[এই ব্লগে আমার বয়সে বড় অনেক আপু ও ভাইয়ারা আছেন সবাইকে আগেই গল্পের বিষয় বস্তুর জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।গল্পের উপস্থাপন ও ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি আমার সর্বোচ্চ সাবধনতা অবলম্বন করেছি তার পরও কোন বাহুল্যের জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আর একটি কথা আমি চিটাগং এর ছেলে না তাই আঞ্চলিক ভাষা ব্যাবহারের ক্ষেত্রে ভুল হলে,সংশোধন করতে সাহায্য কামান করছি।]
রেডী হই লন………কথাটা বলেই মোবাইলে কল জুড়ে দিল।আমার চতু্র্দিক কেমন জানি অন্ধকার হয়ে আসছে,মাথা ঝিমঝিম করছে। আমি নির্জীব বসে রইলাম।আমার ভিতরের কুকুরটার ঘুম ভাঙ্গার সময় হল বুঝি,এত দিন ঘুমিয়েছিল তাই বুঝিনি কতটা নীচ আমি।
রহিমা বু,বাপ এহন ক্যান আছে? আই বাপের লয় একখান কথা কইউম ফোনটা একখান লই জাসোনা?ওপাশ থেকে কী কথা হল বুঝলাম না।তবে মেয়েটা তাকে পরে ফোনা দিবে জানাল।
এহনও তৈর হন নাই?সময় মনে আছেনি? ঠিক এক ঘণ্টা।পরে তো ঘ্যান ঘ্যান গরিবেন।বলতে বলতে……………… সে তৈরী হতে লাগল।
বাবা, ভ্যালা আছেনি?অনর শরীল ক্যান আছে?ওষুধ পাইয়েন না? আয় ভ্যালা আছি।আরে লই কোন চিন্তা গরনের দরখার নাই।পরের মাসের বেতন পাইলি অনর লুঙ্গি,জামা আর রুনুর বই লই পাঠাইয়ুম।প্রথমবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমার নির্জীবতা ভেঙ্গে গেল।দু’চোখ বেয়ে আঝরে পানি ঝরছে কিন্তু কী সাবলীলভাবে কথা বলে যাচ্ছে।
কথা শেষ করে আমাকে বলল, “ কী হইয়ে দে?অনর সমস্যা কী?” এহনও তৈর হন নাই? আমি কিছু না বলে,ছাদের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে নাম জিঞ্জাসা করলাম।
-নাম দিয়ে কি গরিবেন?পইল্যারবার,তাই না? যারাই পইল্যা পইল্যা আইবো ইতারা নাম পুছার গরিবো। আচ্ছা ঠিক আছে নাম বলতে হবে না।আমি কি তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
-কী খইবেন হন?মনো ল্যাইক্যেন সময় এক ঘন্টা, বাইক্যা কথা হইলে সময় যাইবোগো।
-যাক। সমস্যা নাই।
-তইলে কিল্ল্যাই আসছোন দে?
