সাইফুদ্দাহার শহীদ – ব্যাচ ৬
চার দিন পার হবার আগেই আমি মনস্থির করে ফেললাম যে এখানে আর আমি থাকতে পারবোনা। প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় আমাদেরকে এক ঘন্টা সময় দেওয়া হতো চিঠি লেখার জন্যে। আমি আমার আব্বার কাছে সংক্ষিপ্ত একটা চিঠি লিখলাম – “আমাকে এসে নিয়ে যান, আমি আর এই জেলখানায় থাকতে পারবো না।”
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে আমার চিঠি পেয়ে তখনি আমার আব্বা এসে আমাকে নিয়ে যাবেন। পরিবারের এক মাত্র পুত্র সন্তান হবার কারণে আমার কোন অনুরোধ আব্বা কখনো অপূর্ণ রাখেননি। চিঠিটা লেখার পর থেকে আমি একটু ভালো বোধ করতে থাকলাম এই ভেবে যে, আমাকে আর ফৌজদারহাটে থাকতে হবে না। সেই থেকে চার পাশের দিকে নতুন করে দেখতে থাকলাম এবং কিছু কিছু জিনিস যেন নতুন করে দেখে ভালো লাগলো।
আমার অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিলো ভাষা নিয়ে। ফৌজদারহাটে আসার আগে আমি বাংলা মাধ্যমের যশোর জেলা স্কুলে পড়তাম। ফলে সেইন্ট গ্রেগরী বা সেইন্ট প্লাসিডের ছাত্রদের তুলনায় আমরা যারা বাংলা মাধ্যমের ছাত্র ছিলাম তারা অসুবিধায় ছিলাম। ক্যাডেট কলেজের সরকারি ভাষা ছিলো ইংরেজি এবং সব কিছু শিখানোর মাধ্যম ছিলো ইংরেজি। এমনকি, একমাত্র বাংলার ক্লাশ ছাড়া, অন্য কোনো ক্লাশে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলা ছিলো শাস্তি পাবার যোগ্য অপরাধ। ক্লাশে কি বলা হতো আমি কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু প্রশ্ন করতেও পারতাম না ইংরেজি বলতে না পারার কারণে। আমাদের সেরা ছাত্র, আদনান ছিলো আমার সাথে একই রুমে। সে সাহায্যের হাত বাড়ালো। সে বুদ্ধি দিলো ক্লাশে আমি যতটাই পারি, ততটুকু যেন খাতায় লেখার চেষ্টা করি। কোনো শব্দ ধরতে না পারলে সেখানে একটা ড্যাশ বসাতে বললো। আমি আমার সাধ্যাতিত চেষ্টা করলাম। যখন আমার নোট আদনানকে দেখালাম সে আর হাসি চাপতে পারলো না। পুরো দশ পাতার নোটে শুধু কিছু ‘the’, ‘and’, ‘or’ এবং বাকিটা শুধু ড্যাশ দিয়ে ভর্তি।
একদিন বিকালের পিটি ক্লাশে ক্যাডেট ক্যাপ্টেন দাস্তাগির ভাই আমাদেরকে ডবল মার্চ করাচ্ছিলেন। কেউ কেউ স্টেপ মেলাতে পারছিলো না দেখে দাস্তাগির ভাই একস্ট্রা ড্রিলের সম্ভাবনার কথা বললেন। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন “Who wants to volunteer for Extra-Drill?” আমি জানতাম ‘ভলেনটিয়ার’ হওয়া একটা ভালো জিনিস, তাই গর্বের সাথে আমার হাত উচু করলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো। আমার ভুল বুঝতে পেরে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচছা করলো। আমি একাকী কেঁদে নিজেকে হালকা করতে চাইলাম। কিন্তু তেমন কোনো সুবিধামত কাঁদবার যায়গা খুঁজে পেলাম না। পরে আবিস্কার করলাম যে বাথরুমের শাওয়ার ছেড়ে কাঁদলে অন্য কারো দৃষ্টিতে পরার সম্ভাবনা কম এবং গোছলের পানিতে চোখের পানিও ভালোভাবে মুছে যায়।
