আন্তঃহাউস গার্ডেনিং প্রতিযোগিতাঃ
আন্তঃহাউস আর্টস এ্যন্ড ক্র্যাফ্টস প্রতিযোগিতার মত আরেকটা প্রতিযোগিতা যেটাতে দক্ষতা নির্বিশেষে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হতো, সেটা ছিলো আন্তঃহাউস গার্ডেনিং প্রতিযোগিতা। বাগান করার জন্য আমাদের হাউসের সামনে যে জমিটুকু বরাদ্দ করা হয়েছিলো, সে্খানে ছিল ইমারত নির্মাণকালীন সময়ে ইট সুরকি ইত্যাদির ভাগাড় আর পানি ধরে রাখার আধার। প্রতিদিন আমাদেরকে গেমস পিরিয়ডের পরে ঘন্টাখানেক সেখানে শারীরিক শ্রম দিতে হতো। মাটি ভীষণ শক্ত ছিলো, কোদাল চালালে শুধু ইট পাথর আর সুরকির কণা বেরিয়ে আসতো। এরকম একটা জায়গায় ফুল ফোটানো খুবই দুঃসাধ্য একটা কাজ ছিলো। প্রথম প্রথম হাউস মাস্টার আর হাউস টিউটরগণ স্বয়ং এসব কাজ তদারকি করতেন। পরের দিকে তারা আর আসতেন না। হাউস প্রিফেক্টদের উপরেই তারা এ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এ দায়িত্ব পালনে আমাদের হাউস প্রিফেক্ট বদরুল ভাই অত্যন্ত নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে আমাদের কাজ তদারকি করতেন যেন কেউ ফাঁকি দিতে না পারে। কখনো কখনো তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সাথে বেশ নির্দয় আচরণও করতেন, তবে আমরা সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম যখন আমাদের হাউস প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলো। তিনিও আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন যে তিনি ওটুকু কঠোর না হলে আমরা প্রথম হতে পারতাম না। মাত্র কয়েক মাসের পরিশ্রমে ইট সুরকির বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফোটাতে পারবো, এ কথা আমরা তখন স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। এর পর থেকে আমি যতবার কলেজে গিয়ে ঐ বাগানটা দেখেছি, ততবারই স্মরণ করেছি ঐ মাটিতে আমাদের কতটা ঘাম ঝরানো আছে। প্রথম পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে বদরুল ভাই আমাদের সাথে সদয় আচরণ করতেন। আমরাও তার কর্তব্যনিষ্ঠার আলোকে তার রূঢ় আচরণটুকু সহজে মেনে নিয়েছিলাম।
আমার মনে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ছবিঃ
এমসিসিতে আমার দেখা প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন কর্ণেল এম এ আনসারী (অবঃ)। তিনি লম্বা, ফর্সা, ঋজু গঠনের ছিলেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন বিধায় সামরিক পোষাক পরিধান করতেন না, তবে তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের মতই সাদা শার্ট, সাদা ট্রাউজার্স, কালো জুতো আর বেল্ট এবং কলেজ টাই পড়তেন। শিরদেশে পরিধান করতেন তার নিজস্ব ট্রেডমার্ক হেডগীয়ার, ফেল্ট হ্যাট। সপ্তম শ্রেণীতেই আমরা ভূগোল পড়তে গিয়ে স্ট্রলারের জিওগ্রাফী বই রেফারেন্স বই হিসেবে লাইব্রেরীতে পেয়েছিলাম। সেখানে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ আর সৌরমন্ডলীয় অন্যান্য হেভেনলী বডিজের রঙিন ছবি দেখে মুগ্ধ হ’তাম। