(এই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট আর সময় বোঝাতে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা এবং চরিত্র উল্লেখ করা হয়েছে। আর বাদবাকী ঘটনা আর চরিত্রগুলো কাল্পনিক, তবে অবাস্তব নয়। অনেক ঘটনাই বাস্তব আমজনতার অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া হয়েছে।)
এক দুই তিন চার এবং পাঁচ
ছয়
সাত
আট
বাঙালি এই প্রথম তাদের জন্য একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। ঘটনাটা এখনও বিশ্বাস হতে চায় না। কোন ক্লাইভ-কর্ণওয়ালিশ নয়, আয়ুব-ইয়াহিয়া নয়, এখন থেকে আমরাই আমাদের রাজা-উজির হব; কিভাবে সম্ভব!তবে কিছুদিন পরে বুঝতে পারলাম যুদ্ধের কাজটা অনেকটা নদীর মতো। পার ভাঙ্গে, চর গড়ে। ঠিকমত বাঁধ দিতে না পারলে সেই ভাংগা পারে কপাল পোড়ে অনেকের, আর চরের দখল যায় গুটিকয়েকের হাতে। একাত্তরে কাজলের ভাই আর চাচা শহিদ হল আর স্বাধীন দেশে দু বছরের মাথায় খুন হল নিজের জন্মদাতা। তার উপর ওদের বসতভিটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। সেখানে এখন পার্টি অফিসের সাইনবোর্ড ঝুলছে। লোকে এখন জোরেশোরে কথা বলতে ভয় পায়। কিন্তু ফিসফিস বলে এসবের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে খালেক মজুমদার। এই লোক এলাকার রক্ষীবাহিনীর বড় হর্তাকর্তা। হিন্দুদের সম্পত্তি রক্ষা করার নামে দখল করে নিচ্ছে। গরীবদের ভাগের রেশন, রিলিফ, কম্বল বিতরণ করার দায়িত্ব নিয়ে সব গায়েব করে দিচ্ছে। প্রতিবাদী স্বভাবের কাজলের বাবা হিসেব চেয়েছিলেন। ব্যস, নিজের জীবনের বিনিময়ে কড়ায় গণ্ডায় সে হিসেব পেয়ে গেলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে খালেক মজুমদারকে এলাকার লোকে স্বেচ্ছাসেবী লীগের লাঠিয়াল হিসেবে চিনতো। যুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিল। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে পাকিস্তানি মিলিটারি নিধনের চেয়ে নিজ দেশের বামদের সায়েস্তা করতে ব্যস্ত ছিল। স্বাধীন দেশে এলাকার অভিভাবক সেজে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। একদিকে পথেঘাটে ভিখিরির সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে কোর্ট রোডের উপর শূন্য থেকে ফুলে-ফেঁপে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে খালেক মজুমদারের নয়নাভিরাম প্রাসাদ। কাজল আর ওর বিধবা মা আজ কোথায় আছে কে জানে!
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জেঠাও হঠাৎ করে খুব বড়লোক হয়ে গেলেন। পাকিস্তানী মালিকদের ছেড়ে যাওয়া কলকারখানাগুলো নিলামে উঠলো। শ্বশুরের সহায়তায় উনার কর্মস্থলের রাসায়নিক কারখানাটা কিনে ফেললেন। উনি জানতেন যে কারখানাটার ভেতর খুব দামী এবং প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল আছে। কার্বোক্সাইলেট গ্রুপের প্রডাক্ট। সাবান বানাতে দরকার হয়। কারখানাটা হাতে আসার পর জেঠা সেই সব রাসায়নিক দ্রব্যাদি বাইরে বিক্রি করে দিলেন। পরে একই জিনিষ বাংলাদেশকে বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছিল চড়া দামে। সেই কেনাবেচার দালালিও করেন জেঠা। সেখান থেকে বড় রকমের কমিশন পান। বলতে গেলে শূন্য হাতে দেশের সম্পদ এধার-ওধার করে প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নিজের অনেক মূলধন গড়ে তোলেন। চাইলে পরে সদ্য স্বাধীন-প্রাপ্ত গরীব দেশের অনেকগুলো টাকা বাঁচিয়ে দিতে পারতেন। জেঠার কাছে স্বাধীন দেশের উন্নতি একটা সস্তা সেন্টিমেন্ট। এসব নিয়ে যারা ভাবার তারা ভাববে। উনি ব্যস্ত উনার নিজের উন্নতি নিয়ে। এক ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে গুলশানে কম দামে একটা জমি কিনে ফেললেন। সেই জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করলেন। তারপর বিভিন্ন রকম সরকারী পারমিট পাওয়ার জন্য সিএসপি চাচার পরিচয় কাজে লাগলো। সিএসপি চাচা তখন জেঠাকে উপকারের জন্য