অবশেষে আমার আব্বার কাছ থেকে একটা লম্বা চিঠি পেলাম। তিনি আমাকে আরও কিছুদিন দেখতে বললেন, তারপরও যদি আমি থাকতে না চাই, তিনি এসে আমাকে নিয়ে যাবেন এমন আভাস দিলেন। তারপর তিনি তার ছাত্রকালে, কোলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও এলিয়েট হোস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। বাবা-মা ও পরিবারকে ছেড়ে একলা কোলকাতায় থাকা ছাড়াও তার নিজের খরচের সম্পূর্ন ব্যবস্থা নিজেকেই সমাধান করতে হয়েছে। কোনো কোনো দিন যথেষ্ট পয়সা হাতে না থাকায় সকালের নাস্তার সময় অন্যরা যখন নিজের রুমে বসে নাস্তা করছে, তিনি তখন রুমের বাইরে গিয়ে সময় কাটিয়েছেন। আমার আব্বার এই জীবনটা আমার জানা ছিলো না। তার তুলনায় এখানে আমি অনেক আরামের জীবন যাপন করছি। আমি ঠিক করলাম, আরও বেশি পরিশ্রম করে এখানে সফল হবার শেষ চেষ্টা করতে।
সাইফ, আজিজ, হাবিব, আশরাফ, আজওয়ার, মুশফিক, মেজবাহ, সফি, রওশন, শরীফ এবং মোয়াজ্জেম ও আরশাদ (নিচে বসে)
কলেজে তখন খুব কড়াকড়িভাবে শৃংখলা রক্ষা করা হতো। সামান্য অপরাধেও শাস্তি হিসাবে একস্ট্রা ড্রিলের সম্ভাবনা ছিলো। প্রতি সোমবার বিকালে খেলার বদলে খাকি ড্রেস পড়ে মিলিটারি ড্রিল করতে হতো। একদিন ড্রিলের ব্রেকে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর বসার জন্যে আমার জীবনের প্রথম শাস্তি পেলাম। আমাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে রাগবি, ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস ও স্কোয়াশ খেলতে হতো। এছাড়া অবস্ট্যাকল কোর্স তো ছিলোই।
ব্রিটিশ পাবলিক স্কুলের অনুকরণে ‘আউট-ওয়ার্ড বাউন্ড ট্রেনিং’ নামে নতুন একটা পরিক্রম শুরু করলো কলেজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে স্থাপন হলো এমনি একটি কেন্দ্র। আমাদের অনেকের জন্যে এটা ছিলো একটা বিশেষ অভিজ্ঞতার সুযোগ। প্রথমবার যখন আমরা সেখানে গেলাম, আমি কাপ্তাই লেকে সাতাঁর কাটতে গিয়ে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম। আমাদের দুই গ্রুপে ভাগ করা হলো- যারা সাতাঁর জানে তারা এক গ্রুপে এবং যারা জানেনা তারা অন্য গ্রুপে। শুধু সাতাঁরুদের লেকের পানিতে নামতে দেওয়া হবে। আমি সাতাঁরুদের দলে যোগ দিলাম।
আমাদের কলেজ লাইব্রেরিতে ‘Teach Yourself’ সিরিজের অনেক বই ছিলো। ক্যাম্পে আসার আগের সপ্তাহে আমি ‘Teach Yourself How to Swim’ বইটি পড়ে শেষ করেছিলাম। আমার যতেষ্ট আত্ববিশ্বাস ছিলো যে সুযোগ পেলে আমি সহজেই সাঁতার কাটতে পারবো। আমার শুধু দরকার ছিলো বাস্তব অভিজ্ঞতার একটু সুযোগ এবং সেই সুযোগ এখন আমার হাতের মুঠোয়। অন্য সাঁতারুদের সাথে আমিও আন্ডারওয়ার পরে লাফ দিয়ে লেকের ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিলাম। অর্ধেক পথ সাঁতার