উটপাল শুভড়ো সিনড্রোম !

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে ক্রীড়া সাংবাদিকতা পেশা হিসাবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। বলা বাহুল্য এদের মধ্যে চেলিব্রেটি উটপাল শুভড়োর ধারে কাছে কেউ নেই। হালে এসব সাংবাদিকরা ক্রিকেট তারকাদের নাড়ির খবর, নারীর খবর, হাঁড়ির খবর আমাদের কাছে গরম গরম পরিবেশন করছেন। কোন খেলোয়াড় কখন কি খেয়ে কতটি ঢেঁকুর তুলেছেন, সেই টেঁকুরের সাথে কতখালি তৃপ্তি, কতখালি প্রতিশোধ মেশানো সেই খবরও আমরা তাদের ঢেঁকুর মিলিয়ে যাওয়ার আগেই পেয়ে যাচ্ছি। উনারা খেলার ভবিষ্যতবানীতেও পিছিয়ে নেই। হোটেলে খেলোয়াড়ের থমথমে মুখ, অগ্নিলাল চোখ, অথবা হাই তোলা দেখেই উনারা বুঝতে পারেন আজ মাঠে কি কি হবে। ভালো এতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্তচক্ষু, দৃঢ় চোয়াল বা অলস হাই তোলার দিকে কঠিন নজর দিতে গিয়ে উনারা প্রতিপক্ষ দেশের পরিচয়টাই ভুলে গিয়েছেন। এটাই আমাকে বেশি পীড়া দিচ্ছে।

গতকয়েক দিন পত্রিকা জুড়েই হল্যান্ড এই , হল্যান্ড সেই তথ্যে ভরপুর। কিন্তু সাংবাদিকদের হল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস এর মাঝে পার্থক্য জানা উচিত। হল্যান্ড কোন দেশ নয় , নর্থ ও সাউথ হল্যান্ড বরং দেশ নেদারল্যান্ডসের এর বারোটা প্রভিন্সের দুইটা মাত্র ( উইকিপিডিয়া অবশ্য জানাচ্ছে হল্যান্ড শব্দটার ব্যবহার মাঝে মাঝে হয় তবে আনঅফিসিয়ালি এবং এটা একটা সাধারন ভুল)। কিন্তু বাংলাদেশর ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে এইটুকু তথ্যের চেয়ে খেলোয়াড়দের হাই গোনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন । কারন ওতেই যে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ন ক্লু লুকানো !

৩,০৫৩ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “উটপাল শুভড়ো সিনড্রোম !”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    :khekz:
    আরও আছে.......ম্যাচ শেষ হবার পুর্বেই বিজয়ী নির্ধারন করে গরম গরম খবর ু পরিবেশনের চেষ্টা 😡

    "হুম,প্রোটিয়াদের সমীকরণটা পাল্টে যেত কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ
    জিতলে। সম্ভাবনা জাগিয়েও বাংলাদেশ তা করতে না পারায় তাই একরকম নির্ভার হয়েই
    আজ খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা"
    - ালের কন্ঠ
    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সাম্প্রতিক সময়ের ক্রীড়া সাংবাদিকতা দেখে এর উপর থেকে ভক্তি শ্রদ্ধা উঠে গেছে। তবে নেদারল্যান্ডসকে হল্যান্ড বলাটাকে মনে হয় ঠিক উটপাল শুভড়ো সিনড্রোম বলা ঠিক হবে না, কারন এটা সারা বিশ্বেই বহুল প্রচলিত। আমি ফুটবল বিশ্বকাপে ছোট বেলা থেকেই হল্যান্ড এর সাপোর্টার হওয়ায় এক সময়ে নিজেও কনফিউজড ছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম শুধু আমি একা না। ওদের মিনিস্ট্রি অব ফরেন এফেয়ার্সের ওয়েব সাইটেও এই নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে এখানে

    আর শুধু আমাদের দেশের পত্রপত্রিকা না বিখ্যাত 'দ্যা টেলিগ্রাফ' এবং বিবিসি ওয়েব সাইট ও নেদারল্যান্ডস কে হল্যান্ড হিসেবে লিখছে। তাই বলা যায় নেদারল্যান্ডস সারা বিশ্বের কাছেই ভুল ভাবে হল্যান্ড হিসেবেও পরিচিত যদিও নেদারল্যান্ডের সাধারন মানুষ (হল্যান্ড প্রভিন্স বাদে) তা খুব ভাল ভাবে নেয় না।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

      ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় আন্ঞ্চলিক সংস্কৃতি খুব সচেতনভাবে ধরে রাখার প্রচেষ্টা আছে। যেমন উদাহরন হিসাবে বলা যায় জার্মানীর বায়ার্ন প্রভিন্সের বায়রিশরা বায়ার্নের ঐতিহ্য, ভাষা নিয়েও বেশ সচেতন। এমনকি ফুটবলেও এর প্রছন্ন প্রতিযোগিতা ও ইগোর লড়াই আছে। কারন সেখানে রিজিওনাল ক্লাবগুলোর প্রতিদ্বন্দিতা তুমুল। তাই বলে বিশ্বকাপের লড়াইয়ে পুরো জার্মানীকে বায়রিশ বললে তা বিরক্তির কারন।

      আইসিসি অফিসিয়ালি নেদারল্যান্ড ব্যবহার করে। তাই বার বার হল্যান্ড উল্লেখ করে একটা প্রচলিত ভুলকে অনুসরন করার কোন মানে হয়না। এটা হয় রিপোর্টারের চরম উদাসীনতা অথবা চরম মূর্খতা। যেখানে বিভিন্ন জায়গায় আলাদা করে ব্যাখ্যা দিয়ে বলাই হয়েছে এটা একটা সাধারন ভুল , সেখানে জাতীয় দৈনিকগুলোতে এই ভুলকে ক্রমাগত অনুসরন করা চরম বিরক্তিকর।

