ক্যাডেটদের জীবনের (এবং কলেজে ক্যাডেটদের নিখাদ বিনোদনের)এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আমাদের স্যার-ম্যাডামরা । এই দুইয়ের মধ্যে চলে এক চোর-পুলিশ কিংবা ইঁদুর-বিড়াল খেলা । ক্যাডেট যত সিনিয়র হয় খেলাগুলোও জমে ওঠে তত বেশি । ক্যাডেট জীবনের তেমন কিছু স্মৃতিই আজ লেখার বিষয়(স্যার-ম্যাডামরা ক্ষমা করে দেবেন প্লিজ)…
একজন মেস ও.আই.সি, কিছু চাষাভুষা ক্যাডেট ও ব্যা-ব্যা ডাক :
ঘটনা-১ : ক্যাডেটরা সাধারণত খুব ভোজন-রসিক প্রকৃতির হয় । তখন আমাদের মেস ও.আই.সি ইসলামিয়াতের এক স্যার । স্যারের ট্রেডমার্ক ছিল তার “লাল দাঁড়ি” । সেদিন লাঞ্চের মেনুতে ছিল ইলিশ মাছ । আমরা একেকজন ৩-৪ প্লেট করে ভাত চালান করে দেয়াতে যথারীতি ভাত শর্ট পড়ে পড়ে অবস্থা, এর মধ্যে আবার কেউ কেউ চিল্লাছে – “এই ভাত কই?” স্যার ঘুরে ঘুরে দেখছেন এই ভুরি-ভোজের দৃশ্য, একসময় আর সহ্য করতে না পেরে দিলেন এক জ্বালাময়ী ডায়লগ – “জীবনে ভাত খাওনি কখনও? সব চাষা-ভুষার মতো খাচ্ছে” ।
ঘটনা-২ : সেই স্যার তখন আমাদের হাউস মাস্টার । তার একটা অভ্যাস ছিল যে তিনি পরীক্ষায় সময় নম্বর দিতেন পৃষ্ঠা গুনে । খাতার ভিতরে কোথাও কোনও দাগ নাই, নাম্বার নাই, শুধু উপরে এক কোনায় নাম্বার লেখা থাকতো । যে ৩৫ পৃষ্ঠা লিখেছে সে পেতো ৩৫ নাম্বার আর যে ৪০ পৃষ্ঠা লিখেছে সে পেতো ৪০ নাম্বার । তো সেই স্যারের টিজ নেম ছিল একটি চতুষ্পদ প্রাণীর নামে যা আবার ব্যা-ব্যা করে ডাকে । একদিন লাঞ্চের পর দেখা গেলো হাউসে ব্যা-ব্যা ডাক । রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম কমন রুমের সামনে একটি কালো রঙের প্রাণী এই ডাকের উৎস । সেই প্রাণীটিকে আবার ক্লাস ১২ এর ভাইয়ারা একটি সাদা হাফ প্যান্ট ও হাফ শার্ট পরিয়ে রেখেছে… সে এক অভুতপূর্ব দৃশ্য ছিল…
রেস্ট টাইম ও হাউস বেয়ারা ম্যাডাম :
ক্লাস ১১/১২ এর ক্যাডেটরা একটু অলস হয়, এটা চিরন্তন রীতি । রেস্ট টাইম শেষে প্রেপের বাঁশি বাজার পরও একটু গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকা, আফটারনুন প্রেপ শুরু হবার ঠিক আগে আগে হন্ত-দন্ত হয়ে উঠে জোর কদমে পা ফেলে অ্যাকাডেমিতে যাওয়াটাও তেমনই । কিন্তু চিরন্তন এই নিয়মটা পাল্টে যেত যখন আমাদের পৌরনীতির জনৈক “BA..” ম্যাডাম থাকতেন হাউস ডিউটিতে । বাঁশি দেয়া শুরু হলেই তিনি লেগে যেতেন জানালা-দরজা পিটিয়ে ঘুম ভাঙানোর প্রতিযোগিতায়, আর তার একমাত্র টার্গেট ছিল সিনিয়র ব্লক । একাধিকবার জানালায় অন্তর্বাস ঝুলিয়েও রেহাই পাওয়া যায়নি তার হাত থেকে, তিনি সগৌরবে তা সরিয়ে বলেছেন – “এই ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো, ওঠো… এই ওঠো…এখনও ঘুমাচ্ছ কেন…যাও রেডি হও”। বিছানা ত্যাগ না করা পর্যন্ত নিস্তার মিলত না ওনার হাত থেকে ।