দেবার পরে, আমার মনে হলো শেষ পর্যন্ত আমি হয়তো গন্তব্যের কুলে নাও পৌঁছাতে পারি। আমি ফেরার চেষ্টা করলাম- যেটা ছিলো মস্ত ভুল। কলেজের ‘বার্সার’ (ট্রেজারার), কুদ্দুস ভুইয়ার প্রথমে নজরে এলো যে আমি সামনে বা পিছনে সাঁতার না কেটে একবার পানির নিচে এবং আবার পানির উপরে উঠা-নামা করছি। তখনি তিনি তার জুতা ও কোট খুলে পানিতে লাফিয়ে নেমে আমাকে টেনে তোলার চেষ্টা করলেন। অন্যরাও তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। আম্যর কৃতিত্ব হচ্ছে- এত কিছু সত্ত্বেও আমি সাহায্যের জন্যে চিৎকার দিইনি এবং লেকের পানিও খাইনি (লেকের পানি একটু নোংরা ছিলো)। আমি আজও নিশ্চিত নই যে, আমাকে যদি উদ্ধার করা না হতো তবে শেষ পর্যন্ত আমি কুঁলে পৌছাতে পারতাম কিনা। যাহোক, মিস্টার ভুইয়া এবং অন্যদের কাছে আমার জীবন বাঁচাবার জন্যে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। সেই থেকে কলেজে আমার নতুন একটা নাম হলো- ‘ব্রজেন দাশ’ (বিখ্যাত ইংলিশ চ্যানেল সাঁতারু)।
ইংরেজিতে দুর্বল ছাত্রদের বিশেষ ক্লাসের মধ্যে আমিও সামিল ছিলাম। এক বছরের মধ্যেই আমি অনেকটা এগিয়ে গেলাম এই বিষয়ে। ১৯৬২ সালে ক্লাশ নাইন শেষে আমাদের চারটি বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিতে হলো (পরের বছর থেকে আবার এই নিয়ম বাতিল হয়ে গিয়েছিলো)। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে প্রিন্সিপাল কর্নেল ব্রাউন ফল ঘোষণার জন্যে আমাদের দোতলার গ্যালারি রুমে একত্রিত করলেন। আদনান অংকে ১০০-এর মধ্যে ১০০ পেয়েছিলো। আমরা অন্যরা অনেকেই অংকে লেটার মার্ক পেয়েছিলাম।
কর্নেল ব্রাউন তারপর ইংরেজির ফলাফল পড়তে শুরু করলেন। ইংরেজিতে ক্লাসের সর্বোচ্চ নাম্বার ছিলো ৭৭। প্রথমে প্রিন্সিপাল ভেবেছিলেন এটাও বুঝি আদনান পেয়েছে। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন সেখানে অন্য একজনের নাম। তার ভরাট গলায় পড়লেন- ‘Highest mark 77 – Zaifuddahar’ (তার গলায় এভাবেই আমার কলেজের নাম ‘সাইফুদ্দাহার’ উচ্চারিত হলো)। আমি পিছনের এক বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
– Are you from St. Placid’s ? – প্রশ্ন করলেন তিনি।
– No Sir. I am from Jessore Zilla School. A Bengali medium school, Sir.
ঐ মুহূর্তে আমার খুব গর্ব হলো- আমি সবার চাইতে বেশি নাম্বার পেয়েছি বলে নয়- আমি যে তাকে বলতে পেরেছি যে আমি এক সাধারণ বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে এসেছি, সেই জন্যে।
আজ ৫০ বছর পরে, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি- আজ আমি যা হয়েছি, ভালো বা খারাপ যাই হোক- তার পিছনে অন্যতম অবদান আমাদের এই প্রিয় ‘ফজা ফ্যাক্টরি’র।
[This article was published in the Golden Jubilee Celebration Journal “50 Years of Cadet College Education”]
1st?