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। চোখের সামনে নবনীর ছবি ভেসে উঠল।আমাদের সম্পর্ক ছিল প্রায় সাত বছরের। একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। কলেজের নবীণবরন অনুষ্ঠানে অচেনা-অজানা একটা সুন্দরী মেয়ে আমাকে এসে বলল, “তোমার সাথে একটু কথা বলতাম এদিকে আসবে?” আমার সাথে পুর্বপরিচয় নেই তবুও আমি কিছু না বুঝেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।মায়েটির সাথে যেয়ে একটু দূরে পুকুর পাড়ে দাঁড়ালাম। হাতের ইশারায় বসতে বলে একটানা বলে চলল, “আমি তোমার মত এখানে নতুন।তবে আমি মানবিক বিভাগে।তোমাকে ভর্তিরদিন রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দেখলাম।যাইহোক আসল কথা হল তোমাকে আমার ভাল লেগেছে।আমি খুব সোজাসাপ্টা কথার মেয়ে।তুমি কি কিছু বলতে চাও?”ঘটনার আকস্মিকতা না বুঝেই, আমি বললাম ঠিক আছে।
এরপর অনেকটা সময় পেরিয়েগেল। কলেজ থেকে ভার্সিটি।শুধুই দু’জন দু’জনার।ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় পালতোলা নৌকার মতছুটে চলল আমাদের জীবন। মস্টার্স শেষ হলে বিসিএস দিব।একটা চাকুরী হলে ওকে বিয়েকরে কাঠালবাগানের আশেপাশে একটা দুই রুমের বাসা নিয়ে টুনাটুনির সংসার পাতবো আমরা।সময় যায় সময় আসে আর আমাদের পরিকল্পনার ডানাও মেলতে থাকে সীমাহীন আকাশে।
দুইমাস আগে আমাকে ফোন দিয়ে ফুলার রোডে আমাদের পুর্বপরিচিত স্থানে আসতে বলল।
আমি রিক্সাথেকে নেমে ওকে বললাম, “কী ব্যাপার, হটাৎ জরুরী তলব?”
ও স্বাভাবিক ভাবে বলে চলল, “তোমার সাথে আমার আর থাকা সম্ভব নয়। এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই।আমরা একই বয়সের। তাছাড়া তুমি এখনও কিছু করনা।এখনও মাস্টার্স শেষ হয়নি।চাকুরীতো দূরের ব্যাপার।তুমি আমকে ভুলে যাও।আর দয়াকরে আমার সাথে কোন যোগাযোগ রেখনা।” কথাগুলো বলে নবনী উঠে চলে গেল।
নবনী আমার জীবনে যতটা দ্রুত প্রবেশ করেছিল তার চেয়ে অধিকবেগে চলেগেল।আমার মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হল।প্রথম পরিচয়ের কথাটা বারবার মনে হল। মনে পড়ল তার প্রথম দিনের কথা, “আমি খুব সোজাসাপ্টা কথার মেয়ে।” ফুলার রোড থেকে হেঁটেই হলে ফিরলাম।হলে ফিরে নবনীকে ফোন দিয়ে দেখলাম ওর ফোন বন্ধ।
কোনভাবেই আমি নিজেকে সামালদিতে পারছিলাম না।ক্লাস করা বাদ দিলাম।সারারাত জেগেজেগে কাটাই।২৪ঘন্টার সাথী থাকল একমাত্র সিগারেট।দুপুরপর্যন্ত ঘুমিয়ে পার করে দেই।
গত মাসে নবনীকে আবিষ্কার করলাম অন্য একটি ছেলের সাথে রিক্সায় করে শাহবাগের দিকে যাচ্ছে।পরে খবর নিয়ে জানলাম ওই ছেলের সাথে ওর এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। গতদুই বছর ধরে নাকি নবনীর সাথে তার পরিচয়।ছেলেটি ব্যাংকার।
নিজের জীবনের যখন খেই হারিয়ে ফেললাম তখন দেবদাসের মত আমার চুনীলাল বন্ধুর কথা মনেহল।আমি নিজেকে একটু ব্রেক দিতে চাইলাম।আমার চুনীলাল বন্ধু জহির থাকে চিটাগং দেওয়ানহাটে।ও আমকে বলল চিটাগং থেকে ঘুরে যা। ভাল লাগবে। জহির একটা লজেস্টিক্স কোম্পানিতে চাকুরী করে।দুনিয়াতে আপন বলতে আছে শুধু এক বোন।সে থাকে আমেরিকা।
