মায়ের হাতের রান্না খাওয়া।
২। আদরের ভাইবোনদের দেখা পাওয়া।
৩। কিছু শুকনো খাবারের রিজার্ভ হাতে পাওয়া।
৪। ব্যক্তিগত কোন সমস্যা থেকে থাকলে তা প্যারেন্টসদেরকে সাক্ষাতে বলতে পারা।
৫। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হবে আঁচ করতে পারলে সে সম্পর্কে আগেভাগে কিছু অজুহাত বলে দেয়া।
৬। কেবলমাত্র ঐ দিনের জন্য কলেজ ড্রেসের বাইরে ইচ্ছেমত ব্যক্তিগত পোষাক পরিধান করতে পারা।
৭। যাদের প্যারেন্টসরা একটু বেশী খাবার দাবার আনতেন, পরে সবাই মিলে তাদের কাবার্ড্ আক্রমণ করে ভাগ বসানো, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
প্রথম প্যারেন্টস’ ডেতে আব্বা, আম্মা আর বড়বোন এসেছিলেন। তাদের, বিশেষ করে আপি’র যেমন খুব উচ্ছ্বাস ছিল আমার কলেজটা ঘুরে ঘুরে দেখার, আমিও তেমন খুব আনন্দ পেতাম তাদেরকে কলেজের বিশেষ জায়গাগুলো দেখিয়ে, কলেজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে, শিক্ষকদের সম্পর্কে, পোষাক পরিচ্ছদ সম্পর্কে বলতে পেরে। তাদেরকে আমার প্রথম প্যারেড দেখাতে পেরে খুব গর্ব বোধ করেছিলাম। পরের দিকে প্যারেন্টস’ ডেতে আব্বাই বেশী আসতেন ভাইবোনদের একেকজনকে একেকবার সাথে নিয়ে। দশম শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে প্যারেন্টস’ ডে গুলো আর তেমন ভাল লাগতোনা। তখন বরং চাইতাম কেউ না আসুক, যেন ঐ সময়টা আমি মনের সুখে খেলার মাঠে কাটাতে পারি। আর তখন একটা বড় বড় ভাব এসে গিয়েছিলো। মনে হতো, প্যারেন্টস’ ডে’র ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো ছিচকাঁদুনে পুচকে ছেলেপেলেদের জন্য।
ফুটবল মাঠে সাদা বক
আমাদের কলেজে ফুটবল খেলার জন্য বিস্তীর্ণ মাঠ ছিল। মাঠগুলো বেশ উঁচু ও প্রশস্ত ছিলো। সব মিলিয়ে একসাথে মোট ১২টি দল সেখানে খেলতে পারতো। যতই বৃষ্টি হোক, কখনো পানি জমতো না। কোন একবার শ্রাবণ মাসে একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছিলো। আমি খুব সম্ভব তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি। বর্ষাকে, রবীন্দ্র সঙ্গীতকে, বক, পাখি, প্রজাপতিকে ভালবাসতে শুরু করেছি। একদিন শ্রেণীকক্ষ থেকে হাউসে ফিরে আসার সময় গুনগুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছিলাম, মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে, সেদিন ভরা সাঁঝে…। সে সময় এখনকার মত একাডেমিক ব্লক থেকে হাউস পর্যন্ত কাভার্ড ওয়াকওয়ে ছিলনা। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কিছুটা পথ দৌড়াতে হচ্ছিলো। হাউসের কাছাকাছি এসে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, আমাদের হাউসের (ফ হ) নিকটবর্তী ফুটবল মাঠের যে কোণাটা ছিল, সেখানে কয়েকটা সাদা বক এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কেননা কলেজের গাছ গাছালিতে বহু আকৃতির আর বর্ণের পাখি দেখে থাকলেও কোনদিন কোন বক চোখে পড়েনি, কারণ একেবারে নিকটে কোন জলাশয় ছিলনা। আর অবাক হবার আরেকটা কারণ, আমার গাওয়া গানটার মধ্যেও দুটো চরণ ছিলোঃ আকাশে উড়িছে বক পাতি, বেদনা আমার তারই সাথী……। আকাশের বককে ফুটবল মাঠে দেখতে পেয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছিলাম। বকগুলো কিসের আশায় এসেছিলো জানিনা, কারণ, যদিও ফুটবল মাঠটাকে তখন একটা নদীর মত দেখাচ্ছিলো, তথাপি সেখানে তো কোন মাছ ছিলনা। হয়তো কেঁচো টেচো বা পোকা মাকড় ওগুলোকে আকর্ষণ করেছিলো। যাই করুক না কেন, দৃশ্যটি তখন আমার চোখে বড়ই নয়নাভিরাম মনে হয়েছিল।
ভূঁইফোঁড় ঘুগড়ি পোকার বিস্ময়কর আবির্ভাব
তখন খুব সম্ভব ভাদ্র মাস। শুনেছি ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে। কয়েকদিন ধরে অসহ্য গরম পড়েছিলো, সাথে অস্বাভাবিক আর্দ্রতা। গায়ে কোন কাপড় রাখাই দায়। তার উপর ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, কারণ কয়েকদিন আগেই প্রচন্ড ঝড় বাদল বয়ে গেছে। মানুষের জীবন ধারণই খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছিলো, পশুপাখি আর পোকা মাকড়ের কথা তো বাদই দিলাম। হঠাৎ একদিন দেখি আমাদের ফুটবল মাঠটাতে কোথা থেকে যেন লক্ষ লক্ষ ‘ঘুগড়ি পোকা’ ভূঁই ফুঁড়ে বের হচ্ছে। ‘ঘুগড়ি পোকা’ আমাদের এলাকার আঞ্চলিক নাম। বই এর ভাষায় এটাকে ঝি ঝি পোকা নামে ডাকা হয়। ঝোপ ঝাড়ের কাছাকাছি বা মাটিতে বাস করে। তেমন আক্রমণাত্মক নয়, তবে শুনেছি ছাগলকে কামড়ালে বা হুল ফুটালে নাকি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। সেই ‘ঘুগড়ি পোকা’র দল ক্রমে ক্রমে হাউসের সামনে পেছনের মাটি থেকেও উদগীরণ হতে থাকলো। জানালা দিয়ে উড়ে উড়ে রাতে পড়ার টেবিলেও আসতে শুরু করলো। সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পরের দিন কাঠফাটা রোদ উঠলো এবং সারাদিন ধরে আগুনের তাপ ছড়িয়ে গেলো। সন্ধ্যার দিকে নাকে শুঁটকির মত গন্ধ লাগতে শুরু করলো। সারাদিন ধরে রোদের তাপে লক্ষ লক্ষ ঘুগড়ি পোকা ভাজা ভাজা হয়ে মরে পচে যেতে শুরু করেছিলো এবং শুঁটকির মত গন্ধ ছড়াচ্ছিলো। পরের দিন মাঠ পরিচর্যাকারীদের (গ্রাউন্ডস মেন) বস্তাভরে সেগুলোকে অন্যত্র ফেলে আসতে হয়েছিলো। কলেজ জীবনের এই আজব ঘটনাকে স্মরণ করে আজও খুব বিস্মিত হই এবং এর কোন কারণ খুঁজে পাই না।
একাকীত্ব