হায় হায়, আপনেও এই প্রতিযোগিতায় 😮 😮 😮
যাক, আজ থেকে ২০ বছর পরেও ক্যাডেটসূলভ ছেলেমানুষী করার একটা এক্সকিউজ পাওয়া গেলো। :awesome:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এবার পড়ে প্রথম।
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো কলেজ রিইউনিয়ন এ বড়ভাই এর কাছে স্মৃতিচারণ শুনছি... :boss:
:salute: :salute:
:boss: :boss:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:salute: :salute: :salute:
এইবার দেখি প্রিন্সু এডু কি করে 😉 😉
সাইফুদ্দাহার ভাইকে :salute: :salute:
সেসময়ের কলেজের গল্প শুনার অনেক ইচ্ছা ছিলো।
:just: :hatsoff:
ব্লগে স্বাগতম ভাইয়া । কলেজের প্রথম দিককার গল্প পড়ে খুঐ ভাল লাগছে । আরো লিখবেন ভাইয়া, আমরা খুবই আগ্রহের সাথে পড়ব ।
প্রিন্সিপাল ভাইস্যার, ব্লগে নতুন সদস্য এসেছেন একজন, ওয়েল্কাম মেজেস দেয়া দরকার 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
:khekz: :khekz:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:salute: :salute:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আমি খুব আনন্দিত হলাম আপনাদের এই আবিস্কার দেখে মানে ইংরেজী বা রোমানে লিক্লেঃ তা বেশ বাংলা করা যায় সাইফের ক্লাস্সের বাত্চ ৬ এ আমি, ওই পরীক্ষায় আমি সবচেয় কম মারক পাই ইংরেজীতে কারণ পরে বুজি আমি আইর ফোর্স (air force) এ গিয়ে, বাংলা রোমান কে standardize (স্তান্দার্দিজে) করা যায় না
অসাধারন স্মৃতিচারন :hatsoff: :hatsoff:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
তোমাদের ক্যাডেটসূলভ ছেলেমানুষী করে প্রথম হবার আগ্রহ দেখে মনে পড়লো ডাইনিং রুমে খেতে বসে যখনি কারি ডিশ টেবিলে আসতো তখনি এক জন প্রথমে চামচ ধরে ফেলতো এবং বাকিরা "After you", "After you" বলে একে একে নিজেদের মাঝে serial ঠিক করতাম।
😀 ট্র্যাডিশন ট্র্যাডিশন :-B
অসাধারণ সাইফ ভাই :salute: আমাদের লাবলু ভাই সম্পাদিত গোল্ডেন জুবিলি জার্নালটিতে লেখাটি রিউনিয়নের সময়েই পড়েছিলাম। মুগ্ধতাটি সিসিবিতে জানিয়ে গেলাম। এবারের ফজা ফ্যাক্টরির রিইউনিয়ন সবদিক থেকেই গ্র্যান্ড হলেও কলেজ অডিটরিয়ামের প্রথমদিককার ব্যাচের ফৌজিয়ান ভাইদের স্মৃতিচারণ পর্বটি খুব খুব মিস্ করেছি।
সাইফ ভাইকে আবারো :salute: আশা করি সিসিবি'তে নিয়মিতই আপনার লেখা পাবো সব ধরণের বিষয়েই।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
অসাধারণ লাগলো!! 🙂 🙂
সেই কত্তোকাল আগের কথা!! কিন্তু কত্ত কিছু ফিল করতে পারলাম!!
মনে হয় ক্যাডেট বলে কথা...
এই লেখাটা অসাধারণ। ৭৭ পেয়ে সবার সামনে কল হওয়ার ব্যাপারটা আরো সুন্দর। আদনান ভাইকে, শহীদ ভাইকে :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute:
স্মৃতিচারণ পর্বটা চমৎকার লাগল সাইফ ভাই।
আপনার কাছ থেকে আরও অনেক গল্প শুনতে চাই ভাইয়া। 🙂
সাইফ ভাই অসাধারণ । সেই যুগের আরো অনেক গল্প শুনতে মঞ্চায়। প্রথম লেখায় অভিনন্দন। শুভ লেখালেখি।
প্রিন্সু স্যার কেমনে সাইফ ভাইকে বরণ করে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। তারউপর নিজের কলেজের বড়ভাই।
সাইফুদ্দাহার ভাই, লেখা পড়ে সত্যি সত্যি অনেক ভালো লাগলো! এতো আগের ক্যাডেট কলেজ সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিলো না। এভাবে ফাইট করে ইংরেজি শেখার বিষয়টাও দূর্দান্ত! কলেজে ঢোকার ১৪ দিনের মাথায় আমাকে ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করতে স্টেজে উঠতে হয়েছিলো, সেসময়ের ইংরেজি ভীতির কথা মনে পড়ে গেলো। কোনো বিষয়ে দূর্বল হলে সেটা না এড়িয়ে বরং সরাসরি মোকাবিলার শিক্ষাটাই সেরা!