এক পায়ে খাড়া। কাউকে না কাউকে তো সুবিধা দিতে হবেই। নতুন দেশ। শিশু-খাদ্য থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ – কত কি দরকার! স্বভাবতই তার পরিবারকে বিপদে সাহায্য করার জন্য জেঠা তালিকার ঊর্ধ্বে থাকতো। সুযোগসন্ধানী হবার মতো বুদ্ধি আব্বার নেই। সেই সুযোগটা নিয়ে নিলো জেঠা কারণ আব্বার বাবার বাড়ি তো জেঠারও বাবার বাড়ি। তবে জেঠা শুধু নিজের দিকটাই দেখেননি। সময় সুযোগ মতো ঠাকুরপাড়াতে আমাদের খুবই সস্তায় একটা বাড়ি কিনতে সাহায্য করেছিলেন। শুধু তাই’ই নয় বুদ্ধি করে আব্বাকে একটা মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র যোগার করে দিলেন। সেই সনদের জোরে আব্বার চাকরিতে একটা প্রমোশনও হয়ে গেল। যুদ্ধের পর পর সনদ-প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দু বছরের সিনিয়রটি দিয়ে দেওয়া হয়।
আম্মা আর হোসনা আপা দুজন খুব ভাল বান্ধবী হয়ে উঠলো। অবশ্য হোসনা আপার আন্তরিকতার জন্যই বন্ধুত্বটা জমে যায়। মরচে পড়া ছোট গেটটা এখন বলতে গেলে সবসময় খোলাই থাকে। এখন আর আমাকে ও বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মেরে তাকাতে হয়না। বরং দিন দিন খান মঞ্জিলে আমার দাম বেড়ে যাচ্ছে। গানের প্রতিভা দিয়ে আমি তখন সবাইকে বাজিমাৎ করে দিচ্ছি। হোসনা আপা খুশি হয়ে আমাকে উনার কলকাতা থেকে আনা হারমোনিয়ামটা দিয়ে দিলেন। আমি নিয়মিত নিলীমাদির কাছে গান শিখতে শুরু করলাম।
কিরণ ভাই অনেকবার পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে নেমেছিলেন। উনি সেসময়টা ছিলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কিন্তু যুদ্ধের পর উনাকে কিছুটা অবসন্নতায় পেয়ে বসেছিল। উনার বন্ধুবান্ধব অনেকেরই একই অবস্থা। সিএসপি চাচা কিরণ ভাইকে সে সময় আমেরিকা পাঠিয়ে দেন। সেখানেই এখন পড়াশোনা করছেন। ভাইয়ার আর সরাসরি যুদ্ধ করা হয়নি। আগরতলা ট্রেনিং ক্যাম্পে ছিলেন। যুদ্ধ শেষে ক্যাডেট কলেজে ফিরে গিয়ে ইন্টারমেডিয়ে্ট পরীক্ষায় বসেছিলেন। সময়টা ১৯৭২ সাল। স্বাধীন দেশের প্রথম বছরের বোর্ড পরীক্ষায় অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হল। অটো পাশের মতো। দাদাবাড়ির আবুল চাচার কোন এক ভাইয়ের নাকি অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার। প্রায় আট বছর লেখাপড়ার সাথে সম্পর্কহীন থেকেও ভদ্রলোক সে বছর পরীক্ষায় পাশ করে গেলেন। এসব কিছুই শোনা কথা। এরকম হাজারও শোনা কথায় বাতাস বেশ ভারী। তবে ছোটদের এইসব বিষয় নিয়ে অতো মাথা ব্যথা ছিল না। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে যখন তখন ছোট গেটটা দিয়ে খান দাদার লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে আসা, মনের আনন্দে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান গেয়ে উঠা,আর স্কুলের ছুটির অপেক্ষায় থাকা। স্কুলের ছুটি হলেই হোসনা আপারা ঢাকা থেকে এখানে ঘুরতে আসেন। সাথে আসে হিরণ ভাই।
নয়
দেখতে দেখতে তিনটা বছর পার হয়ে যায়। যুদ্ধের স্মৃতি-ভুলে গিয়ে যে যার মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে থাকে। আগের মতোই শীতের সময় উৎসব উৎসব আমেজ নিয়ে মাপজোক করে খান মঞ্জিলের বিশাল মাঠের এককোণে প্রতিবছর ব্যাডমিন্টন কোর্ট কাটা হতে লাগলো। তারপর বিকেল থেকে শুরু হতো অনেক রাত পর্যন্ত অবিরাম ব্যাডমিন্টন খেলা। সন্ধ্যার পর ফ্লাড লাইট জ্বলে উঠত। দিনের বেলা কখনও সাত চারা খেলা হচ্ছে,কখনও হাডুডু কখনওবা ফুটবল। আগের মতোই হই হুল্লোড়ে সে বাড়িটা সরগরম হয়ে উঠলো। অবশ্য ঠিক আগের মতো বলা ঠিক হবে না। কারণ আগেকার ফাঁক-ফোকর দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারা দর্শক আমি আর দাদামনু এখন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। দাদামনুর সৌজন্য ওর বন্ধু পাড়ার ছেলেরাও এখন এ বাড়ির আঙ্গিনার মধ্যে ঢুকে গেছে। মাঝে মধ্যে হিরণ ভাই সবাইকে ক্যারাতে শেখায়। নিজে ব্ল্যাকবেল্ট হোল্ডার। খেলাধুলা ছাড়াও মাঝে মধ্যে এ বাসায় দোতলায় খান দাদার লাইব্রেরীতে পাঠচক্র বসে। বইপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। আর হয় গানের অনুষ্ঠান। সেখানে আমি এখন নিয়মিত গায়িকা।
