খাঁচার পাখি গায় কেন গান জানি (অনুবাদ কবিতা)

বাতাসের পিঠে লাফিয়ে উঠে মুক্ত পাখি,
ডুব দিয়ে যায় নীচের দিকে যেথায় এসে
শেষ হয়ে যায় স্রোতের নাচন, আর তখন
পাখনা মেলায় কমলা রঙের রোদ্দুরে,
দুঃসাহসে আকাশটাকেই দাবী করে।

কিন্তু সরু খাঁচায় বন্দী আছে যে পাখিটা,
সে হেঁটে বেড়ায় চুপি চুপি। ক্রোধের বেড়া
পার হয়ে তার দৃষ্টি কদাচ বাইরে বেরোয়।
তার ডানা জোড়া এঁটে দেয়া, পা দুটোও
বাঁধা থাকায়, গান ধরে সে গলা ছেড়ে।

খাঁচার পাখি গান গেয়ে যায় ভয়ে কেঁপে
গানগুলো তার অজানা সব বিষয় নিয়ে।
অজানা তাও প্রার্থিত সব গান ওগুলো। তার
সুর শোনা যায় দূর পাহাড়ের ওপার থেকেও,
গানগুলো তার স্বাধীনতা্‌র, এই কারণে।

আরেক সমীরণের কথা ভাবে মুক্ত পাখি,
শ্বাস ছড়ানো তরুর বনে বয়ে যাওয়া
সাগর থেকে নরম হাওয়ার আসা যাওয়া,
আর প্রাতের আলোয় বসে থাকা মোটা মোটা
ভূঁইফোঁড় সব পোকার কথা। তারপরে সে
দাবী করে, আকাশটাকেই নিজের বলে।

স্বপ্ন গোরে দাঁঁড়িয়ে থাকে খাঁচার পাখি,
নিশিরাতের দুঃস্বপ্নের চিৎকারেতে ঊঠে ডাকি,
তার ডানা জোড়া এঁটে দেয়া,
পা দুটোও বেঁধে রাখা,
গান ধরে সে গলা ছেড়ে তাই অগত্যা!

খাঁচার পাখি গান গেয়ে যায় ভয়ে কেঁপে
গানগুলো তার অজানা সব বিষয় নিয়ে।
অজানা তাও প্রার্থিত সব গান ওগুলো। তার
সুর শোনা যায় দূর পাহাড়ের ওপার থেকেও,
গানগুলো তার স্বাধীনতা্‌র, এই কারণে।

মূলঃ Maya Angelou
অনুবাদঃ খায়রুল আহসান

কবি পরিচিতিঃ
আমেরিকান কবি ও প্রাবন্ধিক Maya Angelou ০৪ এপ্রিল ১৯২৮ তারিখে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিলো Marguerite Ann Johnson। তিনি ছিলেন তার পিতা Bailey Johnson এবং মাতা Vivian (Baxter) Johnson এর দ্বিতীয় সন্তান। তার বাল্যজীবন ছিল সংঘাতময়, মাত্র তিন বছর বয়সে তার পিতামাতার বিবাহ ভেঙ্গে গেলে তার পিতা তাকে তার দাদী Annie Henderson এর কাছে পাঠিয়ে দেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি California Labor School থেকে কলেজ শিক্ষা সমাপন করেন।

তার শিক্ষাজীবনে যদিও তিনি কোন ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন নাই, তথাপি তাঁকে আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনার American Studies at Wake Forest University in Winston-Salem কর্তৃক আজীবন Reynolds Professorship প্রদান করা হয়, যেখানে তিনি মাত্র কয়েকজন পূর্ণকালীন প্রফেসরের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার বিচিত্র কর্মজীবনে তিনি সান ফ্রান্সিস্কোর নাইটক্লাবের পেশাগত নর্তকী থেকে শুরু করে অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, কবি, চিত্রনাট্য পরিচালক, শিল্প নির্দেশক, ঘানা টাইমস এর ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক, ঘানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বাজার বিশ্লেষক, নাগরিক আন্দোলনের নেত্রী, ইত্যাদি বহুমুখী কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি একটি সুইডিশ চিত্রনির্মাতা কোম্পানী কর্তৃক নির্মিত ছবি ‘জর্জিয়া জর্জিয়া’ এর চিত্রনাট্য রচয়িতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ‘Down in the Delta’ ছবিটি পরিচালনা করেন।