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগতো সৌরজগতের ষষ্ঠ গ্রহ (সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী) স্যাটার্ন এর ছবি দেখতে। গ্রহটির বিশেষ সৌন্দর্য ছিলো স্যাটার্ন রিংস বা শনির বলয়। দূর থেকে প্রিন্সিপালের হ্যাট পরিহিত মাথাটা দেখলে স্যাটার্ন রিংস এর মতই মনে হতো। আনুষ্ঠানিক মার্চপাস্টের সময় এডজুট্যান্ট যখন প্যারেডকে এ্যটেনশনে (আমাদের সময় ড্রিল এর ওয়ার্ডস অব কমান্ড ছিলো ইংরেজীতে, তাই আমি সেভাবেই লিখবো) রেখে তাঁর কাছে রিপোর্ট করতেন, তখন তিনি স্যালুটের জবাবে আঙুলের ডগা দিয়ে তাঁর হ্যাটটাকে সামান্য উঁচিয়ে ধরতেন। মার্চ পাস্টের সময় স্টেজের সামনে গিয়ে আমরা যখন “আইজ রাইট” করতাম, তখনো তিনি হ্যাটটাকে সেভাবে উঁচিয়েই স্যালুট গ্রহণ করতেন। তখনই জেনেছিলাম, বেসামরিক পোষাকে মাথায় হেডগীয়ার পরিহিত থাকলে সামরিক অফিসারগণ ওভাবেই স্যালুট গ্রহণ করে থাকেন।
কর্ণেল আনসারীর একটা প্রিয় ও প্রায়োচ্চারিত বাক্য ছিলোঃ “One bad fish spoils the whole pond”। তাঁর কথা ছিলো দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আমাদের হাউসে আমার চেয়ে দুই ব্যাচ সিনিয়র ক্লাসে পারভেজ সাত্তার(?) নামে এক বড়ভাই ছিলেন। তিনি এক রাতে তারই এক ব্যাচমেটের সাথে মারামারি করেছিলেন। বক্সিং মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। প্রিন্সিপাল খবর পেয়ে সাথে সাথে ছুটে এসেছিলেন। ঘটনার বৃত্তান্ত শুনে তিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পারভেজ ভাইকে কলেজ থেকে বের করে দেয়ার। তখনকার দিনে তো মোবাইল ছিলনা। ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো ওয়ার্লেস বার্তা, মগবাজার এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। প্রায়শঃ সেই ওয়ার্লেস এক্সচেঞ্জেটি বিকল থাকতো। মগবাজার মগবাজার বলে গলা ফাটিয়েও অপারেটর ঢাকার সাথে সংযোগ করাতে পারতোনা। তবুও ঐ রাতের মধ্যেই পারভেজ ভাইকে ঢাকায় তার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো। এখনকার দিনে একজন অধ্যক্ষ কতটুকু স্বাধীনভাবে এ ধরণের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন, তা সকলের জন্যই সহজে অনুমেয়।
প্রতি সোমবারে (সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস) আমাদের মর্নিং এ্যসেম্বলী হতো। সেখানে একজন ক্যাডেট সুরা ফাতিহাসহ পবিত্র ক্বোরান থেকে কিয়দংশ মুখস্থ তেলাওয়াৎ করার পর আমাদের ইসলামিয়াত শিক্ষক সেটার ইংরেজী অনুবাদ আর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতেন। তারপরে প্রিন্সিপাল স্যারও কিছুটা আলোকপাত করে অন্যান্য জরুরী বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখতেন। ইংরেজীতে দেয়া তার বক্তৃতা শুনতে আমার খুব ভালো লাগতো। আমাদের ক্লাসের জয়নুল আবেদীন (এখন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল) আর আমিনুল হক (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী শিপিং ব্যবসায়ী, নতুন সেনাপ্রধানের বড়ভাই আর ঢাকা উত্তরের নতুন মেয়রের ছোটভাই) খুব ভাল ক্বিরাত পাঠ করতে পারতো। এরা দু’জনেই বেশীরভাগ সময়ে মর্নিং এ্যসেম্বলীতে ক্বিরাত পাঠ করতো। তখন কেবলই আমার জীবনে ইংরেজীতে কথা বলা আর শোনার চর্চা শুরু হয়েছে। তাই এ্যসেম্বলীতে যেকোন ইংরেজী বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর খুব মনযোগ দিয়ে শুনতাম, আর কারো কারো পারদর্শিতা দেখে খুব বিস্মিতও হতাম। এখানে বলে রাখি আমাদের ইসলামিয়াত শিক্ষক জনাব হায়দার আলী স্যার ছিলেন সমগ্র কলেজের