সেদিনও খেলা হচ্ছিল। একদিকে দাদামনু, দাদামনুর বন্ধু শরীফ আর অন্যদিকে মেলিতা আপা আর রফিক ভাই দল বেঁধে ব্যাডমিন্টন খেলছিল। মেলিতা আপা হিরণ ভাইয়ের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। উনার বড়মামির মেজবোনের মেয়ে। আমি তো সবসময়ই খেলার দর্শক। ফ্ল্যাড লাইটের নিচে বসে খেলা দেখি। খেলার জন্য চারজন মানুষ হলে গেলে ইচ্ছা করেই হিরণ ভাই আর খেলেন না। আমার পাশে বসে খেলা দেখে। সেদিন ধপ করে আমার পাশে বসে পড়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘লরা ইঙ্গলসের লিটল হাউজ অন দ্য প্রেইরী কতটুকু পড়া হল?’
এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। প্রতিবার ছুটিতে এসে হিরণ ভাই এসে আমাকে এক একটা ইংলিশ বই পড়তে দেয়। পড়তে খুবই কষ্ট হয় কিন্তু তারপরও পড়ি। এক পৃষ্ঠা শেষ করতে অন্তত পক্ষে দশবার ডিকশনারি খুলতে হয়। উনি অবশ্য বলে দিয়েছে এতবার ডিকশনারি দেখতে না। ঢাকার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া একজন কিভাবে বুঝবে আমাদের এখানে মফস্বল শহরে ইংলিশের কি দুরবস্থা!অন্য কেউ হলে আমি পড়তাম না। শুধু হিরণ ভাই বলে পড়ছি।
’কঠিন লাগছে। তারপরও পড়ছি।’
‘একবার ঢুকে গেলে দেখবে শেষ না করে উঠা যাচ্ছে না।’
উফ, হিরণ ভাই কেন যে খালি উনার পর্যায়ে নিয়ে আমাকে ভাবে বুঝি না। আমার তো শুরুই করতে ইচ্ছা করছে না।
’এই হিরণ, তোমার পাশে কর্কটা পড়েছে, দাও তো।’ মেলিতা আপার গলা শোনা গেল।
’ট্যাক্স দিতে হবে। তাহলে ছাড়বো।’ হিরণ ভাই বলল।
’এই দেয়া তুই আমার হয়ে হিরণকে ট্যাক্স দিয়ে দিস তো।’আমাকে উদ্দেশ্য করে মেলিতা আপা কথাটা বলল।
আমি হকচকিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
‘ওই গানটা শুনিয়ে দিস ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো, বাটা ভরে পান দিব মুখ ভরে খেও।’ মেলিতা আপার যথারীতি সপ্রতিভ সংলাপ।
সবাই হেসে উঠলো। এমনকি হিরণ ভাইও। মধ্যে দিয়ে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না। এইসব শহুরে মানুষজনের কাছে আসলে নিজের সপ্রতিভতা কোথায় জানি লুকিয়ে থাকে। মনে মনে বলতে থাকি, ‘আল্লাহ আমাকে তুমি মেলিতা আপার মতো চটপটে করে দাও।’
আবার সবাই খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। মেলিতা আপা দুমদাম করে একেকটা কর্ককে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
মেলিতা আপারা এ বছরই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। উনার আব্বা সামরিক বাহিনীর একজন কর্নেল । একাত্তরের সময় পাকিস্তানে পোস্টিং ছিল। এতদিন যুদ্ধের পর ও দেশে আটকে পড়া আরও সব বাঙ্গালি সামরিক অফিসার আর আমলাদের সাথে পাকিস্তানের ওয়ার্সাক বন্দীশিবিরে আটকে ছিল। ছাড়া পায় গতবছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে। এ বছর থেকে উনারা সম্পূর্ণ স্বাধীন বাংলাদেশের অধিবাসী। উনার আব্বার এখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং। মেলিতা আপার আম্মাকে দেখলে আমার ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যের হিরিম্বার কথা মনে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজনকে মুহূর্তের মধ্যে উনার উপস্থিতি বুঝিয়ে দেন। ভদ্রমহিলা একবার একটা কলাপাতা রংয়ের শাড়ি পড়েছিলেন। তাই দেখে দাদামনু আমার কানের কাছে এসে বলল, ‘দেখ আস্ত কলাগাছ হেঁটে বেড়াচ্ছে।’ এমনিতে মহিলা দেখতে বেশ সুন্দর। খুব ফর্সা আর লম্বা। কিন্তু এমন ডাকসাইটে ভাব নিয়ে চলেন যে তাকে দেখলে সমীহ করার বদলে ভয় ধরে যায়। মনে আছে একবার মেলিতা আপা আমার হাত ধরে গল্প করছিল। দূর থেকে মহিলা তা দেখে মেলিতা আপাকে জিজ্ঞেস করলেন, ’এই মেয়ে কে?’
