আজ আমি অনেক সুখী। রিমির কাছে যাচ্ছি। তার পছন্দের সাদা রঙের চেকশার্ট পড়েছি। ম্যাচ করে সাদা স্যুট। ইচ্ছে করেই টাইটা ঠিক করে পড়িনি। ওটা রিমির জন্য। জানি আমার টাই দেখে রিমি বলবে, “বুড়ো হয়ে গেলা!! টাইটাও ঠিক মত পড়তে পার না !?”। তারপর ও নিজেই টাই ঠিক করে দিবে। আমি মুখে মিথ্যে লাজুক হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকব, ওর দিকে।
রিমির সাথে আমার পরিচয়টা দূর্ঘটনা দিয়ে। ঢাকায় নতুন আসলাম তখন। বাবার সরকারী চাকুরী। আজ এখানে ত কাল সেখানে। কলেজে পড়াশোনার হাল দেখে শেষমেষ ঢাকার এক কোচিংয়ে ভর্তি হয়েই যাই। সেদিন প্রথম কোচিং ক্লাসে যাচ্ছিলাম বাসে করে। বাসে উঠে একদম শেষে গিয়ে বসলাম। পাশের সিটেই এক মোবাইল পড়ে থাকে। ধরব না ধরব না বলেও কি মনে করে হাতে তুলে নিলাম। কন্টাক্ট লিস্ট দেখি, এক একটা কি অদ্ভূত নাম! বাবুই, মামস, নিস্তা… আরো হাবিজাবি কিসব। কাকে ফোন করা যায় চিন্তা করতে করতে ‘বাবুই’-কেই ফোন করব ঠিক করে ফেললাম।
বাবুইঃ “হ্যা রিমি বল…কোথায় তুই এখন?”
-“জ্বী… ইয়ে মানে… এই মোবাইলটা আমি বাসে পড়া পেয়েছি। আপনি যদি ফার্মগেটের আশেপাশে কোথাও থাকতেন তাহলে দিয়ে দিতে পারি।”
বাবুইঃ “আপনি কি করেন?”
জগতের সকল বাপদের মনে হয় একটাই প্রশ্ন। দাঁতে দাঁত চেপে বলি,
-“…আমি কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।”
বাবুইঃ “ও… আচ্ছা…আচ্ছা… মোবাইলটা-ত আমার মেয়ের…ও ফার্মগেটেই আছে…। একটু হোল্ড করুন রিমি ফোন করেছে বোধহয়।”
অপেক্ষায় থাকি। একি গায়ে পড়ে ঝামেলা ডেকে আনলুম। এযাত্রা বেঁচে গেলেই হ্ল। আবার ‘বাবুই’মশায়ের গলা শুনি,
-“শুনোন… আপনি ছন্দ সিনেমা হলটার সামনে থাকবেন। ওখানে ফোনটা আপনি রিমিকে দিয়ে দিবেন।”
-“ঠিক আছে। আপনি উনাকে থাকতে বলুন…আমি আধঘন্টার মধ্যে পৌছে যাব।”
কপালে কি আছে কে জানে। হাতে মোবাইলটা নিয়ে ছন্দের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তিনজন মেয়ের একটা দল এগিয়ে আসে আমার দিকে । সবচেয়ে সুন্দরীজনকে মুখ ফসকে বলে ফেলি,
-“আপনিই রিমি? এই নিন আপনার মোবাইল…আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত আর পেতেন না।”
বলে হিরোর ভাব ধরে থাকি, জীবনের চরম ভুলটা করেই ফেলি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন নাক ফুলিয়ে বলে,
-“এদিকে দেন…আমিই রিমি…থ্যাংকস”।
বোকার মত তার দিকে তাকাই, রিমি চোখ নামিয়ে উল্টো হাঁটা দেয়। আমিও পিছু পিছু, আমার কোচিং যে ঐদিকেই।
হঠাৎ কি হ্ল মেয়েরা পিছনে ফিরে আমাকে দেখে যেন ভূত দেখল। সবাই একছুটে কিনা যাবি আমার কোচিং সেন্টারেই?! কোচিংয়ে ঢুকলাম,
তিনজনেই তেড়ে এল। ওদের সাথে আসলাম ভাই, কোচিংয়ের কোঅর্ডিনেটর। উনার কাছেই আগেরদিন ভর্তি হই। তিনজনেই একসাথে বলে উঠে,
-“দেখেন আসলাম ভাই এই লোকটা সেই কখন থেকে আমাদের ফলো করছে। করতে করতে আমাদের কোচিংয়েই চলে আসল?!”
