ভালোবাসার কেমিস্ট্রি

আমরা যারা সাইন্স নিয়ে পড়ালেখা করেছি, তারা জানি এইস.এস.এসসি তে রসায়ন বা কেমিস্ট্রি নামক বিষয়টা কেমন নাচায় :tuski: ! ভয়ানক এই বিষয়ের বইয়ের একটা পৃষ্ঠা পড়ে পরের পৃষ্ঠায় গেলে, পূর্ববর্তী পৃষ্ঠার পড়া ভুলে যাওয়াটাই যেন স্বাভাবিক ছিল। আর একের পর এক রাসায়নিক সমীকরণের চাপে পিষ্ট হয়ে মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকত না ~x( । নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই কবিতাটা লেখা 🙂 । অন্ততঃ এখনো রসায়নের কিছু বিষয় এই কবিতার কল্যাণে মনে আছে। কবিতাটা এইস.এস.এসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে লেখা, বলতে দ্বিধা নেই, আসলে কেমিস্ট্রি পরীক্ষার আগের দিন লেখা O:-) ।

*******************************************************************************

মনে পড়ে কি তোমার
আমাদের প্রেমের কার্বন যুগ?
আদিমতা থেকে বেড়িয়ে
আস্তে আস্তে সভ্য হচ্ছিলাম
আমরা, একসাথে।
তুমি আর আমি ছিলাম যেন-
অ্যালডিহাইড আর কিটোন।
আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়েছিলাম
টলেন বিকারক আর ফেইলিং দ্রবণ দিয়ে।
তুমি হয়েছিলে উজ্জ্বল, বর্ণহীন।
আমাদের অভিসার ছিল
অক্সিজেন আর নাইট্রাস অক্সাইডে ভরা।
আমার হৃদয়কে প্রসারিত করেছিলাম
বোরনের মত, সবদিকে।
শুধু তোমার জন্য। আর-
তোমায় রেখেছিলাম সোডিয়ামের মত
হৃদয়ের অনন্ত গহীনে।
কিন্তু আমি জানতাম না
আমার পরীক্ষায় ভুল ছিল।
তুমি ছিলে অ্যলুমিনিয়ামের মত
একসময় ফ্লোরিন হয়ে গেলে।
আহ্! কি কষ্ট আজ আমার-
কার্বন ফেলে আমি
সিলিকাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছি।
আজ তুমি প্লাটিনাম-অন্য পরিবেশে,
আর আমার কাছে-
তোমার শরীরে পিরিডিনের গন্ধ।
আর ক্লোরিনপূর্ণ বিষাক্ত পরিবেশে
আমি এখন কপার সালফেট!

*******************************************************************************

কেন এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হলঃ

কার্বন যুগ – আদিম যুগ
অ্যালডিহাইড, কিটোন – জৈব যৌগ
টলেন বিকারক, ফেইলিং দ্রবণ – অ্যালডিহাইড ও কিটোন পরীক্ষার দ্রবণ
অক্সিজেন – প্রাণশক্তি সঞ্চারণের প্রধান উপকরণ
নাইট্রাস অক্সাইড – হাসির উদ্রেককারক বস্তু
বোরন – সবচেয়ে বেশী প্রসারণশীল ধাতু
সোডিয়াম – বাতাসের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার জন্য কেরোসিনের নীচে রাখা হয়
অ্যলুমিনিয়াম – সবচেয়ে সহজলভ্য ধাতু
ফ্লোরিন – বিষাক্ত গ্যাস
কার্বন – হীরার প্রধান উপকরণ
সিলিকা – কাঁচের প্রধান উপকরণ
প্লাটিনাম – সবচেয়ে দামী ধাতু
পিরিডিন – উৎকট গন্ধযুক্ত বস্তু
ক্লোরিন – বিষাক্ত গ্যাস
কপার সালফেট – নীল রঙের বিষাক্ত দ্রব্য

বিঃ দ্রঃ- রেফারেন্স সংক্রান্ত যে কোন ভুল, পাঠককে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার ও লেখককে জানানোর অনুরোধ করছি। এইক্ষেত্রে আমি রেফারেন্স হিসেবে ” অরবিটাল-উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন গাইড “ অনুসরণ করেছি।

*******************************************************************************

কবিতাটি ২০০৫ সালে লেখা। আমার ৭২ নং কবিতা।

৩,৪৫০ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার কেমিস্ট্রি”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    আমি আর্টস কিছুই বুঝি নাই :(( :(( :(( :(( :(( :((


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।