’পাশের বাসায় থাকে।’
’ওর হাত ধরে তুমি কথা বলছ কেন?’ মায়ের কথা শুনে মেলিতা আপা আমার হাত ছেড়ে দেয়, খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। সেই সাথে আমিও।
’এই মেয়ে তোমার আব্বা কি করে?’ মেলিতা আপার আম্মা এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
’ব্যাংকে চাকরি করে।’
’কি পোষ্টে?’
প্রশ্নটা শুনে আমি খুব খুশী হয়ে গেলাম। দেড় বছর আগে পাওয়া আব্বার প্রমোশনের আমেজ এখনও আমাদের পরিবারে মৌতাত ছড়াচ্ছে। খুশী মনে উত্তর দিলাম, ’ক্যাশিয়ার।’
সেটাই ছিল মহিলার সাথে আমার শেষ কথা। আমার উত্তর শুনে উনি উলটো ঘুরে চলে যান। সাথে মেলিতা আপাকেও নিয়ে যায়। আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পেছনে দাড়িয়ে থাকি। আমাদের কথোপকথনের প্রতিটা শব্দ টেপরেকর্ডারের মতো মাথার মধ্যে পুনরাবৃত্তি করতে থাকি। কিন্তু কিছুতেই নিজের ভুলটা বুঝতে পারলাম না। আমি কি সালাম দিইনি? সহপাঠী বাবলু বলে যে আমার চেহারাটা নাকি রাগী রাগী। আমার কি একটু হেসে কথা বলা উচিত ছিল? নাকি শুধু ক্যাশিয়ার বলার বদলে বলতে হতো ‘আমার আব্বা ক্যাশিয়ার’?
অবজ্ঞা ব্যাপারটা শিশুরাও বুঝতে পারে। আর আমি তো এখন আর ছোট নই। তাই মায়ের কারণে এরপর থেকে মেলিতা আপাকে দূর থেকে দেখলেই সরে যেতাম। কিন্তু আপাটা বেশ স্বাভাবিক। দেখলেই খুব ভাব ভাব ভান করে কাছে এগিয়ে আসবে। আমার গাল দুটো টিপে দিয়ে বলবে,’তুই দিন দিন আরও কিট হচ্ছিসরে।’
এই কথা শুনে আমি বিগলিত হয়ে পরি। সব অভিমান ভুলে যাই। ভুলে যাই উনাকে ঈর্ষা করতে। তখন শুধুই ভালবাসি। মেলিতা আপাকে ঈর্ষা করার অনেক কারণ আছে। প্রধান কারণ সবার সাথে উনি খুব স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারেন। এমনকি ছেলেদের সাথেও। দ্বিতীয় কারণ উনার জীবন। মানে যে জীবন উনি যাপন করছেন। মনে মনে উনার মতো একটা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখতাম। হিরণ ভাইদের পরিবারের সাথে একবার উনাদের কোর্টবাড়ির বাসায় গিয়েছিলাম। সে বাড়িটা ছবির মতো সুন্দর। আর কি বিশাল! গাছ-গাছালী,সাজানো ফুলের বাগান, খেলার মাঠ, এমনকি সেখানে একটা পুকুরও আছে। সে বাড়িতে অনেক কাজের মানুষ। উনার রুমটা পুরোটা গোলাপি রং করা। টিপটপ করে সাজানো। একপাশে ছোট্ট একটা তুলতুলে বিছানা। পাশে সাইড টেবিল। তার উপর মোজাইকের মতো নকশা করা স্বচ্ছ কাঁচের টুপি পড়ানো টেবিল ল্যাম্প। ঘরে ঢুকতেই বা পাশে ড্রেসিং টেবিল আর ডান পাশে পড়ার টেবিল। আলাদা কোন আলমেরা নেই। দেয়ালের সাথে লাগানো ওয়ারড্রোপ। বাইরে থেকে তা দেয়ালের সাথে মিশে আছে। একদম বিদেশী ঘরের ছবির মতো। পড়ার টেবিলের পাশে একটা বুকশেলফ। তাতে উনার পছন্দের গল্পের বই। উপরের তাকে অনেক ক্যাসেট প্লেয়ার। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু সবরকম গান আছে। উনি নাকি এই তিনটা ভাষাতেই অনর্গল কথা বলতে পারেন। পাকিস্তানে থাকতে উনি উর্দু ভাষায় গান শিখতেন। আমরা যতক্ষণ ও বাড়িতে ছিলাম ততক্ষণ একটা ছোট্ট কুকুর আমাদের পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করলো। কুকুরটা সাদা রঙের। তুলোর মতো বড় বড় সাদা পশম। নাম টমি। মেলিতা আপার আম্মা পোষে। সে কুকুরের আলাদা ছোট্ট চৌকনো ঘর, খাবার বাটি, ঘুমানোর