আসলাম ভাই মুখের সবটুকু হাসি দিয়ে বলেন,
-“আরে… ও ত নতুন স্টুডেন্ট। তোমাদের ব্যাচেরই।।”
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, এরপর পাশে কোটি টাকা পড়ে থাকলেও আমি ফিরে তাকাব না। বেল তলায় আর না। হাসতে হাসতে চলে যান আসলাম ভাই, আমরা চার মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকি। একসাথে হেঁসে উঠি। রিমির দিকে তাকিয়ে বলি,
-“পরিচয় হয় নাই, তোমরাই টাইম দিলে না। আমি নিলয়…”
এভাবেই শুরু। এরপর একদিন রিমি হাতে হাত রেখে বলেছিল,
-“আচ্ছা…তুমি কিভাবে বুঝলা যে তুমি আমার পছন্দের?”
আমার উত্তর ছিল,
-“যেদিন প্রথম তোমার চোখে চোখ পড়ল আর তুমি চোখ সরায় নিলা”।
রিমিকে এত লজ্জা পেতে কখনো দেখিনি আর।
স্মৃতিগুলো এখনো রঙিন। কিন্তু আমি?? শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বোধহয়……সাদা হয়ে যাচ্ছে সব। সামনে কি ধরতে গিয়েও যেন ধরতে পারি না, হাত-ই ত খুঁজে পাচ্ছি না। হাত কি আদৌ আছে। অনেক কষ্ট করেও আর হাঁটতে পারছি না। ঘামছি কি?? কিছুই ত দেখছি না। খালি একটাই শব্দ, ক্ষনিক পরপর… পিপ… পিপ…, মেশিন বোধহয়। শব্দ ছাপিয়ে কে যেন বাবা… বাবা… বলে ডেকেই যাচ্ছে। শরীরের সব শক্তি এক করে চোখের ভারি পাতা দুটো তুলি। সামনে মুখে দাঁড়ি ভর্তি কাকে দেখলাম? নীরব-ই ত মনে হয়, নাহ ছেলেটা আজকেও শেভ করে নাই। ঘরে এত ঠান্ডা কেন? নীরবের পাশে ওটা বৌমা না?! আর তার আঁচল ধরে ওটা চার বছরের মিতুল। মিতুলটা বড় মা ন্যাওটা হয়েছে। রুমের ভিতর ডাক্তার ছাড়া আর কাউকে দেখি না। কিন্তু রিমি কোথায়??
অনেক কষ্টে একটা শব্দই বের হয়,
-“রিমঝিম……?”
নিজের কন্ঠ নিজেই চিনতে পারি না।
ডাক্তারঃ “রিমঝিম কে হোন? উনি কোথায়?”
নীরবঃ “জ্বী…আমার মা। উনি গত হয়েছেন দু বছর হ্ল।”
ডাক্তারঃ “ওহ…দুঃখিত।”
আর শুনতে পাই মায়ের আঁচল ধরে থাকা মিতুলের কথা,
-“মামস… দাদুভাই কবে বাড়ি যাবে?”
দু ফোঁটা অশ্রু কি গড়িয়ে পড়ল চোখ দিয়ে!! মুছার চেষ্টা করি না। শুধু চোখ বন্ধ করে রিমঝিমকে খুঁজতে বের হই আবার। গায়ে সাদা চেকশার্ট, সাদা স্যুট…আর টাইটা অযত্নে।
একটা ধাক্কামতোন খাইলাম।
ক্যামনে শুরু হইল আর ক্যামনে শেষ!!