আপনি আরো অনেক লিখুন। ব্লগে স্বাগতম ভাই!
ঢাকা অথবা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতাদের যেভাবে বরণ করে নেয়, সেই ভাষাতেই আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শ্লোগান ধরলাম, "সাইফ ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা, স্বাগতম"। তোমরাও (মানে জুনিয়ররা, আলীম ভাই না। আলীম ভাই এ নিয়ে আপনি একটা হাইকু নামিয়ে ফেলেন) আমার সঙ্গে গলা মেলাও। শুভেচ্ছা সাইফ ভাই। এই খুশিতে আমি নিজে ১০টা :frontroll: দিয়ে নিচ্ছি!! 😀 নিজের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সিসিবিতে নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
এবার রিইউনিয়নটা অসাধারণ হয়েছে সাইফ ভাই। প্রায় ১২শ প্রাক্তন ক্যাডেট, তাদের পরিবার, বর্তমান ক্যাডেটস, টিচারস এবং এমপ্লয়িজ মিলিয়ে এক এক বেলায় খাবার খেয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার করে মানুষ। আমার স্মৃতিতে এর আগে কোনো রিইউনিয়নে ৩/৪শ'র বেশি প্রাক্তন ক্যাডেট দেখিনি। সুবর্ণজয়ন্তী বলেই হয়তো এমন সমাবেশ। ভীষণ মিস করেছেন। অবশ্য আপনাদের অনেককেও আমরা মিস করেছি। মুশফিক ভাই তো দেশে থেকেও এলেন না। বুয়েটে গিয়েছিলেন শুনলাম আমার এক মেলবোর্ন প্রবাসী চাচার কাছে।
আপনাদের সময়টা সম্পর্কে জানতে খুব ইচ্ছে হয়। বিশেষ করে কলেজ গড়ে ওঠার সময়টা। একাত্তরের ফৌজদারহাট এবং মুক্তিযোদ্ধা ফৌজিয়ানদের নিয়েও জানার ভীষণ আগ্রহ। একটা পরিকল্পনা করছি, এক-দেড় বছর হাতে নিয়ে একটা বড় আকারের "মেমোয়ার" করবো। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করবো।
আর "সোল সার্চিং" চিন্তাগুলো এখানে নিয়ে আসবেন নাকি? খুব ভালো হয় তাহলে। ক্যাডেট কলেজ, এর শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনার একটা জায়গা হতে পারে সিসিবি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কিচ্ছু দেখি নাই... লুক দ্যাট সাইড হয়ে ছিলাম...
:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: দিতে থাকি
হাসানের সাথে আমিও :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
অভয় দিলে একটা কথা বলি- একই ব্লগে আমাদের প্রিন্সিপাল স্যারের দুই দুই জন সিনিয়র ভাইএর উপস্থিতি দেখে এবং তাঁদেরকে উনার "ভাই" সম্বোধন দেখতে পেরে অত্যন্ত প্রফুল্ল বোধ করছি :shy:
লাভলু,
আমার প্রথম রিইউনি্য়ানে অংশ গ্রহন ১৯৭০ সালে। আমি তখন সিলেটের চা বাগানে কাজ করি। ৫ম ব্যচের সালাউদ্দিন ও আমি, নাসিম আনোয়ারের গাড়ীতে কাজের পরে বিকেলে রওয়না হয়ে রাতে পৌছিলাম কলেজে। ৪০ বছর পরেও সেদিনের কথা ভালই মনে আছে। তুমি কয়েকটা দাবী করেছো, জানি না কতটা পারবো, তবে চেষ্টা করবো।
আলীম, মাহমুদ, আরাফাত, মেহেদী হাসান সুমন, মাহমুদ, হুমায়রা, ইফতেখার, আদনান, ফয়েজ, আহমদ, কাইয়ূম, মাহমুদ ফয়সাল, তানভীর, কামরুল তপু, আন্দালিব, মেহেদী হাসান, আমিন, মাসরুফ, রানা, সায়েদ, রবিন, রুপকথা, সাব্বির, জুনায়েদ কবীর, লুবজানা, রিজওয়ান, তারিক মাহমুদ, শোয়েব, মিশেল, জাহিদ, রাশেদ, ফেরারী, মান্নান - তোমাদের সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