জন্য তোষক আছে। জীবনে প্রথম জানলাম কুকুররাও এমন রাজকপাল নিয়ে জন্মায়! এমন একটা বাড়ির মেয়েকে চাইলেও আমি খুব একটা ভালবাসতে পারিনা। হয়তো মেলিতা আপার জায়গায় কোন ছেলে হলে ঈর্ষা করতাম না। ঠিক যেমন হিরণ ভাইকে করিনা। আবার ওদিকে দাদামনু মেলিতা আপার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উনি নাকি ছেলেদের থেকেও ভাল ব্যাডমিন্টন খেলে। আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে দাদামনুর সাথে মেলিতা আপার খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। তবে দুজনে আলাদা আলাদা স্কুলে পড়ে। মেলিতা আপা পড়ে কোর্টবাড়ির ইস্পাহানী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে আর দাদামনু কুমিল্লা জেলা স্কুলে।
আমার চিন্তার জগত ছিন্ন হল হিরণ ভাইয়ের কথায়, ’আমার ট্যাক্স কোথায়?’
’সত্যি সত্যি ঘুমের গান শুনতে চান?’ আমিও একটু চটপট ভাব দেখালাম।
’আমার যে কোন গানেই চলবে।’
আমি চট করে হিরণ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম। সেই চোখ। বাদামি-সবুজাভ। এখন আর তাদের আগের মতো মার্বেল বলে মনে হয়না। তবে কেমন জানি লাগে। মনে হয় শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত উঠানামা করতে থাকে। সেখানে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না। আমি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। চোখ নামিয়ে বললাম ’আপনি গ্যাংটকে গণ্ডগোল গল্পটা শেষ করেননি।’
‘আচ্ছা কোন জায়গায় জানি শেষ করেছিলাম? ও মনে পড়েছে। ফেলুদা দেখল লোকটার বাম হাতে কালির দাগ লেগে আছে। তারমানে সে বাম হাত ব্যবহার করে লেখে। সে একজন বাওয়া। জানতো যে ডানহাত আর বামহাতের লেখা আলাদা করে সনাক্ত করা যায় …’।
হিরণ ভাই গল্পটা বলতে শুরু করলো। আমি শুনতে লাগলাম। যথা সম্ভব উনার চোখের উপর চোখ পড়াকে এড়িয়ে গিয়ে। আমার শুধু এই একটা জায়গাতেই অস্বস্তি। গল্প শোনাতে নয়। সেখানে আমি তন্ময় হয়ে পড়ি। বিশেষ করে ফেলুদা এখন আমার সবচেয়ে প্রিয়। খান দাদার লাইব্রেরীতে সত্যজিৎ রায়ের এই পর্যন্ত বের হওয়া ফেলুদা সিরিজের সব বইগুলো আছে। তবে একটা তালাবন্ধ আলমারিতে। ফেলুদার ব্যাপারে হিরণ ভাই অতি মাত্রায় সংবেদনশীল। কাউকে ধরতে পর্যন্ত দিতে দেন না। দাদামনু কতবার চেয়ে বিফল হয়েছে। আমিও একবার চেয়েছিলাম। দেয়নি। তবে তার বদলে গল্প শোনাতে লাগলেন। এর আগে শুনেছি সোনার কেল্লা, কৈলাশে কেলেঙ্কারি, বাক্স রহস্য। এবার শুনছি গ্যাংটকে গণ্ডগোল। হিরণ ভাইয়ের মুখে ফেলুদার গল্প শুনে আমার দুধের স্বাদ রসমালাইয়ে মিটে যেত। এক্কেবারে মাতৃ-ভাণ্ডারের রসমালাই।
ঈশ, শীতের ছুটিটা যদি আরেকটু বড় হত! গত তিনবছর ধরে এসময়টায় যত মজা করেছি তা আমার সারাজীবনের আর অন্যসব মজা এক করে দ্বিগুণ করলেও তার সমান হবে না। রাতের বেলা অন্যদের খেলা আর আমার গল্প শোনা। আর দিনের বেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,গানের আসর,বই পড়া,পাঠচক্র,সাতচাড়া,হাডুডু,পিকনিকে হই চই করে কোর্টবাড়ি কিম্বা ময়নামতি যাওয়া। মাঝে মধ্যে আমরা রাতের বেলা টেলিভিশন দেখতাম। বিস্ময়াভূত হয়ে। আমার জীবনে নতুন সংযোজন তো। টেলিভিশন তখনও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আসেনি। সম্পন্ন