আমাদের বাবা স্যার :
আমরা যখন কলেজে ঢুকি তখন আমাদের ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এর হেড ছিলেন যে স্যার তাকে আমরা “বাবা” নামেই চিনতাম । এই নামটা আমরা উত্তরাধিকার সুত্রে জেনেছি আমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকেই ।
ঘটনা-১ : আমাদের এক ক্লাসমেট তার ক্লাসে জানালা দিয়ে উদাস নয়নে তাকিয়ে আছে মাঠের পানে । স্যার ওকে ডেকে বললেন, কিরে কি দেখিস, কচি ঘাস নাকি? “কচি ঘাস, খাবে তুমি বারো মাস” ।
ঘটনা-২ : স্যারের আরেক ক্লাসে আমাদের আরেকজন জুতা খুলে বসে আছে । স্যার হঠাৎ দেখতে পেয়ে ওকে সেই জুতা খোলা, শুধু মোজা পড়া অবস্থায় সম্পুর্ন অ্যাকাডেমি ব্লক চক্কর দেয়ালেন ।
ঘটনা-৩ : স্যার একবার আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা নিলেন, হাতে গোনা ৮-৯জন বাদে আমরা সবাই ফেল । স্যারকে অনেক রিকোয়েস্ট করার পর স্যার রাজি হলেন পাস করাতে, তবে শর্ত হল ফেল পার্টি সবাইকে ডেস্কের উপর ১০ মিনিট কান ধরে নিলডাউন হয়ে থাকতে হবে । আমরাও শর্ত মেনে যথারীতি নিলডাউন হয়ে পাস করলাম ।
কলেজ ডাইনিং হলের বিদেশি পাঙ্গাশ মাছ ও নাচনে বুড়ি :
ঘটনা-১ : আমরা তখন ক্লাস এইটে, শামীম স্যার মেসের দায়িত্বে । স্যার এমনিই কথা অনেক কম বলতেন, আর অল্প কথায় অনেক বিশাল কিছু সম্পর্কে ধারনা দিয়ে দিতেন । যাইহোক তখন লাঞ্চ কিংবা ডিনারে প্রায়ই পাঙ্গাস মাছ দিত । একদিন আমার টেবিল লিডার স্যারকে ডেকে বললেন, “স্যার, মাছে অনেক গন্ধ” । শুনে স্যার কাছে এসে বললেন, “এটা দেশি না, বিদেশি, অনেক দূর থেকে আসে…” ।
ঘটনা-২ : স্যার সেদিন আমাদের হাউস ডিউটিতে, তখন তিন হাউসের মধ্যে খুব রেষারেষি, এক হাউস কোন ছুতা পেলেই কমপ্লেন করে আরেক হাউসের নামে । এহেন পরিস্থিতিতে আমরা তিন রুমমেট রেস্ট টাইমে চিল্লা-চিল্লি করে ধরা খেলাম, হাউস অফিসে স্যার আমাদেরকে বললেন, “এভাবে চিল্লা-চিল্লি যে করছ, হাউসের পরিস্থিতি কি জানো না? (একটু বিরতি দিয়ে)একে তো নাচনে বুড়ি, তার উপরে ঢোলের বাড়ি । যখন বুঝবে তখন আর সময় থাকবে না । যাও…”
চলবে…
পাঁচ তারা। কিন্তু হাসতে পারলাম না। 🙁
:boss: এর পরেরটাতে কাভার দিয়ে দিব আশা করি... দোয়া রাইখেন... 🙂 🙂