তারপরও আলাদা স্বাদের কিছু একটা পেলাম।
ভালো লাগছে :clap: :clap: :clap:
Life is Mad.
ধন্যবাদ ভাইজান। :boss:
হালায় রোমান্টিক আসে.. 😀
:bash:
হাসনাইন, তুমি মিয়া টু মাচ... :clap: :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আপনাদের দোয়ায় ভাইজান...। :boss: 😀
খুব খারাপ, খুউব খারাপ। এমন গল্প লেখা ঠিক না। মাইনসের মনে কস্ট দেওন ঠিক না।
মরতুজা ভাই,
কথা দিতে পারব না। সামনে হয়ত আরো কষ্ট দিব। 🙂
khub valo likhsore vai...aro likho .. :clap:
ধন্যবাদ ভাই। 🙂
হাসনাইন
কী শুরু করলা ভাই?
তোমার লেখা পইড়া তো গত কয়েকদিন ধইরা আমার মাথায় মারাত্মক প্রেসার পড়তেছে। 😮
কি সব ধুনফুন লেইখা বেড়াইছি এতোদিন!! x-(
এই হইল ৯৯ ব্যাচের পোলাপাইনের লেখা
অসাধারন লেখনী
মর্মস্পর্শী আবেগ
হৃদয়ছোয়া অনুভূতি
😀
:)) ফুয়াদ, তুই ব্যাটা কাউরেই ছাড়বি না।
কামরুল ভাই যে কি বলেন। বহুত শরমিন্দা হই। :shy:
আপনাদের লেখা পড়েই-ত লিখতে শিখলাম। :boss:
দোস্ত এইটা কি লিখলি। আমার সিরিয়াস মন খারাপ হয়ে গেছে।
তোর লেখা দিন দিন ভাল থেকে ভালতর হৈতেসে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
গল্প লেখার ট্রাই দিছিলাম। 🙂
গল্প মনে হয় কষ্ট দিতাছে সবাইকে। নাহ কামটা ভাল করি নাই। 🙁
তোমার অনুভুতির প্রকাশগুলো একটু অন্যরকম, আনমনা করে দেয়।
তবে ট্রেন আর এইটার প্ল্যাটফর্ম মোটামুটি একই, ট্রেনে আলাদা রেখেছিলা, এইটাতে মিলাই দিছ।
একটু অন্য প্লাটফর্ম চিন্তা করত, এই মনে কর মানুষ না, একটা ষ্টেশন, লোক আসছে, যাচ্ছে, ষ্টেশন এর একটা বেঞ্চ, কত লোক ঘুমায়, আজ একজন কাল একজন, কিংবা পার্কের গাছের নিচে একেক দিন একেক জন বসছে।
এইগুলা তোমাকে কেন বললাম জানি না, কিন্তু তুমি যে ধরনের লিখছ তাতে মনে হয় এইটা আসবে।
হুদাই টিপস দিলাম, মুছি দিতে পার।
ফয়েজ ভাই,
নতুন ট্রেন নামাইছি-ত তাই একটু দেইকখা শুইন্না চালাই 😀 । ট্রেক চেঞ্জ করব আরও সিরিয়াস হওয়ার পর :-B । এখনই নিরীক্ষা চালানোর মত সাহস হয় নাই ভাই 😕 ।
গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। :boss:
আমি সম্ভবত কোন লিংক মিস করেছি।
রিমিকে এত লজ্জা পেতে কখনো দেখি নাই আর।
এই লাইনটার পরে এই লাইনটাকে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বোধহয়……সাদা হয়ে যাচ্ছে সব। সামনে কি ধরতে গিয়েও যেন ধরতে পারি না, হাত-ই ত খুঁজে পাচ্ছি না। - রিলেট করতে পারছি না কেন জানি।
তবে প্রথম অংশটা পড়ে খুবই ভাল লাগলো, অনেক সুন্দর লেখা।
www.tareqnurulhasan.com
দুইটা আলাদা প্যারা। পর পর না। আগের প্যারায় এসে স্মৃতিচারণ শেষ হয়েছে। পরের প্যারায় এসে বর্তমান অবস্থার বর্ণনা।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ-ত বলেই দিল ভাই।