পরিবারগুলোর বৈঠকখানাতেই তারা আটকে ছিল। বিষয়টা খুব সাধারণ ঘটনা যে আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীরা ভীর অন্য এক বাসায় গিয়ে টেলিভিশন দেখছে। খান মঞ্জিলের উদারতায় আমরাও তখন টেলিভিশন দেখার সুযোগ পেতাম। ছোটদের তো এমনিতেই কত মজা। নাটক, গান, নাচ, আবৃত্তি, সংবাদ, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান – সবরকম আনন্দ আর উষ্ণতার সান্ধ্য-কালীন বিনোদনের একমাত্র উৎস শহুরে নাগরিকদের জন্য। এর ব্যাপ্তিকাল মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। একটাই মাত্র চ্যানেল। আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ গানের অনুষ্ঠানগুলো। অনেক পরিচিত গানের সুর মিলিয়ে নিতে পারতাম। আর ভাল লাগতো ধাঁধার অনুষ্ঠান ‘হারজিত’। প্রতি রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হত। উপস্থাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। যেমন সুন্দর উনার উপস্থাপনা তেমন নতুনত্বে ভরা উনার পরিকল্পনা। সবচেয়ে মজা লাগতো কবির লড়াই দেখতে।
আমরা পরে নিজেদের মধ্যে কবির লড়াই খেলতাম। দু দলে ভাগ হয়ে যেতাম। আমাদের পছন্দের ফুটবল দলের নামে দল। আবাহনী আর মোহামেডান। হিরণ ভাইয়ের পছন্দের দল আবাহনী। আমারও তাই পছন্দ। আমাদের দল থেকে হায়দার ভাই শুরু করল,
‘আমার নাম হায়দার।’
ওদিকে মোহামেডান থেকে বলল,
‘আপনি লোকটা কিন্তু ভাই বেজায় কায়দার।’
সংগে সংগে আবাহনী থেকে হিরণ ভাই উত্তর দিল,
‘আপনি ভাই তৈরি কিসের? আটার না ময়দার?’
কবির লড়াই একবার শুরু হলে থামত চাইতো না। সেই সাথে ক্রমাগত সবার হাসির ঢল নামত। যেদিন আসর খুব জমে যেত সেদিন শেষ হতো আজম খানের পপ গান দিয়ে। একদম সম্পূর্ণ নতুন ধরনের গান নিয়ে আজম খান তখন খুবই জনপ্রিয়। গানগুলোর কথা, সুর, ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র, পরিবেশনের রীতি সবই ছিল আলাদা। কথা ছিল খুবই ভিন্নধর্মী, এমন কথা যে আদৌ গানের কথা হতে পারে তা ভাবাই কঠিন। সবচেয়ে মজার বিষয়টা হল এই গানগুলো সবাই গাইতে পারে। অতো সুর না মেলালেও চলে। আমরা সবাই মিলে গলা ফাটিয়ে গাইতে থাকি,
ওরে সালেকা, ওরে মালেকা
ওরে ফুলবানু পারলি না বাঁচাতে;
পাশের গাঁয়ে ছিল সে যে
রোজই যেত এপথ দিয়ে
কেন স্বাধীনতা নিয়ে গেল …
খান মঞ্জিলে আরেক অবাক করা জিনিষ ছিল। সেটা ভিসিয়ার। একদিন খুব হইচই করে আমাদের সবাইকে একদিন সুপার ম্যান দেখানো হল। আরেক দিন সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান। সেসময় লন্ডন আর আমেরিকা থেকে হিরণ ভাইয়ের চাচা,মামারা নানারকম ইংরেজি সিরিজ কিম্বা সিনেমার ক্যাসেট পাঠাতেন।
শীতের শেষের দিকে যখন ব্যাডমিন্টন কোর্ট প্রায় গুটিয়ে নেওয়ার সময় হতো ঠিক তার আগ দিয়ে বেশ বড় সর করে কয়েক পাড়া মিলে একটা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা হতো। সেখানে খুব অবলীলায় হিরণ ভাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতেন। বিষয়টা আমাকে বেশ অবাক করতো। যেই মানুষটা সবচেয়ে কম খেলত সেই মানুষটা কিভাবে প্রতিযোগিতায় প্রথম হতো? হিসেব মেলাতে পারতাম না। বরং উনাকে অতিমানব ধরনের কিছু একটা বলে মনে হত। মাঝে মধ্যে এটাও ভাবতাম সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যানের মতো উনারও কোন গোপন অপারেশন হয়ে থাকতে পারে। সেই অপারেশনে সিক্স মিলিয়ন খরচ না হলেও কম করে অন্তত ওয়ান মিলিয়ন ডলার খরচ তো হবেই। আরও অনেক তেলেসমাতি দেখিয়ে ততদিনে উনি দাদামনুরও হিরো। আদর্শ। অথচ হিরণ ভাই দাদামনুর থেকে এক কি বড়জোর দুই বছরের বড় হবে। উনি ইংলিশ মাধ্যমে লেখাপড়া করতো বলে ঠিক ক্লাসের হিসেবে পার্থক্যটা বোঝা যেত না।