      জবাব দিন
  3. তৌফিক

    ছোটবেলা থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকদের বদৌলতে জেনে এসেছি, জিম্বাবুয়ে। এখানে এক সেইদেশী ছাত্রের কাছ থেকে শিখলাম, জিম্বাবে। প্রথম আলোতে একবার দেখছিলাম ইউটাহ (Utah) স্টেটকে লিখছে উতাহ। নিজের কথা বলতে পারি, অনেক অনেক কিছু শিখছি পেপার পড়ে, সেই ক্লাস থ্রি থেকে শুরু। কিন্তু এখন যেন ভুল বেড়েই চলেছে। এখনকার ক্লাস থ্রির বাচ্চাদের জন্য তাই খারাপই লাগে।

    উটপালের আশরাফুল বন্দনা কমেছে ইদানীং। সাকিবরে নিয়া দেশ টিভিও কম দেখায় নাই। বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের সাথে হারার আগেই হারার খবর ছাপছে কালের কন্ঠ। হতাশায় ফ্রাস্ট্রেটেড হইয়া গেলাম x-(

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      কিছুটা দ্বিমত আছে। ওি দেশী শব্দের বাংলা নাম কী সেটা ঐ দেশী ছাত্রের কাছ থেকে শিখতে না চাওয়াটাই মঙ্গলজনক। কারণ চাইনিজরা বাংলাদেশ কে বলে মানজালা, আবার বেশিরভাগ বিদেশিরাই ব্যাঙ্গালাডেশ বলে কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ নামেও ভুল নেই , ওদের উচ্চারণেও ভুল নেই। আমরা বাংলায় বলি ভারত , মিশর এদের প্রচলিত নাম ইংরেজিতে ইন্ডিয়া , ইজিপ্ট যার কোনটাই আসলে ভুল নয়। ফরাসিরা তাদের দেশকে ফ্রঁসে বলে তাই বলে ফ্রান্স নামটা ভুল হয়ে যায় না। নেদারল্যান্ড কিংবা হল্যান্ডের নাম ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে শো করেছিলো PAYS BAS এখন আমি কি একে পেইস বাস বলা শুরু করবো .... .....

      জবাব দিন
      • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

        নেদারল্যান্ডস এর ফ্রেন্ঞ্চ নাম PAYS BAS . ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপ ফ্রান্স এ হয়েছে বলেই তুমি নেদারল্যান্ডস এর নাম PAYS BAS দেখেছো। ঠিক যেমন চায়নিজ ভা্ষায় বাংলাদেশের নাম মুনজালা। বাংলাতে Egypt এর নাম মিশর। জার্মান মুনসেন এর ইংরেজি নাম মিউনিখ। এগুলো ভাষান্তর।

        কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বাংলা নাম হল্যান্ড নয়। হল্যান্ড শুধু মাত্র নেদারল্যান্ডসর একটা প্রদেশ মাত্র। ভারতকে ইন্ডিয়া বলা এক ব্যাপার (ভাষান্তর) , আর ভারতকে মহারাষ্ট্র বলা সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাপার। আহসানের দেয়া নেদারল্যান্ডস সরকারের ওয়েবসাইটেই বলা আছে নেদারল্যান্ডস কে হল্যান্ড বলাটা নেদারল্যান্ডের অন্যান্য প্রভিন্সের লোকজন পছন্দ করে না।

        জবাব দিন
        • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

          ভাইয়া আমার উপরের কমেন্ট টা ছিলো তৌফিকের মন্তব্যের জবাবে। জিম্বাবে সঠিক না জিম্বাবুয়ে সঠিক এই বিষয়ে। আর নেদারল্যান্ডের ব্যাপারটা আমি আগে জানতাম না। আপনাকে ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। এবং আমি কখনৈ কিন্তু আপনার কথার বিরোধিতা করছি না। আপনার সাথে একমত একথা আমি নিচেও বলেছি।

          জবাব দিন
      • তৌফিক

        তোমারে একটা কথা জিগাই, তোমার নাম কেউ যদি বিকৃত করে উচ্চারণ করে তাইলে হয়তো তোমার খারাপ লাগবে না। বেনিফিট অব ডাউট দিবা অন্য ভাষাভাষী দেখে। কিন্তু যদি বিদেশী কেউ ঠিকভাবে তোমার নাম উচ্চারণ করে, তাইলে নিশ্চয়ই খুশি হবা? যদি না হও তাইলে কথা নাই। হইলে একটা কথা আছে। সেইটা হইল, বাংলাদেশের নাম কোন বিদেশী ঠিকভাবে বললে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তাই ওদের দেশের নামও ঠিকভাবে বলতে চাই। এমনতো না যে জিম্বাবুয়ে বললে খুব বাংলা হয়ে যায় আর জিম্বাবে বললে হয় না। ইউটাহ কে উতাহ বলার চল সংবাদপত্রই শুরু করছে। শুরু থেকে ঠিক নামে ডাকলে কনফিউশান কমে যাইত অনেক।

        জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)

    এই কয়দিনে ব্যাপক আজগুবি কাজকারবার দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মিডিয়া আর সংবাদপত্র এতটা মূর্খ-আচরণ না করলে ক্ষতি হত না কোন!!!!
    উৎফ্ল চুভ্র একজন বিয়াপক বিনোদন x-(