যত বড় হতে থাকলাম, ততই বুঝতে পারছিলাম যে আমি সবার সাথে থাকার সময় কোলাহলের মাঝেও একাকী বোধ করতাম, আবার একাকী থাকার সময় কখনোই একাকীত্ব বোধ করতাম না। তখন আমার ভাবনারাই আমার ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে যেত। তখনই জীবনে প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করি। ইচ্ছেমত যে কোন কাউকে কল্পনা করে ভাবতাম, সে আমাকে ভালোবাসে। শুরু হতো তাকে নিয়ে এটা ওটা লেখা। হয়তো তা কবিতা হতো, হয়তো না। তবে লেখাগুলো কাউকে দেখাতে পারতাম না, কারো সাথে এসব শেয়ার করতে পারতাম না। এভাবেই আমার কৈশোরের অনেক কবিতার অপমৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলাম, এ সবই অলীক কল্পনা। আমি যেমন ভালোবাসা চাই, আমাকে তেমনভাবে ভালোবাসার আসলে কেউ নেই। চিরকালের আশাবাদী এই আমির ভেতরে কেমন করে যেন একটা হীনমন্যতার বীজ গোপনে রোপিত হয়ে গিয়েছিলো, তা বুঝতে পারিনি। একটা অচেনা অস্থিরতা আমাকে তাড়াতে শুরু করলো। আমি ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করলাম, আমি কেউ নই। আই এ্যাম নোবডি।
প্রথম ধরণের পোকাটারই উপদ্রব বেশী হতো। দ্বিতীয় ধরণেরটারও হতো।
চলবে……
ঢাকা
২২ ডিসেম্বর ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
খোব ভালোলাগে আপনার জীবন কাহিনী আর কবিতা গুল পড়তে।
সামুতে আপনি আমার কথা নামের সিরিজে আপনার আগেকার কাহিনী গুল লিখেন সব গুলই পরেছি কিন্তু কমেন্ট করা হয়নি ওখানে আমার ইডি নেই তাই। এমনেতেই পড়তে জাই।
আপনার মাঝে একজন নিরলস ও নিষ্ঠাবান পাঠকের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হ'লাম। মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
ভালো লেগেছে।
আমি কালিয়াকৈর থাকতাম।
সেখানেও এই পোকাগুলো দেখা যেতো।
কিছুটা পাহাড়ি এলাকা বলেই হয়তো...
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমার এই লেখাটা পড়ে এমসিসি'র বেশ কয়েকজন জুনিওর আমাকে জানিয়েছে যে তাদের আমলেও পঙ্গপালের মত এইসব ঝিঁ ঝিঁ পোকার আবির্ভাব ঘটেছিল। হঠাৎ করে এমন লক্ষ লক্ষ পোকার ভূঁই ফুঁড়ে বেরিয়ে আসার নিশ্চয়ই কোন বৈজ্ঞানিক কারণ থেকে থাকবে।
আমি গ্রামে গঞ্জেও অনেক থেকেছি। এমসিসি'র মত ও রকম অকস্মাৎ এই পোকার প্রাদুর্ভাব ঘটতে আর কখনো কোথাও দেখিনি।
লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, রাজীব।
কথা সত্য স্যার। এই পোকাগুলো ভালই উপদ্রব করেছে, এবং আমি বেশ ভয়ও পেতাম। কলেজে কে যেন আমাকে বলেছিলো, এগুলোর নাম 'উড়চুঙ্গা' পোকা :)) !! সেই তুলনায় ঘুগড়ি নামটা যথেষ্ট শোভন।
লেখা পড়ে বরাবরের মতই ভাল লাগলো, স্যার।
সেই তুলনায় ঘুগড়ি নামটা যথেষ্ট শোভন -- 🙂 (প্রীত হ'লাম)
লেখাটা অন্যত্র পড়ে অনেকেই 'উড়চুঙ্গা' বা এ ধরণের কয়েকটা নাম সাজেস্ট করেছিলো। নামগুলোকে আমার কাছে পোকাগুলোর মতই বিশ্রী মনে হয়েছিলো, বিশেষ করে নীচেরটার মত।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
হ্যা হ্যা মনে পড়েছে আমরা উচুঙ্গা বলতাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:thumbup: 🙂