জহির আমার অবস্থা দেখে আমার মন ভাল করার জন্য নানান কাজ হাতে নিল। সন্ধ্যায় ওর বিশেষ বন্ধু শ্রেণীর সাথে আড্ডা দেই বাটালিয়া পার্কে।আড্ডার মুখ্য সরঞ্জাম বিশেষ ধোঁয়া শলাকা,যেটার কাঁচামাল আসে রেলওয়ে কোলনীর কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।কখনও কখনও শলাকাগুলান তৈ্রী করা থাকে তবে যখন নিজেরা হাতে ডলে তৈ্রী করা হয় তখন মাধুর্য বেড়ে যায় হাজারগুন।রাতের বিশেষ পর্বে থাকে বার্মা থেকে আসা নানান রঙ্গিন পানি।জহির পার্কি বীচ থেকে কিনে আনল আমাকে সাথে নিয়ে।সর্দি-কাশির ওষুধও জোগাড় হল।আমি অবাক হই জহিরের সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের সাথে যোগাযোগ দেখে।অনভ্যস্থ আমিও অভ্যস্থ হতে থাকি এই নতুন জীবনে।পুরোটা দিন ভাল কাটলেও সমস্যা বাঁধে রাতে ঘুমানোর সময়।আমি দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনা।নবনীর কথা মনে পড়ে বারবার।সারাদিনে তাকে জোর করে ভুলে থাকার চেষ্টাকে বৃ্দ্ধাঙ্গুলি দেখায় আমার অবচেতন মন।সারারাত জেগে রই।
জহির রাতে আমার পাশে এসে বসে।নবনীকে ভুলে যেতে বলে।মেয়েটা যদি তোকে ভুলে থাকতে পারে কেন তুই পারবিনা?বলে চিৎকার করে আমাকে বুঝায়।দেশে যে আরও শত-শত মেয়ে আছে সে কথা মনে করিয়ে দেয় বারবার।নবনীকে নানান রকম গালিদেয়।তার চারিত্রিক সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।সবকিছুর জন্য নবনীকে দায়ী করে কিন্তু আমার কোন পরিবর্তন দেখে না জহির।ও ব্যাথিত হয় আমার জন্য।
পরদিন বাটালিয়া পার্কের আড্ডা শেষে রাত নয়টার দিকে জহির আমাকে নিয়ে মেটেপুল পার হয়ে দক্ষিণদিকের ২য় গলির তিনতালা একটা বাড়ির সামনে এসে থামল।আমি জিজ্ঞাসা করতে বলল, “চল না, পরে দেখবি।’’ আমরা বাসাতে যেয়ে ড্রইংরুমে বসলাম।বেশ সাজানো ঘর।বেশ কয়েকটা জলরং-এ আঁকা ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো।জহির আমাকে রেখে ভিতরে চলেগেল। আমার চোখ আঁটকেগেল একটা ছবিরদিকে।খুব সুন্দর একটা মেয়ে শুয়ে আছে বিবস্ত্র অবস্থায় আর একটি বিষাক্ত সাপ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।ছবির সবচেয়ে সুন্দরদিক মেয়েটির চোখ।গোল গোল দু’চোখ পানিতে টলমল করছে।কেন জানি মেয়েটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগল।আদ্ভুত!!!!!ছবির মেয়ের জন্য আমার খারাপ লাগছে ভেবে নিজেরই হাসি পেল।
জহির ভিতর থেকে এসে আমাকে নিয়ে আবার ভিতরে গেল।ঘরটিতে একটা মাত্র পালঙ্ক ও একপাশে একটা ছোট সোফা আছে।জহির আমাকে বলল, “ দোস্ত নবনীকে ভালবেসেতো ভালবাসা পাস নি এখন টাকায় কেনা ভালবাসা নে।টাকায় কেনা ভালবাসার ভালদিক জানিস? কখনও হারিয়ে যায় না,সবসময় পাশে থাকে।টাকা থাকলে ভালবাসা থাকে!!!” জহির ঘরথেকে বের হবার সাথে সাথে মায়েটি ঘরে ঢুকলো।মনেহয় বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল।