মধ্যে ইংরেজীতে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা (তখনকার দুইজন ব্রিটিশ শিক্ষককে সঙ্গত কারণে এ হিসেবের বাইরে রেখে)। তিনি যেমন ছিলেন স্মার্ট, তেমনি ছিলেন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী এবং একজন আপাদমস্তক ক্রিকেট অনুরাগী। তিনি চেইন স্মোকার ছিলেন। প্রতিদিন টীচার্স রুম থেকেই একটা সিগারেট ধরিয়ে তিনি আসতেন এবং ক্লাসে ঢোকার আগে বারান্দায় রাখা পাত্রে সিগারেটটা ফেলে তিনি ক্লাসে ঢুকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে তার অনর্গল বক্তৃতা শুরু করতেন। একজন ইসলামিয়াত শিক্ষকের এমন পরিচয় হয়তো অনেককেই চমকে দিবে, তবে তার সম্বন্ধে আরেকদিন বলা যাবে।
চলবে…
ঢাকা
২৫ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
যথারীতি উপভোগ করছি/
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ রাজীব, আশাকরি আগামী পর্বগুলোতেও তোমাকে সাথে পাবো।
অবশ্যই ভাইয়া
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এর ক্যাডেট কলেজীয় (এক্স ক্যাডেটিয় নয়) প্রয়োগের সাথে কেন যেন ইদানীং একমত হতে পারিনা
ইসলামিয়াত স্যারের গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। (অপেক্ষার ইমো দরকার, লেখালেখি কঠিন কাজ 😀 )
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
একথা ঠিক যে অনেক সময় ক্যাডেট কলেজের প্রশাসনিক কর্মকান্ডে প্রবাদটির অপপ্রয়োগ হয়ে থাকে, হয়েছে। এর অনেক প্রমাণ আছে।
আর দু'চারটা দুষ্ট গরু তো সব গোয়ালেই থাকে।
লেখাটা উপভোগ করলাম।
আমাদের সময়ে বাগান কম্পিটিশন ক্যাডেট দের চাইতে হাউস বেয়াড়াদের কম্পিটিশনে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। খুব সম্ভবত এই কম্পিটিশন নিয়েই উত্তেজনা সবচেয়ে কম থাকত।
ইসলামিয়াত স্যারের গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
আমাদের সময় সেভেন, এইট আর জেপি।
অবশ্য একবার ৯২ সালে জামশেদ স্যার টুয়েলভ রে দিয়া করাইছিলেন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
জেপি মানে কী? জুনিয়র পোলাপান?
জেপি মানে জুনিয়ার প্রিফেক্টঃ পরীক্ষার্থী ক্লাস টুয়েলভের প্রিফেক্টদের দায়িত্বে কিছুটা ছাড় দিতে + ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রিফেক্টদের নারচার করতেই সম্ভবত এই জেপি সিস্টেমের প্রচলন। ধারণা করছি আপনাদের সময় জেপি ছিলো না।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ধন্যবাদ মোকাব্বির। এখন মনে পড়ছে, আমাদের সময়েও হয়তো ছিলো।
এখন তো মনে হয় এই প্রতিযোগিতাটার আর অস্তিত্বই নেই। আছে কি?
অন্যান্য স্যারদের সাথে ইসলামিয়াত স্যারের গল্পও যথাসময়ে হবে।
আমরাও একে হাউজ বেয়ারাদেঁর প্রতিযোগিতা হিসাবেই পেয়েছি।
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
আমিও ইসলামিয়াত স্যারের গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকছি।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আচ্ছা।
বাগান প্রতিযোগিতার সকালে লাগানো বড় গাছ ( অন্য হাউজের ) যখন রোদে মিইয়ে যেত , আহ্ কি মজা পেতাম 😀
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
এসব প্রতিযোগিতায় কত কি যে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হতো!