🙂
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
সকল ক্যাডেট এর স্মৃতিকথা আপনিই লিখে দিচ্ছেন, আপনার লেখনি জাগ্রত থাকুক, আরও অনেক স্মৃতিচারণ এর অপেক্ষায় রইলাম।
লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ, সাদাত। মন্তব্যে প্রীত ও অনুপ্রাণিত হ'লাম।
এই ব্লগে যতবারই আসি একবার মির্জাপুর ট্যাগে ক্লিক করি, আর আপনার এই সিরিজের কোন একটা লেখা পড়ি। আগেই বলেছিলাম হয়তো, ইট পাথরেরও যে মায়া থাকে সেটা বুঝি মির্জাপুরের যে কোন জায়গার স্মৃতিচারণ পড়বার সময়। মনে হয় আমিও সেই সময়ে হেঁটে বেড়াই। ইট পাথরের জীবন না থাকলেও সময়ের জীবন আছে। যে সময়কে ফেলে এসেছি ৯৫ একরের মাঝে সেই সময়ের চলমান বায়োস্কোপ কখনও থামে না মনের পাতা থেকে।
====
আমাদের সময়ে প্যারেন্টস ডে হত মাসের শেষ শুক্রবার। তবে আমরা যখন ক্লাশ সেভেনে আসি তখন একটা নতুন নিয়ম হয়। খুব সম্ভবত আমরাই ক্যাডেট কলেজের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র ব্যাচ যারা আসার পরে টানা তিনমাস কলেজে ছিলো। সেই দীর্ঘ সেমিস্টারের জন্যই হয়তো আমাদের সময় থেকে নিয়ম করা হয় সপ্তম শ্রেণীর জন্য দুই সপ্তাহ পর পর প্যারেন্টস ডে। প্যারেন্টস ডে এর অভিজ্ঞতা অবিমিশ্র আনন্দদায়ক না। একদিকে যেমন মায়ের হাতের খাবার খাওয়া আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হতো উল্টোদিকে ঝামেলাও ছিল। আমার বাবা যেখানেই যান দোস্ত বন্ধু যোগাড় করে ফেলেন। কলেজ ও এর ব্যাতিক্রম ছিল না। ফলে বিভিন্ণ সময়ে বিভিন্ন স্যারদের কাছে আমার নামে 'বদনাম' শুনে তার বিরক্তিকর লেকচারও শুনা লাগত। আমাদের শেষ প্যারেন্টস ডে এর স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে। প্যারেন্টস রা চলে যাবার পরে ব্লক থেকে হাউসের রাস্তা ধরবার সময় হুট করেই মনে হয়, এটাই শেষবারের মত এভাবে যাওয়া। আমাদের শেষের শুরু দেখেছিলাম শেষ প্যারেন্টস ডে তেই।
====
বৃষ্টি নিয়েও মজার স্মৃতি আছে। তবে বক দেখবার অভিজ্ঞতা নাই। আমার কাছে বৃষ্ট সবচেয়ে ভালো লাগতো সোহরাওয়ার্দী হাউসের পোর্চ থেকেই। একান থেকে পেছনের লেকের উপর যখন বৃষ্টি পড়তো আর দূরের টিলা গুলো মিলে এক ধরণের অদ্ভুত মায়া তৈরি করত। দেজাভু লেগেছিল, গতবছর যখন এখানের একটা ন্যাশনাল পার্ক (গ্রস মর্ন) এর কটেজে দাড়িয়ে জলাধারের পাশে বসে অপর পাশের টিলা দেখি সময়ে অসময়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন সোহরাওয়ার্দী হাউসের পোর্চে বসে টিলা দেখছি দূরে।
====