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    পোস্টের বক্তব্যের সাথে একমত। তবে সাংবাদিকরা যেমন সাংঘাতিক হয়ে উঠেছেন তার সাথে ক্রমেই সাংঘাতিক হয়ে উঠছেন একদল অনলাইন বুদ্ধিজীবিরা। মানছি উৎপল শুভ্র হয়তো আশরাফুলের প্রতি কিছুটা পক্ষপাত দুষ্ট কথা লিখেন কিন্তু সেটা নিয়ে একদল লোকের তেনা প্যাচাপ্যাচিতে বিরক্ত। সবচেয়ে যেটা খারাপ লেগেছে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে যখন শোচনীয় অবস্থায় , যখন আমরা কায়মনে প্রার্থনা করছি আশরাফুলের হাত ধরে হলেও বাংলাদেশ উঠে আসুক তখন এই সব বুদ্ধিজীবিরা (!!!) নিজেদের কথা ঠিক হওয়ার আনন্দে উৎপল শুভ্রকে গালি দিতে ব্যস্ত। বিশেষ করে তাদের কিছু শব্দ চয়ন আপত্তিজনক এবং অশ্লীল। এরাই আবার দেশ ও জাতির বিবেক সেজে এগিয়ে আসে। এদের জন্য ঘৃণা।
    উৎপল শুভ্রকে আমি ভালো পাই না। কিন্তু তিনি এইসব অনলাইন বুদ্ধিজীবিদের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভালো চান সেটা জানি। তাই পোস্টের বক্তব্য ভালো লাগলেই নামকরণ নিয়ে আমার খারাপ লাগা জানিয়ে গেলাম।

    জবাব দিন
    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

      আশরাফুল নিয়ে আমার ও উৎপল শুভ্রের মাঝেও দ্বিমত নেই। দ্বিমত হলো মাঠের ক্রিকেট বাদ দিয়ে ঢেঁকুর , শক্ত চোয়াল বা অলস হাই তোলার মাঝে ক্রিকেট খুঁজতে গিয়ে আসল ক্রিকেট হারিয়ে ফেলাতে।

      জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        আপনার কথার সাথেও কিন্তু আমার দ্বিমত নেই। ক্রিকেট কলামিস্টদের রবীন্দ্রনাথ হওয়ার চেষ্টা যখন শুভ্র করেছিলেন ( ক্যারিবীয় কড়চা) তখন থেকেই এটা নিয়ে আমি প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। এবং ক্রিকেট কলামিস্টরা অক্রিকেটীয় প্যাচাল পাড়ার শুরু হয়তো সেখান থেকেই। খোমাখাতায় এমন একটা গ্রুপেই অটো ইনক্লুড হয়ে যাই। সেখানকার কার্যক্রম ভালৈ লাগছিলো। বিশেষ করে সাংবাদিকদের সাংঘাতিকতার বিরুদ্ধে ভালৈ চলছিল। কিন্তু খোমাখাতার ঐ সব বুদ্ধিজীবীদের স্বরূপ দেখে ফেলার পর আমার কাছে এটাইব মনে হয়েছে আমরা বাঙালিরা সবকিছুতেই নায়ক আর গুন্ডা ( বাংলা সিনেমার মত) খুঁজি। শুভ্র বলেছেন সো তার বিরোধিতা করে তাকে নিয়ে দু তিন কথা বলে বাহবা কুড়ানোর মত সিজনার ক্রিকেটবোদ্ধায় ভরে গেছে। ভার্সিটিতে যে ছেলেটাকে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের সময়ও নির্বিকার ভাবে গার্লফ্রন্ড সহ লাইব্রেরিতে ঘুরতে দেখেছি তারাই দেখি উৎপল শুভ্রের নামে প্রচারণা করে ক্রিকেট বোদ্ধা সাজছেন। নাম বিকৃতি মজা করতে করা যায় কিন্তু এটা করতে গিয়ে নোংরামি করাটা হলো খারাপ।
        ইন ফ্যাক্ট আপনার পোস্ট নিয়ে আমার আপত্তি নেই, শিরোনাম নিয়েও নয়। আমি বলেছি এই ভুলটা আমাদের জনমানুষের এবং সকল সাংবাদিকেরই। উৎপল শুভ্রকে আলাদাভাবে খাটো করার দরকার ছিলো না। আমার কথা ভুল বুঝবেন না ভাইয়া।

        জবাব দিন
        • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

          না ভাইয়া তোমাকে ভুল বুঝিনি। বিকৃত নামকরনের দায় কিছুটা আমারও। তবে আমি প্রকৃত নাম উল্লেখের বদলে বিদ্বেষমূলকের চেয়ে স্যাটায়ারমুলক হিসাবেই বিকৃত করেছি। মনে হয়না আমার লেখাটা শেষ পর্যন্ত স্যাটায়ার হয়েছে। আমার ব্যর্থতা।

          ইনফ্যাক্ট আমি এখনও উৎপল শুভ্রর মতো আশরাফুলবাদী। যদিও আশরাফুলবাদী হওয়ার জন্য খুব একটা ভালো সময় এটা না। 😛 । তবে আমি মনে করি এখনও বাংলাদেশ টিমে অন্তত ৭ নং পজিশনে আশরাফুলকে দরকার।

          এটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। না হলে আশরাফুলবাদী হওয়ার জন্য বেশ গরম হাওয়া সহ্য করতে হতে পারে। মাহমুদুল্লাহ ও নাঈম দুজনেই একই ধরনের মিডিয়াম সারির অলরাউন্ডার। তাদের পারফরম্যান্স আমার কাছে মাঝে মাঝে চলনসই মনে হলেও অধিকাংশ সময়ই অপ্রতুল মনে হয়েছে। তাই দুজনকে একসাথে না খেলিয়ে এদের অন্তত একজনকে বেছে নেয়াই যথেষ্ট।

          অন্যদিকে রাজ্জাক ও সাকিবের পরে শুভর বাঁহাতি স্পিন খুব একটা ভেরিয়েশন যোগ করতে পারে না। বরং প্রতিপক্ষ একই ধরনের ক্রমাগত বাঁহাতি স্পিনে সেট হয়ে যেতে পারে। তার উপর শুভ টাইট বোলিং করলেও উইকেট টেকার নয়।