:salute: :salute: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
সাইফ ভাই,
আমার প্রথম রিইউনিয়ন ১৯৮৪ সালে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এরশাদকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলাম সেবার। আপনাদের প্রয়াত বন্ধু আশরাফ ভাই (এনএসআই) আমাদের কালো পতাকা ঠেকাতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। উনার সঙ্গে আমাদের তর্কও হয়েছিল। পরে আমাদের রবীন্দ্র হাউজে আটকে রেখেছিলেন। এটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম জুন, ২০০৮-এ : এরশাদকে কালো পতাকা দেখিয়েছিল কিছু তরুণ।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
এক নিঃশ্বাসে পুরাটা পড়লাম।
ভাই, আপনি বোধহয় সবচেয়ে সিনিয়র এখন। 😀 😀 😀
এই অবস্থায় আমিও পড়ছিলাম। কথা বুঝতাম না এডু স্যারের কিংবা প্রিন্সিপালের। প্রিফেক্টের ঝাড়িও না, শুধু স্টার্ট ফ্রন্ট রোল আর ফ্রগ জাম্প এইগুলা ছাড়া। ব্লাডি মানে আমি মনে করতাম যে আমাকে বোধহয় পিটায়া রক্ত বের করে দিবে।
হিস্টোরি রিপিটস.... আমাদের কলেজে একজন আইসিসি সুইমিং এ হিটের সময় কলেজ পন্ডের অর্ধেকও যাইতে পারে নাই। পরে তালুকদার স্যার দেখেই লাফিয়ে পড়ে ওকে টেনে তুলেন। ওর নাম হয়ে গেছিল "হামান থর্প"
অসাধারণ স্মৃতিচারণ মূলক লেখা। পাঁচ তারা দাগাইলাম।
হ্যাপি ব্লগিং। আশা করি নিয়মিত থাকবেন।
:boss:
অসাধারন :hatsoff: :hatsoff: :salute: :salute:
Life is Mad.
অসাধারন স্মৃতিচারন :hatsoff:
:salute: :salute:
আপনার সৌজন্যে :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
স্বাগতম দাদা................
মন ছুয়ে গেল... সেই সময়ের ক্যাডেট কলেজের স্মৃতিচারন শুনতে মঞ্চাই... আশাকরি আমাদেরকে নিরাশ করবেন না।
ভাইয়া কিরকম লাগল বলে বুঝাতে পারবোনা-আসলেই সেই ইন দা ইয়ার অব নাইন্টিন্সিক্সটিনাইন এর এক এক্স ক্যাডেট আমাদের সাথে স্মৃতিচারণ করছেন এটা ভাবতেই যেন কেমন শিহরণ জাগে।দুদিন আগে মাস্টারদা সুর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ১০০ তম জন্মদিনে উনার সাক্ষাতকার টিভিতে দেখে যেমন অনুভুতি হয়েছিল ঠিক তার কাছাকাছি।
প্লিজ ভাইয়া,আপনি ব্যস্ত মানুষ জানি-তাও নিয়মিত লিখবেন...
অসাধারণ লাগল ভাইয়া।
নিয়মিত থাকবেন আশা করি।
আপনাদের সময়ের গল্প আরও শুন্তে মঞ্ছায় 😕
চমৎকার... :salute: :salute:
লং লীভ ক্যাডেট কলেজ
বাকরুদ্ধ ভালো লাগা.........।
অসাধারণ লাগল ভাইয়া। :thumbup:
সিসিবিতে স্বাগতম। :salute:
নিয়মিত থাকবেন আশা করি। 😀
আপনাদের সময়ের গল্প আরও শুন্তে মঞ্চায়... :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাইয়া, ব্লগের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়েও আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি! অসাধারন লাগলো! :salute: :salute: :salute:
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!
অসাধারণ লেখা, ভবিষ্যতে আপনার লেখা আরো পড়তে চাই।
ভাই, ভাল আবিষ্কার করছেন ... ...
ব্লগে আপনাকে স্বাগতম ... ...
ফৌজদারহাটের ৭১ নিয়ে কিছু লেখা দিয়েন ভাই ... ...
