নীলা-৪র্থ পত্র
নীলা-৩য় পত্র
নীলা-২য় পত্র
নীলা
সত্য অনেক সময় অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় তা মেনে নেয়াও খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র! কি থেকে যে কি হয়ে যায়,কেউ কিছু বলতে পারে না। কিছু হয়ে গেলে কারো কিছু করারও থাকে না। আর এর কোন নালিশ নেই,কোন প্রতিকার নেই,থাকে শুধু এক বুক হাহাকার।
কতদিন টিএসসিতে দুজনের পাশাপাশি বসে থাকা হয় না! হাতে হাত রেখে ওর অপার উষ্ণতায় হারিয়ে যাওয়া হয় না! ওর নীল চোখের গভীরতাটুকু যে কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার নামের অদ্ভুত অসুখটি! যে মেয়েটির উচ্ছ্বলতায় ভুলে যেতাম আমার সব কষ্টগুলো,সে আজ নিয়তির করাঘাতে পর্যুদস্ত। শুধু আমার সাথেই কেন যে এমন হয়! আব্বুর অসুখের পরেও তো এতটা অসহায় হয়ে পড়িনি!
আজ নীলার জন্মদিন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন,কারণ এই দিনে নীলা পৃথিবীতে এসেছে,আর আমি ওকে পেয়েছি। গত কয়েক বছর ধরে এই দিনে কত কি যে করেছি! এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি,Arches এর সব চেয়ে সুন্দর গিফট কিনেছি। এই দিনটার প্রতীক্ষায় সময় যেন কাটতোই না!এই দিন খুব ভোরে উঠে (আসলে রাতে আদৌ ঘুম হত কিনা,আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে!) নিজের সব থেকে সেরা ড্রেস পরে ঘড়ির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা,কখন ৮টা বাজবে! রোকেয়া হলে যেতে ১ ঘন্টা,অপেক্ষা আরো ১ ঘন্টা। ওর আবার রেডী হতে একটু বেশী সময় লাগে কিনা! তারপর……
তারপর হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো,দুজন মিলে একসাথে লাঞ্চ,আবার বেড়ানো। ওর সাথে প্রায়ই বেড়ানো হয়,তবে এই দিনের অনুভূতি অন্যরকম। আর দিনের শেষে বিদায়ের সময় ওর একটুখানি উষ্ণ ছোঁয়া। আমি আমার পূর্ণতা খুঁজে পেতাম ওই একটুখানি ছোঁয়ার মাঝে….ওর না বলা কথাগুলোর স্পর্শ পেতাম ওই ছোট্ট আলিঙ্গনে। আমার সবকিছু আমি ত্যাগ করতে পারি ওই ছোঁয়াটুকুর জন্য….
আজ ২৬ জুন। আমার নীলার জন্মদিন। সকাল ৮টা। তবে আজকের দিনের জন্য কোন পূর্ব পরিকল্পনা নেই,নেই কোন প্রস্তুতি। অন্যান্য বার ওর হলের সামনে অপেক্ষা করি। আজও করছি,ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগের একটা কেবিনে বসে। আজ সকাল ১১টায় ওর অপারেশন।
কাল সারারাত ঘুম হয়নি আমার। আমার দুঃসময়ের বন্ধুগুলো গভীর রাত পর্যন্ত থেকে একে একে চলে যায়। ২টার দিকে আহসান বারান্দার ওয়েটিং চেয়ারে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আর আমি নীলার বেডের পাশে বসে থাকি। ওর ছোট্ট মুখখানার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ভোর হয়ে গেছে,খেয়াল করিনি। ভোরে হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগের মোড় থেকে কিছু ফুল কিনে এনেছিলাম। ওর ঘুম ভাঙতেই ফুলগুলো এগিয়ে দেই। ওর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলি,”Happy Birthday,sweet heart,and many many happy returns…”। ও দুর্বল হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়। ওর সঙ্কীর্ণ বেডে বসে ওকে আমার কোলে তুলে নেই। ক্ষীণস্বরে বলে,”আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। আমাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখ। কোথাও যেতে দিও না আমাকে।” “দেব না। দেখ,তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি হতে দেব না।”,ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলি। আমার বুকের ভিতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। কোন এক অদৃশ্য শূণ্যতার অজানা আশঙ্কায় আমার ভিতরটা বার বার কেঁপে ওঠে। চোখের পানি আড়াল করে ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
আমি যদি ঈশ্বর হতাম!
