আমার ঘরের নিভৃত একটি কোণে
রয়েছে তোমার এক নিজস্ব ভূবন।
সেখানে কখনো প্রবেশ করিনি আমি।
তবে বাহির থেকে দেখেছি কি সুন্দর করে,
সাজিয়ে রেখেছো তোমার শখের পসরা
একটি আলমারীর ক্ষুদ্র পরিসরে, থরে থরে।
কতনা যতন করে রেখেছো সেখানে,
ছোট ছোট সব শখের পজেশনগুলো,
শাড়ীর পরতে পরতে, এভাঁজে ওভাঁজে,
গোপন কুঠুরির কোন গোপনতম স্থানে।
আর পরখ করে দেখ সেসব অমূল্য রতন
যখনি সময় পাও, মাঝে মাঝে, অবসরে।
আমার মাঝে মাঝে খুবই ইচ্ছে হয়,
একবার খুলেই দেখি কি রয়েছে তোমার
নিজস্ব ভুবনের গোপন কুঠুরীতে! আবার
পরক্ষণেই ফিরে আসি। কারণ আমি জানি,
তোমার সযত্নে রাখা জীবনের সঞ্চয়গুলো
সেখানে ঘুমিয়ে থাকে যার যার নির্দিষ্ট স্থানে।
তারা জেগে উঠে একে একে, তোমার মমতায়।
তোমার নরম হাতের ছোঁয়া পেলে তারা ইশারায়
উন্মীলিত চোখে তোমার সাথে কথা বলে যায়।
আমার অচেনা হাতের স্পর্শ পেলে, হয়তো তারা
আর কখনো খুলবেনা চোখ, বলবেনা কোন কথা।
একথা ভেবে ভুলেও তাদের আমি স্পর্শ করিনা।
কি আছে সেখানে? জীবনের প্রথম উপহার?
ভ্রমণ শেষে বেঁচে যাওয়া কিছু ইউরো-ডলার?
একেকটি ইতিহাস হয়ে থাকা একেকটি শাড়ী?
শখের গয়নাগাটি, কিংবা শুধু কাঁচের চুড়ি?
হয়তো কিছুই নয়, আবার হয়তো সবই।
হয়তো অমুল্য সেই সব সাদা-কালো ছবি।
হয়তোবা শতবার খোলা আর ভাঁজ করা
সেসব চিঠি, শতবার পড়েও যার শেষ হয়না।
কিংবা গোটা গোটা অক্ষরে লেখা তোমারই চিঠি,
যা শুধু লিখেই গেছো, আর করেছো কাটাকুটি।
কখনো পাঠানো হয়নি, কারণ খুব বেশীদিন ধরে,
আমি যে থাকিনি কোথাও তোমাকে ছেড়ে!
ঢাকা
০৬ মার্চ ২০১৩
স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
এই কবিতাটি পড়তে গিয়ে একাকিত্ব কাজ করছিল। আবৃত্তি শুনেও গতকালও তাই ভাবছিলাম। পরে শেষ লাইনে এসে কিছুটা হলেও শান্তনা পেলাম! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
কবি বলেছেন, "জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা!" অর্থাৎ, যা কিছু ফেলা যায়, তা জীবনের ধন নয়। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে আমার সংসারের শুরুতে একটি স্টীল আলমিরা কিনে এনেছিলাম। সেই থেকে আমাদের সংসারে সেটা 'জীবনের ধন' হয়েই দীপ্যমান। ৩২ বছরের চাকুরী জীবনে বহুবার ঘাট বদল হয়েছে, অনেক অনেক মুল্যবান জিনিসপত্র পরিত্যাক্ত, বিক্রীত অথবা হাতবদল হয়েছে, কিন্তু আজ তীরে এসে তরি ভেরার পরে দেখি, আমাদের সে 'জীবনের ধন' এখনো আমাদের সংসারে মাথা উঁচু করে দাঁঁড়িয়ে আছে। সেখানে সাজানো আছে তার শখের নানা পসরা। ৩৫ বছরের সোনালী ইতিহাস।
কি চমৎকার করে ব্যাপারটা বললেনঃ যা ফেলে দিতে হয় তা আর ধন কিভাবে হলো? প্রতিটি পরিবারে কারো না কারো কাছে এর উপস্থিত পাওয়া যাবে মনে হয়। অনেকে একে আবার পুরো জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখার অভ্যাস বলতে চান। আমার ঘোর আপত্তি এই কথাটিতে। বাবাকে খুব বেশীদিন পাইনি তাই আমার সমান বয়সী বাবার রেজার দিয়ে এখনো শেভ করি। ছোট একটি স্মৃতির আধার। ওল্ড স্পাইস, মেটাল পলিশ, জুতোর কালি, সাতটার সংবাদ, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর অফিসে যাবার সাইরেন সব কিছু এক প্যাকেজে পাওয়া যায়। কিভাবে ফেলে দেই?
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
"ওল্ড স্পাইস, মেটাল পলিশ, জুতোর কালি, সাতটার সংবাদ, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর অফিসে যাবার সাইরেন সব কিছু এক প্যাকেজে পাওয়া যায়। কিভাবে ফেলে দেই?" - কি চমৎকার করেই না বললে কথাগুলো তুমি, মোকাব্বির।
"কেন ভালবাসি এই সংসার আর তুচ্ছ জিনিস গুলো,
আঁকড়ে থাকি, কিছুই ফেলিনা যতই জমুক ধূলো।" - 'কেন ভালবাসি' নামে আমারই একটা কবিতা থেকে দু'লাইন।
বাহ, কী নিবিড় অনুভব!
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
কবিতা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, মোস্তফা। প্রশংসায় প্রীত হয়েছি।
এক গভীর মমতা পুরোটা লেখায় আপন স্মৃতিময় অতীত
স্পর্শ মাখা দরকারী-বেদরকারী সব কিছুর গা ছুঁয়ে
কেবলি বলে যায় যেনো কার কথা, কাহার কথা !
যার স্মিতস্পর্শ ছোঁয়নি অমন কেছুই নেই
সমস্ত ঘর জুড়ে যা সাজানো থরে থরে
মোহন যাদুর কি এক আলোক বিস্তারে ...
শ্রদ্ধা কবিকে ও কবিতার ভেতরের মানুষটিকে । (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
কবিতা পড়ে নিবিড় অনুভূতিগুলো এত সুন্দর করে প্রকাশ করার জন্য তোমায় অশেষ ধন্যবাদ, লুৎফুল।
"মোহন যাদুর কি এক আলোক বিস্তারে ..." - চমৎকার লাগলো তোমার এ পংক্তিটা, লুৎফুল।
কবির কন্ঠে কবিতা পাঠ এখানেও এমবেড করাটা এখন সময়ের দাবী।
কবিতাটা পড়ে ও শুনে কতটা আনন্দ পেয়েছি, সেটা বোঝাতে এর চেয়ে বেশী কিছু করা এই মুহুর্তে সম্ভব হচ্ছে না...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.