          অন্যদিকে আশরাফুলের বলে নিয়ন্ত্রন কম। কিছুটা অ্যামেচার টাইপ বোলিং হলেও প্রতিপক্ষ আশরাফুলের বলের উপর চড়াও হওয়ার মানসিকতা থেকে উইকেট বিলিয়ে দিতে পারে। কিছুটা ভারতের প্রতিকুল অবস্থায় টেনডুলকারের আনকনভেনশনাল বোলিং এ্যাপ্রোচের মত।

          আবার ৭ নং এ আশরাফুলের ব্যাটিং সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হতে পারে ( আজকাল আশরাফুলের ব্যাটিং এর পক্ষ নিতে লজ্জা করে)। আশরাফুলের অবস্থা কিছুদিন আগের ফর্মহীন যুবরাজের মত। ভারত কিন্তু যুবরাজের দু:সময়েও যুবরাজকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়নি কারন যুবরাজের ম্যাচ উইনিং আ্যটিচিউড।

          ৭ নং পজিশনে আশরাফুলকে যদি বিবেচনা করি :

          ১। বিগ ম্যাচ উইনিং এ্যাটিচিউড
          ২। বড় শট ও ইনিংস খেলতে পারা
          ৩। মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞতা
          ৪। পাওয়ার প্লের সক্ষমতা
          ৫। বোলিং এ ভেরিয়েশন
          ৬। দুর্দান্ত ফিল্ডিং

          এসবই কিন্তু আশরাফুলের পক্ষে যায় । ফর্ম ও ধারাবাহিকতা ছাড়া আসলে আশরাফুলের কোন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ টিমে কখনই কিছু ছিল না। অন্তত বিশ্বকাপে না হলেও পরবর্তীতে
          আশরাফুলের পরিচর্যা করা উচিত। কারন আশরাফুল যদি ফল দেয়া শুরু করে তখন বাংলাদেশ টিমকে বেঁধে রাখা সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে।

          একই সাথে আমি সাকিব ও সিডন্সের ক্রিকেট জ্ঞানের উপর ভীষন আস্থাবান। সাকিব এর মতো পরিণত ক্রিকেট বুদ্ধির ক্রিকেটার বাংলাদেশ মনে হয় সময়ের আগেই পেয়েছে। সিডন্সও টিপিক্যাল প্রফেশনাল অস্ট্রেলিয়ান। তাই মনে হয়না তারা একেবারে আশরাফুল বিমুখ হবে। আশরাফুলের এই অবস্থার জন্য আশরাফুলই সবচেয়ে বেশি দায়ী। কিন্তু দায়ী করার চেয়ে আশরাফুলকে আশরাফুল রুপে ফিরিয়ে আনাতেই বাংলাদেশের মঙ্গল।

          [ আশরাফুলবাদী অভিমত একান্তই নিজস্ব আমার ( মূর্থের ক্রিকেট দর্শন আরকি! )। আমি এবিষয়ে খুব একটা মুখ খুলিনা সাধারনত। তবে সিসিবির মতামত জানতে চাই।]

          জবাব দিন
          • আশরাফুল মোটেই "দুর্দান্ত ফিল্ডিং" করে না। দলে ও সবচাইতে দুর্বল ফিল্ডার। ক্যাচ ড্রপ আর অন্যকে রান আউট করার কোনো পরিসংখ্যানে ও দলের যে কারো চাইতে এগিয়ে থাকবে। তবু আমি বলব, সাউথ আফ্রিকার সাথে শুভকে বাদ দিয়ে ওকে নেয়া উচিত - গেম চেন্জ করার ক্ষমতার জন্য। রিসেন্ট পারফরমেন্সে যদিও ওকে দলে নিতে কেউ ভরসা পাবেনা। ওকে ওয়াইল্ড কার্ড হিসেবে নেয়া যেতে পারে। আমি যদি সিলেকশন কমিটির মেম্বার হতাম (হাইপোথেটিক্যালি), ওকে এই একটা সুযোগ আমি দিতাম। আমাদের যখন জিততেই হবে, আশরাফুল যদি বাইচ্যান্স তার ফর্ম ফিরে পায় এই একটা ম্যাচেও, তাহলেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। ঐ পজিশনে অন্য কোনো প্লেয়ারেরই এতটা পজিটিভ দিক নেই, এই ম্যাচের বিবেচনায়।

            জবাব দিন
            • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

              একমত হতে পারলাম না। আশরাফুল বাংলাদেশ টিমের ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের একজন। সাধারনত কাভারে ফিল্ডিং করে। ফিল্ডিং এর কোন পরিসংখ্যান দেয়া কঠিন, তবু বলে রাখি আশরাফুলের ক্যাচের সংখ্যা ৩৫ টা যা বাংলাদেশ টিমে সম্ভবত সর্বোচ্চ।

              আশরাফুলের ফিল্ডিং অন্তত একটা উদাহরন হতে পারে এই ভিডিও।

              জবাব দিন
              • তুমি মনে হচ্ছে আসলেই আশরাফুলের অন্ধ ভক্ত।

                আশরাফুলের রানও কিন্তু বাংলাদেশের এ যাবতকালের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই বলে সে কিন্তু দলে চ্যান্স পাবে না এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। টোটাল ১৬৬ ম্যাচ ও খেলেছে। সুতরাং যদিও তার এভারেজ 'চামিন্দা ভাস' ও 'মিচেল জনসনের' মত, তবুও সে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী। আমি তার ব্যাটিং ট্যালেন্টকে ছোট করছিনা - ন্যাচারালি গিফটেড সে। খুবই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। কিন্তু উটপল শুভ্র সিনড্রম থেকে বেরিয়ে তাকে বিচার করতে হবে।