কয়েকদিন আগে এক বন্ধুর কাছে ব্রেন টিউমার অপারেশনের একটা ক্লিপ দেখেছিলাম। ওর ভাই ডাক্তার হওয়ায় পেয়েছে। ওই বীভৎস দৃশ্য ১ মিনিটের বেশি দেখতে পারিনি। কেন যেন আজ ওই দৃশ্য বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনা। আমার নীলা……
ডাক্তারদের এত রিকোয়েস্ট করলাম,অপারেশনের সময় আমি যেন ওর পাশে থাকতে পারি। কোনভাবেই তারা অনুমতি দিল না। বলল,”নিয়ম নেই”। কিন্তু আমার নীলা একা ওখানে কিভাবে থাকবে!
ওকে ওটি তে নিয়ে যাচ্ছে। ওর হাত ধরে ওর পাশে হেটে যাচ্ছি আমি। ওটিতে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে কি যেন বলতে চাইল। ওর মুখের ওপর ঝুঁকতে বলল,”তোমাকে অনেক ভালবাসি”। “আমিও”,আমি ওর ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে বলি। হয়ত এটাই ওকে দেয়া আমার শেষ আদর….
আহসান কই থেকে যেন ২ প্যাকেট বেনসন কিনে আনছে। ওটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছি। আমি তো কখনো চেইন স্মোকার ছিলাম না! ব্রেন টিউমার অপারেশনের ক্লিপটার কথা মনে পড়তে থাকে আর আমি নিজের সমস্ত সত্বা দিয়ে প্রার্থণা করতে থাকি পরম শক্তিমানের কাছে……
আমার বন্ধু আর ভাইয়েরা বারান্দায় বসে আছে। সবাই নিঃশ্চুপ। জানি,ওরাও আমার মতই প্রার্থণা করছে। ওদের ঋণ তো কখনো শোধ করতে পারব না!
আমি যদি ঈশ্বর হতাম! অন্তত কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও…..
(চলবে…… 🙂 )
*******************************************************************************
গল্পটার অধিকাংশ আমার জীবন থেকে নেয়া হলেও কাল্পনিক।উল্লিখিত কোন চরিত্র কারো সাথে মিলে গেলে,তা অনভিপ্রেত ও কাকতাল মাত্র।লেখক দায়ী নয় 🙂
১ম 😀
অভিনন্দন ভাবী... =)) =)) =))
আশা করছি নীলাকে আমাদের মধ্যে আবার ফিরে পাব।
কি বল জাবির ভাইয়া?
অফটপিকঃ ১ম হয়েছি ... :awesome:
আরিইইইই
ভাবিপ্পু, কংগ্রাচুলেশন
নেন, ভা খান 😀 😀
:teacup:
থ্যাঙ্কু ভাইয়া, চা ভাল হয়েছে।
দোস্ত, " ভা " টা কি?? :-/ :-/ :-/
আমার চায়ের বিজনেস লাটে উঠতেছে, চারদিকে এত্তো নতুন নতুন চায়ের দোকান দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। 😛 😛
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
চায়ের সাথে সাথে বিস্কিট বা বার্গারের ব্যবস্থা করো ...... আবার হিট হয়ে যাবা ......
ব্যাপারটা তা না, আগেখালি আমি চাওয়ালা ছিলাম; এখন মাহমুদ ভাইও। 😛 😛 😛
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব, সমস্যা নাই। মাহমুদ " ভা " এর ব্যবসা করে। তাই টেনসন নেস না 😀
আর খুব বেশি ঝামেলা করলে তুই চা বাদ দিয়া " এক্সপ্রেসো " বানা। ইনসাল্লাহ হিট হয়া যাবি 😀 😀
মইনুল ভাইয়া, কালকে আপনাকে বাসায় বানানো খেক আর খুখিস খাওয়ালাম।
ভাল লাগে নাই 🙁
আমিও "বাসায় বানানো খেক আর খুখিস" খাপো :(( :(( :((
আমার কিছু করার নাই 😐 .........ভাবীপ্পু ...........সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছা........ 🙁
ঘটনার উপর আমার কোন হাত নাই..... 😉
জাবীর ভাইয়া, তুমি হচ্ছ লেখক। আর লেখক দের হাতেই সব ক্ষমতা থাকে। 🙂
:dreamy:
ওকে ভাবীপ্পু, কথা দিচ্ছি আমার যতটুকু ক্ষমতা আছে,তার পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করব। 🙂
নীলা যদি মারা যায়।
আমি এই ডাক্তার আর গল্পের নায়করে জিন্দা খুন করুম 😡 😡
😮 😮 😮 :no: :no: :no:
x-( x-( আমি এই কাজে সহায়তা করুম x-( x-(
মাস্ফু ভাই, আমি কী দোষ করছি? 🙁
খুব সুন্দর হচ্ছে। পড়তে গেলে আপনা আপনিই চোখ ভার হয়ে যায়। এখানেই লেখকের সার্থকতা......।। :boss: :boss:
:shy: :shy: 🙂 থ্যাঙ্কু, মেহেদী ভাই।
খুবই মন খারাপ করিয়ে দিলে ভাই ......