আমাদের দু ভাইবোনের অনেক বিষয়েই মিল হয় না, কিন্তু এই ওয়ান মিলিয়ন ডলার ম্যানের ধারণার সাথে দাদামনুও একমত। হিরণ ভাই সাধারণ কোন মানব না অতি মানব। গোপন রাখার শর্তে এই কথাটা দাদামনুর কাছে বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের মতো দাদামনু কথাটা ছেলে-মহলে প্রকাশ করে দেয়। এতে আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে। যেই আমার উপস্থিতি আগে কেউ টেরই পেত না, এরপর থেকে আমাকে দেখলে সবাই টিপ্পনী কাটতে শুরু করতো।
শরীফ ভাই বলল, ‘কি করলে তুমি আমাকে টু মিলিয়ন ডলার ম্যানের খেতাব দিবে?’
রফিক ভাই বলল, ‘তোমার ওয়ান মিলিয়ন ডলার ম্যানকে কয় তলার ছাদ থেকে লাফ দিতে দেখেছো? আমি কিন্তু তার থেকেও উঁচু তলা থেকে লাফ দিতে পারবো।’
এরকম মন্তব্য লেগেই থাকতো। প্রতিবছরই একত্রিশে ডিসেম্বর রাতে খান মঞ্জিলের এই শীতের পাখীদের মিছিলের সবাইকে খেতাব দেওয়া হতো। সে বছর হিরণ ভাইয়ের খেতাব হল ওয়ান মিলিয়ন ডলার ম্যান। এতে আমি বিশ্বাসঘাতক দাদামনুর উপর এমন রেগে গিয়েছিলাম যে ওর সব নোটখাতা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।
আমার এমন কাজে আম্মা খুব শাসন করেছিল। আর দাদামনু দূর থেকে খালি আমাকে ক্ষেপাতে লাগলো।
’দেয়া গল্পটা জানিস তো, কুমির প্রথমে ঠিক করে শেয়ালের পা ধরেছিল। শেয়াল বলল, জ্ঞানী কুমির মহাশয় তুমি তো আমার হাতের লাঠি ধরেছ। এই নাও আমার পা। পা ধরো। কুমির যেই না পা ছেড়ে শেয়ালের বাড়ানো লাঠি ধরল অমনি শেয়াল লাঠি ছেড়ে পগারপার। এখন বলতো দেখি এই বাসায় কে শেয়াল আর কে কুমির?’
দাদামনুর এ কথায় আমার রাগ আরও বেড়ে যেত। ওর পেছন ছুটতাম খামছে দেবার জন্য। ধরতে পারতাম না। আম্মার কাছে নালিশ দিয়েও কোন বিচার পাওয়া যেত না। কারণ আম্মার চোখে আমি নোটখাতা ছিঁড়ে শুধু যে অপরাধ করেছি তাই নয় নিজের ভবিষ্যৎ নিজে পুড়িয়েছি। কারণ বছর শেষে ওসব নোটখাতার কোন মূল্য দাদামনুর কাছে আর নেই। একবছর পর ওসব আমার কাজেই লাগতো।
আমার নালিশের জবাবে আম্মা গজগজ করে বলে উঠত, ’সাধেই কি ভালো তোমাকে বোকা কুমীরের সাথে তুলনা করে!’
সে বছর শীতের ছুটি শেষ হবার আগেই আমার ছুটি শেষ হয়ে আসে। নিজেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসন দিই। দাদামনুর উপর আমার অসম্ভব রাগের কারণ এই খেতাবের হিরণ ভাই আমাকে ভুল বুঝতে পারে। এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে আমি ওনার দিকে চোখে চোখ রাখতে পারতাম না। এবার আমার মুখ দেখানোও বন্ধ হল। কি মুখে আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়াব? ঢাকা যাওয়ার আগে হিরণ ভাই দু একবার আমার খোঁজে বাসায় এসেছিল। আমি লুকিয়ে থেকেছি। তখন কি আর জানতাম সে বছরটাই হবে আমার জীবনে হিরণ ভাইয়ের কাছ থেকে ফেলুদার গল্প শোনার শেষ বছর?