মেয়েটি বাবার সাথে কথা শেষকরে কাপড় ছাড়তে গেল।আমি তাকে থামতে বললাম। কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকল সে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সিলিং এরদিকে তাকিয়ে বললাম, একটু বসো। মেয়েটি এবার রাগ না দেখিয়ে বসলো।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ঘূর্নণরত ফ্যানের দিকে যেন এই অল্পবয়সেই জীবনের ঘূর্নণ দেখে সে ক্লান্ত।তাকে নাম জিঞ্জাসা করে জানতে পারিনি। বলল এখানে আসার পর নাকি সবার নতুন নাম দেয়া হয়।আর সবাই এক একজনের কাছে এক এক নাম বলে।নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। মেয়েটির বাড়ি ফটিকছড়ি।সংসারে আছে অসুস্থ বাবা আর ছোট বোন।সংসারের চাকা ঘুরাতেই তিন বছর আগে এসে কাজ নেয় চিটাগং ইপিজেড-এ।ইপিজেড থেকে পরিচয় হয় ফুলি নামের এক মহিলার সাথে।সেই মহিলা তাকে নিয়ে আসে এখানে।বলে বাসাবাড়ির কাজ করতে হবে।মাসে মাসে ভাল বেতান পাবে। আর এই খালার বাসাতে দেখাশোনার কেউ নাই।খালা বড় চাকুরী করে। বাসায় তার কাজের লোক দরকার। এখানে আসারপর প্রথম কয়েকদিন খুব ভাল কাটল।খালা বেশী বেশী টাকা দিল,বাসাতে তেমন কোন কাজ নাই,রান্না করা ছাড়া। তবে একা বাড়ির বাহিরে যেতে দিত না।একটা ফোনও কিনে দিল।
দুই সপ্তাহ ভালই কাটল।একদিন সন্ধ্যায় খালা তার সাথে মধ্যবয়স্ক এক লোক নিয়ে বাসাতে এল। পরিচয় দিল তার দূরসম্পর্কের ভাই বলে। বলল রাতে এখানেই থাকবে। উনি কুমিল্লা থেকে এসেছেন। ওই মধ্যরাতে খালা ডেকে ঘুম ভাংগালো তার। কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা তার উপর ঝাপিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।কোন বাঁধাই কাজে লাগল না।
পরদিন সকালে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটল। খুব ভোরে বাসাতে দুইজন পুলিশ এল।তারা মেয়েটাকে থানায় নিতে চাইল।বলল জেলে ঢুকাবে।মেয়েটা খালার কাছে অনুরোধ করে বলল সে থানায় গেলে তার অসুস্থ বাবা, ছোট বোন না খেয়ে মারা যাবে। খালা তাকে উদ্ধার করল সারা জীবনের জন্য……!!!
এই বাসাতেই আরও তিনটা মেয়ে থাকে।সবাই স্বাভাবিক জীবন কাটায়।বাসা বাড়িতে থাকার মত।সবার ক্ষেত্রে প্রথমে এসে খালার বাসার কাজের লোক থাকতে হয়,পরে একই ভাবে পুলিশ আসে……।।প্রায়ই ওই পুলিশগুলা খালার কাছে আসে,তাদের পাওনা নিয়ে চলে যায়।তবে একবার অভ্যস্থ হয়ে গেলে বাহিরে যেতে পারে সবাই।সবাই এই জীবনকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখে।তাদেরকে শিখতে হয়,নইলে জীবন থমকে যাবে।
তোমার কি এই জীবন ভাল লাগে?
-ন জানি(দীর্ঘশ্বাস)।আই ভালা-খারাপ নবুঝি।এ্যাতে ন থাইলি চইল্লুম ক্যানে?
আমি যদিও নিজে কিছু করিনা তবে যদি তোমার জন্য একটা কাজ, যেমন,গার্মেন্টসের কাজ বা অন্য কোন ভাল কাজ ম্যানেজ করতে পারি তুমি কি এই কুৎসিত জীবন ছাড়বে?
