নীলা-৫ম পত্র
নীলা-৪র্থ পত্র
নীলা-৩য় পত্র
নীলা-২য় পত্র
নীলা
আমার চোখে তুমি ঘুম হয়ে আছ
আমি জেগে উঠতে চাই না
আর প্রতি মুহূর্তে তুমি একমাত্র সত্য…..
সময়ের পাতায় লিখে চলা আমার কবিতাগুলো কেন যেন অন্ধকারে মিশে যায়, ছায়ার প্রতিচ্ছবি হয়ে হারিয়ে যায় কৃষ্ণগহ্বরে….নীলা নামের উচ্ছ্বল মেয়েটি আমার জীবনে আসার পর কষ্টগুলোর রক্তাক্ত আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এ মুক্তি চিরদিনের। কুকুরের পেটে যেমন গাওয়া ঘি সহ্য হয় না, তেমনি ওর অসুখের পর থেকে আমার কষ্টগুলো ভেতর থেকে উগরে উঠতে থাকে। কয়েকদিনের জীবনে কতখানি পাপ করেছিলাম যে আমাকে এতটা কষ্ট পেতে হবে, এতটা অসহায় হতে হবে! ওটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের অতীতের কথা স্মরণ করছিলাম। নীলার সাথে কাটানো দিনগুলো।…চারটা বছর…যেন চার সহস্রাব্দ..!…কি অদ্ভুত মধুরতায় না মাখা ছিল ওই সময়গুলো! নিজের সবকিছু শেয়ার করছি ওর সাথে, সবকিছু। ওর স্পর্শেই আমার কবি হয়ে ওঠা, ওর ভালোবাসায় যে আমার ঈশ্বরের পূর্ণতা প্রাপ্তি…একটা জীবনে কতটা ভালোবাসা যায়? একটা মানুষকে কতটা আপন করে পাওয়া যায়? তারপরও যে ও আমার অন্তর্নিহিত সত্বা, ও যে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে…..ওকে ছাড়া যে আমি অসহায়, আমি যে জীবন্মৃত…
আমি ঈশ্বর নই। তাই নিজের সমস্ত আকুলতাকে পুঁজি করে প্রার্থণা করেছিলাম তার কাছে। বলেছিলাম, “আমি জানি না, কিভাবে তোমার কাছে আর্তি জানাতে হয়। শুধু এটুকু জানি, নীলাকে আমার খুব প্রয়োজন। তুমি ওকে আমার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিও না। ওকে ছাড়া যে আমার বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বন নেই! প্লিজ, আমার নীলাকে ভালো করে দাও। আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছু চাইব না, কক্ষনো না,… প্লিজ।”
দীর্ঘ ৮ ঘন্টা পর ওটির দরজা খুললো। কেন যেন এক অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল। সবাই এগিয়ে ডাক্তারকে ঘিরে ধরলাম। শালার এই ডাক্তারগুলোর মুখ দেখে কেন যে কিছু বোঝার উপায় থাকে না! “Don’t worry. She is now out of danger. But she need to continue Chemotherapy for another 2 months, once in a week. You can meet her after 2 hours.”। ডাক্তারের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললাম, “ডাক্তার!” “Everything’s OK, my son.” ।
জানিনা কেন যেন হঠাৎ চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখলাম। যে অন্ধকার আমার নিত্য সঙ্গী, তার আলোতে আমি যেন মুহূর্তের জন্য হারিয়ে গেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, হে ঈশ্বর। এ জীবনে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।” আমার চারপাশে ততক্ষণে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সবাই আনন্দে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে। তুহিন এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “দোস্ত, তরে কইছিলাম না, অয় ভালো হয়া যাইব।” “তোরা যে আমাকে অনেক ঋণী করে দিলি……..দোস্ত।”, এর থেকে বেশী কিছু বলতে পারলাম না। উন্মত্ত আবেগ যে আমকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে…
ওর অপারেশন শুরু হওয়ার কিছু সময় আগে ওকে শেষ দেখেছিলাম। দীর্ঘ ১২ ঘন্টা পর আবার ওর সামনে দাঁড়িয়ে, ওর ছোট্ট কোবিনে। ব্যান্ডেজে ঢাকা মুখটা দেখে চেনা যায় না, বেডে শোয়া মানুষটি আমার সবচেয়ে আপনজন, আমার নীলা। স্যালাইন আর রক্তের সরু ধারা ঢুকছে ওর শরীরে। আস্তে আস্তে হেঁটে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ওর নিস্তেজ হাতটা টেনে নিলাম আমার মাঝে। দীর্ঘ কয়েকটি মুহূর্ত কেটে গেল কোন কথা না বলে। কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত। ওর কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, “তোমাকে আবার ফিরে পেয়েছি। আমার সবকিছু দিয়ে তোমাকে আগলে রাখব। কথা দাও, আর কখনো আমাকে এভাবে ফাঁকি দেবে না।” ও কিছু না বলে চোখের ইশারায় ওর গায়ের ওপর থেকে চাদর সরাতে বলল। সরালাম। “এরপরও তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসবে!” ওর মাথার ব্যান্ডেজ ওর দু চোখ বেয়ে নামা পানিটুকু শুষে নিচ্ছে “একটা মেয়ের শরীরের প্রধান সৌন্দর্য়ই যে ওখানে!” “দুর পাগলী, কোথায় না একটু আনন্দ-ফুর্তি করতে দেবে, আরে, আমি তো শুধু তোমাকেই ভলোবেসেছি, ভালোবেসেছি তোমার ওই সুন্দর অন্তরটাকে, তোমার উচ্ছ্বলতাকে…এই সামান্য পরিবর্তনে কী আসে যায়! আর এইটুকুর জন্য আমার ভালোবাসা অপমানিত হবে! তোমাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি, অনেক…” ও আমার হাতটা চেপে ধরে। কত যুগ যে এভাবে পার হয়ে যায়…..