লাভলু, তুমি FB-তে লিখেছো "ছবির আপনারা বন্ধুরা সবাই তো ৬০+ এখন। পাশাপাশি এখনকার দুষ্টুমির একটা ছবি দিতে পারলে দারুণ হতো।"
উত্তরটা ইংরেজীতে দিলাম সময়াভাবে - Many in that memorable 'Happy days' photo are no more with us. With the Harmonium hanging from his neck happily singing is now deceased Maj. Gen. Ashraf (former NSI Chief), on his front-right is Dr. Mushfiq Rahman (Australia) with his hands around now deceased executed Freedom Fighter Maj Rowshan Yazdani. BUET VC Dr. Safiullah is just behind them looking up and beside him is ex-banker Mesbah now settled in London. Deceased Habib Barbhuyan (car accident) is just behind Ashraf, on his left is Aziz Haq Bhuyan (Barishal) now settled in Pakistan happily married with a Tanzanian doctor. Aziz's hand is holding me (looking down) and RAWA Clcub President Brig. Gen. Moazzem kneeling in front of me.
No Lablu, we can't get those moments back any more - no matter how much we try to emulate.
সাইফুদ্দাহার শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)! 😮 😮
:salute: :salute: :salute:
:khekz: :khekz: :khekz:
সাইফুদ্দাহার ভাই আপনাকে
:salute: :salute: :salute:
জানি আপনাকে নিয়মিত লিখতে বলাটা খুব বেশী অন্যায় আবদার হয়ে যাবে। তবে প্লিজ ভাইয়া মাঝে মাঝে আসবেন সিসিবিতে। আপনাকে আবারও :salute:
সাইফ ভাই, সকালে দৌড়ের উপরে ছিলাম, ফার্স্ট হয়েই (ইট রেখে) চলে যেতে হয়েছিল। এখন ফিডব্যাক দিচ্ছি। লেখাটা মসৃন, ছবিগুলো সাদা কালো। স্মৃতি জাগানিয়া। আমার কালেকশনের (মুষ্টিমেয়) ছবিগুলোও সাদাকালো। শুনেছি জেসিসিতে নাকি প্রথমে একজন ইংরেজ প্রিন্সপ্যাল ছিলেন, কর্নেল স্মিদারম্যান। আমারা তাকে পাইনি, অবশ্য তার বিস্তর গল্প শুনেছি সিনিয়র ভাইদের কাছ থেকে। আমি যতদূর শুনেছি, ক্যাডেট কলেজগুলো প্রাথমিক ভাবে শুরু করা হয় ইংল্যান্ডের গ্রামার স্কুলের আদলে, যে কারণে ইংল্যান্ড থেকে শিক্ষক আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব গ্রহণ করা শুরু করেন তৎকালীন পাক আর্মির এডুকেশন কোরের অফিসাররা। সে সময়ে অনেক পাঞ্জাবী ছেলেরাও এদেশের ক্যাডেট কলেজগুলোতে পড়তো। আমরা ছিলাম শহীদ কর্নেল রহমানের লাস্ট ব্যাচ। একাত্তরে কর্নেল রহমান জেসিসিতেই শহীদ হন।
আপনাদের অনুজ হিসেবে ইংরেজী শেখা নিয়ে আমাদেরও ছিল প্রচুর বিড়ম্বনা। ১৯৭০ সালে ভর্তি হওয়া আমারা ছিলাম শেষ ইংলিশ মিডিয়াম ইনটেক। স্বাধীনতার পর পরই বাংলা মিডিয়ামের পাঠ্যপুস্তক চালু হয়। যার ফলে ইংরেজী বলতে না পারার কারণে আমরা যে পরিমান পানিশমেন্ট খেয়েছিলাম, পরবর্তীতে তা অনেক কমে গিয়েছিল।
আপনি এক স্থানে মিস্টার ভুইয়ার কথা লিখেছেন। উনি যদি ফিজিক্স ও অঙ্কের টিচার হয়ে থাকেন তাহলে দেরীতে হলেও, আমরাও বোধ হয় ওনাকে জেসিসিতে পেয়েছিলাম। ইদানিং দেখি, ক্যাডেটরা টিচারদের স্যার বলে সম্বোধন করে, যেমন অমুক স্যার। আমাদের সময়টি এমন ছিলনা, আমরা আপনাদের মতোই বলতাম, যেমন মিস্টার ভুইয়া (ভুইয়া স্যার নয়)।