-আই বিশ্বাস গইররুম ক্যান গরি। ইয়ে নততুন ইয়েন ভ্যালা, মানুষ এডে ঠকিবোনা।এডে মানুষ ট্যিকা দেয়ারে ভালবাসা কিনে।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।ওকে শুধু বললাম তার পরও তুমি তোমার ফোন নাম্বারটা যদি দয়াকরে আমাকে দাও তবে আমি কোন কাজ ঠিক করতে পারলে তোমাকে জানাবো। মেয়েটি কী মনে করে আমাকে তার ফোন নাম্বারটা দিল।
দেওয়ানহাট ফিরে আমরা ঘুমুতে গেলাম।আজও আমার দু’চোখে ঘুম নেই।জহির অবাক হল।
আমি জহিরকে মেয়েটির কথা বললাম।ওকে খুব করে অনুরোধ করে বললাম,তোর অনেক চেনাজানা,তুই কি মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারবি? উত্তরে কিছু বলল না। সারা রাত আমি জেগে রইলাম।কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আজ এক বারের জন্য আমার নবনীর কথা মনে হলনা বরং নাম না জানা মেয়েটির কথা ভাবলাম সারাক্ষণ।খুব মায়া হল।জীবন মেয়েটার সাথে তার কুৎসিত রূপ প্রকাশ করেছে তার পরও সে জীবনের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে সংগ্রাম করে চলেছে।কঠিন সুংগ্রাম।মনের বিরূদ্ধে সংগ্রামের চেয়েও পেট চালিয়ে যাওয়া যেখানে মুখ্য।
পরদিন আমি আর বাসা থেকে কোথাও গেলাম না।সারাদিন বাসাতে শুয়েবসে কাটালাম।নিজেকে খুব ছোট মনে হল এই ভেবে যে আমি এই বিপদেপড়া মেয়েটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।দুপুরে জহির বাসাতে এল।সাধারনত সে আরও পরে বাসাতে ফেরে।ও অফিসে যায়নি আজ।সকালে গিয়েছিল ওর এক পরিচিত বড় ভায়ের কাছে।সে কাজ করে এখানে একটা স্টীল ফ্যাক্টরীতে।তার সাথে কথা বলে একটা কাজ সে ম্যানেজ করেছে।শুনে আমার খুব ভাল লাগল এই জন্য যে, আমি মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারবো। সাথে সাথে আমি মেয়েটিকে ফোন দিলাম।
-আই কইত্যারি অনে ফোন গরিবেন।
-তোমার জন্য একটা কাজ ম্যানেজ হয়েছে।আমি কাল সকালে বড়পুলের কাছে থাকবো।তুমি বের হয়ে আমাকে ফোন দিবে।
-আচ্ছে।
পরদিন সকালে আমি আর জহির মেটেপুলের কাছাকাছি যেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। আমার পীড়াপেড়ীতে বিকাল পর্যন্ত জহির আর আমি অপেক্ষা করলাম।বারবার ফোন দিলাম কিন্তু ওপাশ থেকে ভেসে আসে সেই একই কন্ঠস্বর, “এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান…”। বিকালে আমরা বাসাতে ফিরলাম।ওই রাতেই আমি ঢাকার গাড়ীতে উঠলাম।
প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেছে।আমি এখন নিয়মিত ক্লাস করি।জীবন আবার তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে পেয়েছে।নবনীর কথা এখনও মনে হয় কিন্তু এখন আমার সয়ে গেছে।তবে প্রায় নাম না জানা মেয়েটির কথা আমার মনে পড়ে। ওর নাম্বারটিতে সময়-অসময়ে কল জুড়ে দেই কিন্তু অপাশ থেকে সেই একই জবাব আসে।তারপরও আমি চেষ্টা করি,যদি কোন দিন ওই সীমটা এক্টিভেট করে,মেয়েটির কাছে শুধু একবার জানতে চাইতাম সে ওইদিন কেন আসেনি।কখনও মনে হয় সে জীবনের কাছে প্রতারিত হয়ে ভীত নতুবা জীবন ও জগতের তৃষ্ণা তার ফুরিয়ে গেছে।