                তুমি দুর্দান্ত ফিল্ডার বলেছ তাকে - আমার দেখায় দলের অন্যান্য যে কারো তুলনায় এ বিষয়ে সে যথেষ্ট দুর্বল। তুমি বলেছ - "আশরাফুলের ক্যাচের সংখ্যা ৩৫ টা যা বাংলাদেশ টিমে সম্ভবত সর্বোচ্চ।" এটা তো কোনো পরিসংখ্যান হল না। আশরাফুল তো সর্বোচ্চ ক্যাচ নিবেই, কারন ও সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে। আশরাফুল ১৬৬ ম্যাচে ক্লোজ ফিল্ডার হয়ে ৩৫ টা ক্যাচ নিয়েছে। তামিম ইকবাল ৯৬ টা ম্যাচে ২৬ টা ক্যাচ নিয়েছে - ১৬৬ টা খেললে এই রেটে সেটা হয় ৪৫ টা । তামিম ক্লোজ ফিল্ডার ও ঠিক নয়। জুনায়েদ ৫১ টা খেলে ক্যাচ নিয়েছে ২২ টা - ১৬৬ টা খেললে সেটা হয় ৭১ টা। স্লিপে খেলে জুনায়েদ যদিও - তাকেও অনেক ক্যাচ ড্রপ করতে দেখেছি। সাকিব ২৯ টা ক্যাচ/ ১০৭ টা ম্যাচ - ১৬৬ টায় ৪৫ টা ক্যাচ। নাইম ১৬/৪৪ - মানে ১৬৬ টায় ৬০ টা। তার মানে পরিসংখ্যানই বলছে, আশরাফুল আসলে সবার তুলনায় কম ক্যাচ নিয়েছে - ঐ পজিশনে তার অনেক বেশি ক্যাচ নেয়ার কথা। বেশি ম্যাচ খেলেছে বলেই এটা সর্বোচ্চ। ক্যাচ ড্রপ কোনো পরিসংখ্যান নেয়া হয় না। তবে যারা অন্ধভক্ত নয়, তারা তাদের মেমোরি ঘাটলেই এ বিষয়ে বুঝতে পারবে - আশরাফুলের ক্যাচ ড্রপ, বল ফসকে যাওয়া, আর অবিবেচক রান আউট করানো। উপরের সব পরিসংখ্যান ক্রিকইনফো থেকে নেয়া।

                তুমি যে ক্লিপ দিয়েছ সে রকম দু একটা ভাল ফিল্ডিং ক্লিপ অধিকাংশ প্লেয়ারের বেলায়ই পাওয়া যাবে বলে আমার ধারনা।

                তবু আমি বলব ব্যাটিং ট্যালেন্ট ও চার/পাচ ওভার বল করার জন্য আশরাফুলকে ৭ পজিশন এ নেয়া হোক। তোমার উপরের বিশ্লেষনের সাথে আমি একমত তার ফিল্ডিং এর পয়েন্টটা বাদে।

                জবাব দিন
                • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

                  আমি আগেই বলেছি পরিসংখ্যান দিয়ে ফিল্ডিং এর পারফর্ম্যান্স বোঝানো যায় না। আর আপনার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একটা জিনিস মিসিং । তাহলো খেলাটা ঐকিক নিয়ম নয়। আপনি যত ম্যাচ খেলবেন আপনার গড় ততই কমতে থাকবে। হয়ত আমার স্মৃতি শক্তি দূর্বল তবু আশরাফুলের ফিল্ডিং এর সমালোচনা কখনই খুব বড় আকারে কিছু হয়নি। এমনকি আশরাফুলের এই দু:সময়েও না।

                  জবাব দিন
                  • "আপনি যত ম্যাচ খেলবেন আপনার গড় ততই কমতে থাকবে।" এটা ভুল ধারনা তোমার। পারফরম্যান্স খারাপ হলেই গড় কমে, অনেকের এটা হয় - যেমনটা আশরাফুলের হচ্ছে। যাদের টেস্টে ব্যাটিং গড় ৫০ এর কাছাকাছি, দেখবে তারা সবসময় গড়ে সে ধরনের স্কোরই করে। পন্টিং, লারা, টেন্ডুলকার। যাদের গড় ১৫, যেমন অনেক বোলার, তারা দেখবে সেরকম স্কোরই করে। ওডিআই তে টেন্ডুলকারের গড় ক্রমাগত বাড়ছে, ৪৫০এর মত ম্যাচ খেলার পরও। তার কারন এখন সে আরো বেশি বেশি রান করছে। ভাইয়া তুমি আশরাফুলকে নিয়ে "উটপাল শুভড়ো সিনড্রোমে" ভুগছো।

                    জবাব দিন
                    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

                      ভালো খেললে গড় বাড়লে এটা পাগলেও জানে। কথা হলো আপনি কেরিয়ার জুড়েই ভালো খেলা ধরে রাখতে পারবেন কিনা। আপনি যাদের কথা উল্লেখ করেছেন তাদের কেউই তাদের কেরিয়ারের পিক সময় ধরে রাখতে পারেনি, (ব্যতিক্রম টেন্ডুলকার)। তাদের কারো ক্ষেত্রেই আপনার ঐকিক নিয়ম খাটেনি। ব্রায়ান লারা ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকের ওডিআই গড় ৪৮ এর ঘর থেকে কেরিয়ার শেষ করেছে ৪০ ঘরে এসে। রিকি পন্টিং এর গড়ও ৪৫ এর আশ পাশ থেকে এখন ৪২ এর মাঝামাঝি এসেছে ঠেকেছে। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ওডিআই ব্যাটিং গড়ধারী মাইক হাসির অমানুষিক ৭৮ গড় এখন ক্রমেই মানবিক গড়ের দিকে নেমে আসছে। তাদের কেউই মনে হয় আপনার মত অংকে এত ভালো ছিল না।