পরিশেষে অনুরোধ, লেখা চালিয়ে যাবেন প্লীজ।
আলীম ভাই, আমরা টিচারদের মি. ভুইয়া, মি. মান্নান, মি. নাসির- এভাবে সম্বোধন করতাম। এখনকার পরিস্থিতি জানি না।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কালে কালে কত দেখবো 😮 😮 😮
আড়ালে তো আমরাও কতো কিছু ডাকতাম। যেমন মি. নূরকে বাত্তি, মি. কাসেম (প্রয়াত) গরু (কারণ উনি ক্যাডেটদের একটাই গালি দিতেন "গরু", মি. নুরুল ইসলামকে আব্বা, প্রিন্সিপাল উইং কামান্ডার বদিউর রহমানকে জাইল্লা এরকম আর কি!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
টিচারদের মিঃ বলে ডাকার অনুমতি চাই O:-) O:-)
আমরা টিচারদের 'স্যার' বলি কিন্তু সেটা :just: সামনে আর কি!!আড়ালে ... :frontroll: :frontroll:
দারুণ লাগল ভাইয়া :salute:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: প্রিন্সু স্যারই দৌড়ের উপর,মনে হয় এজি স্যার এসেছেন!আমি ত গড়াগড়ির উপরই থাকার কথা।ভাই রিইউনিয়নে অনেক মাস্তি করেছি।আমাদের লাবলু ভাই সম্পাদিত গোল্ডেন জুবিলি জার্নালটিতে লেখাটি রিউনিয়নের সময়েই পড়েছিলাম।ব্লগ ইন্সপেকশনে কিন্তু মাঝে মাঝে আপনাকে চাই।এই প্রথম মনে হয় কোন ক্যাডেট স্বেচ্ছায় ইন্সপেকশন চাচ্ছে। :bash:
:)) :)) আপনার ফার্স্ট সুইমিং কোচ এই বই ! 😛
ফজা ফ্যাক্টরির আরেক ফৌজি'র আগমন।ভেবেছিলাম ৫তারা দাগাব,কিন্তু যথেষ্ট কিনা জানিনা।আর আপনার লেখা রেটিং করার সাহস আর সাধ্য কোনটাই আমার নেই।হোয়াট অনলি আই ক্যান ডু :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute:
এতো আগের ক্যাডেট কলেজের বর্ণণা তবু পড়তে বসে মনে হয় সেই সময়ের মাঝে নিজে হারিয়ে যাচ্ছি। যখনই কোন সিনিয়র ক্যাডেটদের স্মৃতিচারন শুনি তখন তাদের সময়ের ক্যাডেট কলেজ কল্পনা করি।মনে পড়ে যখন এক্স ক্যাডেটরা এসে আমাদেরকে বলত যে তাদের সময় মসজিদ এইখানে ছিল না , ছিল ঐখানে তখন আমি মনে মনে কল্পনা করতাম মসজিদ ঐখানে হলে কলেজকে কেমন লাগত। ক্যাডেট কলেজ শব্দটাই বুঝি এমন করে স্মৃতির অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে।
খুব ভালো লাগল আপনার লেখা পড়ে ভাইয়া। আমাদের সাথে আরো শেয়ার করুন । সিসিবির জন্য আরো বেশি বেশি লিখুন।
সাইফুদ্দাহার ভাই আপনার আরো আরো স্মৃতিচারনমূলক লেখার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকলাম :boss:
:pira: :awesome:
অঃটঃ :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:salute: :salute:
ভাইয়া, নিয়মিত লিখতে থাকুন। আপনাদের সময়কার গল্পগুলো শেয়ার করুন আমাদের সাথে।
স্মৃতিচারণ পর্বটা চমৎকার লাগল সাইফ ভাই।
আপনার কাছ থেকে আরও অনেক গল্প শুনতে চাই ভাইয়া। 🙂
কেমন এক প্রাচীন অনুভূতি ছুয়ে গেলো। ভাইয়া প্লীজ আরো লিখুন। আপাতত এক কাপ :teacup:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..