আমি চাইসিলাম দুই লাইন করে গ্যাপ দিতে যাতে পড়তে/বুঝতে কোন অসুবিধা না হয়। কিন্তু দিতে পারি নাই, সম্ভব হয় নাই। যত লাইন-ই গ্যাপ দেই না কেন ঐটা এক লাইন পরেই পাবলিস হয় 😕 ।
ধন্যবাদ ভাই। :boss:
নাহ, আলাদা প্যারা সেটা বুঝেছি। আমি বলছিলাম কাহিনি বা গল্পের ধারাবাহিকতার কথা, মাঝখানে একটা লিংক মিসিং মনে হচ্ছে আমার কাছে।
এনিওয়ে, ঠিকাছে। 🙂
www.tareqnurulhasan.com
আসলে ভাই গল্প বড় করতে চাই নাই। ড্রাফট যেটা লিখেছিলাম সেটা বড় হয়ে যায়। বড় লেখা অনেকেই পড়ার আগ্রহ হারায় ফেলে। তাই শর্ট করতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ যেতে পারে, বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব। 🙂
ট্রেন এর পর রিমঝিম।
হাসনাইনের উপর এক্সপেক্টেশানটা বেশ বাইড়া গেলো :boss:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ভাই ভয় ধরায় দিলেন। জীবনে খুব কম মানুষের এক্সপেক্টেশান পূরণ করতে পারছি 😕 ।
তয় ভাই চেষ্টা করুম। :boss:
কয়েকটা কথা(মাইন্ড খাইয়ো না ভাইয়া)
১. টাইমটা কখন? যদি এখন বৃদ্ধ হয় লোকটি তাহলে মোবাইল আনাটা ঠিক হয় নাই।
২. বাস এবং কোচীং, ডাবল কোইনসিডেন্স...
আমি জানিনা বিষয়গুলি ঠিক ধরেছি কিনা। তবে
:clap:
তোমাকে এত কথা বলার কারণ, তোমার লেখা দারুণ সুপঠ্য হয়। বেশ অনুভূতি ফোটে।আমার ধারণা শুধু আলাপন দিয়েই তুমি অনেককিছু প্রকাশ করতে পারবা। সংলাপে সংলাপে একটা লেখা দিও না!
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
প্রথম কথা হইল ভাই, তারেক ভাইয়ের মত আমিও মাইন্ড খাইতে পারি না, স্টোমাকে প্রব্লেম করে। 😀
১. ভাই আমার দুইটা গল্পই নিজেকে কল্পনা করে। আর বাসে মোবাইল পাওয়ার ঘটনাটা আমার লাইফেই ঘটেছিল, কোচিং টা আমার কল্পনা । তাহলে ধইরা নিতে পারেন নিকট ভবিষ্যতে ঘটনা। 🙂
২. মোবাইলটা যে পোলার ছিল এইটা কোইন্সিডেন্স বলতে পারেন ~x( । আর ভাই গল্প লেখার নিয়ম কানুন সম্পর্কে আমি অজ্ঞাত 🙁 । ভাই যদি এ সম্পর্কীয় কোন বই সাজেস্ট করতেন... 😀
ভবিষ্যতে চেষ্টা করব সতর্কতার সাথে লিখতে, ইনশাল্লাহ।
বেল তলায় আর না। 🙂
এত সুন্দর করে কিভাবে লিখো ভাইয়া? 🙂
অনেকদিন লেখা দিচ্ছোনা,
কেমন আছো?
কিরে আপু, রিভাইজ দিচ্ছিস নাকি সিসিবি? পরীক্ষা আছে? 😛
ভালোমতন রিভাইজ দে তাইলে, আইসা পড়া ধরমু কিন্তু :grr:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
মাষ্টার সাব বইসা আসি, 🙂
পড়া কখন ধরবি? ;;)
ভাল আছি আপু।
ট্রেনিংয়ে ছিলাম একমাস। তাই ব্লগে আসা হয় না। 🙂
:clap: :clap:
চলো বহুদুর.........