                      যাই হোক, আলোচনা মনে হয় অফটপিকে চলে যাচ্ছে। ফিল্ডিং অনেকটাই পারসেপশনের ব্যাপার। আমার হাজার সিনড্রোম বের করেও আপনিও কিছুই প্রমান করতে পারবেন না। আপনি তাকে সবচেয়ে ভালো ফিল্ডার হয়ত নাও ভাবেতে পারেন
                      তবে আবারও বলছি আশরাফুলের ফিল্ডিং নিয়ে কখনই তাকে কঠিন সমালোচনায় পড়তে হয়নি। আশরাফুল মাঠে যথেষ্টই আ্যনিমেটেড।

                      ব্রায়না লারার ওডিআই গড় গ্রাফ:

                      রিকি পন্টিং :

                      মাইক হাসি :

                      শচীন টেন্ডুলকার :

                    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

                      আরেকটা ফ্যাক্টর মনে হয় বিবেচনা করা যায়। তা হলো বাংলাদেশ এখন ৫ বছর আগের তুলনায় প্রতিপক্ষের বেশি উইকেট তুলে নিতে পারে। তাই ক্যাচিং এর রেট কিছুটা হলেও বাড়াতে পার।

                      যেমন ওডিআই তে ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা আসার পরে আধুনিক সময়ের ব্যাটসম্যানদের এ্ভারেজ ও টিমের স্কোর কিছুটা হলেও বেড়েছে। একই ভাবে বোলারদের ইকোনমিরেটও বেড়ে গেছে।

                    • ১) "ফিল্ডিং অনেকটাই পারসেপশনের ব্যাপার।" - তোমার এই কথাটাই আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে। তোমার পারসেপশনে আশরাফুলকে দুর্দান্ত মনে হতে পারে, কিন্তু আমার এবং আমার পরিচিত অনেকের কাছেই তাকে ফিল্ডিংএ দুর্বল লাগে। ১৫ জনের দলের কোনো দু'জন প্লেয়ার নেই যাকে আমি আশরাফুলের নিচে রাখব এ বিষয়ে। তুমি কি পারবে দু জনের নাম বলতে, যাদের ফিল্ডিং ওর তুলনায় খারাপ? সহজ কথায় আশরাফুল - ১) ভাল ব্যাটসম্যান, যদিও তার পোটেনশিয়ালের তুলনায় পারফর্মেন্স খারাপ, ২) 'বিলো এভারেজ' বোলার, ৩) 'বিলো এভারেজ' ফিল্ডার। ওকে দলে নেয়া হোক, কিন্তু তার ব্যাটসম্যান পরিচয়েই তাকে জায়গা করতে হবে।

                      ২) আমি ক্রিকেট বোদ্ধা নই। তবে ইন্টারনেটে খুব আগ্রহ নিয়ে বিদেশ বিভুইয়ে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সব খেলা দেখে আমার এ উপলব্ধি। এখানের ৯০% ব্লগারই আমার তুলনায় এ বিষয়ে বেশি জানবে বলেই আমার ধারনা।

                      ৩) "Ashraful dropped it again", "the culprit is ashraful", "my god, he dropped a dolly" - আশরাফুলের ফিল্ডিং এর কথা শুনলে আতাহার আলি খান আর শামিম চৌধুরির এ কথা গুলোই আমার কানে বাজে। ক্রিকেটের মাঠে সবাই নর্মাল ফিল্ডিং করে। কারো কাছে কোনো বল আসলে সে সেটা ধরবে, সেটাই নর্মাল ও প্রত্যাশিত। এর মাঝে কেউ এক্সেপশনাল ভালো দুএকটা কিছু করে সেটা সবার মনে থাকে, আবার কেউ যখন খুব খারাপ কিছু করে, মানে সহজ একটা ক্যাচ ড্রপ করল বা বোকার মত বল ফসকে গেল - যেটা সবার মনে গাথে (যেমন রাজ্জাকের পায়ের তলা দিয়ে বল ফসকে গেল কাল দ আফ্রিকার সাথে)। তুমি আশরাফুলের ব্লাইন্ড ফ্যান বলে ওর ১৬৫ ইনিংসের কয়েকটা ভাল ফিল্ডিং হয়তো মনে রেখেছো। আমি সেরকম দুএকটা কিছু দেখে থাকলেও ওর অনেক বোকামির কথাগুলোই মনে আছে। খুব বেশি আগে তোমার যেতে হবে না - তিন মাস আগে জিম্বাবুয়ের সাথে প্রথম খেলায় ও খুব সহজ এক ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছে, খারাপ ফিল্ডিং করেছে, এক জনকে রান আউট করিয়েছে (ফিল্ডার হয়ে নয়, ব্যাট করতে নেমে নিজের দলের ব্যাটসম্যানকে), তারপর ব্যাট ধরে অনেক বলে খেলে ৫ অথবা ৬ করে। ঐ ম্যাচে বাংলাদেশ হারে।

                      "হয়ত আমার স্মৃতি শক্তি দূর্বল তবু আশরাফুলের ফিল্ডিং এর সমালোচনা কখনই খুব বড় আকারে কিছু হয়নি। এমনকি আশরাফুলের এই দু:সময়েও না।"

