লক্ষী আর স্বরস্বতী কথকতা

মাঝে মাঝে বেশ শুনতে পাওয়া যায়, অমুকের সংসারে লক্ষী আর স্বরস্বতীর অপূর্ব সহাবস্থান। কিন্তু আদতে লক্ষীর সাথে স্বরস্বতীর কিন্তু বেজায় মন কষাকষি। তারা একসাথে থাকতেই চায় না। লক্ষী যেখান থাকে সেখানে স্বরস্বতী যেতেই চায় না অথবা স্বরস্বতীর যেখানে আসন সেখানে লক্ষী ছায়া মাড়ায় না। যে পূজারী দুজনেরই একসাথে আরাধনা করে দেখা যায় অবশেষে সবই হারায়। কারণ লক্ষী -স্বরস্বতী অনেক বেয়াড়া এবং নাক উঁচু। শুধুমাত্র তাকেই পূজা না করলে সে ধরা দেয় না। এরকম অবস্থায় যারা লক্ষী-স্বরস্বতী দুজনকেই চায় তাদের অবস্থা হয় করূণ।

লক্ষী আবার শুধু নিজের অহমিকায় অন্ধই নয় সে মনে করে সে ইচ্ছা করলেই স্বরস্বতীকে তার অধীনে আনতে পারে। তাই দেখা যায় লক্ষী নিজের স্থান বসে প্রায়ই স্বরস্বতীকে তার অধীনস্থ করার নানানতর পায়তারা করে। তবে সে অহমিকা প্রায়ই আশায় গূড়েবালি। আবার স্বরস্বতী প্রতিযোগিতায় নামে না কিন্তু সে মনে করে তার আসনের চারপাশেই লক্ষীর ঘোরাফেরা। তাই কষ্ট করে কাউকে আলাদা করে লক্ষীর আরাধনা করা সময় নষ্ট করার নামান্তর।

তাহলে যেখানে লক্ষী , স্বরস্বতী একসাথে থাকে সেটা কিভাবে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক পূজারী দ্বারা দুজনের কৃপা পাওয়া সম্ভব হয় না। হয়ত পূর্ব থেকে লক্ষীর অবস্থান থাকে সেখানে নতুন করে স্বরস্বতী আরাধনা করলে স্বরস্বতী হয়ত লক্ষীর অবস্থান না জেনেই চলে আসে কারো কাছে। একবার চলে আসলে তাদের দুজনের মধ্যে এতই রেষারেষি কেউ নিজের অবস্থান ছেড়ে চলে যেতেও পারে না। আবার দুজনের সহায়তায় দুজনের আসনই উত্তরোত্তর পাকাপোক্ত হতে থাকে। আবার কেউ যদি স্বরস্বতীকে আয়ত্ব করতে পারে তখন এমনি এমনি লক্ষী এসে চারপাশে ভীড় করে। পূজারীর জন্য অবশ্য তাতে লাভ বই কি ক্ষতির কিছু নেই।

বেশির ভাগ পূজারীরই কিন্তু লক্ষীর দিকেই নজর। তাকে পাওয়ার জন্য কেউ এটা করে কেউ ওটা করে। যারা স্বরস্বতীর আরাধনা করে তাদের একটা বিশাল অংশই কিন্তু আবার লক্ষী কে পাবার মই হিসেবেই স্বরস্বতীর দুয়ারে হানা দেয়। কিন্তু কেউ যদি একই সাথে লক্ষী- স্বরস্বতীকে আয়ত্ব করতে চেষ্টা করে তাহলেই সমস্যা। কোন একটা হয়ত একটু একটু কৃপা করবে তবে বেশিরভাগ সময়েই শেষ পর্যন্ত দু জায়গাতেই ব্যর্থ হয়ে এ ফলের বাকল ও ফলের আঁটি খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কাকে আগে সন্তুষ্ট করে কার পিছনে ছোটা ভাল সে যার যার নিজের হিসাব তবে দুজনের অহমিকার কথা মাথায় রেখে একইসাথে দুজনের পিছনে সময় না দেওয়াই ভাল মনে হয়।

পাদটীকাঃ
লক্ষীর সাথে বহুদিন আমার ভালই খাতির ছিল। অনেক বছর পর উনি আমার বাসা ছেড়ে একটু আশে পাশে হাওয়া খেতে গেছেন। আবার এতদিন ধরে স্বরস্বতীর মনোরঞ্জন এর জন্য যে আরাধনা করে যাচ্ছি সেটার ফল ও এখনো তুলতে পারিনি। স্বরস্বতী উঠোনে এসে দাঁড়িয়ে আছে কিছুতেই ঘরে তুলতে পারছি না। এমতাবস্থায় স্বরস্বতীকে ধুমধাম করে ঘরে তুলব নাকি লক্ষীর খোঁজে বাইরে যাব সেটা নিয়ে মাথার মধ্যে সারাক্ষণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ এই ফালতু প্যাচাল।

২১ টি মন্তব্য : “লক্ষী আর স্বরস্বতী কথকতা”

  1. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    আবার এতদিন ধরে স্বরস্বতীর মনোরঞ্জন এর জন্য যে আরাধনা করে যাচ্ছি সেটার ফল ও এখনো তুলতে পারিনি।

    আন্ডারগ্রেডে IEEE এ তে পেপার বাইর করার পর এই কথা!
    কেউ তাইফুর ভাইরে ডাক দাও প্লিজ...এই অমায়িকরে একটা গালি দিয়া যাক :chup:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমারতো অবস্থা তাইলে চরম দেখি 🙁
    নক করছিলাম দুইজনরেই, লক্ষী এবং স্বরস্বতী, দুইজনেই বলছে আমারে চিনেনা, কোনদিন দেখেনাই, চিনতেও নাকি চায়না 🙁


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।