[ গল্পের নামটি ধার করে নিলাম রবি ঠিকুরের একটি গানের শিরোনাম থেকে]
মানুষের জীবনের জটিল দিক গুলি আমি সব সময় এড়িয়ে চলতে চাই। অথচ তুমি সেই জটিল বিষয়টিই কী সুন্দর উপস্থাপন করলে। চিটাগাং এর ভাষা ভালোমত না বুঝেই আলাউদ্দিন আল আজাদের কর্ণফুলি ভালো লেগেছিলো। এখন একটু বুঝি। তোমার দখল অনেক ভালো
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সাইদুল ভাই,মানুষের জীবনের জটিল দিকগুলান নিয়ে আমরা সবাই কমভাবি কারণ সেগুলান আমাদেরকে আমাদের আদিম মানসিকতার প্রকাশ করে।কিন্তু সেগুলাতো আমাদের সমাজে ঘটছে..... 🙁
আমি যখন প্রথম চিটাগাং যাই তখন তাদের ভাষাকে আমার কাছে হিব্রু ভাষা মনে হয়ে ছিল।এখনো পুরোপুরি শিখতে পারি নাই।সেটা সম্ভবও নয়....
তানভীর আহমেদ
লেখার ভেতরের বার্তাটা সুন্দর, একই সাথে হৃদয়স্পর্শী। সুন্দর লিখছস। জাহাজ টাহাজ নিয়ে রটারডাম কখনো আসলে, গরীবকে একটু জানান দিবি।
সিদ্দীক,ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা..:-P
দোস্ত,আপাতত ইউরোপ যাচ্ছি না কারণ এখন রুট ফার ইস্ট -অস্ট্রেলিয়া। আশাকরি দেখা হবে।আর রটারডেম গেলেতো কথাই নেই।সেধে তোর আতিথিয়েতা নিব।
তানভীর আহমেদ
সুন্দর বুননে ফুটে উঠেছে গল্পটা। চট্টগ্রামের ভাষায় কুছুটা গড়বড় আছে। তবে গল্পের ভাজে তা মানিয়ে গেছে যেভাবে আছে। ভালো লিখা পোস্ট জিরো আরো। পড়ি।
লুৎফুর ভাই,
ধন্যবাদ। আপনারমত গুরুজনের মন্তব্য আমদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়।আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমারও খুব ভালো লাগছে।
তানভীর আহমেদ
দুঃখিত । আমার মন্তব্যে "করো" শব্দটি কোনো ভূতুরে কারণে "জিরো" হয়ে গেছে ।
- লুৎফুল
শুরুটা চমৎকার। সাবলীল টেনে নিয়ে যাচ্ছে তোমার গল্প। তোমার লেখার হাত ভালো। একজন শিল্পীকে (এক্ষেত্রে তুমি কথাশিল্পী) সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাগুলোকে অতিক্রম করে যেতে হয়। তুমিও চেষ্টা করেছ। কিন্তু খেয়াল রাখবে ঘটনা যেন গল্পকে খেয়ে না ফেলে।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
মোস্তফা ভাই,আপনার মন্তব্য পেয়ে সত্যিই খুব খুশি হলাম।আপনার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। সবসময় চেষ্টা করবো গল্পের প্রাধান্যদানের কথা।
তানভীর আহমেদ
চমৎকার গল্প। ছোট খাটো ডিটেইলগুলোও ভাবালো। এই যেমন এটা:
"মেয়েটা যদি তোকে ভুলে থাকতে পারে কেন তুই পারবিনা? বলে চিৎকার করে আমাকে বুঝায়। দেশে যে আরও শত-শত মেয়ে আছে সে কথা মনে করিয়ে দেয় বারবার। নবনীকে নানান রকম গালিদেয়।তার চারিত্রিক সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সবকিছুর জন্য নবনীকে দায়ী করে কিন্তু আমার কোন পরিবর্তন দেখে না জহির।"
আমি নিজেও এধরনের বেশ কিছু ঘটনা জানি যেখানে অসহায় অবস্থায় প্রেমিককে একা ফেলে মেয়েটি একতরফাভাবে এক কথায় সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেছে, অথচ আর যা ই করুক, ছেলেটি সব জেনে বুঝেও তাঁর প্রেমিকাকে দোষারোপ করতে চাচ্ছে না।
আগ বাড়িয়ে জহিরের মতো বন্ধুদের উল্টো বলছে, বুঝাচ্ছে - "বুঝিস না কেন? এদেশের মেয়ে না? নিশ্চয়ই ওর কোন উপায় ছিল না। নাইলে ও আমার সাথে কখনো এমনটা করতো না... ইত্যাদি"
ভালবাসলে আসলেই মানুষ বোধ হয় এরকম বোকা হয়ে যায়।
প্রেমাষ্পদের কোন দোষ-ত্রুটি আর চোখে পড়ে না.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
পারভেজ ভাই,
আমার কাছে মনে হল আপনি মনেহয় বেশ মন দিয়ে আমার লেখাটা পড়েছেন... 🙂
ছোট ছোট ব্যাপারগুলা আপনার চোখ এড়িয়ে যায়নি।
আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
তানভীর আহমেদ
"নবনী আমার জীবনে যতটা দ্রুত প্রবেশ করেছিল তার চেয়ে অধিকবেগে চলেগেল।আমার মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হল" - কম কথায় বেশ ভালো বুঝিয়েছো ব্যাপারটা।
তবু, নবনীরা ভালো থাক। যেখানেই থাকুকনা কেন, ভালোবাসা পাক।
খায়রুল আহসান ভাই,
আমার কাছে মনেহয় গল্পবলার ক্ষেত্রে কম কথায় ঘটনা বুঝানো খুব জরুরি। আমি সেটার চেষ্টা করেছি মাত্র.. 🙂
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
তানভীর আহমেদ
খুব ভালো লাগলো তানভীর।
চট্টগ্রামের ভাষায় প্রথম গল্প পড়ি আবুল ফজলের লেখনীতে। আহ, সে কি স্বাদ!
তোমার গদ্য বেশ তরতর করে এগিয়ে নিয়ে গেলো। আঞ্চলিক ভাষার যেটুকু স্বাভাবিক দুর্বলতা আছে, তা সম্পাদনায় কেটে যাবে।
আর গল্প লিখতে হবে। ইতোমধ্যে কিছু লেখা জমে থাকলে দিয়ে দাও এখানে
নূপুর দা,
আপনার মন্তব্য পেলে আমি সত্যিই খুব বিপদে পড়ে যাই
কি ভাবে উত্তর দিব..... ~x(
তবে সত্যি আমার খুব ভালো লাগে আপনাদেরমত বড় ভাইদের মন্তব্য পেলে।
আমি চট্টগ্রামের ভাষায় প্রথম পড়েছি আলাউদ্দিন আল আজাদের কর্ণফুলি। খুব ভালো লেগেছিল।
আর চেষ্টা করবো আপনাদেরকে আরও গল্প শোনাতে.... 🙂
তানভীর আহমেদ
চমৎকার লিখেছিস বন্ধু! :clap: :clap:
কিছু বানানে একটু এদিক সেদিক আছে। একবার রিভিউ করে নিস।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তোরে আর কি ধন্যবাদ দিব,দোস্ত..... 😉 😉 😉
বানান ঠিক করে নিব.... 🙂 🙂 🙂
তানভীর আহমেদ