                      তোমার এ কথার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। ঐ সময়ে আমার জানামতে আশরাফুলের অনেক সমালোচনা করে ওকে ড্রপ করে রাকিবুলকে নেয়া হয়েছিল ও বলা হয়েছিল রাকিবুল অনেক ভাল ফিল্ডার, মানে আশরাফুল খারাপ ফিল্ডার। ফিল্ডিংটা ব্যাটিং বা বোলিং এর মত ওরকম নির্দিষ্ট স্কিলের ব্যাপার নয় বলে আমরা যারা এক্সপার্ট না তারা যে কাউকেই ভালো ফিল্ডার বলে মনে করতে পারি। নিকট অতীতেই কোহলি, আকমাল এদের ক্যাচও আশরাফুল ড্রপ করেছে ১০ বা ২০ রানে, পরে তারা অনেক রান করেছে। তাই পারসেপশনের কথা বললে 'আমার' কাছে আশরাফুল অমনযোগী ও দলের অন্যতম দুর্বল ফিল্ডার।

                      অন্যদিকে তামিম, ইমরুল, নাইম - এদের ফিল্ডিং এর কথা মনে হলে আতাহার আলি খান ও অন্যান্যদের " what a fantastic catch" "great effort" "excellent fielding" "superb catch" এগুলো কানে ভাসে।

                      ৪) "আশরাফুল মাঠে যথেষ্টই আ্যনিমেটেড" - এটা ঠিক আছে, সব সময় অবশ্য না। কিন্তু সেটা ভালো ফিল্ডিং এর সাথে কোনো সম্পর্কিত নয়। যেটা নরমালি সবার করার কথা, সে রকম একটা বল ধরেও ও মাঝে মাঝে বিশাল লাফঝাফ দেয় - চেচামেচি করে। টিম স্পিরিট এতে আসে এটাই হয়তো একমাত্র পজিটিভ দিক এটার।

                      ৫) "আমার হাজার সিনড্রোম বের করেও আপনিও কিছুই প্রমান করতে পারবেন না।" - তুমি বলেছো আশরাফুল 'দূর্দান্ত ফিল্ডার' - তোমারই এটা প্রমান করার কথা। এটা পারসেপশনের ব্যাপার বলার পরে এটাকে তুমি সাবজেকটিভ জাজমেন্টের উপর ছেড়ে দিয়েছ - যা ঠিক আছে। কিন্তু তার আগে তুমি পরিসংখ্যান দিয়েছ, ও ৩৫ টা ক্যাচ নিয়েছে, সর্বোচ্চ বাংলাদেশ দলের - 'দূর্দান্ত' হওয়ার একটা প্রমান। কিন্তু এটা তো জানা কথা যে ও সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে এবং সে জন্যই এটা হয়েছে। যারা ওর অর্ধেক ম্যাচ খেলেও ২৫-৩০ টা ক্যাচ নিয়েছে - তারাই দুর্দান্ত, আশরাফুল 'বিলো এভারেজ' - ওর যা খেলা দেখেছি, তাতে আমি ধারনা করব ও কম করে হলেও ২০ টা সহজ ক্যাচ হয়ত নিতে পারেনি। তুমি আশরাফুলের অন্ধভক্তের মত অন্যদের তুলনায় ও যে খারাপ ফিল্ডার সেটাকে 'ঐকিক নিয়ম' বলে বাতিল করে দিতে চাচ্ছ।

                      ৬) ক্রিকেটের মত এতটা পরিসংখ্যান অন্য কোনো খেলায় নেই। মোট রান, এভারেজ, বোলিং, রানরেট, হাজারো জিনিস। এগুলো অকারনে এনালাইজ করা হয় না। এভারেজের বাইরেও অনেক বিষয় আছে - স্টাইল, ক্রিটিক্যাল সময়ে ভাল খেলা, গেম চেন্জ করার ক্ষমতা, ইত্যাদি। এর অধিকাংশেই আশরাফুল হাই স্কোর পাবে, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার একটা ভুল পারসেপশন - "দুর্দান্ত ফিল্ডিং" করে আশরাফুল - সেটাকে প্রমান করার জন্য তোমার সব এভারেজ কে ঐকিক নিয়ম বলে বাতিল করে দেয়াটা ঠিক না বলেই আমি মনে করি - আর এটা অংকে ভালোর ব্যাপার না - এটা সাধারন একটা হিসাব যেটা খেলা বুঝতে সাহায্য করে। তোমার উদাহরনগুলো কিছুই প্রমান করে না। 'ব্রাডম্যান' যে 'ব্রাডম্যান' তার কারন তার গড় প্রায় ১০০। তার চাইতে বেশি রান অনেকে করেছে (৬০০০-৭০০০ এর বেশি), বেশি সেন্চুরিও অনেকেই করেছে, বেশি ট্রিপল সেন্চুরীও অনেকে করেছে, তার চাইতে স্টাইলিশ ব্যাটসম্যানও অনেক এসেছে - কিন্তু ক্রিকেট রানের খেলা, এবং তার মত হারে ('এভারেজে') কেউ এত রান করতে পারেনি। লারা, পন্টিং, টেন্ডুলকার - এরা খুবই কাছাকাছি প্রতিভাবান - সবার গড় ৫০-৬০ - কিন্তু ব্রাডম্যানের লেভেলের পেছনে। তাই শুধুমাত্র আশরাফুলকে ও নিজের যুক্তিকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিভিন্ন এনোমালি সাইট করে ক্রিকেটের পরিসংখ্যান ও 'এভারেজ' কে 'ডাউনপ্লে' করাটা যুক্তিযুক্ত নয়। কারো এভারেজ ৪৫ থেকে নেমে হঠাত ২০ হয়ে যায় না। কাছাকাছি ওঠানামা করে। খুব ধীরে ধীরে এটা কমতে বা বাড়তে পারে। তাই তোমার এ গ্রাফ দেয়া যুক্তিহীন। আর মাইক হাসি এক দু'বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে সেখানে ১০০, ৮০ ইত্যাদি গড় ছিল - সেটাও 'এভারেজের' নিয়েম মেনেই চলে - ৫,৬ বছর খেলার পর তা ঠিক তার যেটুকু সামর্থ্য, সে লেভেলই চলে আসে। তার লেভেল ৫০-৬০ এর মতই। তার class-A ক্রিকেট এ ১৫ বছর খেলে সে রকমই তার এভারেজ। সুতরাং বেশি খেলার জন্য তার এভারেজ কমেছে সেটা নয় - তার এভারেজ তার লেভেলেই নেমেছে, অনেক খেলার পরে। এ রকম টাই হয়। অন্যদিকে class-A ক্রিকেট ও যুগযুগ ধরে খেলার পরেও ব্রাডম্যানের এভারেজ সেখানেও ১০০ এর কাছাকাছি। কারন সেটাই তার লেভেল।