তিনি তাঁর জীবনে সাতটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি তাঁর প্রথম আত্মজৈবনিক কাব্য “I Know Why The Caged Bird Sings” প্রকাশ করে রাতারাতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃ্তি ও সুখ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৩ সালে ৮৫ বৎসর বয়সে তিনি তাঁর সপ্তম আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘Mom & Me & Mom’ প্রকাশ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ত্রিশটিরও বেশী সাম্মানিক ডিগ্রী লাভ করেন। নিজেকে তিনি একজন কবি বা লেখক এর পরিবর্তে একজন ‘শিক্ষক, যিনি লেখালেখি করেন’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা জীবনে তিনি দর্শন, নীতিশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, নাটক, কবিতা ও সাহিত্য ইত্যাদি হরেক রকমের বিষয়ের উপর তার অগাধ পান্ডিত্যের পরিচয় রাখেন। শেষের দিকে পাবলিক স্পীকিংও তার অন্যতম পেশায় পরিণত হয়। তার জীবনের শেষ কয়েক দশকে তিনি তার বহুমুখী প্রতিভাকে একীভূত করে একটি পরিশীলিত প্রদর্শনী শিল্পে রূপান্তরের প্রয়াস পান, যেখানে তিনি কবিতা, সঙ্গীত ও আলাপচারিতার সংমিশ্রণ করেন।

১৯৯৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন এবং সেখানে তিনি তাঁর “On the Pulse of Morning” কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান। সেখানে তাকে “the black woman’s poet laureate” হিসেবে পরিচয় করানো হয়। এর আগে কেবল একবারই ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডী’র অভিষেক অনুষ্ঠানে কবি রবার্ট ফ্রস্ট তার নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। গণমানুষের এই কবি বা ‘People’s Poet’ Maya Angelou ২৮ মে ২০১৪ তারিখে পরলোকগমন করেন।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

মূল ইংরেজী কবিতাটি নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃ

I Know Why The Caged Bird Sings by Maya Angelou

The free bird leaps
on the back of the wind
and floats downstream
till the current ends
and dips his wings
in the orange sun rays
and dares to claim the sky.

But a bird that stalks
down his narrow cage
can seldom see through
his bars of rage
his wings are clipped and
his feet are tied
so he opens his throat to sing.

The caged bird sings
with fearful trill
of the things unknown
but longed for still
and his tune is heard
on the distant hill
for the caged bird
sings of freedom

The free bird thinks of another breeze
and the trade winds soft through the sighing trees
and the fat worms waiting on a dawn-bright lawn
and he names the sky his own.

But a caged bird stands on the grave of dreams
his shadow shouts on a nightmare scream
his wings are clipped and his feet are tied
so he opens his throat to sing

The caged bird sings
with a fearful trill
of things unknown
but longed for still
and his tune is heard
on the distant hill
for the caged birdsings
of freedom.

ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

২,৯৭২ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “খাঁচার পাখি গায় কেন গান জানি (অনুবাদ কবিতা)”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    মায়া এন্জেলুর সাথে আমার প্রথম পরিচয়টুকুর কথা মনে আছে এখনো। দেশে তখন হেলাল হাফিজ পড়ে পড়ে আমি মুগ্ধ। বইমেলাতে গিয়ে দেখি হেলাল হাফিজের কবিতার কার্ড পাওয়া যাচ্ছে। দশটি কবিতা নিয়ে এক মোড়কে বিক্রি হচ্ছে সেই কার্ড। আমি সেই কার্ড কিনে তারপর খুব কায়দা করে সোনালি জেল কলমে নিজের দুটো চারটে পংক্তি লিখে মোড়কটি আমেরিকাতে পাঠিয়ে দিলাম রতনের কাছে। আমার সেইসব কবিতাপত্রের উত্তরে আমি পেয়েছিলাম মায়া এন্জেলুর কবিতা লেখা কার্ড। কার্ডটির ওপরে সূর্যোদয়ের ছবি আঁকা। চার লাইনের সেই কবিতা ভুলে গেলেও কবির নামটি গেঁথে গেল মনে। আমার ভাললাগার কথা জানিয়েছিলাম তাঁকে। বিনিময়ে দেশে বেড়াতে আসার সময়ে মায়া এন্জেলুর কবিতার বই উপহার পেয়েছিলাম!

    স্মৃতি সতত মধুর!

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    মায়া এঞ্জেলোর আরো দুয়েকটি কবিতা আমি অনুবাদ করেছি, যেমন "I Rise"। ভবিষ্যতে এখানে দেওয়ার আশা রইলো।
    "স্মৃতি সতত মধুর!" - আমার এ অনুবাদটা তোমাকে একটা মধুর স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে, সেকথা জানতে পেরে ভালো লাগছে।
    কবিতা পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মায়া আপার কন্ঠে আবৃত্তি করা ভিডিও লিনক ও দিয়ে দিতেন মূল লেখায়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।