আশা করি পরের লেখাতে সুখবর শুনবো .........
দারুন লেখা ......
মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্য সরি ভাইয়া। আসলে প্লটটার কথা চিন্তা করলে আমারই খুব খারাপ লাগে। আর লিখতে গেলে আরো। তাই একসাথে বেশি লিখতে পারি না। 🙁
thnx 4 compliment 🙂 :shy:
ক্লাইম্যাক্স !!!!!!!!
ভাইয়া পরের পর্ব এট্টু তাড়াতাড়ি প্লীজ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
now working on " পরের পর্ব--নীলা-৬ষ্ঠ পত্র "। B-) তয় পাইতে একটু লেট হইব। রবিবার বিশাল একটা পরীক্ষা আছে। 🙁
খাইছে!.......এখন দেখি সোম আর মঙ্গলবারেও পরীক্ষা x-( x-( ~x( ~x(
আমি নীলা কবে লেখমু :bash: :bash: ~x( ~x( ~x(
:hatsoff: :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:shy: থ্যাঙ্কস,আকাশ ভাই
সুন্দর লিখসো জাবীর।
কিন্তু শেষে গিয়াও যদি ট্র্যাজিডি হয় তাইলে ক্যাম্নে কী 🙁
নীলার প্রতীক্ষায় 🙂
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
থ্যাঙ্কস কাইউম ভাই। 🙂
আসল কথা হইল,শেষে কি হবে আমি নিজেও জানি না। ভবিষ্যতের উপর আমার কোন হাত নাই। :-B
নীলা খুউব ভালো মেয়ে....আমিও
নীলার প্রতীক্ষায় আপনে কেন? :khekz: :khekz: :khekz: এটা তো নায়কের কাজ :gulli2:
কিরে তুই এই ফক্সকলিং নাইটে কইত্থেইকা আইসা ডাউট দিলি 😡 😡
এইটা আসলে নায়িকার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় পাঠক ;;;
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সহমত O:-)
হাসান ভাই,এইটা শুধু নায়কের কাজ না। নায়কের বন্ধু আর ক্যাডেট ভাইয়েরাও....
🙂 :-B
কিরে জাবীর সকাল বেলা দিলিতো মনটা ট্রাজেডিময় করে । এবারের পর্বটা ভাল হয়েছে, গতবারের মত তাড়াহুরো নেই । :clap:
🙂 থ্যাঙ্কস, আদনান ভাই।
আমি আসলে ১০০০ পর্বের মেগা সিরিয়াল দিতে চাই নাই, যেটা চুইংগামের মত টেনে লম্বা করতে হয়।। লেখার শুরুটা এক্সপেরিমেন্টাল ছিল 🙂 । আর গল্পের প্রধান অংশে ঢোকার জন্য একটু তাড়াহুরোর দরকার ছিল। কারণ শুধুমাত্র ভূমিকাতেই প্রায় ৪ টা পোষ্ট লেগে গেছে। লেবু বেশি চিপলে তিতা হওয়ার চান্স থাকে, ভাই। সবথেকে খারাপ সমস্যা হল, প্রতিটি সিরিজের কিছু নিয়মিত পাঠক থাকে। এটা একসাথে যেমন ভয়ংকর আনন্দের 🙂 , সেই সাথে পর্বত প্রমান দায়িত্বেরও 😐 । কারণ,পরের পোষ্টে ওই পাঠকগুলোকে সন্তুষ্ট করতে হয়।
গত পর্বের অনাকাংখিত তাড়াহুরোর জন্য লেখক দুঃখিত ও পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী 🙁
তোর শ্রেষ্ট পর্ব এটা। কষ্টের অনুভুতি দিয়ে গেলি। মানুষের অনুভুতির খুব সুন্দর উপস্থাপন দোস্ত। আর মাহমুদের মত আমিও কই নীলার কিছু হইলে লেখকরে আমি x-( x-( 😡 😡 :gulli2: :gulli2:
🙂 :shy: থ্যাঙকস দোস্ত।
ক্ষমা করা হলো, :hug: :hug: কিন্তু শর্ত আছে, পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই। 😡 😡
ক্ষমা করার জন্য কৃতজ্ঞ 🙂
পরের পর্বে ওপর একটা রিভিউ এইমাত্র সাবমিট করছি। পড়ে দেখার অনুরোধ করছি। 😐
তুই চেইন স্মোকার ছিলি না???? 😮 😮 তাইলে কেডা ছিল???