পোকার উপদ্রব আমাদের সময়েও কম বেশি লেগেই থাকতো। অনেকেই উপরে যাকে 'উড়চুঙ্গা' বলেছে সেটা খুবই বিরক্তি কর ছিল। দুষ্ট বালকরা থার্ড প্রেপে কেউ ঘুমাতে থাকলে জামার ভিতর উড়চুঙ্গা ছেড়ে দিয়েছে এমনও মনে করতে পারি। আরেকটা পোকা ছিল যেটার কথা খুব মনে করতে পারি। কেচোর চেয়ে বড় সাইজের দেখতে এবং টাচ করার সাথে সাথে সে কুণ্ডুলী পাকিয়ে যেত। পোকার সাথে সাথে আরেকটা জিনিসও আমাদের নিত্যসঙ=গী ছিল। সেটা হলো গুইসাপ। আগে গুইসাপের ব্যাপারে এক ধরণের ঘিনঘিনে অনুভূতি থাকলেও কলেজে থাকার পরে জিনিসটাকে খুবই নিরীহ আর সাধারণ মনে হত।
====
অনেককাল আগে যকন সামু ব্লগে ব্লগাইতাম আমার এক পরিচিত লোক ছিল যার নিক ছিল 'জনারণ্যে নিঃসঙ্গ পথিক'। আপনার শেষ প্যারা পড়ে সেই ভাইয়ার কথা মনে হলো। তবে আসলে দিন শেষে মিস্টার নোবডি আসলে আমরা সবাই। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আসলে আমরা বেশিরভাগ লোকই আরেকজনের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করি না। আসলে একজনের কাছে আরেকজনের গুরুত্বটা এক ধরণের আরোপিত গুরুত্ব। আর এই গুরুত্ব অর্জনের জন্যই আমরা সারা জীবন ধরে এটা ওটা করে নিজেকে ব্যস্ত রাখি।
====
কথায় কথায় অনেক কথা বলে ফেললাম। লেখায় অনেক ভালো লাগাও রেখে গেলাম।/ শুভকামনা জানুন।
তোমার এ চমৎকার মন্তব্যটা পরে মুগ্ধ হ'লাম, আমিন। বিশেষ করে তোমার শেষ কথাগুলো মনে রেখাপাত করে গেলঃ
আমরা বেশিরভাগ লোকই আরেকজনের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করি না। আসলে একজনের কাছে আরেকজনের গুরুত্বটা এক ধরণের আরোপিত গুরুত্ব। আর এই গুরুত্ব অর্জনের জন্যই আমরা সারা জীবন ধরে এটা ওটা করে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। চমৎকার!
যে সময়কে ফেলে এসেছি ৯৫ একরের মাঝে সেই সময়ের চলমান বায়োস্কোপ কখনও থামে না মনের পাতা থেকে। - আর সে কারণেই তো এ লেখাটা লিখে চলেছি স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে।
আমার ভালো লাগতো ফজলুল হক হাউসের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডান কোণাকুণি দৃষ্টি মেলে দিয়ে টীচার্স কোয়ার্টার্স আর স্টাফ কোয়ার্টার্স এর মাঝের কোণা দিয়ে দেখা যাওয়া নীচু জলাভূমির উপর বৃষ্টির ঝাপ্টা দেখতে। আবার মাঝে মাঝে পেছনের জানালা দিয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন ঘন গজারী বনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃষ্টি দেখতে। যখন হাসপাতালটি নির্মিত হয়নি, তখন জায়গাটিকে দেখতে ঘন অরণ্যের মত মনে হতো।
আরেকটা পোকা ছিল যেটার কথা খুব মনে করতে পারি। কেচোর চেয়ে বড় সাইজের দেখতে এবং টাচ করার সাথে সাথে সে কুণ্ডুলী পাকিয়ে যেত - এ পোকাটাকে আমাদের এলাকায় "কেরুন্ডা" বলে ডাকা হয়। এগুলোরও প্রচুর আনাগোনা ছিল আমাদের সময়েও।
তুমি এখন কোথায় থাকো? কী পড়ছো বা করছো?
যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। শুভকামনা রইলো।