আহা সেই বাগান প্রতিযোগিতা ! আমাদের হাউসের বাগানে ফুল ফোটানো যেনো দুঃসাধ্য ছিলো। আর লাস্ট ইন্সপেকশন হয়ে যাবার পর থেকে তাদের মনে হয় কিছুটা দয়া হতো। তেনারা ফুটতেন আয়েশ করে। ক্লাস নাইনের পর থেকে সেই জটিল কাজে আমাকে কিছু করবার জন্য আদেশ করা হলো। ডাইনিং থেকে ডিমের খোসা এনে তার গায়ে লাল রঙ জুড়ে রেডস লেখা (হাউস কালার), বেডগুলোর নকশা আর অবস্থানে কিছু বৈচিত্র আনা। ছোটো পাকা যে ডিচটা ছিলো তার গায়ে রঙ করে তার পানিতে হাউস বেয়ারার কে দিয়ে গ্রামের পুকুর থেকে শাপলা পদ্ম যা পাওয়া যায় এনে জুড়ে দেয়া, ফুলের নাম পরিচিতি লেখা প্ল্যাকার্ডের ডিজাইন নকশায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা । বহু কসরত করে মনে হয় চার থেকে তিনে উত্তরণ হয়েছিলো।
আর এমন মগ্ন গার্ডেনিং করবার সময় কোনো এক দিনে খবর এসেছিলো আমাদের এক বন্ধুর তখনই ঢাকায় যেতে হবে। তার বাবা অনন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছেন তাই।
আর ইস্লামিয়াত টিচার নিয়ে অনেক অনেক আগ্রহ জমানো থাকলো ভাই। তাকে নিয়ে লেখা পড়ার অপেক্ষার সময় তক।
ফুল ফোটানোর তরে তোমার নানারকমের তৎপরতার কথা জানতে পেরে ভালো লাগলো লুৎফুল।
আমার ইসলামিয়াত শিক্ষককে নিয়ে অনেকের এত আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। আশাকরি আমার লেখা দিয়ে তাঁর প্রতি সুবিচার করতে পারবো।
মাঝের কয়েকটা পর্ব পড়া হয়নি। মাঝখান থেকে লেগে পড়লাম ফের।
বাগান প্রতিযোগিতা ব্যাপারটা বেশ আতঙ্কের ছিল আমাদের হাউসের জন্যে। কিছুতেই যেন ক্লিক করতো না। তৃতীয় না হয়ে কোনভাবে দ্বিতীয় হতে পারলেই আমরা মহাখুশি থাকতাম।
পর্বের গাড়ীতে আবার চড়ে বসার জন্য ধন্যবাদ।
সব কষ্ট ভুলে যেতাম যখন বাগানে ফুলের হাসি দেখতে পেতাম। আর কিভাবে কিভাবে যেন এই প্রোতিযোগিতার প্রথম পুরস্কারটা আমাদের হাতেই চলে আসতো। এর পেছনে বদরুল ভাই এর চমকপ্রদ নেতৃত্ব কাজ করতো।
আপনাদের তুখোড় ইসলামিয়াত স্যারের গল্পটি শুনবার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
আমাদের ইসলামিয়াত স্যারটি মোটামুটি বোরিং টাইপের চরিত্র ছিলেন। যন্ত্রমানবের মত মনোটোনাস ভয়েসে দূরে কোথাও তাকিয়ে কথা বলতেন তিনি।
মন্তব্যটা এখানে আসা উচিত ছিলঃ
"আমাদের ইসলামিয়াত স্যারটি মোটামুটি বোরিং টাইপের চরিত্র ছিলেন" - সাধারণতঃ ইসলামিয়াত স্যারগণ ওরকমেরই হয়ে থাকেন। আমাদের জন ছিলেন একজন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এরকম আর কোথাও দেখিনি।
"আমাদের ইসলামিয়াত স্যারটি মোটামুটি বোরিং টাইপের চরিত্র ছিলেন" - সাধারণতঃ ইসলামিয়াত স্যারগণ ওরকমেরই হয়ে থাকেন। আমাদের জন ছিলেন একজন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এরকম আর কোথাও দেখিনি।
অপেক্ষায় থাকলাম আপনার কাছ থেকে সেই গল্প শোনার জন্য। এরপর এই নিয়ে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং আলাপও করা যাবে 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ঠিক আছে, মাহমুদ।
লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আগ্রহ প্রকাশের জন্যও।
আমাদের কলেজে একই সাথে ফ্লাওয়ার এবং ভেজিটেবল গার্ডেনিং কম্পিটিশন হত। পরের দিকে সম্ভবত ভেজিটেবলটা বাদ দেয়া হয়। ক্লাস সেভেন, এইটে থাকতে লাঞ্চের পরপরই গার্ডেনিং এর কাজ করাটা এমনিতে মধুর থার্ড টার্ম এর কলংক ছিল।
স্রোতে সামিল হয়ে আমিও ইসলামিয়াতের স্যারের গল্প শোনার ব্যাপারে আগ্রহ জানিয়ে রাখলাম। 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এমনিতে গার্ডেনিং করতে খারাপ লাগতোনা। জোর করে কিছু করতে বললে তখনই খারাপ লাগতো।
তথাস্তু!