                      প্রতি বছর এটা ওঠানামা করলেও সব প্লেয়ারেরই তাদের রান স্কোর করার ও যোগ্যতার মাপকাঠির একটা বড় তথ্য এভারেজে ধরা পরে। এর বাইরেও অনেক কিছু আছে তো বটেই। তবে তুমি ফিল্ডিং এর বেলায় এটাকে ভুল প্রমান করার জন্য 'রান' কে টেনে এনেছ বলেই এগুলো লিখলাম। ফিল্ডিং এ আরো অনেক বাইরের ব্যাপার আসবে সেটা আমি মানি।

                      ৭) আশরাফুল ভাল ব্যাটসম্যান হলেও এই ব্লগ ও কমেন্টের মধ্যে এক ধরনের ব্যাক্তিগত পারসেপশন, উচ্ছ্বাশ ও আবেগের প্রকাশই আমার বেশি চোখে পড়েছে। আমাদের সবাই আবেগ দিয়েই ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আশরাফুলকে প্রমোট করতে হলে ওর ব্যাটিং ই আমাদের ভরসা। 'আবেগ' ও 'স্কিল' - এ দুটোর মধ্যে ক্রিকেট প্লেয়ারদের জন্য 'স্কিল' এরই খেলা, ৪ আর ৬ মেরে আবেগের খেলা নয় - তা হলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হতাম। এটা 'স্কিল' এর খেলা বলেই অষ্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন।

                    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

                      ইন্টারেষ্টিংলি আমি আশরাফুলকে শুধু দুর্দান্ত ফিল্ডার বলেছি ( দলের সবচেয়ে ভালো ফিল্ডার কিন্তু বলিনি , আমার দূর্দান্ত আপনার কাছে সাধারন মনে হতে পারে, কিন্ত নি্কৃষ্টতম প্রমান করার কোন উপায় নেই ) । আপনি বললেন " আশরাফুল মোটেই “দুর্দান্ত ফিল্ডিং” করে না। দলে ও সবচাইতে দুর্বল ফিল্ডার।"

                      সুপারলেটিভ ডিগ্রী ব্যবহার করতে হলে খুব স্পষ্ট ব্যবধান থাকতে হয়। কিছু কানে ভাসা শব্দ নিয়ে ফিল্ডিং এর মত অবসকিউর ব্যাপারে সুপারলেটিভ ডিগ্রী ব্যবহার করা যেমন হাস্যকর তেমনি ক্রমাগত অন্যের যুক্তিতে " অন্ধ " , "অ্যানোমালি" এধরনের চরমতম বিশেষন ব্যবহার করাও হাস্যকর। বিশেষ করে যেখানে আমি
                      "অমুক হারে ভবিষ্যতের কোন পরিসংখ্যান" জাহির করিনি।

                      এভারেজকে আমি ডাউনপ্লে করিনি, শুধু এভারেজ কমে যাওয়ার নরমাল ট্রেন্ড এর কথা বলেছি ( এবং সেটা দেখাতে গিয়েই আপনার উল্লেখ করা খেলোয়াড়দেরই কেরিয়ার গ্রাফ দিতে হয়েছে, তারপরেও এ্যানোমালি মনে হলে বুঝে নেবো আপনি যুক্তির ধারাটাই ধরতে পারেননি।) এবং বর্তমান এভারেজ ধরে ভবিষ্যতের হিসাবে ভুলের সম্ভাব্যতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছি। এবং এভারেজটা সত্যের কাছাকাছি আসতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। কারো কেরিয়ারের প্রথম দিকের এভারেজ দিয়ে ভবিষ্যতের পরিসংখ্যান ও প্রকৃত সক্ষমতা হিসাব করাটা বোকামী।

                      আপনার আমার মতের পার্থক্য খুব বেশি নয় শুধু আপনার চরম বিশেষনগুলো ব্যতীত।

                      আলোচনাটা খুব ছোট জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে দেখে অর্থহীন মনে হচ্ছে।

  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বাই দ্য ওয়ে, সবাই যখন সাংবাদিকদের ভুল ধরছেন , তাইলে আমিও একটু বইলা যাই। প্রথম আলো বলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ না জিতলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ছোটখাটো একটু ভুল আছে। আসলে ইংল্যান্ড না জিতলে বাংলাদেশ উঠে যাবে পরের পর্বে। অর্থাৎ ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলা যদি টাই বা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় , তবে বাংলাদেশ চলে যাচ্ছে পরের পর্বে। কারণ সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান হবে , যদি বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারেও। আর পয়েন্ট সমান হলে প্রথমে বিবেচ্য নেট রানরেট নয় বরং প্রথমে বিবেচ্য হবে জয়ের সংখ্যা। বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা ৩, ইংল্যান্ডের ২।
    অতএব চেন্নাইয়ের আবহাওয়া যদি খেলায় বাগড়া দিয়ে ভন্ডুলও করে দেয় তা আমাদের সাথে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।