মোবাইলটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি। চেঁচামেচি বড় বিরক্তিকর। মাঝেমাঝে তাই অনেক কল-ই ধরতে পারি না। ঈদের আগেরদিন মোবাইলে মেসেজঃ “ফোন করসিলাম। বিকেল সাড়ে তিনটায় রাইফেলস স্কোয়ারে থাকবি, পোলাপাইন আসবে।” ঘড়িতে সময় দেখি, দুপুর দেড়টা। তাড়াতাড়ি করে তৈরী হলাম। ধারণা ছিল রাস্তায় প্রতিদিনের মত যানজট থাকবে। হ্ল উল্টা, সব ফাঁকা। লোকাল বাসগুলোতে উঠি না কারণ বাসগুলো বানানোর সময় আমাদের কথা চিন্তা করে বানায় না, দাঁড়ালে সিজদা দিতে হয় আর বসলে এক হাঁটু উত্তর মেরু ত আরেকটা দক্ষিণ মেরুতে থাকে। বড়ই বেদনাদায়ক। উপায় না পেয়ে সেরকমই এক বাসে সিজদা দিতে দিতে পৌঁছলাম। রাইফেলস স্কোয়ারে গিয়ে দেখলাম আসে নাই কেউ তখনও, তিনটার মত বাজে। জীবনে এই একবার যদি জ্যামে পড়তাম; খুশি হতাম। এর আগে স্কোয়ারের সামনে দিয়ে গেলেও কখনো ঢুকি নাই, প্রয়োজন হয় নাই। কিছুক্ষণ ঘুরলাম, দেখলাম, জয় করলাম না কিছুই। কোনকিছু না পেয়ে অগত্যা গ্রামীনফোন সেন্টারে গিয়ে মরা সিমে জীবন দিলাম। অবশেষে একে একে আসা শুরু করল সবাই। একজন ফোন দিল, ধরলাম। ওকি!!! কেঁটে দিল!? সামনে আসার পর সে বন্ধু অবাক, “তুই ফোন ধরলি কেন?”। বুঝলাম প্রেমিকদের ফোন বিল কাঁটতে হয় না। আরেকজন অতি সম্প্রতি লিগামেন্টের দফারফা করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে উপস্থিত, একেই বোধহয় টান বলে। পুরো টানটান।
“কিরে এইটা কি রাখছস?…”
“কি খবর তোর?…”
“ভাল…”
“আংকেলের কি অবস্থা??…”
“সেদিন কারে যেন দেখলাম সাথে……”
“এ কি!! তোর দেখি কোন চেঞ্জ হয় নাই আর্মিতে গিয়ে!!…”
“অই তোর শুকানোর গোপন রহস্য কি?? …”
“কলেজে এই হয়ছে……ওমুক স্যার তমুক কলেজের ভিসি…”
…………এভাবেই কথাগুলো শুরু হয়, চলতে থাকে। কখনও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, কখনও বা বসে। কারও হুঁশ থাকে না। মাঝে মাঝে সবার কথা থেমে যায়, একসাথে তাকিয়ে থাকি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ‘তার’ দিকে। আবার শুরু হয় কথা, সেই পুরোনো ফান-জোকস। যেগুলোতে অতীতে হাজারবার হেসে গেছি, ভবিষ্যতে লক্ষবার হেসে যাব, হাসতে চাই।
ইফতারের সময় হয়ে আসে। স্টারে গিয়ে হানা দেই সবাই। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে থাকে, আমাদের কথার ট্রেনও চলতে থাকে, ষ্টেশনে থামাথামি নাই। ইফতারের শেষে আবার গন্তব্য স্কোয়ার। ছাদে গিয়ে বসি। সিকিউরিটি গার্ড এসে অসুবিধার কথা বলে। আমরা ততক্ষণে গোল হয়ে বসে গেছি। গার্ডও পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের সাথে যোগ দেয়, আশেপাশে সব জীবন্ত হয়ে উঠে। আমাদের একটা খেলা আছে,”মোবাইল তমাশা”। এটা আর কিছুইনা, প্রেমিক বন্ধুর রসালো সব মেসেজ পড়ার ধান্দা। নিয়ম হল একজনের মোবাইল আরেকজন নিয়ে মেসেজ পড়বে। যথারীতি এ শ্রেণীর সদস্যদের মোবাইল পকেটে নিয়ে ভাব ধরে বসে থাকা। এবার এদের দলে খেলার প্রবর্তককেও পাওয়া গেল তাই খেলাটা আর এগোয় না। গার্ডের বস চলে আসে, আমরা উঠে পড়ি, লেকে গিয়ে বসি। কথার পর কথা, কথার উপরে কথা চলতে থাকে। এক সময় বিদায়বেলা আসে, ঈদের আগাম কুলোকুলি করি, ঈদ মোবারক দেই-নেই। ফেরার সময় বাসের লোকালটুকুও আর পাই না, কেউ আর এদিকে আসতে চায় না। বাসায় আসি এগারোটায়। ধরে রাখা স্মৃতিগুলো চালান করে দেই ফেসবুকে। মনে মনে বলি, ‘ঈদের দিনটা’ ভালই কাটলো আমার।
কত জন আসছিলা, ২০ ক্রস করছে?
🙂
"এবার এদের দলে খেলার প্রবর্তককেও পাওয়া গেল তাই খেলাটা আর এগোয় না"
থ্যাংকস ফর দ্য ইনফরমেশন বাডি...বাকি দায়িত্ব আমার.. :grr: :grr:
ইস, কতদিন আমাদের গেট-টুগেদার হয় না। 🙁 🙁
@ফয়েজ ভাই,
১৬-১৭ জনের মত হয়ছিল ভাই। 🙂
@সামিয়া,
কিসের হাসি দিলি এটা? একটু কম বুঝি, সাথে এক দুই লাইন লিখিস। 🙂
@ফুয়াদ,
"থ্যাংকস ফর দ্য ইনফরমেশন বাডি…বাকি দায়িত্ব আমার.. "
-কি করবি?? 😉
@কামরুল ভাই,
কইরা ফেলান...। ভাল টাইম পাস। 😀
এই মজাটা আমরা এক্কেবারেই মিস করিনা, কারণ আমাগো এখোনো রেগুলার মোলাকাত হয় 🙂 🙂 ইভেন, এখনো বছরে একবার হইলেও আমরা 3/4 দিনের ট্যুর মারি এইখানে ওইখানে । 🙂 🙂
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
বস
'এইখানে ওইখানে' জায়গাগুলি কোন খানে? আমরাও যামু। 😉
ডিটেইলে কমুনে, মেডালিয়নের সামনে চইলা আয় :grr: :grr:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কবে যে আবার একসাথে হবো সবাই...
সেটা হওয়ার উপায় অবশ্য নাই। একটা তো আগেই ভাগছে। অন্য সবগুলা তো পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়ায়া ছিটায়া আছে।
স্নৃতিকাতর কইরা দিলা হাসনাইন...
ওনেক মজা তাইনা?
@তৌফিক ভাই,
আমি পোলা খারাপ ভাই, একা একা কাতর হইতে পারি না। 🙂
@রায়হান,
জে, ওনেক মুজা। 😀
বন্ধুদের সাথে অনেক দিন পরে এক হবার মজাটাই অন্যরকম।
কলেজের ছয়টি বছর কি কখনও ভেবেছি যে এরকম একজন আরেকজনকে না দেখে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ও কাটিয়ে দেব? এরই নাম জীবন...।
হাসনাইন,
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এত মজার অনুভূতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।