(চলবে)
প্রথম দিকেই অসাধারণ একটা কথা পেলাম,
বাকিটুকু পড়ে আসি এখন...
যুদ্ধ পরবর্তী মধ্যবিত্ত শহুরে জীবন সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। BTV, সায়ীদ স্যারের ম্যগাজিন অনুষ্ঠান, Hawai Five O, Million Dollar Man/Women ... আজম খানের আলাল-দুলাল, সালেকা-মালেকা... সত্যি নস্টালজিক দিনগুলি...।।Thanks for reviving those memories.
Smile n live, help let others do!
সময়টা ফ্রেমে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। ঐ সময়টা্র মধ্যে একটা নিজস্বতার সোঁদা গন্ধ খুঁজে পাই।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
দারুন! চমৎকার এগোচ্ছে - সময়টাকে একদম দুর্দান্তভাবে তুলে এনেছেন মনে হচ্ছে।
বানান ঠিক করতে হবে। প্যারাগ্রাফ এবং ডায়ালগগুলোর ফরম্যাট ঠিক করতে হবে। নাহলে পাঠক পড়তে হোঁচট খাবে।
:thumbup:
আমার বন্ধুয়া বিহনে
দুঃখের বিষয় সবই ঠিক করেছিলাম -কিন্তু সেভ না করাতে আবার আগের অবস্থায় চলে গিয়েছিল। নেক্স টাইম ---
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
দারুণ লাগছে পড়তে।
অনেক খাটাখাটনি করে লিখছো তা বোঝাই যাচ্ছে।
কত পর্বে শেষ করবে, কোন সময় পর্যন্ত যাবে, ফ্ল্যাশব্যাকে আরো পেছনে যাবে কি না কিছু ভেবেছো?
১০ পর্ব পর্যন্ত যাক। তারপর সবগুলো পর্ব পিডিএফ এ সাজিয়ে নিয়ে পড়তে চাই। তারপর লেখাটির কাছে প্রত্যাশা আর অন্যান্য সবকিছু নিয়ে বিলকুল খোলাখুলি মন্তব্য করবো যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
এমনিতে লেখা, গল্প তো ভালোই লাগছে। তবে আমি চাই তুমি আরো উচ্চাভিলাষী হও, গল্পটা এমনভাবে বলো যেভাবে আর কেউ বলেনি। যে জায়গাগুলো নিয়ে খুঁতখুঁত ভাব রয়ে যাচ্ছে তাকে বারবার বারবার লিখো, কোন চরিত্রের উপস্থিতি বেমানান মনে হলে তকে নির্দ্বিধায় মুছে দাও। বারবার ভাবো, লেখাটি যথাযথ টানটান হচ্ছে কি না। (তোমার গদ্য আমার পছন্দ হচ্ছে, কিন্তু তেমন গতিময় মনে হচ্ছেনা।)
আবারো জিজ্ঞেস করছি, রেফারেন্স টুকে রাখছো তো?
আপত্তি থাকার কোন কারণই নাই। আপনি এমনটা করলে খুবই খুশি হব। আপনি বরং ১৫ পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। আপাতত ৭০ পর্ব পর্যন্ত রাফ-কাট লেখা হয়েছে। চাইলে এটা ৯০ বা ১০০ পর্বও হতে পারে। আর পেছনে যাবে না। তবে সামনে গিয়ে পেছনে আসবে। কারণ কাহিনীর বিস্তার ২০১১ পর্যন্ত।
এইসব পর্বগুলো একবারে লেখা। অনেক বেশি বড় হয়ে যাওয়াতে সব পর্বে গতির ব্যাপারটা সামলাতে পারছি না। তবে প্রতিবার রিভিশনে পর্বগুলো পরিমার্জিত হয়। আপাতত আমি বরং শেষ করি। তারপর না হয় পরিশোধন করি। এরকম গঠ্নমূলক কমেন্টের মূল্য অনেক।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা, পড়ে যাচ্ছি। বলতে পারো নিরব পাঠক। আমার মতটাও নূপুরের মতো। চেষ্টা করবো কঠোর সমালোচক হতে। যাতে প্রকাশের আগে উপন্যাসটা আমাদের সময়টাকে ঠিকঠাক ধরে রাখে।
ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সানা ভাই এখন কিঞ্ছিৎ নার্ভাসবোধ করতেছি আপনারা সিরিয়াসলি পড়ছেন দেখে। পরের পর্ব থেকে আরেকটু রিভিশন দিয়ে পোস্ট করবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
খুব সৌন্দর্য্য...অপেক্ষায় আছি...
🙂 🙂 🙂
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
কোন রেটিং নাই? 😮 পাঁচতারা দিয়ে গেলাম 😀