আমাদের সময় হতো হাউজের পিছনে বিশাল সবজি বাগান করাটাই ছিল গার্ডেনিং কম্পিটিশন।
কষ্ট হতো প্রচুর, ফাকিবাজির চেষ্টাও থাকতো, তারপরেও যখন সবজিগুলোর চারা বেরুনো শুরু হতো, মায়ায় পড়ে যেতাম ওঁদের।
আমার বন্ধু নাজমুল (বর্তমানে চিকিৎসক, পাবনা নিবাসি) ছিল ছ'বছর ধরেই চ্যাম্পিয়ান গার্ডেনার।
দু'হাতে সামলে গেছে গোটা বাগান।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল, জানুয়ারিতে ছুটি থেকে ফিরে নিজেদের বাগানের ঐসব সবজি দিয়ে ডাইনিং হলে লাগাতার খাওয়া দাওয়া।
নিজেদের উতপাদিত সবজি খাওয়াটা ছিল দারুন আনন্দের। কারো কারো জন্য বিরক্তিরও।
বাধাকপিটাই বেশি লাগানো হতো।
তাই কত কত ভাবে বাঁধা কপি খাওয়া যায়, তাঁর একটা এক্সপেরিমেন্ট চলতো সেই সময়টাতে।
এখনো কলেজের এই রকম এক এক্সপেরিমেন্টের স্বাদ মুখে লেগে আছে আমাদের অনেকেরই, আর তা হলো "বাধাকপি দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস"।
কি যে অপুর্ব স্বর্গিয় ছিল তাঁর স্বাদ!!!
গতবছর আমার এক বন্ধুকে দেখলাম কলেজের সেই বাঁধাকপি-মাংস বাসায় রেধে খাওয়ায় প্রয়াস নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে।
দেখি, এখানে যায় কিনা সেটা...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
হ্যাঁ, এ আসরেই পড়েছিলাম কোন একটা লেখায়, ক্যাডেট কর্তৃক উৎপাদিত বাঁধাকপি কিভাবে ডাইনিং হলে পাকাপোক্তভাবে আসন গড়ে নিত এবং শেষমেষ অরুচি ধরিয়ে দিতো।
এই সবজি চাষের আসল মজাটা ছিল অন্যখানে।
ডাইনিং হলে হাউজের ঐ সবজি আসলে কিনে নেয়া হতো।
টাকাটা আসতো হাউজ ফান্ডে।
ঐ টাকা থেকে পরের বছর গার্ডেনিং-এর জন্য কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা দিয়ে বিভিন্ন উপলক্ষে খরচ করা হতো।
নিজেদের উতপাদিত সবজি খাওয়ার পাশাপাশি সেই সবজি বেচা টাকায় উৎসব করাটা ছিল বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ।
এখন যদি সেই সবজি চাষ বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে তো এখনকার ক্যাডেটরা যে এরকম একটা নির্ভেজাল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা ভেবে দুঃখই পেলাম.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আমি মনে করি, গার্ডেনিং প্রতিযোগিতাটা থাকা উচিত, সেটা ফুলই হোক আর সব্জীই হোক। নইলে সৃজনশীলতার অনুভূতি থেকে ক্যাডেটরা বঞ্চিত হবে।