আরও প্রায় ১ মাস পর ও মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। শুধু প্রতি সপ্তাহে কেমো চলতে থাকে। এই একটা মাস ওর সাথেই ছিলাম। হঠাৎ একদিন মাহমুদ কুয়েট থেকে ফোন করে, “দোস্ত, ২ সপ্তাহ পর ফাইনাল পরীক্ষা। তুই এটেন্ড করবি?” “হুম..” কুয়েট লাইফের শেষ পরীক্ষা, পাস করলে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট। ভাবি, “চোথা”র ঐশ্বরিক শক্তিবলে হয়ত পাস করলেও করতে পারি। আর এই সময় আমার সার্টিফিকেট পাওয়াটা যে খুব জরুরী! সিদ্ধান্ত নেই, পরীক্ষা দেব।
নীলার ভার আপাতত আহসান আর তুহিনের ওপর চাপিয়ে পরদিন বাসে উঠি। জানি, ওরা থাকতে আমার নীলার কোন সমস্যা হবে না। বাস ছুটতে শুরু করে বহু চেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্য। নগরের কোলাহল ছাপিয়ে শুধু একটি কথাই শুনতে থাকি, “তাড়াতাড়ি ফিরে এস। তোমাকে ছাড়া এখানে আমি একা থাকতে পারব না….”
(চলবে…… 🙂 )
*******************************************************************************
গল্পটার অধিকাংশ আমার জীবন থেকে নেয়া হলেও কাল্পনিক। উল্লিখিত কোন চরিত্র কারো সাথে মিলে গেলে, তা অনভিপ্রেত ও কাকতাল মাত্র। এজন্য লেখক দায়ী নয় 🙂
তাহলে কি আমিই???
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমার তো মনে হয়....................তুমিই..... 🙂
পরিচিত মানুষের নামগুলোই আমাকে বারবার বিভ্রান্ত করে দিচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন পুরোটাই সত্যি।
:boss: :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:)) :)) :))
তাই নাকি! অনেক আগেই বলেছি, গল্প জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। 😉
ধন্যবাদ, রকিব। 🙂
অসাধারন !!!!!!!!!!!!!!!!!
খুবই চমৎকার কাহিনী।
আর বাস্তব অংশের জন্যে, ইনশাল্লাহ আশা করি তোমার নীলা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে ......
ধন্যবাদ, সপ্নচারী ভাই। 🙂 :shy:
আমিও খুব চাচ্ছি......
:dreamy: O:-)
ভাল লাগতেসে রে.........চালায়া যা......মজা পাইতেসি।
থ্যাংকস, দোস্ত 🙂
:shy:
মাঝে মাঝে মনে হয়, মনে হয় সত্য কাহিনী পড়তেছি।
শালার চরিত্রগুলা সব তো আমাগোই......
আর নীলাকেও তো চিনি 😛 😛
আমিও তো নীলারে চিনি না........তয় তুই কেমনে চিনিস......?????..... 😕
জাবীর ভাইয়া, খুব সুন্দর করে লিখেছো। ভাল লাগল, পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিও।
:clap:
ধন্যবাদ, ভাবীপ্পু। 🙂 :shy:
১৫ দিন পর সেমিস্টার ফাইনাল। একটু ব্যস্ত। আপনি যখন বলছেন.........ইনসাল্লাহ, তাড়াতাড়ি দেব। 🙂
ভাইয়া, পরীক্ষা শেষ করে নাহয় দিও, পরীক্ষা খারাপ হলে তখন ভাবীপ্পু'র উপর মন খারাপ হবে। 😛
ভালো লাগল জাবীর।
ধন্যবাদ, তানভীর ভাই 🙂 :shy:
কিরে জাবীর আর সবার মত আমিও তো কনফিউজ হয়ে যাচ্ছি । বিশেষ করে শেষের ডিসক্লেইমারটা সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিকর । এবারের পর্বটা ভাল লেগেছে অনেক, একদম সাবলীল । এভাবেই লিখতে থাক আর নীলা কি আসলেই অসুস্থ নাকি? অসুস্থ হলে ওর জন্য শুভকামনা আর দোআ রইল ।
🙂 🙂 🙂
এই ব্যাপারে কিছু বলা নিষেধ আছে। তবে এটুকু বলতে পারি, আর সবার মত আমিও কনফিউজড 😉
আপনার শুভকামনা নীলার কাছে পৌঁছে যাবে, আশা করি ( O:-) ) । তবে দোয়া পৌঁছানোর দায়িত্ব আমি কিভাবে নেব 😕
আপনাদের ভালোবাসা আর উৎসাহই আমার লেখার পাথেয়... 🙂
Vala koira exam de.
দোয়া করিস, দোন্ত..................২২ তারিখ থেকে সেম. ফাইনাল শুরু...